বেগানা নারীর সঙ্গে নির্জনতা ও সফরের বিধান

ধর্ম, 18 February 2025, 256 Views,

উম্মে আহমাদ ফারজানা:
সমাজের পর্দাহীনতার সয়লাবের একটি উপমা হলো গায়র মাহরাম তথা বেগানা নারী-পুরুষ নির্জনে একত্র হওয়া। ইসলাম একে হারাম ঘোষণা করেছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সেসব নারীর কাছে তোমরা যেয়ো না। কেননা তোমাদের সবার মধ্যেই শয়তান (প্রবাহিত) রক্তের শিরায় বিচরণ করে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কখনো কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ না করে, যতক্ষণ না ওই মেয়ের কোনো মাহরাম তার সঙ্গে থাকে। কারণ সে সময় তৃতীয় জন থাকে শয়তান। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)। বর্তমানে নারী-পুরুষের নির্জনতাকে অনেকে পাপই মনে করে না। দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, ড্রাইভার-মহিলা গৃহকর্তা, ডাক্তার-নার্স, অফিসের বস-মহিলা পিএ, শিক্ষক-ছাত্রী, পীর, মহিলা মুরিদ ইত্যাদি বেগানা নারী-পুরুষ প্রতিনিয়ত নির্জনে একত্র হয়ে কাজ করছে। ইসলামের দৃষ্টিতে তা হারাম। বেগানা নারী সঙ্গে নিয়ে সফর: ইসলাম নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। তাই যেখানে তাদের সম্মান বা সুরক্ষা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে বিশেষ বিধান দিয়ে সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিবেচনায় ইসলামের বিধান হলো, মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করা নারীদের জন্য বৈধ নয়। যাদের সঙ্গে চিরতরের জন্য বিবাহ অবৈধ, তাদের মাহরাম বা এগানা বলা হয়। এ ছাড়া অন্যদের গায়র মাহরাম বা বেগানা বলা হয়। সাধারণ সফর ও হজের সফর সব ক্ষেত্রে একই বিধান: মাহরাম ছাড়া নারীর সফর বৈধ নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে কোনো মাহরাম পুরুষকে সঙ্গে না নিয়ে এক দিন ও এক রাত্রির পথ সফর করা জায়েজ নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৮৮)। কোনো কোনো হাদিসে এক দিন এক রাতের পরিবর্তে তিন দিন তিন রাতের কথা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নারীর সঙ্গে কোনো মাহরাম পুরুষ না থাকলে সে যেন তিন দিনের সফর না করে।’ (বুখারি : ১০৮৭)। আসলে এখানে দিন-রাত মুখ্য নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে মাহরাম ছাড়া নারীর যেকোনো সফর বৈধ নয়। এখানে মূল কথা হলো, যদি ৪৮ মাইল (৭৮ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে সফর হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষদের থেকে নিজের কোনো মাহরাম আত্মীয় বা স্বামী সঙ্গে না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো নারীর জন্য সফর করা জায়েজ নেই। এটি হজের সফর হোক বা উচ্চশিক্ষার জন্য সফর হোক। তার মানে এই নয় যে নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। প্রয়োজন হলে অবশ্যই ঘরের বাইরে যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে উম্মাহাতুল মুমিনিন সাওদা বিনতে জামআ (রা.) কোনো কারণে বাইরে গেলেন। উমর (রা.) তাঁকে দেখে চিনে ফেললেন। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! হে সাওদা! তুমি নিজেকে আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারনি।
এতে তিনি নবী (সা.)-এর কাছে ফিরে গেলেন এবং উক্ত ঘটনা তাঁর কাছে বলেন। তিনি তখন আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশতওয়ালা একখানা হাড় ছিল। এমন সময় তাঁর কাছে ওহি অবতীর্ণ হলো। ওহি শেষ হলে নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫২৩৭)। যাই হোক, সফরকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসলাম সফরে নারীর সঙ্গে মাহরাম থাকা অপরিহার্য করে দিয়েছে। যেন সফরে মাহরাম পুরুষ নারীকে দুশ্চরিত্র লোকদের থেকে নিরাপদ রাখতে পারে এবং নারীর প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করতে পারে।
মাহরাম ছাড়া নারীর একাকী সফর বৈধ না হওয়ার কারণ হলো সফরে স্বামী ও মাহরাম নারীর যতটুকু সম্মান ও সুরক্ষা করতে পারে, অন্য কেউ তা রক্ষা করতে পারে না। আর আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.) যে বিধান দিয়েছেন, মুসলমানরা তা মানতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আছে কী নেই, বদনাম হবে কী হবে না, তা বিবেচ্য নয়। আর হ্যাঁ, ইসলামের বিধান শুধু আত্মসমর্পণকারী মুসলিম নর-নারীর জন্য।

