অনলাইন ডেস্ক :
সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান আজ ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার তার পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। তিনি ব্রিটিশ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও তার বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ।
টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ এবং লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন তিনি। অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে আহ্বান জানান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনক।
এর একদিন পরই টিউলিপকে পদ ছাড়ার জন্য অনুরোধ জানায় দুর্নীতিবিরোধী জোট ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই জোটে রয়েছে ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফামের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন।
বিবৃতিতে জোটটি জানিয়েছে, টিউলিপ ব্রিটিশ সরকারে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার দায়িত্বে রয়েছেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা শপথ ভঙ্গের শামিল। তাই পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ টিউলিপের।
এদিকে, শেখ হাসিনার সাথে রাজনৈতিক বিষয়ে কখনোই আলোচনা হয়নি দাবি করলেও গণভবনে মিলেছে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনি প্রচারপত্র, লেবার পার্টির পোস্টারসহ টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু জিনিস।
যুক্তরাজ্যের দ্য সানডে টাইমস বলছে, টিউলিপকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের উপহার দেওয়া পোশাক-গয়না, দামি কলমের মোড়কসহ নানা জিনিস গণভবনে তাদের প্রতিবেদক পড়ে থাকতে দেখেছেন।
ডেস্ক রিপোর্ট :
বেশ কয়েক বছর আগে এই তথ্যটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন আজমত হোসেইন, যে কাশ্মীরি যুবক ছিলেন হুরিয়ত কনফারেন্সের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সর্বক্ষণের সঙ্গী আর ঘনিষ্ঠ অনুচর। বাংলাদেশ নিয়ে খবরাখবর করি শুনে তিনি বলেছিলেন, “জানেন কি, আমাদের কাশ্মীরেও আছে বাংলাদেশ নামে আস্ত একটা গ্রাম?”
শুধু তা-ই নয়, আরো জেনেছিলাম এই ‘বাংলাদেশ’ নামে গ্রামটা নাকি গিলানি সাহেবের জন্মস্থান জুরিমাঞ্জ-এর ঠিক পাশেই! পরে গুগল ম্যাপেও খুঁজে বের করি সেই বাংলাদেশ, তবে বিশদে খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় সে কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
মাসকয়েক আগে কাশ্মীরেরই একটা খবরের কাগজে চোখে পড়ে, সেই ‘বাংলাদেশ’ গ্রামের লোকেশনে উলার লেকের ধারেই শুরু হয়েছে বিগ বাজেট একটি দক্ষিণী ছবির শ্যুটিং। এমন কী, বলিউড ছবিরও সেট পড়েছে ‘বাংলাদেশে’ – এমনটাও জানানো হয়েছিল।
বুঝতে পারি, কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’ ইদানীং ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছে, ওই এলাকার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন দলে দলে।
তখনই স্থির করে ফেলি, কীভাবে এই ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ হল, সেটা জানতে একবার যেতেই হবে ওই গ্রামে। অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্নটা পূর্ণ হল এ মাসের গোড়ায়।
শ্রীনগর শহর থেকে এমনিতে ওই জায়গাটার দূরত্ব আশি কিলোমিটার। তবে নানা কারণে সোপোর-বান্দিপোরা রোড হামেশাই বন্ধ থাকে বলে প্রায়শই পুরো উলার লেক পরিক্রমা করে পৌঁছতে হয় সেই গ্রামে – রাজধানী থেকে পাড়ি দিতে হয় অন্তত সোয়াশো কিলোমিটার রাস্তা।
তবে বিস্তর মেহনত করে একবার ‘বাংলাদেশে’ পৌঁছলে বোঝা যায়, কেন গ্রামটি বাইরের দুনিয়ার কাছে এভাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গ্রীষ্মের পিক সিজনে তো বটেই, ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডাতেও সেখানে এখন পর্যটকদের ঢল ও ট্রেকারদের তাঁবু।
প্রচলিত আছে, মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরই না কি কাশ্মীর নিয়ে একদা বলেছিলেন :
আগর ফিরদৌস বার রু-য়ে জমিন অস্ত
হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত!
