চলারপথে রিপোর্ট :
যাত্রী বেশে মাদক পাচারের সময় ৪ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সুরাইয়া আক্তার প্রকাশ স্বপ্না (২৫) নামে এক নারীকে আটক করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পুনিয়াউট বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক সুরাইয়া আক্তার ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাদেদন্তা গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে।
৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে পুনিয়াউট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে তার সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাসী করে ৪ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল সদর থানায় এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় দুই শতাধিক কবি সাহিত্যিকদের আনন্দঘন অংশহগ্রহনের মাধ্যমে ২৯ জুন শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনব্যাপী বর্ষামঙ্গল কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। অদ্বৈতমল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। কয়েকটি পর্বে বিভক্ত এই কবিতা উৎসবে ছিলো উদ্বোধনী আলোচনা। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি গান ও সম্মাননা প্রদান।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির। এসময় তিনি এই ধরণের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্যের সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে দেবার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদদূস এর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর সকল ভালো কাজে পাশে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব কবি আসাদ মান্নান। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠানের আহবায়ক সাবেক যুগ্ম সচিব কবি শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কবি জয়দুল হোসেন ও কবি মো. আ. কুদদূস। মো. মনির হোসেন এর সঞ্চালনায় এ পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন, অনুষ্ঠানের আহবায়ক কমিটির সমস্য সচিব কবি আব্দুর রহিম, উপাধ্যক্ষ একেএম শিবলী।
এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন তিতাস আবৃত্তি সংগঠণ ও আনন্দলোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এসময় অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনির মোড়ক উন্মোচন ও বিতরণ করা হয়। তাছাড়াও কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদদূস এর সদ্য প্রকাশিত ছিন্নপক্ষ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপর আবৃত্তি পরিবেশন করেন তিতান আবৃত্তি সংগঠণের নাওমী।
কয়েকটি পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানমালায় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আলোচনা, আবৃত্তি আর গানের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করেন আমন্ত্রিতরা। দ্বিতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন কবি জয়দুল হোসেন। এই সময় সভাকবির বক্তব্য প্রদান করেন ফরিদ আহমেদ দুলাল, আলোচনা করেন কামরুল হাসান, মজিদ মাহমুদ, মামুন মোস্তফা প্রমুখ। উপস্থাপনা করেন কবি হেলাল উদ্দিন হৃদয়। এসময় আবৃত্তি পরিবেশনা করেন- ভাষা সাহিত্য ও অনুশীলন কেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এসময় সঙ্গীত পরিবেশন করেন কবি আসাদ মান্নানের সহধর্মিনী নাজমা মান্নান।
তৃতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন কবি জয়দুল হোসেন। এই সময় সভাকবির বক্তব্য প্রদান করেন সম্পাদক-অধ্যাপক ও কবি মাহমুদ কামাল, আলোচনা করেন রানা কুমার সিংহ, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের ডিন ডক্টর জিএম মনিরুজ্জামান। এ পর্বে উপস্থাপনা করেন কবি মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ। এসময় আবৃত্তি পরিবেশনা করেন- তিতাস সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী রোকেয়া দস্তগীর।
অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রায় দুই শতাধিক কবি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।
বর্ষামঙ্গল কবিতা উৎসবে বক্তারা বলেন, বর্ষা ঋতু বাংলার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই বর্ষা ও পানিকে সুরক্ষ করতে হবে। তারা বলেন, এদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি বর্ষার পানির উপর নির্ভরশীল। এজন্য আমাদের জলবায়ূ নিয়ে কথা বলতে হবে। প্রকৃতির সব ঋতুর যেনো সুরক্ষা হয়-তা নিয়ে ভাবতে হবে। তারা আরও বলেন, সাহিত্যে বর্ষা নিজস্ব মহিমায় বিস্তৃত। সাহিত্যের প্রাচূর্য বৃদ্ধি পাক। তরুণ প্রজন্মকে সাহিত্যের দিকে টেনে আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তারা বলেন, তরুণরা এখন কবিতা লিখছেনা, এটা ভাববার বিষয়। তরুণদের কবিতা পড়ায় উৎসাহ দিতে হবে।
বর্ষামঙ্গল কবিতা উৎসব শিরোনামের প্রশংসা করে তারা বলেন, কবিতার জন্য অবশ্যই বিষয় থাকতে হবে। একটা সময় বর্ষা ছিলো আমাদের জন্য আশির্বাদ। বাংলা সাহিত্যে এমন কোনো কবি নেই যিনি বর্ষা নিয়ে কবিতা লিখেন নাই। অথচ আজ প্রকৃতি যেমন বদলে যাচ্ছে তেমনি আমাদের কবিরাও বর্ষা নিয়ে তেমন কবিতা লিখছে না।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আগত কবিদের মাঝে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ওয়েলকাম ড্রিংকস, চা, মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন ছিলো। পুরো অনুষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবি ও গীতিকার এবং কবিতাবিষয়ক গবেষক মো. আ. কুদদূস ও সাবেক যুগ্ম সচিব কবি সানাউল হক।
