চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে ইসমাইল মিয়া (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে টয়লেটের পরিত্যক্ত ট্যাংকে ফেলে রাখলেন তার পরকীয়া প্রেমিকা। আজ ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর টানপাড়া গ্রামের এক পরিত্যক্ত টয়লেটের ট্যাংক থেকে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পরকীয়া প্রেমিকা হোসেনপুর টানপাড়া গ্রামের শান্তা আক্তার (৩৫) ও তার স্বামী সুমন মিয়াকে (৪০) আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে স্থানীয় লোকজন। নিহত ইসমাইল মিয়া আশুগঞ্জ উপজেলার লামা শরীফপুর গ্রামের মৃত উজির আলীর ছেলে। তিনি ৬ সন্তানের জনক।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ইসমাইল মিয়া নিখোঁজ ছিলেন। তার পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজে না পেয়ে আজ শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। এরই মধ্যে বিকেল আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন হোসেনপুর টানপাড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির টয়লেটের ট্যাংকের ভেতরে তার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠায়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক পরকীয়া প্রেমিকা শান্তা বেগম জানান, ইসমাইল মিয়ার সাথে তার দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেম চলছিল। ইসমাইল মিয়া বিভিন্ন ছলে প্রায়ই তার সাথে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় তার রাজমিস্ত্রি স্বামী কাজের সুবাধে বাড়িতে না থাকায় ইসমাইল তার ঘরে প্রবেশ করে তার সাথে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। তিনি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়ে যাওয়ায় শান্তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই শান্তা ইসমাইলকে ঘর থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। এ সময় ইসমাইল শান্তার অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ১৪ বছরের মেয়ে কেয়াকে ঘুমের মধ্যে ঝাপটে ধরে। এতে শান্তা ক্ষিপ্ত হয়ে রাজমিস্ত্রির যন্ত্র ‘কোটাবাড়ি’ দিয়ে ইসমাইলের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে শান্ত তার পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর মেয়ের সহযোগিতায় লাশটি পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির টয়লেটের ট্যাংকে ফেলে দিয়ে আসেন। রাতে শান্তার স্বামী ঘরে ফেরেন। তবে মা-মেয়ে স্বাভাবিক থাকেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক সুমন মিয়া এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
তবে নিহতের ছেলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, সুমন ও তার স্ত্রীসহ অজ্ঞাত খুনিরা আর্থিক কোনো কারণে তার বাবাকে খুন করেছে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে আশুগঞ্জ-সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তপন সরকার ও আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: বিল্লাল মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়েছে। খুনের সাথে সরাসরি জড়িত সন্দেহে স্বামী-স্ত্রী দুইজনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ ও তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
পিতৃহীন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মেধাবী শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৭৩তম ব্যাচের (২০১৯-২০ সেশনে)।
তিনি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ভাগ্যের কুঠারাঘাতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় তার।
মুশফিকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। জন্মের দেড়মাসের মাথায় হারান বাবাকে। মায়ের আঁচল ধরেই তার বেড়ে ওঠা তার। মা ও দুই ভাই নিয়ে ছোট্ট সংসার তাদের।
গত মে মাসের ৩১ তারিখে তার কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ধীরে ধীরে শরীরও অকেজো হতে বসেছে। এ অবস্থায় তাকে বাঁচাতে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা খুবই জরুরি। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার। এতে ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে তার জীবন প্রদীপ।
বিগত একমাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি রোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে যাত্রাবাড়ীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস নিচ্ছে। ডায়ালাইসিসের জন্য প্রতিমাসে খরচ ৩৫ হাজার টাকা।
চিকিৎসকরা বলেছেন, মুশফিকের দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন ও চিকিৎসা বাবদ দরকার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এ ব্যয় বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাকে বাঁচাতে সমাজের হৃদয়বান ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন মুশফিকের পরিবার ও তার বন্ধুরা।
মুশফিকের বড় ভাই নাসাদুল ইসলাম তাফসির বলেন, আমার বাবা মারা গেছে ২০ বছর আগে। তখন ছোট ভাই মুশফিকের বয়স ছিল দেড় মাস। আমাদের মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে লালন পালন করে বড় করেছেন। মুশফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর টিউশনি করে সে নিজের খরচ চালাচ্ছিল। সম্প্রতি তার কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। তার চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেই অর্থ খরচ করার সামর্থ্য আমাদের নেই। আমি নিজেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে অনার্স বিভাগে পড়াশোনা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবারের আর্থিক উপার্জনেরও তেমন ব্যবস্থা নেই। এতে আমরা অনেকটা দিশাহারা হয়ে পড়েছি। মা ছোট ভাইয়ের এই করুণ পরিস্থিতি দেখে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ক্ষমতা আমাদের নেই। সমাজে অনেক বিত্তবান রয়েছেন। সবাই যদি আমার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে আমার ভাইটা নতুন জীবন ফিরে পাবে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাই তিনি যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুশফিকে বাঁচিয়ে আমার মায়ের কোলে আবার ফিরিয়ে দেন।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডাচ বাংলা ব্যাংক হিসাব: মুশফিকুর রহিম। হিসাব নাম্বার: ১২৬১৫৮০০১২২৫৬
