চলারপথে রিপোর্ট :
কুমিল্লার লাকসামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অরগানাইজেশনের আয়োজনে ‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। আজ ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় উপজেলা সদরের দৌলতগঞ্জ মাদ্রাসায় মিলনায়তনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অরগানাইজেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক লুৎফুর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রাফসান ইসলাম।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অরগানাইজেশনের সভাপতি ফয়সাল ইসলাম বাপ্পীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিখির বক্তব্য রাখেন- দৌলতগঞ্জ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মো. আবদুল হান্নান, হেড মুহাদ্দিস মাওলানা ড. আবদুল হালিম, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শাহরিয়ার কবির রাতুল, তন্ময় ইসলাম, লাকসাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ফারুক আল শারাহ, সামাজিক ব্যক্তিত্ব আজিজুর হক মজুমদার সুইট। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অরগানাইজেশনের সাধারণ জহিরুল কাইয়ুম অনিক।
অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা (২১)। মাত্র ১৫ দিনের ছুটি পেয়েছেন তিনি। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন নিজ বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের দোগাছি গ্রামে। টুম্পা ঐ গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রাহিমের মেয়ে। বাড়িতে এসে মা-বাবা ও ছোট বোনের সাথে সময় কাটানোর কথা তার। কিংবা গ্রামের বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা, গল্প ও আড্ডা দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি তার দরিদ্র ভ্যান চালক বাবা ও পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মেরিগাছা বাজারে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন। একই সঙ্গে বিক্রি করছেন কাঁচা ডিম। টুম্পার এই ডিম বিক্রির ঘটনা এলাকায় সাড়া ফেলেছে।
মঙ্গলবার মেরিগাছা বাজারে টুম্পার সিদ্ধ ডিমের দোকানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খোলা আকাশের নিচে খড়ির চুলা জ্বলছে এবং সেখানে বড় কড়াইয়ে শতাধিক ডিম সিদ্ধ হচ্ছে। পাশে প্লাস্টিকের টুলে বসে ডিমের খোসা ছাড়াচ্ছেন টুম্পা এবং খোসা ছাড়ানোর পর ডিমের ওপর লবণ-ঝাল ছিটিয়ে তা ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। টুম্পার ভ্রাম্যমাণ দোকানে একটি সিদ্ধ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫টাকা এবং একসঙ্গে দুইটি নিলে ২৫ টাকা। পাশাপাশি কাঁচা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৪২ টাকা দরে।
জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা বলেন, খুবই কম লাভে আমি ডিম বিক্রি করছি। প্রতি হালি কাঁচা ডিমে লাভ হচ্ছে মাত্র ৩ টাকা এবং সিদ্ধ ডিমে লাভ হচ্ছে গড়ে হালি প্রতি ৪-৬ টাকা। সিদ্ধ ডিমের ক্ষেত্রে খড়ি, নষ্ট ডিম বা অনেক সময় খোসা ছাড়াতে গিয়ে ডিম নষ্ট হয়। যার ফলে এর লাভ মাঝে মধ্যে সামান্য ওঠানামা করে।
প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ ডিম বিক্রি করেন তিনি এবং গত দুইদিনে তার লাভ হয়েছে ১৪৭০ টাকা। ক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রির ফাঁকে টুম্পা আরও জানান, ‘বাবা ভ্যান চালিয়ে আমাদের দুই বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। বর্তমানে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। গত সপ্তাহে আমি বাড়িতে এসেছি, ১৫ দিন ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবো। ডিম বিক্রির মাধ্যমে আমার যাতায়াতের টাকাও জোগাড় হবে।
ডিম বিক্রি করার প্রসঙ্গে টুম্পা জানায়, বিভিন্ন মানুষ নানা কথা বলবে। তবে এতে আমার কিছু আসে-যায় না। কারণ আমি সৎ ভাবে আয় করছি। শহরে এই কাজ করলে কেউ কিছু বলে না। আমি নিজেকে অতি ক্ষুদ্র ও গরীব উদ্যোক্তা মনে করছি। এটাই আমার কাছে আনন্দের ও সুখের। আমি অল্প লাভে ডিম বিক্রি করে স্থানীয় অতিমাত্রায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মেসেজ দিতে চাই; অতি মুনাফার সুযোগ থাকলেও তার সুযোগ গ্রহণ না করা।
টুম্পার বাবা ভ্যান চালক আব্দুর রাহিম জানান, আমার ভ্যানে করেই আমি আমার মেয়েকে এই বাজারে নিয়ে আসি ও নিয়ে যাই। টুম্পা অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ছুটিতে এসে আমাদের প্রতি মায়া করে সে ডিম বিক্রি করছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক খরচ হয়। তার বাবা হিসেবে এই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নাই। তাই সে নিজেই সৎ উপার্জন করে টাকা যুগিয়ে নিচ্ছে যেন আমার কাছে টাকা না চাইতে হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামসুজ্জোহা জানান, টুম্পা স্কুল জীবন থেকেই সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সে অনেক মেধাবী। ছুটিতে বাড়িতে এসে ডিম বিক্রির এই ভালো কাজটি অনুপ্রেরণামূলক ও প্রশংসনীয়।
অনলাইন ডেস্ক :
গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবৈধ অটোরিক্সা জব্দ করতে গেলে পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে এক কিলোমিটার নিয়ে যান চালক। আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেলে শ্রীপুর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় চালককে আটকসহ অটোরিক্সাটি জব্দ করা হয়েছে।