দিনব্যাপী এই বর্ষামঙ্গল কবিতা উৎসবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কয়েকজন কবি অংশগ্রহন করেন এবং তাদের মাতৃভাষায় রচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবিদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, সিলেট, পাবনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালি ও ঢাকার কবিরা অংশগ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শফিকুল্লাহ, অধ্যাপক মানবর্দ্ধন পাল, অধ্যাপক এসআরএম ওসমান গণি সজিব উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে। এই লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন।
তিনি গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘরে ১১নং এবং ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের আহবায়ক আবদুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সমস্যাটি বৈশ্বিক। সরকার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করার জন্যে কাজ করছে।
তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য আগামী নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করার আহবান জানান।
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির মানববন্ধনের নামে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খলা করার অপচেষ্টার প্রতিবাদে জেলা ছাত্রলীগ শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
আজ ১১ মার্চ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগ তাদের শান্তি সমাবেশ করে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার।
অপর দিকে, সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সামান্য দূরে রেলগেইট সংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পন্য সামগ্রী, কৃষি উপকরণ, শিক্ষা উপকরণসহ সকল কিছুর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে মানববন্ধন করে জেলা বিএনপি।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
এদিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলাকালে শহরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
জেলা ছাত্রলীগের সমাবেশের আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সরকারি কলেজের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিএনপির মানববন্ধনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে বাঁধা প্রদান করে। পরে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের পাদদেশে শান্তি সমাবেশ করে।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল জানান, বিএনপি মানববন্ধনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পায়তারা করছে। এই মানববন্ধনে যারা এসেছেন তারা চিহ্নিত অপরাধী। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে। তাদের দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
অপর দিকে জেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পন্য সামগ্রী, কৃষি উপকরণ, শিক্ষা উপকরণসহ সকল কিছুর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি। এটা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচী ছিলো।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বলেন, দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিবেশের যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিলো। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
চলারপথে রিপোর্ট :
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চালু থাকা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত ৩ জুন থেকে চিকিৎসকরা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে একদিকে দুর্ভোগে পড়েছে জেলার সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় রোগীরা, অন্যদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ জুন থেকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করেন হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারিত ফির মাধ্যমে অসহায় রোগীদের সেবাদান শুরু করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রোগীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা থেকেও অনেক রোগী এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতেন।
বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় মেডিকেল কর্মকর্তার সরকারি ফি ২০০ টাকা, জুনিয়ার কনসালটেন্ট ও আবাসিক সার্জনের ফি ৩০০ টাকা এবং সিনিয়র কনসালটেন্টের ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা চালু করায় সাধারণ রোগীরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৩ জুন থেকে এই স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা এখন অনেক অসন্তুষ্ট। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চালু থাকা প্যাথলজি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে অনেক টাকা জমা দিতে পেরেছেন। গত বছরের জুন মাসে শুধু পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে প্রাপ্ত ২১ হাজার ৫৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ৮৬ হাজার ৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৬০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৩০ টাকা, নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকা ও ডিসেম্বর মাসে ৯০ হাজার ৮১৫ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেন।
আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯১ হাজার ৩৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৬ হাজার ৯৩০ টাকা, মার্চ মাসে ৬৪ হাজার ৭৮০ টাকা এবং এপ্রিল মাসে ৫৪ হাজার ৩৫০ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর প্রথম মাসে গত বছরের জুন মাসে চিকিৎসকরা ২৫১ জন রোগী, দ্বিতীয় মাস জুলাই মাসে ১ হাজার ২২৬ জন, আগস্ট মাসে ১ হাজার ৪৫৭ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫২৩ জন, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ২১১ জন, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ১৪০ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৮৯২ জন রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে ৯০৫ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ১১৮ জন, মার্চ মাসে ৬৩১ জন ও এপ্রিল মাসে ৮৫৭ জন রোগী দেখেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা ১১ হাজার ৩৬০ জন রোগী দেখেছেন, যেখান থেকে আয় হয়েছে ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ টাকা।
গত বছরের জুন মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আট মাস এসব রোগী দেখার টাকা থেকে নিজেদের প্রাপ্ত সম্মানী ভাগাভাগি করে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের এক সভায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা থেকে প্রাপ্ত টাকা চিকিৎসকদের না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিচালক। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই হাসপাতালে বিকেলে রোগী দেখায় আগ্রহ হারাতে শুরু করেন চিকিৎসকরা।
চলতি বছরের ৩ জুন থেকে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা বন্ধ করেন চিকিৎসকরা। তবে প্যাথলজি বিভাগ চালু রয়েছে।
হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন জানান, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালে রোগী দেখার চেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখায় স্বাচ্ছন্দবোধ করেন চিকিৎসকরা। কারণ এতে চিকিৎসকদের আয়-রোজগার বেশি হয়। হাসপাতালের এক সভায় চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিচালক জানান, বাংলাদেশে যেসব সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে, সেখানকার কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের সম্মানি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা সম্মানি উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ জুন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। তাঁর যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালে যথাসময়ে চিকিৎসকের উপস্থিত হওয়াসহ সকল বিভাগেই স্বাস্থ্যসেবার বিরাট পরিবর্তন হয়েছিল। পাশাপাশি তার সময়ে হাসপাতাল থেকে সরকারি কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব জমা হয়েছে। তার একান্ত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সকালের পর দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্যাথলজি বিভাগ চালু হয়। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবার বিবেচনায় প্রথম হয়েছিল জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কর্মস্থলেই অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চলতি বছরের ৩ জুন থেকে হাসপাতালের বৈকালিক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটু প্রশাসনিক জটিলতা চলছে। বৈকালিক সেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। তাই বৈকালিক সেবার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগে বৈকালিক সেবার সবগুলো বিভাগ খোলা থাকত। কিন্তু এখন বিষয়টি রিশিডিউলিং করা হচ্ছে। এখন প্রতিটা বিভাগ হয়তো চালু থাকবেনা । কাস্টমাইজড করা করে কিছু বিভাগ কমিয়ে আবার চালু করা হবে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বৈকালিক সেবা চালু হবে।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন কুমার ঢালী বলেন, কিছু জটিলতার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ আছে। আমরা সীমিত পরিসরে সেবাটা আবার চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাহে রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন।
আজ ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বিপিএমসহ ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ মনিটরিং কার্যক্রম চালান।
এ সময় তারা শহরের আনন্দবাজার, জগৎবাজার, সড়ক বাজার, কোর্ট রোডসহ বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাদের সাথে পন্যের মূল্য নিয়ে কথা বলেন এবং বিভিন্ন দোকানের ক্রয় মূল্যের সাথে বিক্রয়মূল্য সঠিকতা যাচাই করেন।
বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম না বাড়ানো, দোকানে পণ্যের অতিরিক্ত মজুত না করা এবং সঠিক মূল্যতালিকা টানানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, যদি কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি বিক্রি করেন, তাহলে সে ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে। বাজারদর স্বাভাবিক রাখতে জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতেও নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চলবে বলে জানান তিনি।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ আলমগীর কবির, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আলহাজ্ব আজিজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।