রকেট: ০১৭৬৪৪১২৬৬৬৪ নগদ: ০১৭৩৫৪৩৬০৪৫ বিকাশ: ০১৭৬৪৪১২৬৬৬ প্রয়োজনে: ০১৭৩৫৪৩৬০৪৫ (মুশফিকের বড় ভাই)
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে পৃথক অভিযানে ২৫ কেজি গাঁজাসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে পৃথক অভিযানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ টোলপ্লাজার সামনে থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মাদকদ্রব্য বহনকারী একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
পুলিশ মিডিয়া উইংস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার ভাদুকল্গা গ্রামের খোকন (৩৩), একই গ্রামের মোঃ কামরুল হাসান (২৯), একই উপজেলার দাপুনিয়া কলাপাড়া গ্রামের মোঃ সিরাজুল ইসলাম (৩৫) ও বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার জীলবুনিয়া গ্রামের রাসেল খান (৩৫)।
পুলিশ মিডিয়া উইংস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার গভীর রাতে আশুগঞ্জ টোলপ্লাজায় একটি প্রাইভেটকার আটক করা হয়। পরে প্রাইভেটকারে তল্লাশী চালিয়ে ২০ কেজি গাঁজা উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ী খোকন, কামরুল হাসান ও সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। পৃথক অভিযানে মঙ্গলবার রাতে একই স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী রাসেল খানকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচন। নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বর্তমানে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ (মোটর গাড়ি প্রতীক) গত শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মেহরিন জানান গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে আসিফের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি নিখোঁজ রয়েছেন বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন তার স্ত্রী মেহরিন।
তবে গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত আসিফের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বা আশুগঞ্জ থানায় জানানো হয়নি এবং কোন ধরনের অভিযোগও দেয়া হয়নি। আবু আসিফ আসলেই নিখোঁজ হয়েছেন নাকি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে গেছেন তা নিয়ে এলাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আসিফের স্ত্রী মেহরিন এবং বাসার কেয়ার টেকার মোঃ ইউসুফের মাঝে কথোপোকথনের একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়। সেখানে আসিফের স্ত্রী কেয়ারটেকারকে আসিফের জন্য জামা কাপড় ও জুতা দ্রুত গোছানোর জন্য এবং বাড়ির সিসি ক্যামেরাগুলো বন্ধ করতে দিতে বলতে শোনা যায়।
সেখানে আসিফের স্ত্রী বলেন, ইউসুফ (কেয়ারটেকার) স্যারের (আসিফ) কতগুলো জামাকাপড়, গেঞ্জি, প্যান্ট, শীতের কাপড়, জুতা মোজা ব্যাগে ভরে দিয়ে দে তারাতারি। আরে তারা তারি দে। কেউ যেন না জানে স্যার কই গেছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দে। ক্যামেরার লাইন বন্ধ কর বাসার। স্যার গেলে আরও ১০ মিনিট পর ক্যামেরার লাইন বন্ধ করবে।
এমন কথোপকথন ফাঁস হবার পর বিএনপি নেতা আসিফ স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছেন বলেই ধারণা করছেন অনেকে।
এদিকে আবু আসিফ আহমেদের নিখোঁজের ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ ৩০ জানুয়ারি সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের একথা বলেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রার্থীকে দ্রুত খুঁজে বের করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান সোমবার দুপুরে বলেন, প্রার্থী আসিফ নিখোঁজ কি না সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এমনকি আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আসিফ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা নির্বাচন অফিস ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। নির্বাচনের মাঠে পেনিক সৃষ্টি করার জন্য আসিফ কৌশল নিয়ে থাকতে পারেন। তিনি নিখোঁজ নন তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। এরা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া-(কলারছড়ি প্রতীক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী-(লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এই আসনের ২ বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (আপেল প্রতীক), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল-(গোলাপ ফুল), ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ-(মোটর গাড়ী প্রতীক)।
তবে প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন।
উপ-নির্বাচনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করলেও উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া সমর্থক গোষ্ঠির ব্যানারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা আজাদ ওরফে শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কলারছড়ির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নেতৃবৃন্দ ভোটের দিন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্থানীয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারনামীয় এক আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। বাদীর অনাপত্তি ও উপজেলা বিএনপিসহ স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে গতকাল ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছেড়ে দেওয়া ওই আসামির নাম রোমান মিয়া। তিনি ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গত ২০ আগস্ট আশুগঞ্জ থানায় হওয়া একটি মামলার ৬ নম্বর আসামি। গত বুধবার দিবাগত রাতে তাঁকে আটক করে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল সেনাবাহিনী।