বাংলায় এই অমর পংক্তির অনুবাদ করা যেতে পারে, ‘এই পৃথিবীর বুকে কোথাও যদি স্বর্গ থেকে থাকে তাহলে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই!’
এখন এই লাইনগুলো আসলে কবি আমীর খসরুর লেখা, না কি অন্য কারও – তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
কিন্তু এই ‘জন্নত-ই-জাহান’ বা ‘ভূস্বর্গ’ খেতাবের সবচেয়ে বড় দাবিদার যে কাশ্মীর – তা নিয়ে বোধহয় বিন্দুমাত্র বিতর্ক নেই!
আর সেই ভূস্বর্গের বুকে আজ বাহান্ন বছর ধরে এক টুকরো ‘বাংলাদেশ’ও যে বহাল তবিয়তে টিঁকে আছে এবং ক্রমশ বিখ্যাত হচ্ছে, এ খবরও রীতিমতো রোমাঞ্চ জাগায় বই কী!
যেভাবে এই নামকরণ
ডিসেম্বরের এক হিমেল সকালে যখন বান্দিপোরা জেলার এই বাংলাদেশ গ্রামে পৌঁছলাম, তখন মুষলধার বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে জনপদ। উলার লেক থেকে আসা ঠান্ডা হওয়ায় হাত-পা অবশ হওয়ার উপক্রম।
উলারের অন্য পারে মাউন্ট হরমুখের তুষারধবল চূড়া কুয়াশাতে আবছায়া। আর লেকের বুকে রাজহাঁসের ঝাঁক আর সাইবেরিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের উদ্দাম দাপাদাপি।
বাংলাদেশ গ্রামের কূলে কয়েকটা নৌকা ওই তুমুল বৃষ্টিতেও মাছ ধরতে ব্যস্ত। আর পর্যটকদের জন্য চালু হওয়া শিকারাগুলো লেকের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে ইতিউতি।
গ্রামবাসীদের দেখা মিলল দুপুরের ঠিক আগে আগে, যখন জোহরের নামাজের ঠিক আগে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন।
কীভাবে তাদের গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ হল, সেই প্রশ্নের জবাবে নবীন যুবক নিসার আহমেদ দার কিংবা প্রবীণ পঞ্চায়েত সদস্য গুলাম আহমাদের কাছে মোটামুটি একই রকম বিবরণ পেলাম।
আসলে পাশের জুরিমাঞ্জ গ্রামে (যেটা আবার সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জন্মস্থান, তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে খাল খনন বিভাগের একজন ভূমিহীন শ্রমিক) ’৭১ সালের শীতে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড হয়েছিল।
সেই আগুনে প্রায় পুরো গ্রামটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গ্রামের এক পাশে উলার লেকের কোল ঘেঁষে অনেকটা ফাঁকা জমি ছিল, তখন সেখানেই সর্বস্ব-হারানো পরিবারগুলোকে নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয় সরকার।
এরপর প্রশ্ন ওঠে, নতুন এই জনপদটা তো জুরিমাঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে – তো এই গ্রামের নাম কী দেওয়া হবে?