banner

Leave a Reply

ইটালি প্রবাসী দিদারের মা আনোয়ারা বেগমের…

শফিকুল ইসলাম বাদল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর Read more

কসবায় মায়ের অভিযোগে ছেলের কারাদণ্ড

চলারপথে রিপোর্ট : মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে Read more
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : পুকুরের পানিতে ডুবে ইসরাত জাহান নোভা (৯) Read more

ইরান কখনও আপোস করবে না: আয়াতুল্লাহ…

অনলাইন ডেস্ক : জায়নবাদীদের সাথে ইরান কখনও আপোস করবে না Read more
ফাইল ছবি

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাঁচ দিনের…

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানার পৃথক Read more
ফাইল ছবি

প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে…

অনলাইন ডেস্ক : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক…

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর Read more

কারাগারে হাজতির মৃত্যু

দুলাল মিয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে জুনায়েদ মিয়া (৩২) নামে Read more

আখাউড়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

চলারপথে রিপোর্ট : কৃষকদের সেচ দক্ষতা বাড়াতে পানি ব্যবহারকারী গ্রুপের Read more

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ১১তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য: রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের Read more

স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে…

অনলাইন ডেস্ক : স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে অনশন Read more

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ২১…

অনলাইন ডেস্ক : ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিশরসহ ২১টি Read more

১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের জন্য সুখবর!

জাতীয়, ধর্ম, 17 January 2025, 615 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদের ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সম্মানী ভাতা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় এই ভাতা দেওয়া হবে। প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ সম্মানী চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি মসজিদগুলোকেও এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

banner

প্রাথমিকভাবে ইমামকে দেয়া হবে ৫ হাজার টাকা, মুয়াজ্জিন ৪ হাজার এবং খাদেম পাবেন ৩ হাজার টাকা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে ১৭ লাখের বেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন রয়েছেন। এর বাইরে শহরের মসজিদগুলোতে খাদেম রয়েছেন। সরকার পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ কর্মসূচি চালু করবে। পরে ধাপে ধাপে সব মসজিদ এর আওতায় আসবে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি মসজিদকে ১২ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।’

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একইভাবে মন্দিরের পুরোহিত ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ভাতার আওতায় আসবেন বলে।

এর আগে গত বছরের ৪ মার্চ জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কর্ম অধিবেশন শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ‘প্রতিটি জেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যদের তালিকা প্রস্তুত করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছে। তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন কর্মরত। এর মধ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এবং জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে তিনজন খতিব, ছয়জন পেশ ইমাম ও ছয়জন মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত।

আমাদের বুকের ভেতরে বাস করে ফিলিস্তিন

জাতীয়, ধর্ম, 12 April 2025, 208 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের মানুষের বুকে একেকটা ফিলিস্তিন বাস করে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক স্কলার ও আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী। আজ ১২ এপ্রিল শনিবার বিকেলে ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদে রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসমাবেশে এ কথা বলেন আজহারী।

banner

কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়েছেন- জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অনেকে।

মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, জনতার এই মহাসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল-আকসার প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভৌগলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি, কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের একেক জনের হৃদয়ে, বুকের ভেতরে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন। আজহারী আরও বলেন, আমাদের হৃদয়ে বাস করছে একেকটা গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করছে একেকটা আল-কুদস।

