চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সীমান্তে প্রায় ৪৬ লাখ টাকার বিপুল পরিমান মাদক ও চোরাই পণ্য উদ্ধার করেছে ৬০ বিজিবি সদস্যরা।
আজ ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়া, কুমিল্লা জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে এসব চোরাই পণ্য উদ্ধার করা হয়। বিজিবি জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সুলতানপুর ৬০ বিজিবির সদস্যরা তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা আখাউড়া, কসবা, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে।
এসময় বিজিবি সদস্যরা ৭৭১ পিস কসমেটিক্স সামগ্রী, ২১ কেজি কিসমিস, ৯ টি গরু, ৬৩২৮ পিস চকলেট, ৪,৭৫৭ কেজি চিনি, ৪৪৯ বোতল চুলের তেল, ৩৯৮ পিস ডব্লিউপি পাপা কিটনাশক, ৯০৬ পিস তালা, ৮৬ কেজি ফুচকা, ১৮ বোতল বড়ি ওয়েল, ৬৩,০০০ পিস বাঁজি, ১১৭ কেজি বাংলাদেশী রসুন, ২১৩ কেজি বাসমতি চাউল, ১টি মোটরসাইকেল, ৫১৬ প্যাকেট সেমাই, ১৯২ বোতল হুইস্কি, ১১ বোতল বিয়ার, ৫ কেজি গাঁজা এবং ৫৫ বোতল ইস্কফ সিরাপ উদ্ধার করে। এই সব অবৈধ পণ্য উদ্ধারের সময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাচালানীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত অবৈধ পণ্যের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬০ টাকা।
সুলতানপুর ৬০ বিজিবি অধিনায়ক লে: কর্ণেল এ এম জাবের বিন জব্বার জানান, উদ্ধারকৃত ভারতীয় চোরাচালানী মালামাল আখাউড়া ও কুমিল্লা কাস্টমসে জমা দেয়া হয়েছে।
সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে ৬০ বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
আড়াই বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) পরিচালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপ থেকে পুনরায় জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
আজ ২৫ মে শনিবার বিকেল পৌনে ৬টায় জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলম গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ কূপটি থেকে দৈনিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আগামী ১০ বছরে এ কূপ থেকে প্রায় ২৬শ’ কোটি টাকার গ্যাস উত্তোলন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক ২৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপটি ২০০০ সালে খনন করা হয়। তবে গ্যাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় পানি উঠায় ২০২১ সালের পহেলা নভেম্বর গ্যাস কূপটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তিতাসসহ দেশের পাঁচটি গ্যাস ফিল্ড পরিচালনা করে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ৫২৩ কোটি টাকা ব্যায়ে তিতাসের ১৪ নম্বর কূপসহ ৭টি কূপ ওয়ার্কওভারের প্রকল্প হাতে নেয় বিজিএফসিএল। এ প্রকল্পের আওতায় গত ১৯ মার্চ তিতাসের ১৪ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার কাজ শুরু করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। ৭৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ওয়ার্কওভার কাজ শেষে গত ২১ মে কূপটি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়।
৭টি কূপ ওয়ার্কওভার প্রকল্পের পরিচালক মো. ইসমাইল মোল্লা জানান, ১৪ নম্বর কূপটি থেকে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত ৪০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে- যার বাজারমূল্য প্রায় ২৬শ’ কোটি টাকা। আপাতত দিনে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। পরবর্তীতে উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো হবে। বাকি ৬টি কূপের ওয়ার্কওভার কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। এর ফলে শিল্প-কারখানাসহ যে কোনো খাতে গ্যাস সরকরাহ করা যাবে। সরবরাহ পর্যাপ্ত হলে গ্যাসের সংকটও কমে যাবে। সবমিলিয়ে ১০০টি কূপের ওয়ার্কওভার ও খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এ কাজটি আগামী বছর থেকেই শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে অবস্থিত তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ও বিজিএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
জেলা আওয়ামীলীগ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াঙ্গন এখন সমৃদ্ধ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অভিভাবক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপিকে যখনই স্মরণ করি তখনই ক্রীড়াঙ্গনকে প্রসার এবং সমৃদ্ধি করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
আজ ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকালে নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে এ্যাডটার্চ কাপ T- ২০ ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট ২০২৪ এর ফাইনাল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজী হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে তিনি আরো বলেন, এক্স ক্রিকেট এসোসিয়েশন খেলার যে আয়োজন করেছে তা প্রশংসার দাবিদার। এে খেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংগ সংগঠন বা ক্লাব অংশ গ্রহণ করায় খেলাটি পুরিপূর্ণতা পেয়েছ। তিনি ক্রীড়া সংস্থাকে আরোও সমৃদ্ধি করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। ডাঃ আব্দুল মতিন সেলিমের উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্যে রাখেন এক্স ক্রিকেট এসোসিয়েশনের সদস্য ও আম্পায়ার মাইনুল হোসেন চপল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য নাজমুল হক সেলিম, আব্দুস সাকির ছোটন, আলী মাসুম, আবু কাউসার খান, আল মামুন, মঞ্জুর-ই মাসুদ, সাবেক ক্রিকেটার শামীম ভূইয়া, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য মহিম চৌধুরী। ফাইনাল খেলায় ফুলবাড়িয়া স্পোর্টিং ক্লাবকে ৮ উইকেটে পরাজিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংস্ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন বিজয়ী দলের আশফাক আহমেদ রোহান।