আটককৃত অটোরিক্সা চালক জনি আহমেদ (২৪) ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি গ্রামের মো. আহমেদ আলীর ছেলে। তিনি মাওনা হাইওয়ে থানার পুলিশ কনস্টেবল কমল দাসকে অটোরিক্সায় ঝুলিয়ে এক কিলোমিটার টেনে নিয়ে যান। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ কন্সস্টেবল কমল দাস বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়মিত অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার অংশ হিসেবে বিকেলে উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় অভিযান চলাকালে একটি অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে আসে। থামানোর জন্য অটোরিকশাকে সিগন্যাল দেয়া হয়। রিকশা থামানোর পর চাবি নেয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে অটোরিক্সা চালাতে শুরু করে। আমি অটোরিকশায় উঠার চেষ্টা করি, কিন্তু চালক রিকশার গতি আরোও বাড়িয়ে দেয়। অটোরিকশা চালককে অনুরোধ করলেও গতি কমায়নি। আমাকে মহাসড়কে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। আমাকে ঝুলিয়ে কমপক্ষে এক কিলোমিটার নিয়ে যায়।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ সদস্য ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় চলন্ত অটোরিক্সার রড ধরে ঝুলে আছে। পেছনে কয়েকজন যাত্রী চালককে অনুরোধ করছেন অটোরিকশা থামানোর জন্য কিন্তু অটোরিকশা চালক থামাচ্ছেন না। অটোরিকশার পাশদিয়ে বিভিন্ন পরিবহন যাচ্ছে। পরবর্তীতে একটি স্থানে পৌঁছালে জ্যামে উপস্থিত স্থানীয় জনতা ও পুলিশ সদস্য মিলে চালককে আটক করেন।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পাশ্ববর্তী ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকার ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে অভিযুক্ত চালককে আটক করা হয়। জব্দ করা হয়েছে অটোরিকশাটি। এবিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
অনলাইন ডেস্ক :
গাজায় ইসরায়েলি কর্তৃক ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর নৃশংসতা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে পাইকগাছার সোলাদানায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৩ এপ্রিল রোববার বিকালে সোলাদানা ইউনিয়নের তৌহিদী জনতা এ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে।
তৌহিদী জনতার একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সোলাদানা বাজার থেকে শুরু হয়ে ইউনিয়নের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বাজার চৌরাস্তা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে বাজার চৌরাস্তা মোড় চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সোলাদানা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও হাফেজ আব্দুস সবুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল আলীম, মনিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল গফফার, মুফতি সোলাইমান হুসাইন, আমিনুল ইসলাম, দ্বীন মোহাম্মদ, মোফাজ্জল হোসেন, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ, আবু মুছা, মাওলানা সাঈদুর রহমান, বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান, ফয়সাল রাশেদ সনি, আব্দুল হাকিম, শামীম জোয়ার্দার, ইসরাফিল হোসেন ও খানজাহান।
সমাবেশে বক্তরা অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধ করার আহবান এবং ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব মুসলিমদের প্রতি আহবান জানান। একই সাথে ইসরায়েলী পণ্য বর্জন করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
সারাদেশে চলমান ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে জেলার সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ইউনাইটেড কলেজ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজসহ সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকাল ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে দুপুর ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। সারা দেশব্যাপী ধর্ষণকারী, ডাকাত ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার ও প্রশাসনের নিকট দাবির পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে শিক্ষার্থীদের শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহর।
মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির, মুনিয়া মাহিন অতিথি, জয়ন্তী বিশ্বাস, ফাইজান হাসনাত, তাসিন আরাফাত, নিশাত তাসনিম চৌধুরী, ওমর ফারুক প্রমূখ। বক্তারা বলেন, আবু সাইদ ও মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে এই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। অথচ সরকার ও প্রশাসন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে কারণে সারাদেশে ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই ও হত্যার মতো ঘটনা অতিতের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবী করছি। এ অবস্থায় ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করাসহ এসব অপরাধের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। অন্যথায় আগামীদিনে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন।
জায়েদুল কবির ভাঙ্গি, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর :
রাত পোহালেই ৭ জুন শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদযাত্রার শেষ দিনে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আজ ৬ জুন শুক্রবার সকাল থেকেই গাড়ি ও মানুষের ঢল নেমেছে।