বক্তব্যের সময় জনসমুদ্রে স্লোগান তুলেছেন মিজানুর রহমান আজহারী। গাজায় মুসলিম ভাইয়েরা কেন শহীদ হচ্ছে, এ ব্যাপারে জাতিসংঘের কাছে জবাব চেয়েছেন তিনি। ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ, আমার ভাই শহীদ কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আল কুদুস, আল কুদুস, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’— এসব স্লোগানে মুখরিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আজ সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে স্রোতের মতো জনতার মিছিল আসতে থাকে। এতে করে জনসমুদ্রে পরিণত হয় ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ শিরোনামে এই জমায়েতের ডাক দেয় ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’।

হজরত ওমর (রা.) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন

ধর্ম, 12 January 2025, 478 Views,

ওমর ফারুক ফেরদৌস
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) আল্লাহর রাসুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান একজন সাহাবি। ইসলামের আবির্ভাবের কয়েক বছর পর ইসলাম গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে তিনি সাহাবিদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত হন। সাহাবিদের মধ্যে আবু বকরের (রা.) পরই ছিল তার অবস্থান। নবিজি (সা.) তাকে ও আবু বকরকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওহাব আস-সুয়ায়ী থেকে বর্ণিত আলী (রা.) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে ? সবাই বললেন আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন, না, নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ওমর। (মুসনাদে আহমদ: ৮৩৪)

banner

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, আমার পরে আপনারা আমার সাহাবিদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করুন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৬৩)
ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রথম কয়েক বছর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। অন্যান্য মক্কাবাসীর মতো তিনিও ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করতেন এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্য বিভাজন সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করতেন। এক পর্যায়ে তিনি নবিজিকে (সা.) হত্যার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন বলে কিছু কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে ইসলামের জন্য কবুল করেন।

তিনি কততম মুসলমান ছিলেন এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। অনেকের মতে তিনি ৩৯ জন পুরুষ এবং ২৩ জন নারীর ইসলাম গ্রহণের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি ৪০ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারীর পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি ৪৫ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারীর পরে ইসলাম গ্রহণ করেন।

নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের আগে একদিন আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুঁজতে বের হলাম। দেখলাম তিনি আমার আগেই মসজিদে হারামে পৌছেছেন, আমি তার পেছনে দাঁড়ালাম। তিনি সুরা আল-হাক্কাহ পড়া শুরু করলেন। কোরআন কীভাবে আমার হৃদয়কে আকৃষ্ট করছে, তা দেখে আমি অভিভূত হলাম। মনে মনে বললাম, কুরাইশরা যেমন বলেছে, ইনি নিশ্চয়ই কবি। পরক্ষণেই তিনি পড়লেন,

إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ. وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُونَ

নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসুলের আনীত বাণী। এটা কোনো কবির কথা নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর। (সুরা হাক্কাহ ৪০, ৪১)

এরপর আমি মনে মনে বললাম, ইনি একজন গণক বা জ্যোতিষী হতে পারেন। পরক্ষণেই তিনি পড়লেন,

وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ فَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ

এবং কোনো গণকের কথাও নয়। তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ কর। এটি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত। যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। তারপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তাকে রক্ষা করতে পারবে। (সুরা হাক্কাহ: ৪২-৪৭)

এভাবে তিনি পুরো সুরাটি শেষ করলেন এবং ইসলাম আমার অন্তরে পরিপূর্ণভাবে বদ্ধমূল হলো। (মুসনাদে আহমদ: ১০৭)

অন্য একটি বর্ণনায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি হজরত ওমরকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে কেন ফারুক নামে ডাকা হয়? ওমর (রা.) বললেন, হামজা (রা.) আমার তিন দিন আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু জাহল নবিজিকে (সা.) গালি দিয়েছিলেন। হামজা (রা.) এ খবর পেয়ে নিজের ধনুক নিয়ে মসজিদুল হারামে আসেন এবং কুরাইশের একটি মজলিসে আবু জাহলের সামনে দাঁড়িয়ে যান। হামজার চেহারায় ক্রোধ দেখে আবু জাহল বলেন, কী হয়েছে, আবু উমারাহ? তখন হামজা ধনুক দিয়ে আবু জাহলের কপালে আঘাত করেন, যার ফলে কপাল থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। কুরাইশের অন্যরা পরিস্থিতি শান্ত করতে সচেষ্ট হয়, যাতে বিশৃঙ্খলা আর না বাড়ে।