তখন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, সারা পৃথিবীর সঙ্গে জুরিমাঞ্জও সে খবর রেডিওতে শুনেছে।
সেই নবীন রাষ্ট্রকে সম্মান জানাতে নতুন গ্রামটির নামও দেওয়া হবে ‘বাংলাদেশ’ – এমনটাই সেদিন স্থির করেছিলেন ওই জনপদের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশের নামে গ্রামটির নামকরণের মূল আইডিয়াটা কার, এটা নিয়ে অবশ্য দুরকম ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।
নিসার আহমেদ দার জানালেন, তিনি বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছেন তখন কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই না কি পরামর্শ দিয়েছিলেন নতুন গ্রামটির নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হোক, আর গ্রামবাসীরা সানন্দে সেটা মেনেও নিয়েছিলেন।
তুলনায় প্রবীণ গুলাম আহমাদ বা গুলাম নবি বাট অবশ্য বললেন বাইরের কারও পরামর্শে নয় – গ্রামের তখনকার মুরুব্বিরা মিলেই না কি স্থির করেছিলেন নতুন জনপদের নাম দেবেন তারা বাংলাদেশ, সদ্য স্বাধীন দেশটিকে স্বীকৃতি জানাবেন।
দুটোর যে কোনও ব্যাখ্যাই সত্যি হতে পারে, তবে ‘বাংলাদেশ’ নামটা নিয়ে ওই গ্রামের যে আলাদা একরকম গর্ব আছে তা টের পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।
প্রথম দিকে নামটা মুখে মুখে চালু থাকলেও ২০১০ সালে বান্দিপোরা জেলার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার অফিসও বাংলাদেশ নামটিকে নথিভুক্ত করেছে, এখন প্রায় ৭০টি পরিবারের সাড়ে তিনশো লোকের বসবাস সেখানে।
গ্রামের আশি বছরের প্রবীণা আজাইব বিবি বিকেলের দিকে খুব যত্ন করে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসিয়ে কাশ্মীরের বিখ্যাত ‘কাহওয়া চা’ খাইয়ে আপ্যায়ন করছিলেন।
তাঁর সন্তানদের মধ্যে দু’জন মূক ও বধির, কোনও ক্রমে হাঁস ও মুরগী প্রতিপালন করে তিনি নিজের বিরাট সংসার চালান।
এত কষ্টের মধ্যেও আজাইব বিবি হাসিমুখে বলছিলেন, “আমাদের গ্রামের নামটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম! গোটা কাশ্মীরে এরকম নাম আপনি আর কোথাও পাবেন না!”
গ্রামের সব লোকজন মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সায় দেন, জানাতে ভোলেন না এই যে অন্য একটি দেশের নামে তাদের গ্রামের নাম – বিষয়টা তাদের অন্য রকম একটা ভালো লাগা দেয়!
বেড়াতে বা কাজে কাশ্মীরের অন্যত্র গেলেও তারা প্রথমেই বলেন, “আমরা বাংলাদেশ গ্রাম থেকে এসেছি!” আগে লোকজন শুনে একটু অবাক হত, কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সবাই চিনে গেছে এই অভিনব নামের গ্রামটিকে।
‘বাংলাদেশে’র পুনর্জন্ম
তবে প্রায় বাহান্ন বছর আগে এই নামকরণ হলেও পরবর্তী প্রায় চার দশক ‘বাংলাদেশ’ একটি অখ্যাত জনপদ হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হালে সেই ছবিটা খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
আর এর পেছনে খুব বড় ভূমিকা রয়েছে উলার লেককে ঘিরে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটন প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার।
উলার লেক হল সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে বৃহত্তম মিঠা পানির লেক, কাশ্মীরের সুপরিচিত ডাল লেকের অন্তত সাড়ে আট গুণ এর আয়তন।
কিন্তু শ্রীনগরের ডাল লেক পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হলেও তুলনায় উলারে ‘ট্যুরিস্ট ফুটফল’ অনেক কম, যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উলারের আকর্ষণ বোধহয় বেশি ছাড়া কম নয়।
সম্প্রতি সেই ছবিটাই বদলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ‘উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’, সরকারি অর্থায়ন আর বেসরকারি সহযোগীদের নিয়ে তারা নতুন করে আঁকছেন উলার লেকের চালচিত্র।
“আমাদের এই প্রকল্পে একটা খুব বড় জায়গা নিয়ে আছে বাংলাদেশ গ্রাম, কারণ ওই এলাকাটার পর্যটন সম্ভাবনা অপরিসীম”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মুদাসির মেহমুদ।
গত দু-তিন বছরের মধ্যে ‘বাংলাদেশে’র সৌন্দর্যায়নে তারা বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন।
জুরিমাঞ্জ-বাংলাদেশ-ওয়াতলাব গ্রামগুলোকে ঘিরে উলারের তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক বুলেভার্ড।
ইতিমধ্যেই লেকের বুক চিরে তৈরি হয়েছে প্রায় দুশো মিটার লম্বা একটি বোর্ডওয়াক, যেটির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় একদম উলারের বুকে। পদ্মের বনের ওপর দিয়ে ডানা ঝাপটাতে দেখা যায় নানা প্রজাতির মাইগ্রেটরি বার্ডদের।
‘বাংলাদেশ’ গ্রামের বাসিন্দারা এই বোর্ডওয়াকেরই নাম দিয়েছেন ‘ভিউপয়েন্ট’।
নিসার আহমেদ বলছিলেন, “বছরতিনেক আগে এই ভিউপয়েন্ট খোলার পর থেকেই হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুব বেড়ে গেছে।”
“ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া-ইউরোপ থেকেও আজকাল দলে দলে পর্যটকরা আসছেন।”
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গুলাম আহমাদ জানাছেন, ২০২২ আর ২০২৩র গ্রীষ্মে এমন কী বাংলাদেশ থেকেও জনাকয়েক পর্যটক তাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। মানে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরের বাংলাদেশ দেখতে!
