বিনামূল্যে দুই হাজার কুরআন বিতরণ

ধর্ম, সারাদেশ, 27 January 2025, 964 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে দুই হাজার কুরআন বিতরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় দাওয়াহ সোসাইটি। আজ ২৭ জানুয়ারি সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা মঞ্চে কুরআন বিতরণ করা হয়।

banner

সংগঠনের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাংগীর আলম।

আলোচক হিসেবে ছিলেন লন্ডন আল কুরআন অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হাফেজ ড. মুনির উদ্দিন আহমদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম।

প্রধান আলোচক হাফেজ ড. মুনির উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাত্র সাত ভাগ মানুষ কুরআন বুঝে। বাকী কিছু মানুষ কুরআন পড়ে কিন্তু বুঝে না। তবে অধিকাংশ মানুষের কাছে কুরআনই পৌঁছায়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা কুরআন পড়ায় এবং শিখায়। কিন্তু কুরআন মানুষের কাছে পৌঁছে দিবে এমন মানুষ বা প্রতিষ্ঠান নেই। আল কুরআন একাডেমির মাধ্যমে সেই কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বের ২৫টি দেশের প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষের কাছে কুরআন বিতরণ করেছি। সকল মানুষের কাছে কুরআন পৌঁছে দিতে চাই।’

প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, কুরআন মানুষের হেদায়াতের জন্য নাজিল হয়েছে। কুরআন মানুষকে সত্য পথ দেখাবে। সকল অন্যায় খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখবে। কুরআন নাজিল হয়েছে বুঝার জন্য। আমাদের মুসলমান মুত্তাকী হওয়ার জন্য কুরআন বুঝা অপরিহার্য। কুরআন বুঝা ছাড়া মুত্তাকী হওয়া যাবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ নামে একটি বিভাগ আছে। আমি আশা করি এই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কুরআন শিক্ষা দিবে। কুরআনই একমাত্র কিতাব যেটা মানুষ না বুঝেও পড়ে। এটা কুরআনের প্রতি ভালোবাসা। তোমরা সবাই কুরআন বুঝে পড়বে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করবে।

Leave a Reply

নবীনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে প্রাইভেটকার ও ট্রাক্টরের সঙ্গে Read more

প্রতিপক্ষের হামলায় নারী নিহত, দুইজন আটক

চলারপথে রিপোর্ট : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় খাইরুন Read more

গাজীপুরে মামা হত্যার আসামি ভাগিনা গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : গাজীপুরে আনিসুর রহমান হত্যার মামলার আসামি ভাগিনা Read more

সদর মডেল থানায় যোগদান করেই কঠোর…

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য : আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

শিক্ষার্থীকে ইভটিজিংয়ের দায়ে যুবকের কারাদণ্ড

কসবা, সারাদেশ, 15 July 2025, 208 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ইভটিজিংয়ের দায়ে মো. মাঈনুদ্দিন (২৮) নামে এক যুবককে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ ১৫ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের রাবেয়া মান্নান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।

banner

মাঈনউদ্দিন বায়েক ইউনিয়নের ধোপাখলা গ্রামের ইদন মিয়ার ছেলে।

কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছামিউল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাঈনুদ্দিনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ও ৫০০ টাকা জরিমানা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঈনুদ্দিন উল্লিখিত বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা প্রশাসনকে অবহিত করে। স্থানীয় লোকজন মাইনুদ্দিনকে আটক করে। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছামিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

মুুন্সিগঞ্জে দুই ছিনতাইকারী আটক

জাতীয়, সারাদেশ, 1 April 2025, 454 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অংশের ভিটিকান্দি এলাকায় এয়ারপোর্টগামী মাইক্রোবাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই ছিনতাইকারীকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে তারা।

banner

আটককৃত দুই ছিনতাইকারী হলো, গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে বিল্লাল হোসেন ওরফে ফারদিন (২৩) ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ওমর ফারুক ওরফে চাপাতি ফারুক (৩২)।

গজারিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ৩০ মার্চ রবিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রাম থেকে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য ফারদিনকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে ছিনতাই করা একটি মোবাইল ফোন এবং ছিনতায়ের নগদ ৪৭৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

