সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৬

জাতীয়, 4 March 2023, 893 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি বেসরকারি অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২০ জন।

নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন-সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা ফরিদ (৩৫), সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার শামসুল আলম (৫০), নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ছোট মনগড়া গ্রামের মিকি রেঙি লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫) এবং নোয়াখালীর সুধারাম থানার অলিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (৫০)। বাকিদের পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে।

দুর্ঘটনার কারণও তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। ৪ মার্চ শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার কদমরসুল ইউনিয়নের ছোট কুমিরা এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি সিলিন্ডারে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট রাত সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহতদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতরা হচ্ছেন-নূর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২), মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬) এবং জাহিদ হাসান (২৬)। আহত ১৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অনেকের হাত-পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহতদেরকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আহত এবং নিহতদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসতে শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। খবর পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি উপস্থিত হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। এ সময় আহত এবং নিহত স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ক্ষত-বিক্ষত শরীরের লাশগুলো আনা হয় প্যাকেটে ভর্তি করে। এছাড়া গুরুতর আহতদের ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে। যাদের মধ্যে কারও চোখ, কারও মাথায়, কেউ আবার হাত-পায়ে গুরুতর আহত হয়।

এদিকে এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবিএম ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এই কমিটি গঠন করে দেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টটি অবস্থিত। এই প্লান্টে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে তা বিক্রি করা হয়। সেখানে অর্ধশত শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায় গ্যাস ভরার সময় এই প্লান্টে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে লেগে যায় আগুন। কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা বিস্ফোরণের সময় প্লান্টের ভেতরে ছিলেন। বিস্ফোরণে কারও কারও দেহের বিভিন্ন অংশ উড়ে যায়।

এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন থেকে বাঁচতে তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, বায়েজিদ ও সীতাকুণ্ড থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। হাতহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল ও আশপাশের হাসপাতালে প্রেরণ করে উদ্ধারকর্মীরা।

চমেক হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী পরিবেশ: শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা যায় নিহতদের বীভৎস চিত্র। আর আহতদের দুর্বিষহ অবস্থা। স্বজনদের কেউ কেউ পাগলের মতো ছুটে প্রবেশ করতে দেখা যায় জরুরি বিভাগে। আবার কেউ স্বজনের খোঁজ নিতে ছুটতে দেখা যায় এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে।

এরই মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে আহতদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এলে সবাইকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে না গিয়ে সরাসরি চলে আসেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখা যায়, একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চল্লিশোর্ধ এক যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। ওই যুবকের মাথার খুলির একাংশ বিচ্ছিন্ন। তার হাতের কব্জি ছিল না। পেট থেকে বেরিয়ে আসে নাড়ি-ভুঁড়ি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন পরিদর্শনে আসেন।

রাত ৯টায় চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আহত ১৮ জনকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ১০ জন, ইএনটি ওয়ার্ডে ২ জন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, অবজারবেশনে ১ জন চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বজনের খোঁজ নিতে আসা মো. আরাফাত বলেন, ‘বিস্ফোরণের খবর পেয়ে আমার বাবার খোঁজে হাসপাতালে এসেছি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। তিনি ওই প্লান্টে কর্মরত ছিলেন।’

খবর পেয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান পরিদর্শনে এসে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য আইসিইউ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ কাজে লাগাব।’

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি: সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হোসেনকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই সময় তিনি ৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন। ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে ঘটনার কারণ উদঘাটন করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়। চমেক হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য একটি বুথ খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০২২ সালের ৪ জুন রাতে সীমা অক্সিজেন প্লান্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ২০০ লোক। ওই ঘটনার পর একই এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টের দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা এই শিল্প এলাকার মানুষকে আবারও ভাবিয়ে তুলেছে।

Leave a Reply

আন্দোলনে আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান…

অনলাইন ডেস্ক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতে রাজধানীর Read more

বাঞ্ছারামপুরে শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সহনশীলতায় বিশ্বাস করে, শান্তিপ্রিয় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাক্তন স্কাউটদের বিশেষ সাধারণ সভা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাক্তন স্কাউটস সংগঠনের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও Read more

আখাউড়ায় মাকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে…

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মাকে দেখামাত্র অসুস্থ Read more

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইকুয়েডরকে হারাল ব্রাজিল

অনলাইন ডেস্ক : ইকুয়েডরের বিপক্ষে রদ্রিগোর একমাত্র গোলে জয়ের দেখা Read more

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও হতাহতদের…

চলারপথে রিপোর্ট : বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, জেলা ছাত্রদল, যুবদলের Read more

