অনলাইন ডেস্ক :
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আজ ১৫ জানুয়ারি বুধবার জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চার সংস্কার কমিশনের প্রধান তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
আরও পড়ুন
ছাগলকাণ্ডের আলোচিত সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেফতার
তারা হলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আরও পড়ুন
টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত হলো এমা রেনল্ডস
এখন প্রধান উপদেষ্টার সাথে চার সংস্কার কমিশনের প্রধানের বৈঠক চলছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
এর মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। বাকি চারটি কমিশনের প্রতিবেদন আজ জমা দেওয়া হলো।
আরও পড়ুন
অপরাধী ধরতে কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না:: ডিবি প্রধান
সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করবে। চলতি মাসেই এ আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে যেসব প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রস্তাবগুলো কবে, কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হবে, তার একটি রূপরেখা আসতে পারে দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার মাধ্যমে।
অনলাইন ডেস্ক :
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল ২৪ অক্টোবর বুধবার রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরদিনই নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ সিদ্ধান্তে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে গতকাল রাতেই বিবৃতিতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান নিষিদ্ধকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শক্তি ছিল ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন। তবে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের অনেকের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব, মারামারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক বাণিজ্য, বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে হামলা, দমনপীড়ন, অস্ত্রবাজির মতো অপরাধের শত শত অভিযোগ ওঠে।
এই সময়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অন্তত অর্ধশত প্রাণহানি ঘটেছে। ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস এবং ২০১৯ সালে আবরার হত্যায় সংগঠনটি ধিকৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘গেস্ট রুম’ নামে নিপীড়নের কুখ্যাতিও রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল দমনকারীর ভূমিকায়। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরুর পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মারমুখী ছিল। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নজিরবিহীন মারধর করে, যা থেকে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিনেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অভ্যুত্থান দমনে অস্ত্র হাতে রাজপথে দেখা যায়। অভ্যুত্থানের সময় এবং শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র পাওয়া যায়। মধ্য জুলাই থেকেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়েছে অভ্যুত্থানকারীরা। ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
প্রজ্ঞাপনেও ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ। এসবের প্রমাণ দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীর অপরাধ আদালতেও প্রমাণ হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও জনগণের ওপর আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী; অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক, উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সরকারের কাছে এসব কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন নামাঙ্কিত রাজনৈতিক শাখা-২-এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।
আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী, নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদনে ৩০ দিন সময় পাবে ছাত্রলীগ। আবেদন করলে সরকার তা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ পাবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কার্যালয় বন্ধ করবে সরকার। ব্যাংক হিসাব বা অন্য সম্পদ জব্দ হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করতে পারবে না। সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে বিবৃতি, বিজ্ঞপ্তি, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসমক্ষে বক্তৃতা নিষিদ্ধ হবে।
গত ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একই আইনে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের আবেদনে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিলের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নুসরাত তাবাসসুম বলেন, জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন আজ। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায়। আর কোনো ছাত্র সংগঠন যেন এমন সন্ত্রাসী না হয়।
সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, যারা কথায় কথায় আন্দোলনে জঙ্গিবাদ খুঁজত, তাদেরকেই জঙ্গি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের গর্ত থেকে বের করে ধোলাই দিতে হবে।
আশরিফা খাতুন বলেন, আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ রাজাকার দমন হয়েছে বলে উল্লাস করেছিল। যখনই কোনো ন্যায্য দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়েছি, ছাত্রলীগ মেরেছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে, সেখানেও মারত। কোনোভাবেই ছাত্রলীগ যেন ফিরতে না পারে।
অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে না বললেও উচ্ছ্বাস দেখায়নি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ছাত্রলীগ খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি, গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে; ছাত্রলীগ এককভাবে বেশি করেছে। ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে এবং শহীদ হয়েছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে ছাত্র রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। সুস্থ রাজনীতিচর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধই সমাধান নয়। সংগঠনটির যারা সন্ত্রাস করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ডা. সাদেক আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে ছাত্রলীগ। সন্ত্রাস, নিপীড়ন, নির্যাতনের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে চায় না। ছাত্রলীগের অপরাধীদের বিচার চায়।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড বলেন, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকে সাধুবাদ জানাই। নিষিদ্ধ হলেই অপতৎপরতা বন্ধ হবে না। অপরাপর সংগঠনের সঙ্গে আলাপে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ছাত্রলীগের তৎপরতা বন্ধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বোস বলেন, নির্বাহী আদেশে কয়েক দিন আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনে তা বদলেও গেছে। একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা কতখানি ফলপ্রসূ হবে, জানি না। নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে কতটুকু নিঃশেষ করা যাবে, জানি না। ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করতে হবে আদর্শের জায়গায় এবং মাঠের রাজনীতিতে। রাজনৈতিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