ফলে আজ ৬ জুন সকালে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। সকাল ৭টার দিকে ভোগড়া বাইপাস মোড় ও চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ফ্লাইওয়ের মধ্যে ঘরমুখো যাত্রীবাহী সকল গাড়ি অনেকটা ঠাঁই দাড়িয়ে রয়েছে দীর্ঘক্ষণ ধরে। যাত্রীদের অনেকেই গাড়ির ভেতরে গরমে অতিষ্ঠ ও দীর্ঘক্ষনের অপেক্ষায় বিরক্ত হয়ে রাস্তা তথা ফ্লাইওয়েতে নেমে যান। কখন গাড়ি চলবে সেই সময় গুনতে থাকেন।
নেত্রকোনাগামী নেত্র পরিবহনের এক বাসযাত্রী আবুল কালাম ৫বছরের শিশুসন্তান নিয়ে শুক্রবার ভোর চার দিকে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে সকাল ৭টার দিকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড়ের ফ্লাইওয়েতে পৌঁছে যানজটের কবলে চল্লিশ মিনিট ধরে বাসে বসে আছেন। তার শিশুসন্তানটি গরমে অতিষ্ঠি হয়ে কান্না শুরু করলে নিচে নেমে অপেক্ষা করতে থাকেন।
ময়মনসিংহ থেকে পিকআপ যোগে মুরগী পরিবহন করে রাজধানী যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছানোর চার কিলোমিটার আগে থেকেই যানজটে আটকা পড়েন। যানজটের কবলে পড়ে গরমে ইতোমধ্যে তার ২০টির মতো মুরগী মারা গেছে। বৃহস্পতিবারও একই কারণে তার ১৮টি মুরগী মারা যায়। যানজট মানুষের যেমন ভোগান্তি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হচ্ছে।
গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় বিকল্প যান মোটরবাইকও যাত্রী পরিবহণ করছে। এখানকার মোটর বাইকচালক জনি জানান, বৃহস্পতিবার যানজটের মধ্যেও যাত্রী নিয়ে চলা গেছে। কিন্তু শুক্রবার সকালে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় খালি দেহ নিয়ে পার হওয়ার মতো অবস্থা নেই। তারপরও বিকল্প পথে যাত্রী নিয়ে তারা যেতে পেরেছেন। কিন্তু অন্য পরিবহণকে দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
ঢাকার হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোগী নিয়ে ফিরছিলেন আলী। তিনিও শুক্রবার সকলে গাজীপুরের ভোগড়া ফ্লাইওয়েতে যানজটে আটকা পড়েন। প্রায় চল্লিশ মিনিট একইস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি গালাগালি শুরু করেন পুলিশকে। কিন্তু আশেপাশে কোন পুলিশ ছিলো না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা এ ভোগান্তি থেকে কবে রক্ষা পাব। দীর্ঘক্ষণ গরমের মধ্যে আটকা পড়ে রোগীও অসুস্থ্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে, সকালে গাজীপুরের টঙ্গীর স্টেশনরোডের উত্তরে চেরেগ আলী এলাকার পর থেকে চান্দনা চৌরাস্তার তেলিপাড়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়া একইসময়ে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকা থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। বৃহস্পতিবার বা তার আগে যারা বাড়ি যেতে পারেননি তারা আজ শুক্রবার সকাল থেকে রওনা হয়েছেন। ভোর থেকেই তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন বাস কিংবা গণপরিবহনের জন্য। যে যেভাবে পারছেন ট্রাক কিংবা পিকআপে করেও গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
রংপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসের চালক আবুল কাশেম জানান, গতকাল যেসব বাস গাজীপুর থেকে ছেড়ে উত্তরাঞ্চলে গিয়েছিল তারা কালিয়াকৈর-চন্দ্রা মোড়, টাঙ্গাইল এবং যমুনা সেতুর উভয় প্রান্তে ব্যাপক যানজটের কবলে পড়ে। তাই নির্ধারিত সময়ের চাইতেও অধিক সময় লেগেছে গন্তব্যে পৌঁছাতে। এছাড়া যাত্রী নামিয়ে গাজীপুরে ফিরতেও অনেক সময় লেগেছে। যার কারণে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই বাসের সংখ্যা তুলনামূলক কমে গেছে।
গাজীপুর মহানগরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, আজ ভোরে চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় একটি লরি বিকল পয়ে পড়লে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন আটকা পড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয় প্রায় এক ঘন্টা পর লরিটি উদ্ধার করলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে এর এক ঘন্টা পরও গাড়ির চাপ কমেনি। এদিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে কারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকেও গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
কালিয়াকৈর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার পোশাক শ্রমিক অনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ‘‘কারখানা ছুটি হয়েছে দুপুরে। এরপর শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় চন্দ্রায় যাই৷ সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার যাত্রী। কোন বাস-গাড়ি খালি নেই। কখন বাস পাব আর কখন বাড়ি পৌঁছব জানি না।’’ নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার ‘‘দুপুরে কলকারখানা ছুটির পর বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক, চন্দ্রা মোড় ও সফিপুর এলাকায় যাত্রীদের ঢল নামে। শুক্রবার সকালেও একই অবস্থা চলছে। যানবাহন সঙ্কটে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে।’’
ওসি সওগাতুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ সকালে সড়কে গণপরিবহন ও যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে। তবে যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম। শুক্রবার সকালে যাত্রীদের একটু চাপ বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় থাকায় যানবাহনের চাপ রয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেই চাপ কমে আসবে।