এমনিতে বাংলাদেশ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকটাই উলার লেক-নির্ভর।
তারা কেউ লেকে মাছ ধরেন, কেউ আবার লেকের তীরে হাঁসের চাষ করেন।
অনেকে আবার নৌকায় লেকের বুক থেকে তুলে আনেন ওয়াটার চেস্টনাট, জলের যে কাঁটাওলা ফসল অনেকটা বাংলার ‘পানিফলে’র মতো দেখতে। কাশ্মীরিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন ‘সিংগারা’।
উলার লেকের বুকে পদ্মবন থেকে পদ্মের কন্দ বা ‘নদরু’ তুলে আনাটাও বাংলাদেশে অনেকেরই পেশা। এই নদরু দিয়ে তৈরি ‘ইয়াখনি’ নামে একটি পদ কাশ্মীরে খুবই জনপ্রিয়, আর বাংলাদেশের ‘নদরু’ এখন পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি-মুম্বাই-ব্যাঙ্গালোরের বাজারেও।
সব মিলিয়ে উলার লেকের তীরে একদা অপরিচিত ‘বাংলাদেশ’ যেন সম্প্রতি নতুন জীবন পেয়েছে, প্রতিবেশী দেশের নামে নামাঙ্কিত গ্রামটির নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে দূর-দূরান্তে।
“রাস্তাটা যদি আর একটু ভাল করা হয় আর উলার লেকে নিয়মিত ড্রেজিং-টা চালু রাখা যায় তাহলে দেখবেন আমাদের বাংলাদেশ ট্যুরিস্টদের সামলাতে কূল পাবে না”, একগাল হেসে বলেন প্রবীণ গ্রামবাসী গুলাম নবি বাট।
‘হামলা আওয়ার খবরদার!’
বাংলাদেশ গ্রাম থেকে সন্ধ্যার দিকে যখন শ্রীনগরে ফিরছি, তখনও কিন্তু একটা খটকা রয়েই গিয়েছিল।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ‘ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের প্রতি প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি নিয়ে এত কথা শোনা যায়, সেই কাশ্মীর কীভাবে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন হওয়া একটি দেশের জন্মকে ‘সেলিব্রেট’ করেছিল সে প্রশ্নটার জবাব কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ গ্রামে পাইনি।
পরে কাশ্মীরি গবেষক ও ‘কে ফাইল’ গ্রন্থের লেখক বশির আসাদ এর একটা চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন।
তিনি জানাচ্ছেন, “সাতচল্লিশে ভারত ভাগ থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর কিন্তু সাধারণ কাশ্মীরিদের সমর্থন পুরোপুরি ভারতের দিকেই ঢলে ছিল। ছবিটা তখন মোটেই আজকের মতো ছিল না, বরং কাশ্মীরিরা তখন সবাই পাকিস্তানি দখলদারির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন।”
“এমন কী সাতচল্লিশ সালের শেষ দিকেই যখন পাকিস্তানি হানাদাররা কাশ্মীরে হামলা চালায়, তখন শ্রীনগর-সহ গোটা ভ্যালিতে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল ‘হামলা আওয়ার খবরদার, হাম কাশ্মীরি হ্যায় তৈয়ার’! মানে তারা তখন পাকিস্তানিদের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন!”
