চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে ৪টায় নাসিরনগর উপজেলা ভলাকুট বাজার মাঠে ভলাকুট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী মো. বরকত উল্লার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নান।
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু মিয়ার উদ্যোগে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী সোহাগের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি একেএম খালেদ, সহ-সভাপতি হাজী নুরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মো. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. ইব্রাহিম ভূইয়া রেনু, আবদুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল হোসেন চকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক (২) বশির উদ্দিন চৌধুরী, আজিজুল রহমান চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান হাজী তারেক মিয়া, আলমগীর চেয়ারম্যান, আজদু মেম্বার, সৈয়দ আবু সারোয়ার, ওবায়দুল হক, মো. আব্বাস মিয়া, উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. জামাল আহাম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. নজরুল ইসলাম, উপজেলা নবীন দলের সভাপতি মো. আমসু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে ২৮ আগস্ট বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতার সাথে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়।
তাই সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৮ (১) ধারার ক্ষমতাবলে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত ১ আগস্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল করল।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত।
স্টাফ রিপোর্টার:
১১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ মুক্ত দিবস। নানা আয়োজন ও আননন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পালিত হল দিবসটি। এই উপলক্ষে গতকাল রবিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে উপজেলার গোলচত্বরে সম্মুখ সমরের ¯ভৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে সম্মুখ সমর থেকে একটি র্যালি বের হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্ত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে সম্মুখ সমরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সম্মুখ সমরে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের প্রশাসক অরবিন্দ বিশ্বাসের সভাপতিত্ব আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিমা সুলতানা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা শারমিন, বাংলাদেশ আইনসমিতির সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান আনসারি, আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ রহমান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাসিম, বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ জসিম উদ্দিন আহমেদ, হেবজুল বারী, মোজাম্মেল হক গোলাপসহ বিশেষ ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এদিনেই পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে আশুগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যরা।
অনলাইন ডেস্ক :
অবশেষে নির্বাচনি মাঠ থেকে সরে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ফটিকছড়ি আসনের ফুলেরমালা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
৪ জানুয়ারী নিজ বাসভবনে আয়োজীত এক বিশেষ প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যে এ ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করে বলেন, ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ)’র পক্ষ হতে আমি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি সহ সর্বমোট ৪২ জন প্রার্থী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছি।
সংবিধান রক্ষার এই নির্বাচনে আমিসহ বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ)’র অন্যান্য প্রার্থীগণ ব্যাপক প্রচার প্রচারণা ও গনসংযোগ পথসভা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী আমেজে আমরা আমাদের কার্যক্রম ব্যাপক ভাবে চালিয়ে আসছি।
আপনারা জানেন যে, আমার নির্বাচনী এলাকা ২৭৯, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়িতে বিগত ১৮ জানুয়ারী হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত আমাদের দলীয় প্রতীক “ফুলের মালা” মার্কার সমর্থনে ব্যাপক গনসংযোগ ও পথসভা হয়েছে। ফটিকছড়িবাসীর অকুন্ঠ ভালবাসায় বাগানবাজার হতে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ১৮টি ইউনিয়ন ও ০২ টি পৌরসভার জনসাধারণের ভালবাসা ও সমর্থনে আমি আবেগে আপ্লুত হয়েছি।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৪ দলীয় জোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান জানিয়ে ও ফটিকছড়ির সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার নিমিত্তে আমি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকারের কোন অসুবিধা হতে পারে এমন কিছু করতে চাইনা।নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফটিকছড়ি আসন থেকে সরে দাড়ালাম, দেশের অন্য আসনগুলোতে আমাদের প্রার্থী থাকবে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সবাই আমাকে ভালবাসে, ফটিকছড়িবাসীও আমাকে ভালবাসে।
আমি ফটিকছড়িবাসীর সাথে সবসময় সুখে দুঃখে পাশে ছিলাম, আছি ও থাকবো।
এতে উপস্থিত ছিলেন, তরিকত ফেডারেশনের নেতা সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মোহাম্মদ শাহজালাল, আলমগীর আলম, মওলানা কাজী নিজাম মোরশেদ প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের উদ্যাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচির সভাপতিত্বে ও সাবেক জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলী আজমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট শফিকুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট গোলাম সারোয়ার খোকন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ.বি.এম. মমিনুল হক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আনিসুর রহমান মঞ্জু, সাবেক কোষাধক্ষ্য জসিম উদ্দন রিপন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট তারিকুল ইসলাম রুমা, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি হেবজুল বারী, জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সাজিদুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে সকল নেতাকর্মীদের নিরলসভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। পরে নির্যাতিত ত্যাগীদের বাদ দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির চলমান রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে বক্তারা বলেন, জেলা বিএনপির সিনিয়র ও ত্যাগী এবং কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি করে জেলার কাক্সিক্ষত সম্মেলন করতে যাচ্ছে। তাই প্রশ্ন জাগে সিনিয়র নেতাদের কি অপরাধ তারা আজ বঞ্চিত।