খেলা পরিচালনা করেন আম্পায়ার মাইনুল হোসেন চপল ও নাজমুল হক সেলিম।
খেলায় সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ডাঃ সাইফুদ্দিন সুব্র, আলী মাসুম, আলমগীর সুজন ও নাদিম বাবু।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের নবঅনুমোদনকৃত কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়েছে।
আজ ২৭ জুন বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় ধানমন্ডী ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টুর নেতৃত্বে এসময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সৈয়দ একে একরামুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মঈনউদ্দিন মঈন, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য এ্যারোমা দত্ত, জেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি হাজি হেলাল উদ্দিন, সৈয়দ মিজানুর রেজা, কামরুজ্জামান আনসারী, অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, কাজী হারিসুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহবুবুল আলম খোকন, আবদুল হান্নান রতন, অ্যাড. তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এহতেশামুল বারী তানজিল, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জহিরুল ইসলাম, এমবি কানিজ, মোস্তাক আহমেদ ভূঞা, মাসুম বিল্লাহ, কার্যকরী সদস্য বাবুল মিয়া, অ্যাড. লোকমান হোসেন, সাইদুজ্জামান আরিফ, আলামিনুল হক আলামিন।
স্টাফ রিপোর্টার:
আজ মহান বিজয় দিবস, বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেয়ার দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্ম সমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির দিন কাল। জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজিবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে।
আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আর একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ’৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলীদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানিদের সাথে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন সহস্র বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে।
বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। হিসেব-নিকেশ আর দেনা-পাওনায় পাকিস্তানিরাও বসে নেই। তারাও অংক কষতে থাকে কিভাবে বাঙালি জাতিকে যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা যায়। তাদের কাছে এই অলংকারই বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্য। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ জানিয়ে যায় সময় আসছে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেয়ার পালা। অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাড়ের আর খুলির স্তুপ একদিন পাললিক হয়।
মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্য যুদ্ধে। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।
অবশেষে ন’মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূচিত হল মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।
এশিয়ান টেলিভিশনের ১০ বছর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়েছে। আজ ১৮ জানুয়ারি বুধবার বিকাল ৩টা থেকে রাত অব্দি শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা মঞ্চে এ অনুষ্ঠান চলে।
অনুষ্ঠানে কেক কাটা, আবৃত্তি, নৃত্য ও সঙ্গীতসহ নানান আয়োজনে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ভরে উঠে ভাষা চত্বর মঞ্চ।
প্রতিবারের মত এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকতা ও শিল্প-সংস্কৃতিতে অবদান রাখায় গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ আরজু, প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন সাংবাদিকতায় সম্মাননা পেয়েছেন, আবদুন নূর, পিযূষ কান্তি আচার্য ও আল আমিন শাহীন শিল্প-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায় সম্মাননা পেয়েছেন এবং কবি আবদুল মান্নান সরকার, সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যমের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ খান বিটু শিল্প-সংস্কৃতিতে সম্মাননা পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নালল আবেদিন, প্রফেসর অমৃত লাল সাহা, আলী মোসাদ্দেক মাসুদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন, জেলা নাগরিক ফোরাম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত, মোঃ ইব্রাহিম খান সাদাত, আমির হোসেন, হোসেন মিয়া, জেলা খেলাঘর সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদস্য সচিব সঞ্জীব ভট্টাচার্য, মোস্তাক আহমেদ খোকন, আনোয়ার হোসেন সোহেল, অঙ্কুর শিশু-কিশোর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনিসুল হক রিপন, আনিসুর রহমান রনি, আবদুল মতিন শিপন, বাতিঘর সভাপতি- আজহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সাহিত্য একাডেমি, আবরনি ও সোনালী সকাল আবৃত্তি পরিবেশন করেন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আল আমিন শাহীন, পাবলো চৌধুরী, জেরিন সুলতানা, সবুজ মোল্লা, রূপম সূত্রধর, হুসাইন ইসলাম জয়, পৃথুলা, ওমর আহমেদ, সাদিয়া আনজুম মিতি, ইশতিয়াক হাসান আলিফ, অন্বেশা নুসরাত। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফারুক আহমেদ পারুল, হোসেন মিয়া, আনিসুল হক রিপন, অবণী সরকার, দেবাশিষ দেবু, ইকরামুল হক, সাথী সরকার, আফরিন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আবরনি আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র এর পরিচালক শারমিন সুলতানা ও কাজী নাজমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন এশিয়ান টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান পারভেজ।