ফলে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের দু-টুকরো হওয়াকে কাশ্মীরের একটি জনপদ যে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছিল, তাতে বশির আসাদ এতটুকুও বিস্মিত নন।
“এমন কী সাতাত্তর সালের আগে জামাত-ই-ইসলামীও কিন্তু কাশ্মীরে সেভাবে পায়ের তলায় জমি পায়নি। ফলে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের নির্যাতন-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়”, বলছিলেন তিনি।
বশির আসাদ আরও মনে করেন, ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে উগ্রপন্থা আর জঙ্গীবাদের রমরমা শুরু হওয়ার আগে কাশ্মীর ছিল সম্ভবত সমগ্র উপমহাদেশেই সবচেয়ে উদার ও সহিষ্ণু একটি সমাজ – কাজেই সেখানে অবাধ গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে চেতনাও ছিল খুব শক্তিশালী।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের আর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও হয়তো আছে – যার আভাস নিহিত ছিল “কাশ্মীর সরকারের একজন মন্ত্রীই এই পরামর্শ দিয়েছিলেন”, নিসার আহমেদ দারের এই কথাতে।
সে সময় জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ মীর কাশিম।
কংগ্রেসের এই সিনিয়র নেতা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কাশ্মীরে কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তোলার কৃতিত্ব অনেকে তাঁকেই দিয়ে থাকেন।
একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
ফলে তাঁকে সম্মান জানাতে মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মীর কাশিম বা তাঁর কংগ্রেসি মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য নতুন একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখার সুপারিশ করেছিলেন, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সত্যিটা ঠিক কী ছিল, আজ হয়তো তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়।
কিন্তু সুদূর উত্তর কাশ্মীরের এক প্রান্তে, সুবিস্তীর্ণ উলার লেকের এক তীরে বাংলাদেশ নামে একটি ছোট্ট গ্রাম যে অর্ধশতাব্দীরও বেশি পুরনো ইতিহাসকে নিজের বুকে আজও ধরে রেখেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
শুভজ্যোতি ঘোষ
জড়ষব,বিবিসি নিউজ বাংলা, বান্দিপোরা
চলারপথে ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতায় স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী ও অগ্নি সন্ত্রাসীরা কখনই যেন ফিরতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে রিজ কার্লটন হোটেলের হলরুমে আমেরিকায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘খুনী, স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা যাতে আর কখনই ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করুন। এই বিএনপি-জামাত জোট বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত তথাকথিত আন্দোলনের নামে বহু মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ উজাড় করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘এই চক্র দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে একে আবারো উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে।বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। আমরা এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাগুলোকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে দেশে বিদেশে রাষ্ট্র বিরোধী অপপ্রচার চালানোর জন্যে বিএনপি জামাত জোটের কঠোর সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। বিএনপি-জামাত জোট ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ব্যবহার করে আমাদেরই বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে কান না দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। তিনি বলেন, সবাইকে মাথা উঁচু করে ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে চলতে হবে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রতিটি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি।
দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা অনেক অবদান রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান কারণ, সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রেম্যিটান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করতে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের পরও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারনে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলমান যুদ্ধের কারণে উন্নতসহ অনেক দেশ সংকটে পড়লেও বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনও ভালো।