মালয়েশিয়ায় একদিনে অভিযানে ২২২ বাংলাদেশি আটক

অনলাইন ডেস্ক : মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যে অভিযান চালিয়ে ২২২ জন Read more

নবীনগরে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী…

চলারপথে রিপোর্ট : উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তি ‘সুরসম্রাট’ খ্যাত Read more

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ৬ সেপ্টেম্বর ‘সুরসম্রাট’ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর Read more

জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে উদীচীর…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে Read more

সালমান শাহকে হারানোর আজ ২৮ বছর

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বাঁক ঘোরানো তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা Read more

দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত প্রায়…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের Read more

রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 21 June 2023, 706 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত এবং প্রবাসী আয় উৎসাহিত করার মত বেশ কিছু পদক্ষেপ সরকার এরই মধ্যে নিয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে আগামীতে রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আজ ২১ জুন বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড পরবর্তীকালীন চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে ২০২১-২২ অর্থ বছরে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। এ চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে পরবর্তীতে তা কমতে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার হার আরও বৃদ্ধি পায়।’

সর্বশেষ গত ৩১ মে তারিখের হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ হয়েছে ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যার সাহায্যে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট।’

সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুর উদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে যোগাযোগ খাতে বিভিন্ন প্রকল্প ও আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেতু বিভাগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে— প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; ঢাকা শহরে ২৫৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণ, ঢাকা শহরে ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইনার এলিভেটেড সার্কুলার রোড নির্মাণ, ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীর উপর প্রায় ২.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ; বরিশাল-ভোলা সড়কে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর উপর ১০.৪৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ; বরিশাল জেলায় রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মুলাদি হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ সড়কে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর ১.৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার বাকেরগঞ্জ-বাউফল সড়কে কারখানা নদীর উপর ১.৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ; শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে মেঘনা নদীর উপর ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু/টানেল নির্মাণ; পটুয়াখালী জেলায় লেবুখালী-দুমকী-বগা-দশমিনা-গলাচিপা-আমড়াগাছি সড়কে গলাচিপা নদীর উপর ১.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ; পটুয়াখালী জেলায় পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা সড়কে পায়রা নদীর উপর ২.৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ; বরগুনা জেলার বরগুনা-পাথরঘাটা সড়কে বিষখালী নদীর উপর ২.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ; মতলব উত্তর-গজারিয়া সড়কে মেঘনা নদীর উপর ১.৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ এবং গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে মেঘনা নদীর উপর ২.৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পতিত জমি চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে এরই মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।’

কৃষি খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২২টি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের কৃষিখাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।’

পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারে কঠোর হওয়ার নির্দেশ পাটমন্ত্রীর

জাতীয়, 22 May 2024, 181 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সরকার ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যমূলক ব্যবহার আইন-২০১০’, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩’ এবং ‘পাট আইন, ২০১৭’ প্রণয়ন করেছে।

আজ ২২ মে বুধবার দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার পাট চাষী, মিল মালিক, ব্যবসায়ী এবং পাটখাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এ আইনগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের নিমিত্ত মাননীয় সংসদ সদস্য/জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান/সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের মেয়র/পৌরসভার মেয়রকে উপদেষ্টা এবং জেলা প্রশাসকদের আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, শেরপুর জেলাসহ চাল উৎপাদন প্রবণ ১৮টি জেলার চালকলসমূহে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

উল্লেখিত আইন বাস্তবায়নে জেলা চেম্বার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, চালকল মালিক সমিতি, চালকল মালিক এবং ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ মোট ১৯টি পণ্যের উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলবো এ আইন বাস্তবায়নে আপনারা ধীরে ধীরে কঠোর হন।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে পাটের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার এবং পরিবেশ বান্ধব পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন প্রদান করেছেন। তিনি পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির করতে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

পাট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে বছরে প্রায় ৮০-৮৫ লক্ষ বেল পাট উৎপাদিত হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্যে কাঁচা পাট হিসেবে কম/বেশী ১০ লক্ষ বেল এবং পাটজাত পণ্য হিসেবে কম/বেশী প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিক টন বিদেশে রপ্তানি করে বছরে প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি যা আমার বিবেচনায় অপ্রতুল।’ পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