অপরদিকে ৩১ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে দশটার দিকে সোনারগাঁ উপজেলার চেঙ্গাকান্দি গ্রাম থেকে ওমর ফারুক ওরফে চাপাতি ফারুক নামে ছিনতাইকারী চক্রের অপর সদস্যকে আটক করা হয়। ওমর ফারুক পেশায় একজন সিএনজি চালক হলেও সিএনজি চালানোর আড়ালে ছিনতাই এবং ডাকাতির সাথে জড়িত সে। এ সময় ছিতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ওমর ফারুকের সিএনজিটি জব্দ করেছে পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘটনার পর অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। দুই দিনের টানা অভিযানে দুজনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা কিছু মালামাল উদ্ধার এবং ছিনতাইয়ে কাছে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের ভিটিকান্দি এলাকায় দেশিয় অস্ত্র ঠেকিয়ে ঢাকা এয়ারপোর্টগামী একটি মাইক্রোবাস থেকে ৩টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসটির চালক রাজু বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান গ্রেফতার

আশুগঞ্জ, সারাদেশ, 4 August 2025, 166 Views,

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের আশুগঞ্জ উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মো. আনিসুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৪ আগস্ট সোমবার বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে আশুগঞ্জ বন্দর এলাকার বিওসি ঘাট থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর আওতায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।

banner

আনিসুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।

আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. খায়রুল আলম বলেন, গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে বিওসি ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের পক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা এবং আশুগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

ওসি আরো বলেন, আটক হওয়া আনিসুর রহমান বর্তমানে আশুগঞ্জ থানার হেফাজতে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

গৃহবধূর গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার

সারাদেশ, 28 April 2025, 272 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামে নিজ ঘর থেকে সাথী আক্তার নামের এক গৃহবধূর গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাথী আক্তার একই গ্রামের চাতাল শ্রমিক মিজানুর রহমান মিন্টুর প্রথম স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে মিন্টু ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী পলাতক রয়েছে।

banner

মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী জানান, আজ সকালে স্থানীয়রা মিন্টুর ঘর বন্ধ দেখতে পায়। পরে তারে সন্দেহ হলে ঘরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সাথীর গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। এরপর তারা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ঘটনার পর থেকেই মিন্টু ও তার অপর স্ত্রী পলাতক রয়েছেন। তাদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে তিনি জানান।

লাগবে না কি পাপড়, এভাবে সংসার চলছে নব্বই বছরের ফজলুল হকের

সারাদেশ, 24 February 2025, 353 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
জীবনের শেষ বয়সে এসেও জীবন যুদ্ধে হার মানতে রাজি নয় ফজলুল হক (৯০)। শরীরের চামড়াগুলো টান ধরে শুকিয়ে গেছে। বয়সের ভাড়ে কোমর বাঁকা হয়ে গেছে। এরপরও হালাল পথের আয় দিয়ে নিজে কর্ম করে বাকি জীবন কাটাতে চায় ফজলুল হক। তাই দুই হাতে পাপড় এর বস্তা নিয়ে ‘লাগবে না কি পাপড় এই যে লাগবে না কি পাপড়, মচমচে পাপড় বলে বিক্রি করছেন। মো. ফজলুল হক দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি পৌরসভার মধ্যে বাসুদেবপুর (তারকাটা) এলাকার বাসিন্দা। ফজলুল হক তার দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে এবং তাদের সকলের আলাদা সংসার। বাড়িতে তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী রুনা বেগম। জীবনের শেষ বয়সে এসে কারও উপর নির্ভরশীল বা হাত না পেতে পাপড় বিক্রির টাকায় সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

banner

গ্রামেগঞ্জ ও শহরে ছোট থেকে বড়দের একটি মুখরোচক খাবার হচ্ছে পাপড়। সাধারণত মেলার মাঠ, সিনেমা হলের সামনে, পূজা-পার্বণে, অস্থায়ী বাজার, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ধর্মীয় মাহফিলস্থলে পাপড় বিক্রির ধুম পড়ে যায়। দামে সস্তা এ খাবারটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হলেও মুখরোচক হওয়ায় এর চাহিদার কমতি নেই। জীবনের শেষ বয়সে এসে দুই হাতে বস্তায় নিয়ে পাপড় বিক্রি করে সংসার চালায় ফজলুল হক। দীর্ঘদিন পাপড় তৈরি করে ফেরি করে বিক্রি করে তিনি চালান অভাবের সংসার। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তিনি।

সম্প্রতি ফজলুল হকের সাথে কথা হয়। বলছেন এই যে পাপড় লাগবে পাপড়, মচমচে পাপড়। মুহূর্তে তাঁর নিকট এগিয়ে গিয়ে শুনলাম তার অতীত ও বর্তমান জীবনের গল্প। অভাবের সংসার তেমন লেখা পড়া করতে পারে নাই। প্রথমের দিকে হিলি এলএসডি গোডাউনে বস্তা ভড়াতো এবং বস্তা সেলাই করতো এতে সুন্দর সংসার চলতো তার। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে বড় করে বিয়ে সাদী দিয়ে সবার এখন আলাদা সংসার। বড় ছেলে গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং আর এক ছেলে একটি কারখানায় চাকরি করে। ছেলেরা প্রতি মাসে যে খরচের টাকা দেয় তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই জীবনের শেষ বয়সে এসে পাপড় বিক্রি করে সংসার চালান ফজলুল হক।