নবিজি (সা.) তখন দারুল আরকামে আত্মগোপনে ছিলেন। হামজা (রা.) সেখানেই গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

তিন দিন পর আমি বাইরে বের হলে এক মুসলমান ব্যক্তিকে দেখে বলি, তুমি কীভাবে নিজের বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে মুহাম্মাদের অনুসরণ করলে? সে বললো, আমি কী করেছি তা না ভেবে নিজের পরিবারের কথা ভাবো। তোমার বোন ও বোনজামাইও ইসলাম গ্রহণ করেছে।

এ তথ্য শুনে আমি ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের বাড়িতে যাই এবং কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ শুনতে পাই। ঘরে ঢুকে আমি জিজ্ঞাসা করি তোমরা কী করছিলে? কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমি বোনজামাইয়ের মাথা চেপে ধরে আঘাত করি, তিনি রক্তাক্ত হয়ে যান। তখন আমার বোন আমাকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। আপনি যা খুশি করতে পারেন।

বোনজামাই রক্তাক্ত হয়ে গেছেন দেখে আমি লজ্জিত হই এবং বলি, আমাকে ওই পাণ্ডুলিপি দেখাও। কিন্তু আমার বোন বলেন, এটি শুধুমাত্র পবিত্র ব্যক্তিরাই স্পর্শ করতে পারেন। তখন আমি গোসল করি। তারা আমাকে পাণ্ডুলিপিটি দেন। আমি পড়া শুরু করি,

الۡعُلٰی اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا وَ مَا تَحۡتَ الثَّرٰی وَ اِنۡ تَجۡهَرۡ بِالۡقَوۡلِ فَاِنَّهٗ یَعۡلَمُ السِّرَّ وَ اَخۡفٰی اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی

ত্ব-হা। আমি তোমার প্রতি আল-কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ স্বরূপ। যিনি সমিন ও সুউচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট থেকে অবতীর্ণ। পরম করুণাময় আরশের ওপর সমুন্নত রয়েছেন। যা আছে আসমানসমূহ, জমিন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং যা আছে মাটির নিচে সব তাঁরই। আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বলো তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন। আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। (সুরা ত্বহা: ১-৮)

আয়াতগুলো পড়ে আমি বিস্মিত হয়ে ভাবলাম, এই বাণী থেকে কোরাইশ পালিয়ে বেড়াচ্ছে! তারপর আমি ইসলাম গ্রহন করলাম এবং বললাম আল্লাহর রাসুল (সা.) কোথায়? আমার বোন বললেন, তিনি দারুল আরকামে আছেন।

আমি সেখানে গিয়ে দরজায় আঘাত করলাম। আমাকে দেখে অন্য সাহাবিরা ভীত হয়ে যান। হামজা (রা.) বলেন, তোমাদের কী হলো? তারা বলেন, ওমর এসেছে। হামজা (রা.) বলেন, দরজা খুলে দিন, যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে তাকে স্বাগত জানাব আর যদি তিনি কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এখানে এসে থাকেন, তবে তাকে হত্যা করব। এসব কথা শুনে নবিজি (সা.) বাইরে আসেন এবং আমি তার সামনে কালেমা পাঠ করি। আমাকে কালেমা পাঠ করতে শুনে ঘরের সবাই আনন্দে তাকবির দেন, যার আওয়াজ পুরো মক্কা শহর শুনতে পায়। (তারিখে ইবনে আসাকির)

ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় মুসলমানদের প্রভাব ও শক্তি বেড়ে যায়। বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সা.) ওমরের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আবু জাহল ও ওমার—এ দুই জনের মধ্যে আপনার কাছে যে প্রিয়, তার মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। আল্লাহর কাছে ওমর প্রিয় ছিলেন। তাই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ: ৫৬৯৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮১)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওমরের জন্যই বিশেষভাবে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি ওমরের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৫)

ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের প্রচার প্রসারে ওমরের (রা.) ত্যাগ-তিতিক্ষা, আল্লাহর ইবাদত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তার অগ্রগামিতা তাকে মুসলমানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত করে। নবিজির (সা.) ওফাতের পর আবু বকর মুসলমানদের খলিফা হন। তার ওফাতের পর খলিফা হন হজরত ওমর (রা.)।
-আলেম ও লেখক (সংগৃহীত)

