অনলাইন ডেস্ক :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে ঢাকার নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামের মুখ চেপে ধরা সেই পুলিশ কর্মকর্তা মো. আরশাদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তৎকালিন সময় তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এক আদেশে সে সময় ডিএমপি জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে ঢাকার নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামের মুখ চেপে ধরেন পরিদর্শক আরশাদ হোসেন। তার এমন অপেশাদার কর্মকাণ্ডের ফলে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে জনগণের বিরূপ ধারণা সৃষ্টিসহ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা ছাড়াও আরশাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানায় ডিএমপি।
চলারপথে রিপোর্ট :
জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি।
গত মঙ্গলবার পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই দিনে এর সঙ্গে আরো দুটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্য দুটি পণ্য হলো মধুপুরের আনারস ও ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টিকে গত ৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ ও ৩০ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি জিআই-৭৫ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি জিআই সনদপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে পণ্যটির স্বীকৃতি মিলেছে।
এই স্বীকৃতির ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি আন্তর্জাতিকভাবে ভাবমূর্তি বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এতে গুণগত পরিবর্তন ও বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রও তৈরি হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ভোলার দুই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের কাঁচা দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ভোলার জেলা প্রশাসক পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি জিআই-৫৫ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মহিষের দুধের কাঁচা দই জিআই সনদপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে পণ্যটির স্বীকৃতি মিলেছে।
সাগর আর নদীবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের জীবনমানে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। খাবারেও রয়েছে নিজস্বতা। এরই অংশ হিসেবে এ জেলা দীর্ঘকাল ধরে পরিচিতি পেয়েছে মহিষের দুধের কাঁচা টক দই, যা স্থানীয়ভাবে ‘মইষা দই’ নামে পরিচিত। ভোলা জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী জানান, বিষয়টি ভোলাবাসীর জন্য আনন্দের।
এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ভোলায় মহিষ পালনকারী ও দই উৎপাদনকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দইয়ের যে স্বীকৃতি সেটি অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই ভোলার ঐতিহ্য। এটি অন্য জেলার হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা অনেক চেষ্টা করে এটি ফিরে পেয়েছে।
জিআই-৫৫ নম্বরে এটি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। ভোলাবাসী এটি নিয়ে গর্বিত। এর মাধ্যমে এটির বৈশ্বিক স্বীকৃতি মিলেছে। জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রথমত এই পণ্যটি ভোলার বলে চিহ্নিত হলো। দ্বিতীয়ত, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে পণ্যটির বাণিজ্যিকীকরণের সুবিধা বাড়ল। এই দধি এখন দেশের বাইরেও রপ্তানি করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দধি উৎপাদনে মানের উন্নতি হবে। কেননা জিআই স্বীকৃতি পণ্যের মান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।’
পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দধিসহ তিনটি পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তর থেকে এসংক্রান্ত তিনটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি, বাকি দুটি পণ্য হলো মধুপুরের আনারস ও ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই। আরো বেশ কয়েকটি পণ্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তারা এখনো সার্টিফিকের ফি জমা না দেওয়ায় তাদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়নি। সেগুলো খুব দ্রুত হয়ে যাবে।’
চলারপথে রিপোর্ট :
‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। আজ লাইলাতুল কদর। এটি একটি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ ‘এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সুরা কদর)।
এ রাত কোরআন নাজিলের রাত। মহত্ব ও গুরুত্বসহকারে মহান আল্লাহর ইবাদতের রাত। এ রাত হলো হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাসের চেয়ে উত্তম। ওই ব্যক্তির চেয়েও ভাগ্যবান আর কে হতে পারে, যে এ রাতে নির্ঘুম থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ পেয়েছে। এ পবিত্র রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে আসে মানবজাতির জন্য বরকত, রহমত ও কল্যাণ নিয়ে।
সূর্যাস্তের পরপরই এ রাতে মহান আল্লাহ তার আরশ থেকে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। মায়া আর দয়া নিয়ে, প্রেম ও ভালোবাসা দিয়ে মানবজাতিকে ডাকেন আর বলেন, ‘কে আছ পাপী! তুমি ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। কে আছ দুঃখী! আমি তোমার দুঃখ মোচন করব। কে আছ রোগী! আমি তোমাকে সুস্থ করে দেব। কে আছ দায়গ্রস্ত! আমি তোমাকে দায়মুক্ত করে দেব। তোমাদের কার রিজিকের প্রয়োজন! আমার কাছে চাও, আমি তার রিজিক বৃদ্ধি করব।’ মহান আল্লাহ এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রার্থনায় লিপ্ত হয়, তারা কল্যাণকামী হয়। সৌভাগ্যবান হয়।
শবে কদরের রাতে কুরআন নাজিল সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি রূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘উজ্জ্বল কিতাবের শপথ! নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী, যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয় আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি। এ হলো আপনার প্রভুর দয়া, নিশ্চয় তিনি সব শোনেন ও সব জানেন। তিনি নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল ও এ উভয়ের মাঝে যা আছে সে সবের রব। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করো; তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, তিনিই তোমাদের পরওয়ারদিগার আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও। তবু তারা সংশয়ে রঙ্গ করে। তবে অপেক্ষা করো সে দিনের, যেদিন আকাশ সুস্পষ্টভাবে ধূম্রাচ্ছন্ন হবে। (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-১০)।
শবে কদর ও কোরআন অবতরণ এবং এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে দয়াময় আল্লাহ কোরআনে ‘সুরা কদর’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করেছেন। তাতে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষার উদয় পর্যন্ত। (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।