তিনি অনেক আগের কথা মাটির বাড়ির দেয়াল ভেঙে পড়ে গিয়ে ছিল আমার স্ত্রীর উপরে তখন তার কোমড়ে প্রচণ্ড আঘাত পায়। চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে মতিঝিল এলাকায় প্রায় দেড় যুগ সময় পার করেন তিনি। মতিঝিল এলাকায় ছেঁড়া, ফাটা ও টুকরো টুকরো করা টাকা কিনে নিতেন তিনি। এরপর ওই টাকা গুলো নাম্বার সহ জোড়া দিয়ে ব্যাংকে দিতো এতে প্রতি হাজারে তার ৪’শ থেকে ৫’শ টাকার মতো ব্যাংক দিতো। তা দিয়েই সংসার চলতো ফজলুল হকের। কিন্তু তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার যেতে বলেন ভারতের বেঙ্গালুরুর। টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় নাই। সেখানে চিকিৎসার ব্যয় প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা। এতো টাকা কোথায় পাবো বলে প্রশ্ন ছোড়ে ফজলুল হক।

রাজধানীতে বাসা ভাড়া ও সংসারের খরচ বেশি হওয়ার প্রায় বিশ বছর আগে চলে আসেন নিজ বাড়ি হিলিতে। বাড়িতে বসে তেল, ময়দা, হলুদ, ডিম, কালোজিরা ও লবণসহ বিভিন্ন মশলা দ্বারা তৈরি কার হয় এই পাপড়। তৈরি করা পাপড় প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই হাতে পাপড়ের বস্তা নিয়ে বিক্রি করেন তিনি।

উপজেলা পরিষদে পাপড় কিনে নেওয়া আরিফ হোসেন নামের এক যুবক বলেন, ফজলু কাকার পাপড় খুবই মজাদার। আমি প্রায়ই জায়গায় দেখা হলেই খাই। আবার মাঝে মাঝে আমার ছেলে-মেয়ের জন্য কিনে নিয়ে যাই।

তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় এর নিকট ফজলুল হক চাচার বিষয়ে কিছু বলতেই তিনি বলেন, আমি ওনাকে আগের থেকে চিনি। আমার জানা মতে ওনি খুব ভালো মানুষ। মাঝেমধ্যে আমার অফিসে আসে আমি তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করি।

পাপড় কেমন বিক্রি হয় জানতে চাইলে ফজলুল হক চাচা বলেন, প্রতিদিন ১’শ থেকে দেড়শ পাপড় বিক্রি করি। একটি পাপড় ৫ টাকা দরে বিক্রি করায় দৈনিক প্রায় ৫’শ থেকে সাতশত টাকা বিক্রি হয়। এখন বেশি লাভ হয় না তেলসহ সব জিনিসের দাম বেশি।
তিনি আরো বলেন, আমার দুই ছেলে তাদের আলাদা সংসার তাদের ও খরচ আছে। বাড়ীতে আমার স্ত্রী (তোমার চাচি) অসুস্থ প্রতিবন্ধী মানুষ। পাপড় ভাজতে হয় গ্যাসের চুলায়। ছেলেরা যে টাকা দেয় গ্যাস সিলিন্ডার ও ঔষধ সহ টুকটাক খরচ করতেই শেষ হয়। তাই কার ও কাছে হাত না পেতে নিজে পরিশ্রম করে সংসার চালায়।

সরকারি কোন সুবিধা পায় কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাও বা ১৮০০’শ টাকা কখন ও দুই মাস আবার কখনো তিন মাস পরে এলা দিয়ে কি হয় বা!

ওই দিন বাদ মাগরিব উপজেলা পরিষদের মসজিদের বাহিরে আমার সাথে দেখা হয় ফজলুল হক চাচার। আমি পাপড় নিতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে বলে তোমাকে টাকা দেওয়া লাগবে না বা। তুমি আমার অনেক গল্প শুনলেন, ছবি তুললেন টাকা নিবো না বা। আমি ৫০ টাকার নোট দিয়ে বললাম চাচা একটা পাপড় দেন বাকিটা রেখে দেন। ওনি বললেন না এতো টাকা নিবো কেন! পরে আমাকে একটি পাপড় দিয়ে ৪০ টাকা ফেরত দেয়। আমাদের সমাজের অনেকের ফজলুল হক চাচার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।(সূত্র :বিবার্তা)