প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন যেন বাংলাদেশ কোন সংকটে না পড়ে।
দেশের দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে কোন চরম দারিদ্র্য থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে বাড়ি দিয়ে আসছে।
তিনি আরো বলেন, তাঁরা ইতোমধ্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় ৩৫ লাখ লোককে বাড়ি দিয়েছেন এবং তাদের জীবিকা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, কারণ সরকার প্রতিটি গৃহহীন লোককে বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এ লক্ষে আরো ৬০ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অন্ষ্ঠুান পরিচালনা করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
নিজ ঘরের মানুষের বিদ্রোহে সব উলট-পালট করে দেয়। যেমনটি ঘটেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্ষেত্রে। তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন হঠাৎ বিদ্রোহ করে বসে। আর এতে সব হিসাব পাল্টে যেতে থাকে। দ্রুত ঘুরে যেতে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে মোড়। রাশিয়া যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে নিজ ঘর রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে ২৪ ঘন্টা পার না হতে সেই ভয়ঙ্কর পরিস্তিতি থেকে বেরিয়ে আসছে পেরেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। বলা চলে বেঁচে গেলে তিনি।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতায় রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। দিন দিন বেড়েছে সেই ক্ষমতা। রাজনৈতিক জীবনে বহু বাধা আর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে তাকে। সেসব উৎরেই এই পর্যন্ত এসেছেন তিনি। ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে নানা সংকট তাকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তবে সেই পরিস্থিতি হঠাৎ করে কালবৈশাখীতে রুপ নেয় বেসরকারি আধা-সামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ।
ভয়ংকর এক দিন পার করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন পুতিনকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করে এত বড় হুমকিতে এর আগে ফেলতে পারেনি কেউ। তবে এই যাত্রায় ‘বেঁচে’ গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
জানা গেছে, রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন ‘রক্তপাত এড়াতে’ তার অনুগতদের মস্কোমুখী যাত্রা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি নিজে বেলারুশে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে রাজি হয়েছেন। এর মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক জীবনে নেমে আসা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চের অবসান হলো বলে ধারণা করা হয়েছে।
নতুন কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায় যে প্রিগোঝিন ও তার বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রোস্তভ-অন-ডন ত্যাগ করছে।
এদিকে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের সাথে করা চুক্তির ব্যাপারে ক্রেমলিন খুব বেশি কিছু বলছে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, প্রিগোঝিনকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘কথা দিয়েছেন’ যে তিনি বেলারুশে যেতে এবং সেখানে বসবাস করতে পারবেন। আর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করা হবে।
এর আগে রাশিয়ার রাজধানী দখলের উদ্দেশে লিপেৎস্ক থেকে ২০০ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েও আচমকা থমকে যায় প্রিগোঝিনের ভাড়াটে সেনাবাহিনী। কারণ হিসাবে জানানো হলো, রক্তপাত এড়াতেই আপাতত মস্কো অভিযান স্থগিত। ভাড়াটে সেনাবাহিনীর প্রধান প্রিগোঝিন নিজের টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, রক্তপাত এড়াতেই মস্কো দখলের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিবিসি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বেলারুসের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা হয় ভাড়াটে সেনাবাহিনীর প্রধান প্রিগোঝিনের। তার পরেই প্রিগোঝিন মস্কোর দিকে ধাবমান সেনাসদস্যদেরকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।
চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বড় অভিযান শুরু করে বিদ্রোহী ওয়াগনার বাহিনী। প্রিগোজিনের মালিকানাধীন ভাড়াটে যোদ্ধারা শনিবার সকালে ইউক্রেন সীমান্তের অদূরে পশ্চিম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোরোনেজ দখল করে বলে কয়েকটি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে। এর আগে ওয়াগনার বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রোস্তভ-অন-ডন শহরের দখল নিয়েছিল। প্রিগোজিন দাবি করেছেন, একটি গুলি খরচ না-করেও রোস্তভ-অন-ডন শহরে সেনার সদর দফতর দখল করে তার বাহিনী। আর এতে সহায়তা করেছেন স্থানীয়েরা। তিনি একটি অডিও-বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলেন, গোটা দেশের তার বাহিনীকে সমর্থন করা উচিত। কারণ তার বাহিনী ‘ন্যায়ের পদযাত্রায় নেমেছে। রোস্তভ-অন-ডন থেকে মস্কোর দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। এর পর মস্কোর দিকে আরো ২০০ কিলোমিটার এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু তার পরেই আচমকা বন্ধ অভিযান।
কিন্তু আচমকা কেন মন বদল হলো একদা পুতিনের সহচর প্রিগোঝিনের? তার একাধিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাংবাদিক ফ্রাঙ্ক গার্ডনারের দাবি, মস্কো অভিযান অসমাপ্ত রাখার চাপের উৎস রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনই। লুকাশেঙ্কোকে কাজে লাগিয়ে তিনি ভাড়াটে বাহিনীকে ঘোল খাইয়ে দিলেন। পাশাপাশি, গার্ডনারের বক্তব্য, প্রিগোঝিন মস্কো দখলের অভিযানে যোগ দিতে যে প্রকাশ্য বার্তা দিয়েছিলেন জনসাধারণের কাছে, তা-ও কাজে আসেনি। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ তো দূরঅস্ত , সাধারণ মানুষকেও খুব বেশি সংখ্যায় ভাড়াটে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। তাই সম্ভবত দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকেই মস্কো অভিযান বাতিল করার ভাবনা প্রিগেঝিনের। মস্কো অভিযান বাতিল হলো বটে, কিন্তু এর পর কী হবে প্রিগোঝিনের? তার রাজনৈতিক বা সামরিক ভবিষ্যৎ কিন্তু এখন পুতিনের মুঠোবন্দি, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ।
একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ হোটেল ব্যবসায়ী প্রিগোঝিনের ওই ভাড়াটে বাহিনী রুশ সেনাবাহিনীর অংশ নয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তারা রুশ বাহিনীর সহযোগী হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অতীতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধেও লড়েছে এই পেশাদার ভাড়াটে বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সাথে মতবিরোধ চলছিল প্রিগোঝিনের। রুশ সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এ বার সরাসরি মস্কোর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছে প্রিগোজিনের ভাড়াটে যোদ্ধারা।
ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে প্রায় ২০ হাজার ওয়াগনার যোদ্ধা মস্কো দখলের অভিযানে নেমেছিল বলে একাধিক সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছিল। তাদের রুখতে রুশ ‘চপার’ (যুদ্ধ হেলিকপ্টার) ধারাবাহিক আক্রমণ চালাচ্ছিল। এমনকি, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাধারণ নাগরিকদের প্রাণহানির ঝুঁকি সত্ত্বেও আকাশপথে হামলা চালানো হয়। প্রেসিডেন্ট পুতিন শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘বিশ্বাসঘাতকেরা সমুচিত জবাব পাবে।’ প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় যখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে আসছিল প্রিগোঝিনের ভাড়াটে বাহিনী, এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের শহরে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করছিলেন মস্কোর মেয়র সেরগেই সোবিয়ানিন। তিনি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘পরিস্থিতি কঠিন। আমি বলব, যতটা সম্ভব শহরে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করুন।’ তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, শহরের বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ থাকবে। রাশিয়ার রোস্টভ শহর দখল করেছে ওয়াগনার যোদ্ধারা। ইউক্রেন-সংলগ্ন দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্টভ অঞ্চলের গভর্নরও বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় সময় মধ্যরাতেই নাটকীয় পালাবদল!
একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ
প্রিগোজিন একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী। তার ওই ভাড়াটে বাহিনী রুশ সেনার অংশ নয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তারা রুশ বাহিনীর সহযোগী হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অতীতে লিবিয়া, সিরিয়া, মোজাম্বিক, সুদানের মতো দেশে গৃহযুদ্ধেও লড়েছে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধার এই পেশাদার ভাড়াটে বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সাথে মতবিরোধ চলছিল প্রিগোজিনের। রুশ সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এবার সরাসরি মস্কোর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছে প্রিগোঝিনের ভাড়াটে যোদ্ধারা।
‘ন্যায়ের পদযাত্রা’
চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বড় অভিযান শুরু করেছিল বিদ্রোহী ওয়াগনার বাহিনী। প্রিগোঝিনের মালিকানাধীন ভাড়াটে যোদ্ধারা শনিবার সকালে ইউক্রেন সীমান্তের অদূরে পশ্চিম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোরোনেজ দখল করে বলে কয়েকটি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছিল। এর আগে ওয়াগনার বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রোস্তভ-অন-ডন শহরের দখল নিয়েছিল। প্রিগোজিন দাবি করেছেন, একটি গুলি খরচ না-করেও রোস্তভ-অন-ডন শহরে সেনার সদর দফতর দখল করেছে তার বাহিনী। আর এতে সহায়তা করেছেন স্থানীয়েরা। তিনি একটি অডিও-বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, গোটা দেশেরই তার বাহিনীকে সমর্থন করা উচিত। কারণ তার বাহিনী ‘ন্যায়ের পদযাত্রা’য় নেমেছে। রোস্তভ-অন-ডন থেকে মস্কোর দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। এর পর মস্কোর দিকে আরো কয়েক শ’ কিলোমিটার এগোয় তারা। তার পরেই অভিযান বাতিল ঘোষিত হয়। সূত্র : আল জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি ও অন্যান্য।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে যাত্রীবাহি বাসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচরে যায় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার কমর আব্বাস খোখর ও তার পরিবারকে বহনকারি একটি প্রাইভেটকার। তবে প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে গেলেও তারা অক্ষত রয়েছেন।
আজ ২৬মে শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টায় উপজেলার রামপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তবে প্রাইভেটকারে থাকা ডেপুটি হাই কমিশনার কমর আব্বাস খোখর, তার স্ত্রী রেহেনা সারোয়ার খোখর, মেয়ে হুদা আব্বাস খোখর ও ছেলে মোহাম্মদ খোখর অক্ষত রয়েছেন। হাইওয়ে পুলিশ পাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়া বাসের চালক মোঃ সাইফুল ইসলাম-(৩০) কে আটক করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস জানান, পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার কমর আব্বাস খোখর নিজে প্রাইভেটকার চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ জেলার শ্রীমঙ্গল বেড়াতে যাচ্ছিলেন।
‘বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রাইভেটকারটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলার রামপুর এলাকায় পৌছলে হবিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দুরন্ত পরিবহনের একটি বাস প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেটকারটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেলেও প্রাইভেটকারে থাকা ডেপুটি হাই কমিশনার এবং তার পরিবারের সদস্যরা অক্ষত থাকে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর ডেপুটি হাই কমিশনার ও তার পরিবারের সদস্যরা হাইওয়ে থানায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে একটি ভাড়া মাাইক্রোবাসে করে তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চলে যান। তিনি বলেন, আমরা বাসের চালক মোঃ সাইফুল ইসলামকে আটক করেছি।
অনলাইন ডেস্ক :
একদিনেই দখলদার ইসরায়েল হামলা চালাল চার দেশে। আজ ৬ মে মঙ্গলবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সংস্থাটির লাইভ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সোমবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে অন্তত ৫৪ জনকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েল। এছাড়া ইসরায়েল একইদিনে ইয়েমেন, লেবানন এবং সিরিয়ায়ও বিমান হামলা চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইয়েমেনের বন্দর নগরী হোদেইদায় অন্তত ৩০টি যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে দু’জন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। এছাড়া লেবানন ও সিরিয়াতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এর আগে গত রবিবার গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা। এই পরিকল্পনার মধ্যে গাজা পুরোপুরি দখল ও ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো বিষয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
এরইমধ্যে হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনা ডেকে পাঠিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা আর হামাসকে পরাজিত করতে চাপ বাড়ানোকে তারা কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা রবিবার সন্ধ্যায় গাজায় হামলা বাড়ানো নিয়ে বৈঠকে বসে। সেসব বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। সূত্র: আল-জাজিরা