পুলিশ বলছে, বাদী ভুলক্রমে মামলায় ওই ব্যক্তিকে আসামি করেছে বলে আদালতে হলফনামা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে আসামি ছেড়ে দেওয়ার পর দুপুরে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেনসহ পুলিশের তিন সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া অন্য দুই সদস্য হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার ও প্রদ্যুত ঘোষ চৌধুরী। তাঁদের প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, ওসি ও দুই এসআইকে প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে। প্রত্যাহারের সাথে আসামি ছেড়ে দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশুগঞ্জ বাজারের ভাড়া বাসা থেকে রোমান মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন সেনাসদস্যরা। রাত থেকেই তাঁকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মী ও উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লোকজন থানায় চাপ দিতে থাকেন। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকালে থানার সামনে অনেকেই অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে থেকে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে আশুগঞ্জ গোলচত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। তখন রোমান মিয়াসহ অনেকেই ককটেল বিস্ফোরণ করে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা পিস্তল দিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়েন। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হন।
এ ঘটনায় ২০ আগস্ট রমজান মিয়া নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিনসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলার ৬ নম্বর আসামি রোমান। রোমানের ছোট ভাই ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মিয়া মামলার ৫ নম্বর আসামি।
মামলার বাদী রমজান মিয়া বলেন, ভুল করে রোমান মিয়াকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। রোমানের বিষয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপি দু’টি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ায় বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, বাদী বিএনপির সমর্থক এবং ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন। উপজেলার একটি স্বার্থান্বেষী মহল, যারা জীবনে কোনো দিন বিএনপি করেনি, তারা এখন নিজেদের বিএনপির নেতা-কর্মী দাবি করে ওই আসামিকে ছাড়িয়ে নেয়। এর সঙ্গে উপজেলা বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কারণ রোমান মিয়া সুবিধাবাদী ও আওয়ামী লীগের লোক। তিনি আওয়ামী লীগের একাধিক সভায় উপস্থিত ছিলেন। এক সভায় সারা জীবন আওয়ামী লীগ করবেন বলে বক্তব্য দেন, যেটি ভাইরালও হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, সেনাসদস্যরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে মামলার বাদী থানায় গিয়ে তাঁকে ভুলক্রমে মামলার আসামি করা হয়েছে বলে জানান। এ বিষয়ে তিনি আদালতে একটি অ্যাফিডেভিট (হলফনামা) দিয়েছেন এবং পুলিশকে সেটি কপি দেন। বাদীর অভিযোগ না থাকায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সূত্র : প্রথম আলো
চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাস পর আশুগঞ্জ সার কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয়েছে শুক্রবার রাত থেকে। কারখানা বন্ধ থাকায় দীর্ঘ এ সময়ে কমপক্ষে ৭০০ কোটি টাকার বেশি প্রায় ৩ লাখ ( ২ লাখ ৯০ হাজার) টন ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। প্রথমে ওভারহোলিং (এসএনসি বয়লারের টিউবসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন ও মেরামত) ও পরে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় গত মার্চ থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। দীর্ঘ সময় পর কারখানা উৎপাদনে ফিরে আসায় শ্রমিক-কর্মচারিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ৯০ দিনে কারখানার ওভারহোলিং কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এবং চলতি বছরের জুনের শুরুতেই পুনরায় উৎপাদনে ফেরার লক্ষ্যে গত ১ মার্চ থেকে কারখানাটি বন্ধ কওে কর্তৃপক্ষ। জার্মান, কানাডাসহ বিদেশি প্রকৌশলীদের সহায়তায় ১৫ জুন ওভারহোলিং শেষ করে কর্তৃপক্ষ। ওভারহোলিং কাজ শেষ হলেও কারখানার গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কারখানাটির স্টার্টআপ কওে ওভারহোলিং কাজ যাচাই বা উৎপাদনে ফিরতে পারেনি। অবশেষে চলতি মাসের প্রথমদিকে কারখানার উৎপাদন বিভাগে গ্যাস সরবরাহ দেয় বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানাটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করে এবং শুক্রবার রাত (০৮-০৫) থেকে পুনরায় ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, কারখানাটি চালু থাকলে দৈনিক কমপক্ষে ১ হাজার থেকে সাড়ে ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। প্রতিটন ইউরিয়ার তালিকাভুক্ত ডিলারের কাছে বিক্রয়মূল্য ২৫ হাজার টাকা। এ হিসেবে গত সাড়ে ৯ মাসে কমপক্ষে ৭০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ২ লাখ ৯০ হাজার টন ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় পরে হলেও কারখানা চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ।
এ ব্যাপারে কারখানার সিবিএ এর সাধারণ সম্পাদক মো. কবীর হোসেন বলেন, কারখানা বন্ধ থাকলে দৈনিক ১ হাজার থেকে সাড়ে ১১০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত হয়। দীর্ঘ সময় পর হলেও কারখানা চালু হওয়ায় তারা সরকার ও কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুনীল চন্দ্র দাস বলেন, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয়েছে।