মতবিনিময়সভায় পাট চাষী, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য অংশীজনরা বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন।
দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও পাট চাষীরা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর কাছে পাট ও পাট বীজের দাম ও অন্যান্য বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

জেলা প্রশাসন, দিনাজপুর এর সহায়তায় পাট অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জাকারিয়া জাকা, নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি, অটো রাইস মিল ব্যবসায়ী, পোল্টি ফিড ব্যবসায়ী, বস্তা ব্যবসায়ী, জুট মিল মালিক প্রতিনিধি, চালকল মালিক প্রতিনিধি এবং পাট চাষিবৃন্দ।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা হারিয়ে যাচ্ছে

জাতীয়, বিনোদন, 22 January 2024, 591 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আধুনিকতার স্পর্শ আর সভ্যতার ক্রমবিকাশে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রযুক্তির দাপটে অস্তিত্ব হারিয়েছে অধিকাংশ খেলা। একটা সময় গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শিশু ও যুবকরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় অভ্যস্থ ছিল। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা অবসরে দলবেঁধে খেলতো নানা প্রকারের খেলা। এসব খেলা বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার আনাচে-কানাচে, খোলা মাঠে কম পরিসরেই খেলা যেত।

কিন্তু বর্তমান সময়ে মাঠ, বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়া, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির বিকাশে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা। এখানকার দিনে শহরের শিশুরা ঘরের কোণে বসে বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকে। যার কারণে তাদের মেধার বিকাশও সঠিকভাবে হয় না।

গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ছিল: হা-ডু-ডু, কাবাডি, ঘুড়ি খেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, কুস্তি, গোশত চুরি, কুতকুত, চোর-পুলিশ, হাড়িভাঙা, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, কড়ি খেলা, সাপ খেলা, কানামাছি, লাঠি খেলা, ষাড়ের লড়াই, বউ-ছি, বলী খেলা, টোপাভাতি, নোনতা খেলা, নৌকা বাইচ, লুডু খেলা, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ ছাগল, বরফ পানি, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, লুডু, ষোল গুটি, এক্কা দোক্কা, সাত পাতা, বটি বটি, দাপ্পা, রস-কস, চারগুটি, চেয়ার সিটিংসহ আরো হাজারো প্রকার খেলা। বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা আজ প্রায় বিলুপ্ত।

গ্রামীণ এসব খেলাধুলা হলো বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশের অন্যতম। যা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। বর্তমানে গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান প্রযুক্তির সুবিধা ও এর ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। তখন কেন পিছিয়ে থাকবে আমাদের প্রাণের খেলাগুলো? আমাদের সবার একটু চেষ্টাই পারে নতুন প্রজন্মকে এসব খেলার সঙ্গে পরিচিত করাতে। যা আমাদের ইতিহাস আর শিকড়কে টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী একটা মাধ্যম। সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে এসব খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায়। স্কুলে শিশুদের এসব খেলার সঙ্গে পরিচয় করানোর সুযোগ আছে। চাইলেই বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানো যায় এসব খেলাধুলায় যুক্ত করে।

অতীতের সময়ে প্রতিবছর সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হতো। বর্তমানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো খেলার মাঠও নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ ঘটছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়ত অচিরেই গ্রামীণ খেলাধুলা আমাদের সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। পরিণত হবে রূপকথার গল্পে।

এখন, মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষা ও গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে এদেশের সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। এরসঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বাইসাইকেলে ভারতের ৮ নাগরিক বাংলাদেশে

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 17 February 2023, 1755 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য বাইসাইকেল চালিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের ৮ জন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস স্মরণে বাংলাদেশে ভ্রমণে এসেছেন তারা।

চলতি মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী প্রদেশের চন্দননগর থেকে তারা বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি রানাঘাট দর্শনা হয়ে আলমডাঙ্গা দিয়ে কুষ্টিয়া প্রবেশ করেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি দর্শন করে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট হয়ে নদীপথে প্রবেশ করেন জেলা শহর পাবনাতে।

আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল থেকে পাবনার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করে কাজিরহাট হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরবেন নিজ দেশে। ইন্দবাংলা বাইসাইকেল র‌্যালি নামে এই সংগঠন বাংলাদেশে চতুর্থ বারের মতো ভ্রমণ করছে।