ভারতব্যাপী মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে প্রতিবাদী সংগীতযাত্রা ‘সং মার্চ’ শুরু করেছে জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আজ ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় পল্টনের মুক্তাঙ্গন থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
মুক্তাঙ্গন থেকে পিকআপভ্যানে করে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করতে করতে সংগীত যাত্রা শুরু করেন জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্যরা। এই ‘সং মার্চ’ থেকে ভারতব্যাপী মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাসে প্রতিবাদলিপি দেবেন তারা।
‘সং মার্চ’ পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি কবি মুহিব খান বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে সারা ভারতজুড়ে নানা সময়ে নানা স্থানে নানাভাবে সেখানকার মুসলমানদের ওপর হত্যা, গুম, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ, উচ্ছেদ ও লাঞ্ছনাসহ নানারকম নির্যাতন সংঘটিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা থেকে নিয়ে ২০০২ সালে গুজরাটের নৃশংস মুসলিম হত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞ, ২০১৩ সালে মুজাফফরাবাদের মুসলিম হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ, ২০২০ সালে দিল্লিজুড়ে মুসলিম হত্যা ও মসজিদসহ বিভিন্ন মুসলিম ঐতিহাসিক স্থাপত্যকলা ধ্বংসযজ্ঞ, সর্বশেষ ভারতীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর সম্পদ হরণ ও প্রতিকার হননের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ভারতের পার্লামেন্টে গৃহীত ওয়াকফ আইন সংশোধন বিলকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মুসলমানদের ওপর যে নিধন ও নির্যাতন চলছে আমরা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অঙ্গ ও অংশ হিসেবে এবং আধুনিক বিশ্বের মানবতাবাদী সভ্য মানুষ হিসেবে এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কবি মুহিব খান আরো বলেন, আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভারতের ধর্মান্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং কখনো কখনো এসব কর্মকাণ্ডে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার বিরুদ্ধে শ্লোগান, সংগীত এবং সুস্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে দেশ ও বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই যে, ভারতসহ পৃথিবীর যেকোনো ভূখণ্ডে নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে আমরা আছি। শুধু মুসলিমরাই নন, নির্যাতন অন্যায় ও অমানবিকতার শিকার যেকোনো মানুষের পক্ষেই আমাদের অবস্থান। আমরা ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারতীয় মুসলিমদের নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার এবং নিজ ধর্মীয় অনুশাসন পালনের পূর্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করতে এবং ভারতীয় মুসলমানদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা সুরক্ষায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।
কবি মুহিব খান বলেন, আমরা উগ্রতা ও সহিংসতায় বিশ্বাসী নই। আমরা চাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। আমরা চাই ধর্মান্ধ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পতন। আমরা চাই পৃথিবীর সব দেশের সব মানুষ নিজেদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক। আমরা চাই বিশ্ব মানবতা এবং প্রতিটি মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিজয় হোক।
চলারপথে রিপোর্ট :
ঢাকা থেকে বরিশালগামী একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে বাসটির অধিকাংশ পুড়ে গেলেও যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে দিতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। বাসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে ত্রুটির কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে বাসটির শ্রমিকরা। তবে আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি কেউ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল এলাহী রেস্টুরেন্ট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে বরিশালগামী বিজনেস ক্লাস বাসটিতে ১৫ থেকে ১৬ জন যাত্রী ছিল। রাত ১২টার দিকে বাসটি বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর কটকস্থল এলাহী রেস্টুরেন্ট এলাকা অতিক্রমকালে বিকট শব্দে পেছনের অংশে বিস্ফোরণ হয় এবং আগুন ধরে যায়। যাত্রীরা চিৎকার দিলে বাসের শ্রমিক-কর্মচারিরা বাস থামিয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিলে যাত্রীরা নেমে যান। এ সময় আশপাশের লোকজনের সহায়তায় বাসের শ্রমিকরা আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। খবর দেয়া হয় গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে। গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় অধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের সাব স্টেশন কর্মকর্তা আকতার উদ্দিন জানান, অগ্নিকাণ্ডে বাসটির পেছনের অংশে অনেক ক্ষতি হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। ইঞ্জিনে ত্রুটির কারণে বাসে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।
গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি গোলাম রসুল মোল্লা জানান, প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা জানিয়েছেন বাসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিলে বিটক শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে বাসের পেছনের অংশে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। পরে পুরো বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। বাসে আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ৬ সেপ্টেম্বর ‘সুরসম্রাট’ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনিই প্রথম বাঙালি, যিনি সর্বপ্রথম পাশ্চাত্যে উপমহাদেশের রাগসঙ্গীতকে পরিচিত করান।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১৮৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খ্যাতনামা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী ও সরোদবিশারদ। বাবা সঙ্গীতজ্ঞ সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁ, মা সুন্দরী বেগম। ছোটবেলায় তার বড় ভাই ফকির (তাপস) আফতাব উদ্দিন খাঁর কাছে সঙ্গীতের হাতেখড়ি। সুরের সন্ধানে মাত্র ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলে যোগ দিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামে গ্রামে। ওই সময় তিনি জারি-সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি প্রভৃতি গানের সাথে পরিচিত হন। পরে কলকাতায় গিয়ে প্রখ্যাত সঙ্গীত সাধক গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বাঁশি, পিকলু, সেতার, ম্যান্ডোলিন, বেঞ্জো ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন সঙ্গীত পরিচালক অমৃত লাল দত্ত ওরফে হাবু দত্তের কাছে। সেই সাথে তিনি লবো সাহেব নামে এক গোয়ানিজ ব্যান্ডমাস্টারের কাছে পাশ্চাত্য রীতিতে এবং বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ অমর দাসের কাছে দেশীয় পদ্ধতিতে বেহালা শেখেন। এ ছাড়া হাজারী ওস্তাদের কাছে শেখেন মৃদঙ্গ ও তবলা। ১৯১৮ সালের পর তিনি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করে। আলাউদ্দিন খাঁ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে মদিনা ভবনে মারা যান। রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারতে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম কিংবা মৃত্যু কোনো দিবসই পালন করা হয় না। অপর দিকে তার স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে নামে-বেনামে বেদখল হয়ে যাচ্ছে জমিজমা, বাড়িঘর, নিজ হাতে তৈরি করা মসজিদের জায়গা ও পুকুর। সবমিলিয়ে নিজ জন্মভূমিতেই অবহেলিত উপমহাদেশের সঙ্গীতজগতের কিংবদন্তি ‘সুরসম্রাট’ খ্যাত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ।