হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা দফতরের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক নেত্রী তুলসী গ্যাবার্ড। দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট বুধবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি পদে নিয়োগ দেয় তাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জাতীয় গোয়েন্দা দফতরের ভূমিকা ব্যাপক ও বিস্তৃত। সিআইএ এবং এফবিআইসহ যুক্তরাষ্ট্রের মোট সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ১৮টি। এই ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীর সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি এবং এ সংস্থাগুলো জাতীয় গোয়েন্দা দফতরের কাছে জববাদিহিতা করে। জাতীয় গোয়েন্দা দফতরের প্রধান হিসেবে এখন থেকে এই ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থা দেখভালের দায়িত্ব পেলেন তুলসী।
তুলসি গ্যাবার্ডকে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান করা হবে কি না- এ প্রশ্নে ভোট হয়েছিল সিনেটে। এই কক্ষের মোট ১০০ জন সদস্যের ৫২ জন তাকে এ পদে নিয়োগের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
তুলসী গ্যাবার্ডের জন্ম ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুদূরবর্তী অঙ্গরাজ্য অ্যামেরিকান সামোয়ার বৃহত্তম শহর তুতুলিয়ায়। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং বর্তমানের বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেট সদস্য হয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো সিনেট নির্বাচন হয়েছে, প্রতিটিতেই তিনি জয় পেয়েছেন।
হাইস্কুল পাশের পর তিনি হাওয়াইয়ের লিওয়ার্ড কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পড়া শেষ না করেই সেই কলেজ ছেড়ে দিয়ে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা হাওয়াই আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেন তিনি। পরের বছর মার্কিন সেনাবাহিনীর মেডিকেল শাখার সদস্য হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিতে ইরাকে সফর করেন তিনি। ইরাক থেকে ফেরার পর ২০০৯ সালে হাওয়াই প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি নেন তুলসী।
পেশাগত জীবনের প্রায় পুরো সময়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রশান্ত মহাসগারীয় ইউনিটে কর্মরত ছিলেন তুলসী। সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের চেয়ে সামরিক বাহিনীর মেডিকেল ইউনিট, পুলিশ ও অন্যান্য দাফতরিক শাখায় বেশি সময় থেকেছেন তিনি। সামারিক বাহিনীতে তার সর্বশেষ পদবী ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রথমে ডেমোক্রেটিক পার্টিতেই তুলসী যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধিত্বও করেছেন তিনি। ২০২২ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে সরে দাঁড়ান তুলসী, তারপর ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টির সদস্য হন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন চেয়ে তুলসী ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু কিছুদিন প্রচারাভিযান চালানোর পর নিজে থেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন তিনি।
ডেমোক্রেটিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদ বাগানো তুলসীর জন্য খুবই কঠিন ছিল। রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং ট্রাম্পকে সমর্থনের ‘পুরস্কার’ হিসেবে এই পদ দেওয়া হয়েছে তুলসীকে। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, আল-জাজিরা
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে। পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে আখাউড়ায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়।
সকাল থেকে বন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। এর আগে গতকাল ২০ আগস্ট মঙ্গলবার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন।
দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন জানান, সকালে তীব্র বেগে ভারতীয় পাহাড়ি পানি ঢুকতে থাকে। এতে কয়েকটি গ্রামে পানি ওঠার পাশাপাশি আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু ভেঙে যায়। পুরো বন্দর এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
ইউএনও গাজালা পারভীন জানান, বেশ কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকাবাসী মিলে বাঁধের অংশ মেরামত করেছেন। সেতুটি মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে খবর দেওয়া হয়েছে। তবে, দ্রুত যান চলাচলের উপযোগী করা যাবে না।
অনলাইন ডেস্ক :
গাজায় গত ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান বিধ্বংসী যুদ্ধের অবসানে অবশেষে আজ ১৯ জানুয়ারি রবিবার সকাল থেকে গাজায় কার্যকর হতে যাচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে, যুদ্ধবিরতির আগেই হামলা চালিয়ে আরো ২৩ ফিলিস্তিনিকে মারলো ইসরায়েল বাহিনী। ১৮ জানুয়ারি শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় কমপক্ষে আরো ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন নিহত ও আরো লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে শনিবার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরলস এই হামলায় আরো অন্তত এক লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ২৩ জন নিহত এবং আরো ৮৩ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
অনলাইন ডেস্ক :
ইসলামের পবিত্রতম স্থান সৌদি আরবে ১৪৪৬ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে দেশটিতে রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
দুই মসজিদভিত্তিক ওয়েবসাইট ইনসাইড দ্য হারামাইন ২৯ মার্চ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। চাঁদ দেখা যাওয়ায় এবার দেশটির মানুষ ২৯টি রোজা রাখলেন।
সৌদি আরবের বড় দুই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সুদাইর ও তুমাইরে সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের চাঁদের অনুসন্ধান শুরু হয়।
এর আগে সুদাইর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সৌদির প্রধান জ্যোতির্বিদ আব্দুল্লাহ আল-খুদাইরি বলেন, “সুদাইর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আজ ৬টা ১২ মিনিটে সূর্যাস্ত যাবে। এবং অর্ধচন্দ্র সূর্যাস্তের ৮ মিনিট পর অস্ত যাবে।
দৃশ্যমানতার সময় দীর্ঘ অথবা ছোট হোক, যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তাহলে চাঁদ দেখা সম্ভব।”
পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ আল-আমার নামে অপর এক জ্যোতির্বিদ বলেন, “আমি প্রত্যাশা করছি সুদাইরে আজ আমরা চাঁদ দেখতে পাব।” শেষ পর্যন্ত তাদের ধারণা ঠিক হয়।
এরআগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র জানিয়েছিল, ২৯ মার্চ আরব ও ইসলামিক বিশ্বে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখতে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কারণ ওইদিন সূর্যাস্তের আগে চাঁদ অস্ত যাবে এবং চাঁদ সূর্যের সংযোগ ঘটবে সূর্যাস্তের পর।
খালি চোখে, টেলিস্কোপে অথবা অন্য কোনো উপায়ে আগামী ২৯ মার্চ শাওয়াল বা ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা ‘সম্ভব নয়’ বলেও দাবি করেছিল সংস্থাটি।
যেসব দেশ শুধুমাত্র চাঁদ দেখে ঈদ ও রমজানের তারিখ নির্ধারণ করে সেসব দেশে এবারের রমজান মাসটি ৩০ দিনের হতে যাচ্ছে। যার অর্থ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি এবং ইসলামিক বিশ্বে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর পালিত হবে।
গত ২০ মার্চ এমনই তথ্য জানিয়েছিল আমিরাতের জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র। কিন্তু তাদের এসব ধারণা আংশিক ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
ইসরায়েল বর্বরতার সব জঘন্য রেকর্ড ভেঙেছে। প্রায় ৯ মাস ধরে অনবরত ফিলিস্তিনের গাজায় তারা বোমা ফেলছে। এরই মধ্যে নারী, শিশুসহ ৩৭ হাজার ৬০০ জনের বেশি বাসিন্দাকে হত্যা করেছে তারা। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। ক্ষুধা-অনাহারে ধুঁকছে অধিকাংশ বসতি।
এবার নৃশংসতার আরেক অধ্যায় দেখিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনি এক নারীর ওপর লেলিয়ে দিয়েছে প্রশিক্ষিত কুকুর। এই হিংস্র জানোয়ারের হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন ৬৬ বছর বয়সী ওই নারী। এমন একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিজ অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জুমলত। খবর আল-জাজিরার।
কুকুরের কামড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়ার এই বাসিন্দা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। সে সময় ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা আসেন এবং তাঁর ওপর কুকুর লেলিয়ে দেন। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্নস্থানে ক্ষত তৈরি হয়েছে। এতেই ক্ষান্ত থাকেনি সেনারা। তারাও হামলায় চালিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেঁতলে দিয়েছে তারা।
এদিকে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া দুর্ভিক্ষে গাজায় আরও চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসাইন বলেন, গাজার অধিবাসীদের রক্ষায় বিশ্বকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে ২৩ লক্ষাধিক বাসিন্দা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
তিনি ২০১১ সালে সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের উদাহরণ টেনে বলেন, সে সময় দেশটিতে ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যার অর্ধেকই মারা যায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণার দেওয়ার আগেই। মঙ্গলবার হুসাইন সাংবাদিকদের বলেন, গাজায় যে শুধু খাবারের সংকট, তা নয়। এখানে পরিষ্কার পানি, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধেরও চরম সংকট রয়েছে।
তবে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ এড়ানো গেছে। সেখানে বাইরে থেকে ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে পারছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক সরবরাহও প্রবেশ করতে পারছে। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাদের হামলা অব্যাহত থাকায় সেখানে কোনো প্রকার সহায়তা বা ত্রাণ ঢুকতে পারছে না। এমনকি মিসর থেকে প্রবেশের প্রধান পথ রাফা ক্রসিংও বন্ধ আছে।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সলিড কোকেনের চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। আফ্রিকান দেশে মালাউইর এক নারী ৮ কেজি ৩০০ গ্রামের এই কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে নিয়ে আসনে। বুধবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালাউইর নাগরিক নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকোকে (৩৫) কোকেনের এই চালানসহ গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা কোকেনের মূল্য ১০০ কোটি টাকা।
ডিএনসি জানায়, কোকেনের এই চালানটি আফ্রিকার দেশ মালাউই অথবা ইথোপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল চালানটি পাচার করার জন্য। কারণ এই পরিমাণ কোকেন চাহিদা বাংলাদেশে নেই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ।
তিনি বলেন, কোকেন চোরাচালানের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের দেশি ও বিদেশি সক্রিয় কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কোকেনের একটি বৃহৎ চালান আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আফ্রিকান একজন নাগরিকের মাধ্যমে ঢাকায় আসবে এমন তথ্য পাই আমরা।
‘এর পর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়। এপিবিএনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম গঠন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেওয়া হয়। ফ্লাইটি থেকে নামা সব বিদেশি যাত্রীকে আমরা ফলো করি।’
তানভীর মমতাজ বলেন, এ সময় দেখা যায়, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো (৩৫) নামে এক বিদেশি নারী বিমানবন্দরের নিচতলায় ভিসা অন এ্যারাইভাল ডেক্সে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন লাগেজে কোকেন আছে। পরবর্তী সময়ে লাগেজের ভেতরে বিশেষভাবে রাখা ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো আফ্রিকান দেশ মালাউইর নাগরিক। তিনি প্রথমে মালাউই থেকে ইথোপিয়া যান। পরে তিনি ইথোপিয়া থেকে যান দোহাতে। পরে তিনি দোহা থেকে কাতারের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশ থেকে আবারও মালাইউতে যাওয়ার কথা ছিল। কোকেনের এই চালানটি বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার কথা ছিল। পরে বাংলাদেশ থেকে কোকেনের চালানটি অন্য কোনো দেশে চলে যেত। আমাদের ধারণা তাওয়েরা সোকো কোকেনের এই চালানটি মালাইউ থেকে নয়তো ইথোপিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানান, ২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশে একবার এসেছিলেন। গার্মেন্টস ব্যবসার কথা বলে তিনি ওই বছর বাংলাদেশে আসেন। এবারও তিনি বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন। অন এ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য তিনি তার পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করছিলেন। সোকো মালাইউতে পেশায় একজন নার্স। তিনি মূলত কোকেনের এই চালানের বহনকারী। বাংলাদেশে তিনি আরেক জন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই চালান পৌঁছে দিয়ে নিজ দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশে সোকো কার কাছে কোকেন হস্তান্তর করতেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তবে বাংলাদেশ অবস্থারত কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই কোকেন যাওয়ার কথা ছিল। আমরা একজন বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব।
২০২৩ সালে সোকো বাংলাদেশে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তানভীর মমতাজ বলেন, তখনো তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে এসেছিলেন। তিনি আসলে কিসের জন্য এসেছিল সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।
কোকেনের এই আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি চক্র জড়িত আছে। এই চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।
কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে কোনো দেশে যাওয়ার কথা ছিল, এমন প্রশ্নে মাদকের এই কর্মকর্তা বলেন, এগুলো আমরা আমাদের তদন্ত শেষে বলতে পারব। তবে এটা বলতে চাই- কোকেনের চালানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল না। কারণ বাংলাদেশে এই পরিমাণ কোকেন কনজিউম করার মার্কেট নেই।
এই কোকেনের আনুমানিক বাজার দর ১০০ কোটির ওপরে। দেশের ইতিহাসে সলিড কোকেনের এইটিই বড় চালান বলে জানান ডিএনসির এই কর্মকর্তা।