১০ দিনের এই বাইসাইকেল ভ্রমণকালে বিভিন্ন জেলা শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শনসহ সাধারণ মানুষের সাথে তারা সংযোগ স্থাপন করবেন। ভ্রমণের দল প্রধান হিসাবে রয়েছেন দলের একমাত্র নারী সদস্য মহুয়া ব্যানার্জি। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন তার স্বামী শিক্ষক শৈবাল ব্যানার্জি। এছাড়া যারা এসেছেন তাদের মধ্যে দুইজন ব্যবসায়ী ও ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। যে সকল সদস্য এবারের এসছেন তারা হলেন, শিক্ষক শ্রীকান্ত মন্ডল, শিক্ষক প্রণব মাইতি, শিক্ষক প্রসনজিৎ সরকার, শিক্ষক রমজান আলী, ব্যবসায়ি অঞ্জন দাস ও সত্যব্রত ভান্ডারী।

বিশ্বব্যাংকের ১.২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 28 April 2023, 1574 Views,

ডেস্ক রিপোর্ট :
বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরসে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক (২০২৩-২৭) আলোচনা করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের নতুন তিনটি প্রকল্পে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন অনুমোদন করেছে।

আজ ২৮ এপ্রিল শুক্রবার নতুন ৩ প্রকল্পে এ অর্থায়ন অনুমোদন করা হয়।

সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ এ কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের (সিপিএফ) আওতাভুক্ত হবে। বিশ্বব্যাংকের এই অর্থ বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সহায়তা করার পাশাপাশি উচ্চ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। এছাড়া, বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। যা ফলে আর্থ-সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।

কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের (সিপিএফ) আওতায় আটটি উদ্দেশ্যেকে গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব করেছে। বিস্তৃতভাবে বেসরকারি খাতের উন্নয়নের জন্য ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা; দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আর্থিক মধ্যস্থতাকে শক্তিশালী করা; উন্নত সেবা প্রদানের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নত কার্যকারিতা; মানব পুঁজি উন্নয়ন পরিষেবার জন্য উন্নত গুণমান এবং ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেস; নারী এবং দুর্বল গোষ্ঠীর জন্য উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগ; অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির জন্য স্থানিক এবং ডিজিটাল সংযোগ শক্তিশালী করা; জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বিল্ডিং এবং স্থায়িত্বের জন্য ডেল্টা ব্যবস্থাপনার উন্নত কার্যকারিতা এবং সবুজায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে উত্পাদনশীলতা বাড়ানো।

বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, এই কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং বাংলাদেশের মধ্যে পাঁচ দশকের শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ আরো সমৃদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের চাহিদা পূরণের জন্য আরো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং নীতির প্রয়োজন হবে। এই সিপিএফ চাকরি প্রদানের জন্য সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে সমর্থন করবে এবং অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিস্থাপকতাকেও সমর্থন করবে।

সিপিএফ প্রস্তুত করার জন্য, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, একাডেমিয়া, মিডিয়া এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদেরসহ মূল স্টেকহোল্ডার গ্রুপগুলোর সঙ্গে দেশব্যাপী এবং অনলাইন আলোচনা করেছে বলে জানান তিনি।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি’র (মিগা) ভাইস প্রেসিডেন্ট অব অপারেশনস জুনাইদ কামাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য রয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের জন্য ব্যক্তিগত পুঁজি এবং বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে অ্যাক্সেস ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন হবে।

বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানের আইএফসি কান্ট্রি ম্যানেজার জানান, বাংলাদেশ বিশ্বের অসামান্য উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির গল্পগুলির মধ্যে একটি। আরো বহুমুখী এবং প্রতিযোগিতামূলক বেসরকারি খাতের উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অতিরিক্ত সংস্কার রপ্তানি বাড়াবে এবং মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এছাড়া, এই অর্থ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা এবং প্রশমিত করতে সাহায্য করার জন্য বিনিয়োগের অর্থায়ন ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব বহন করবে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, পুষ্টি, উদ্যোক্তা এবং টেকসই কৃষি ও গ্রামীণ রূপান্তরের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারবে বাংলাদেশ সরকার। সবুজ এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন ক্রেডিট দেশটিকে সবুজায়ন এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উন্নয়নে উত্তরণে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে এবং ২৫০ মিলিয়ন ডলারের টেকসই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ এবং রেসিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন প্রকল্প মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ সেক্টরকে আরো গতিশীল, কম-দূষণকারী, সম্পদ-দক্ষ, এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক বৃদ্ধির খাতে রূপান্তরে ব্যয় করা হবে।