পরপর ৩ জুমা না আদায় করলে যা হয়

ধর্ম, 24 April 2025, 111 Views,

ইসলাম ডেস্ক :
জুমার দিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। এই দিনকে আল্লাহ তাআলা সপ্তাহের অন্য সব দিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কোরআন ও হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা)

banner

হাদিসে রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ (ইবনে মাজাহ ১০৯৮)

হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে এবং নিজেও ভালোভাবে গোসল করবে, ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে মসজিদে হেঁটে আসবে, ইমামের কাছাকাছি বসবে, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং কোনো অনর্থক কাজ করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছর নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ ৩৪৫)

তবে ফজিলতের পাশাপাশি জুমার নামাজ আদায় না করলে রয়েছে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি। রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে পরপর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি ১০৫২; তিরমিজি ৫০২, মুসলিম ১৯৯৯)

একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল।’ (মুসলিম)

তবে কিছু শ্রেণির লোক জুমার নামাজে উপস্থিত না হলে তারা দোষী নয়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ: ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি।’ (আবু দাউদ)

নামাজ প্রসঙ্গে হজরত উমর (রা.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের।’ (বায়হাকি ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না, সে কাফের।’ (বায়হাকি ৬২৯১)

কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন দলিল থেকে বোঝা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করা বড় কুফরি এবং ইসলাম নষ্টকারী কাজ। তাই জুমা ও প্রতিদিনের ফরজ নামাজ যথাসময়ে আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য।

দস্তারবন্দী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে মাওলানা মামুনুল হক

জাতীয়, ধর্ম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 9 January 2025, 932 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ১৯৭২ সাল বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের বছর। ৭২ সালে এমন এক চেতনা ও সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল যা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছিনতাই করা হয়েছে।

banner

আরও পড়ুন
লন্ডন পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া

৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে অবস্থিত হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া মাদরাসায় অনুষ্ঠিত দস্তারবন্দী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন
ডিবিতে আয়নাঘর থাকবে না, থাকবে না ভাতের হোটেলও: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আল্লামা সাজিদুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি খলিল আহমদ কাসেমীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ-ইসলাম এক সূত্রে গাথা। বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন হলে স্বাধীনতা টিকবে না। যারা ইসলামবিদ্বেষী তারাই বাংলাদেশের শত্রু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গৌরবময় বছর এবং ১৯৭২ সাল বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের বছর। ৭২ সাল কলঙ্কের কারণ, এ বছরের শেখ মুজিবুর রহমান নতুন চেতনা তৈরি করেছিলেন যা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছিনতাই করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৯ মাস পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশে না এসে, চলে গেলেন লন্ডনে। সেখান থেকে বাংলাদেশে না এসে চলে গেলে ভারতের নয়াদিল্লি। দেখা করলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। তখন ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবুর রহমান এর মুজিব কোটে কিছু নীতিকথা লিখে একটি চিরকুট ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই চিরকুটের কথা ছিল বাংলাদেশের গোলামির জিঞ্জির, স্বাধীনতা যুদ্ধের কৃতিত্ব ও চেতনাকে ছিনতাই করার মন্ত্র। তাই ৭২ সালের সংবিধান চার নীতি ভারতের সংবিধান থেকে পাচারকৃত।

আরও পড়ুন
ডালিম খেলে কী কী উপকার হয়?

মামুনুল হক বলেন, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতির সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান অঙ্গীকার করেছিলেন কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তৈরি করবেন না। ৭২-এর সংবিধান করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান অঙ্গীকার ভুলে গেছেন। তাই বলি ৭২ এর সংবিধান গাদ্দারের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সংবিধান, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার সংবিধান। সংবিধানে চার মূলনীতির এক নীতি ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদ বাংলাদেশে ছিল না। এই নীতি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সুনাম করে মামুনুল হক বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সকল রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সেখানে ভারত আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বকালের নজিরবিহীন ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। আমরাও ঘোষণা করতে চাই ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখতে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি দিল্লিতে পাঠিয়ে দিতে হবে।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খতিবে বাঙাল আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি শাখাওয়াত হোসেন রাজি প্রমুখ।