শবে কদরের রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ রাত গুনাহ মাফের রাত। হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।
কিয়ামুল লাইল: ‘কিয়ামুল লাইল’ অর্থ হলো রাত্রি জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- ‘তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়েও দাঁড়িয়ে থেকে’ (সুরা ফুরকান : ৬৪)।
‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা গজবের ভয়ে এবং রহমতের আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে’ (সুরা সিজদা : ১৬-১৭)। নবীজি (সা.) একদিন সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) সামনে বনি ইসরাইলের এক উপাসকের কথা বলছিলেন। সে ব্যক্তি এক হাজার মাস ধরে আল্লাহর ধ্যান ও সাধনায় লিপ্ত ছিল। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আফসোস করতে লাগলেন আর বললেন, আমরা এত বছর ইবাদত করব কীভাবে? তাছাড়া আমাদের অনেকে তো এত বছর বেঁচেও থাকি না। ঠিক তখনই জিবরাইল (আ.) এ রাতের সুসংবাদসহ সুরা কদর নিয়ে নবীজির (সা.) কাছে হাজির হলেন এবং এ উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে প্রমাণ করে দিলেন। (তাফসিরে মাজহারি)।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি)। এ রাত হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার রাত। হজরত আয়েশা (রা.) একবার রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে কী দোয়া করব? তখন নবীজি (সা.) বললেন, তুমি এ দোয়াটি করবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমাশীল! ক্ষমাকে তুমি ভালোবাস। অতএব, আমাকে তুমি ক্ষমা কর।
নবীজির (সা.) সময় অনেক সাহাবী (রা.) রমজানের ২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদর হিসেবে স্বপ্ন দেখেছেন। সাহাবীরা (রা.) নবীজিকে (সা.) স্বপ্নের কথা জানালে নবীজি (সা.) বলেন, আমিও এমনটা স্বপ্নে দেখেছি। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি-নবীজি (সা.) ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল কদরের রাত বলেছেন।’ অন্য হাদিসে রয়েছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি দুর্বল অথবা কোনো কারণে অক্ষম হয়ে থাকে, সে যেন রমজানের ২৭ তারিখ রাতে ইবাদত করে।’ (মুসলিম)। আরেক হাদিসে এসেছে-নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেতে চায়, সে যেন তা রমজানের সাতাশতম রাতে অনুসন্ধান করে। (মুসনাদে আহমদ)।
চলারপথে রিপোর্ট :
৭ মার্চ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ১৯৭১ সালের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী এবং যে কোনো সময় জাতিকে অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হবে ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেটা স্পষ্ট করেছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ।
পরাধীনতা থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি এক অনন্য সাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা অর্জনে যে গেরিলাযুদ্ধের প্রয়োজন তার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেও স্বীকৃত। এটি বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত অলিখিত ভাষণ। ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) স্বীকৃতি দেয়।
এদিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। তার এ ভাষণ ছিল জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশনা।
এদিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার এ ভাষণে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণে তিনি কেন মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে কী করতে হবে সব দিক নির্দেশনায়ই দিয়ে দেন। তার ওই ভাষণের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি…, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাক।’ পাকিস্তানের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দেন।
স্বাধীনতার জন্য অদম্য স্পৃহা নিয়ে সংগ্রামরত মুক্তিকামী জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু সেদিন বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধুর ওই নির্দেশের পর ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জন্য সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়।
১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়া অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ধাপে ধাপে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এড়িয়ে চলা বাঙালি পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে আলাদা হতে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। বাঙালির এ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রাযুক্ত হয়। এর পরই ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিজয় অর্জিত হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
চট্টগ্রামে পুলিশ ব্যারাকের পাঁচতলা ভবন থেকে পড়ে জাহিদুল ইসলাম নামে এক কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে।
আজ ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার ভোরে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের হিলটপ ব্যারাক হাউজে এ ঘটনা ঘটে। মৃত জাহিদুল চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স বিভাগে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের কাউটাইল গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে। জাহিদুল ২০২০ সালে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) স্পিনা রাণী প্রামাণিক জানান, কনস্টেবল জাহিদুল হিলটপ ব্যারাক হাউজের পঞ্চম তলায় থাকতেন। ভোর ৪টা ২২ মিনিটে তিনি পাঁচতলা থেকে নিচে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিকভাবে অসতর্কতাবশত তিনি নিচে পড়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, তার হাতে ছিল টুথব্রাশ। দাঁত ব্রাশ করতে করতে ব্যালকনির প্রান্তে চলে গিয়েছিলেন – এমনটা মনে করা হচ্ছে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে ৪৮ বোতল বিদেশি মদ ও ১০ কেজি গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ ৫ সেপ্টেম্বর বুধবার ভোরে ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর নাটালের মোড় ফেরিঘাট সংলগ্ন রাস্তায় অভিযানটি চালায়।
জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই (নিরস্ত্র) মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ভোর সোয়া ৫টার দিকে অভিযান চালায়। এ সময় ৪৮ বোতল বিদেশি মদ ও ১০ কেজি গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের রোছমত আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান (২০), হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বদুলিয়া গ্রামের মৃত অলি মিয়ার ছেলে জহির মিয়া (২৮) ও সুনামগঞ্জ জেলা সদরের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া (২৮)।
এ ব্যাপারে ভৈরব থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।