বক্তারা সম্মেলনকে সামনে রেখে একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ বিগত ফ্যাসিস সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে ত্যাগীদের নিয়ে তালিকা করার দাবি জানান।
বক্তারা আরো বলেন, প্রত্যেকটি উপজেলায় ত্যাগীদের বঞ্চিত করে নিজস্ব পকেটের লোক দিয়ে সম্মেলনের চিত্র বারবার কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকে জানানো হয়েছে। দলের ৯০ ভাগ ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সম্মেলন কখনো স্বচ্ছ হবে না।
সমাবেশে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যায়’ ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র দেশে শহীদ হয়েছেন ৮৭৫ জন মানুষ। যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথযাত্রায় বিএনপির ভূমিকা, অবদান ও প্রত্যাশা’ বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের জনগণকে বারবার ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতাকে যখনই গ্রাস করেছে স্বৈরতন্ত্র, প্রতিবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বাকশালের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, দেশের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।
‘সেই ধারাবাহিকতায়, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে চূর্ণ করে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আবারও মুক্তির স্বাদ পায়, গণতন্ত্রের পথ সুগম করে। অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার রয়েছে, যাদের বছরের পর বছর ধরে ত্যাগের মহিমায় আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। ’
ফখরুল বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন মানুষ, যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ সব শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এ বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতা-কর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পোশাক শ্রমিক কিংবা রিকশাচালক, পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র; বাম কিংবা ডান আদর্শের অনুসারী; সব মত ও পথের রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতাহতের পরিচয় যাই হোক না কেন, প্রতিটি প্রাণের মূল্য ও রক্তের মর্যাদা সমান। আর তাই সমান গুরুত্বের সঙ্গেই প্রণয়ন করতে হবে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তালিকা। নিশ্চিত করতে হবে সুবিচার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যে জাতীয় ঐক্য আমরা দেখতে পাই, তা কিন্তু হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটি মূলত অবৈধ সরকারের অত্যাচার-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বঞ্চনা-অবজ্ঞা এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। যাতে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নয়, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আর তাই বিএনপির যে ৬০ লাখ সদস্যের নামে ফ্যাসিবাদের সময় মিথ্যা মামলা হয়েছে, তার সুবিশাল অংশ সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের যড়যন্ত্র ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে রুখে দাঁড়ায়। ফলে যার-যার অবস্থান থেকে জনগণের কাতারে নেমে আসে বিএনপি ও সমমনা সব রাজনৈতিক দল, তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে নির্মমভাবে হত্যা করে পুলিশ। একই দিন চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরামকেও হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডগুলোতে সমগ্র বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, বেগবান হয় আন্দোলন।
বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ১৬ বছর ধরে আওযামী লীগের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবি মামলা ও নৃশংস নিপীড়ন দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এর ফলস্বরূপ জাতিসংঘসহ স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ায়। তৃণমূলের স্পন্দন ও গণমানুষের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে, অবিরাম জুলুম-অবিচারের মাঝেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবদানে গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের ঐক্যকে ধারণ করে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তির বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে।
‘বাংলাদেশের জনগণের এ বিজয় শুধুই দেশের মালিকানা ফিরে পাওয়ার বিষয় নয়। বরং এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রতিশ্রুতি, যা অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। ’
তিনি বলেন, বিজয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য নির্যাতিত মানুষের বেদনার অপ্রকাশিত ইতিহাস, গুম হওয়া ছেলের ফেরার প্রতীক্ষায় ব্যথাতুর মায়ের ডাক, স্বামী হারানো বেদনাবিধূর স্ত্রীর অনন্ত আর্তনাদ, পঙ্গু বাবার জন্য সন্তানের হৃদয়বিদারক হাহাকার, আর কারাগারে বন্দী ভাইয়ের জন্য বোনের নীরব প্রার্থনা। তাদের সবার ১৬ বছরের রক্ত, শ্রম ও অশ্রু দিয়ে প্রতিটি পরিবারের ক্ষোভ, ক্রোধ ও অব্যক্ত বিস্ফোরণ বুকে ধারণ করে চলমান ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। বস্তুত ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত শহীদ এক হাজার ৫৫১ জন, গুম ৪২৩ জন (সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন), আসামি ৬০ লাখ, এবং মামলা দেড় লাখ—এসব কেবল বিএনপির ত্যাগের পরিসংখ্যানই নয়, বরং বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পথে দলটির অবিচল সংগ্রাম ও অবদানের প্রতিফলন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত ছিল, গণতান্ত্রিক প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী- তাদের সবার আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার। সব শ্রেণি-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সেই পথযাত্রায় ও রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে গড়ে তুলতে হবে একটি নিরাপদ ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিফলন ঘটবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।