অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ১ মার্চ শনিবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ২ মার্চ রবিবার রোজা শুরু হবে।
১ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ দেখা কমিটি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। কমিটি জানায়, চাঁদ দেখা যাওয়ায় শনিবার ২৯ তম দিনে শেষ হচ্ছে শাবান মাস। আর আগামীকাল রবিবার শুরু হবে রমজান মাস। ফলে আজ দিবাগত রাতে সাহরি খেয়ে রবিবার থেকে রোজা রাখবেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
রমজান মাসের চাঁদ দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১ মার্চ শনিবার বাদ মাগরিব জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
এদিকে, গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সৌদি আরবে হিজরি ১৪৪৬ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়। ফলে আজ ১ মার্চ শনিবার দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রোজা।
অনলাইন ডেস্ক :
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত চক্র) সরকারকে ব্যর্থ করতে নেমেছে। তারা কীভাবে সরকারকে পতন করবে? গোপন হামলার মাধ্যমে? চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে সরকারের পতন করা সম্ভব হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে এখানে নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধন উপলক্ষে মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
সমাবেশ শুরুর আগে নরসিংদীবাসীর জন্য উপহার উল্লেখ করে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
তাঁর সরকার সাক্ষরতার হার ৪৪ ভাগ থেকে ৭৬ দশমিক ৬ ভাগে ভাগে উন্নীত করেছে এবং খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের ব্যক্তিগত শিক্ষা-দীক্ষার ইতিবৃত্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা চায় না যে মানুষ শিক্ষিত হোক। ওরা চায় না আমাদের ছেলে-মেযেরা লেখাপড়া শিখুক। তাই, আজকে এই নভেম্বর মাস, সামনে ইলেকশন। আগেভাগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। সে ব্যবস্থা যখন নেওয়া হচ্ছে বিএনপি দিচ্ছে অবরোধ, হরতাল আর পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে। সামনে আসার সাহস নাই। অলি-গলি থেকে বের হয়ে বাসের ভেতর, স্কুটারে, অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিচ্ছে। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করছে, এমনকি অন্তস্বত্তা মহিলা যে অ্যাম্বুলেন্সে সেটাও পুড়িয়ে দিচ্ছে।
পুলিশের ওপর হামলা ও পিটিয়ে পুলিশ হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং পুলিশ, হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগকে তিনি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে তিনি একে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন এবং নিরীহ নারী ও শিশু হত্যার সঙ্গে তুলনা করেন।
তিনি বলেন, এই বিএনপি’র সন্ত্রাসি কর্মকান্ড আপনারা যুগ যুগ ধরে দেখেছেন, কিভাবে মানুষের ওপর তারা অত্যাচার করে। ২০১৩ ও ১৪ সালে করেছে নির্বাচন বানচালের জন্য এখন আবার একই উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। মানুষ জন হাট বাজার দোকান পাট যানবাহন ব্যক্তিগত সম্পত্তি কোনকিছুই রেহাই পাচ্ছে না।
তিনি অগ্নিসন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এ অগ্নিসন্ত্রাসি যাকে যেখানে পাবেন তাকে আগে ধরেন। কেউ যদি অগ্নিসন্ত্রাস করতে যায়, বাসে আগুন দিতে যায় ঐগুলোকে ধরে ঐ আগুনেই ফেলে দেবেন। তাহলে যদি ওদের শিক্ষা হয়, তাছাড়া ওদের শিক্ষা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা বন্ধ করা ছাড়া তারা এই অবরোধ করে আর কি করতে পারবে? সরকার হঠাবে! কিভাবে হটাবে? এই চোরাগুপ্তা হামলা করে সরকার হঠানো যায় না। মানুষ সাথে না থাকলে আন্দোলন হয় না।
‘২/৪টা চোরাগুপ্তা হামলা করে আর মানুষ মেরে ওরা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসি দল আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাদীদের দল। তাদের কথা এদেশের মানুষ শোনে না।
এক সময় এদের কথায় কিছু লোক আস্ফালন করে বেড়ালেও বিএনপি’র নেতৃত্ব শূন্যতার দিকে ইঙ্গিত করে তাদের নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টার কারণও সামনে আনেন তিনি।
তিনি বলেন, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মস্যাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে। যাকে তিনি পরিবারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে দয়া করে নিজস্ব ক্ষমতাবলে বাড়িতে থেকে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছেন। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা এবং মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
তিনি আগামী নির্বাচনে যাকে প্রার্থী করা হবে তার পক্ষে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করেন। এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা দুই হাত তুলে সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেয়।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান প্রমুখ।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী। সূত্র : বাসস
অনলাইন ডেস্ক :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ জেলা পঞ্চগড় থেকে ভোটে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, পঞ্চগড়ের মানুষ চাইলে তিনি ভোটে লড়বেন।
আজ ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠে অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে একথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, পঞ্চগড়ের মানুষ যদি মনে করে আমি কিংবা তরুণ অন্য কেউ সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তাহলে আমি মনে করি তার এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। আমরা মানুষের চাওয়া নিয়েই কাজ করেছি। সব কর্মসূচি ছিলো মানুষের পালস বুঝেই। মানুষ এখন চায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা তাদের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক।
বিগত ১৬ বছরে রংপুর বিভাগসহ পঞ্চগড় অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, কয়েকটি রাস্তা ছাড়া কিছুই হয়নি। একটা শিল্প কারখানা হয়নি। আমাদের বেশি কিছু দরকার নেই। যেটুকু পঞ্চগড়ের মানুষের পাওনা বা হক সেটা কিভাবে আদায় করা যায় আমরা প্রাণপন চেষ্টা করব।
শীতবস্ত্র পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক বিত্তবান ভালো মানুষ রয়েছেন। অনেক গার্মেন্ট মালিক রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কেবল যোগাযোগ করা ও সদিচ্ছা থাকা দরকার। আমরা যে শীতবস্ত্র পেয়েছি তা পঞ্চগড়ের প্রত্যেক ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
পঞ্চগড়ের উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য যতটুকু করা যায় আমরা করব। এটা মাত্র শুরু, পঞ্চগড়কে নিয়ে অনেক ইচ্ছে ও স্বপ্ন আছে। আশা করি তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাবেন। পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীর পাশে জেলা প্রশাসকের ডিজাইনে একটি ২৩ তলা ওয়াচ টাওয়ার হবে। এ বছরেই এ টাওয়ারটা হবে, যেটা হবে বাংলাদেশের মধ্যে সব থেকে বড় ওয়াচ টাওয়ার। এটা থেকে পুরো পঞ্চগড়সহ তেঁতুলিয়া দেখা যাবে। এমন কিছু করতে হবে যা দেখতে পুরো বাংলাদেশ থেকে মানুষ পঞ্চগড়ে আসে। এতে জেলায় বাড়বে কর্মসংস্থান। আমরা একটা জিনিস মনে করি, মানুষের ক্ষমতা ও টাকা আজ আছে আগামীকাল নেই। কেউ যদি কিছু একটা করে যায়, সে আগামী ১০০ বছর রয়ে যাবে। আর টাকা দিয়ে কখনও সম্মান কেনা যায় না। শুধু দোয়া করবেন আমার জন্য, এটাই চাওয়া।’
সারজিস জানান, অন্যায় অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক জেলা উপজেলার মানুষকে নিয়ে গ্রুপ তৈরি করা হবে। বলেন, কেউ অন্যায় অনিয়ম করলে এই গ্রুপের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে সেটি আমানত মনে করি। এই আমানত রেখে মানুষের কল্যাণে যা কিছু করা যায় আমরা করব।
জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস বলেন, এতো রক্ত, এতো জীবনের বিনিময়ে জণগণের চাওয়া কেবল একটি নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না।
তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হয়ে জনগণের যারা প্রতিনিধি হবে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের কাছে ক্ষমতা যাবে এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে নতুন একটি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করা, বিচার ব্যবস্থাকে ঠিক করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের মূল দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা প্রায় অবাস্তব ও অসম্ভব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী অভ্যুত্থানটি সফল হয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা এই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি তার সামগ্রিক একটি রূপরেখা এই জায়গায় দেখতে পাব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আদম সুফি, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা জজ আদালতের গভর্নমেন্ট প্লিজার (জিপি) আব্দুল বারী, অ্যাডভোকেট খলিল হোসেন, গড়িনাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দিপুসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
অনলাইন ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ ২০ ডিসেম্বর বুধবার বিকেলে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তিনি বক্তৃতা দেন। সিলেটবাসীকে সালাম ও বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আগুন নিয়ে খেলে। তারা জানে না আগুনে হাত দিলে আগুনেই হাত পুড়ে যায়। লন্ডনে বসে হুকুম দেয়। আর এদেশে বসে তাবেদার লোক মানুষ পোড়ায়।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন করতে দিতে চায় না। কিন্তু এত সহজ নয় যে, সরকার সহজে পড়ে যাবে। যারা খুনি তারাই নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তাদের প্রতিহত করতে হবে।
আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি আদায় করে বলেন, এ নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। কেউ ভয় পাবেন না। নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন।
তিনি বলেন, সিলেটের যে কুপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পাওয়া যায়নি, সেই কুপে এখন গ্যাস ও তেল পেয়েছি। আল্লাহ জন বুঝে ধন দেন। ২০০১ সালে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। কারণ আমেরিকা চেয়েছিল তাদের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে। আমি তা করিনি। তখন ভোট কারচুপির মাধ্যমে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছে।
সিলেটের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে সিলটবাসী আমার সঙ্গে আছেন। আমি বারবার সিলেটে এসেছি। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সিলেটবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সুরমা নদীসহ সব নদী খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। নতুন রেলস্টেশন করে দিয়েছি। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-বাদাঘাট এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় ও চার লেন হচ্ছে। ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। আধুনিক সিলেট গড়ার কাজ চলছে। সিলেটে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। একশ শয্যার বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিলেটের মানুষ সবসময় আমাদের পাশে রয়েছে। আমিও পাশে আছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট অর্থনীতির জন্য আমরা লড়াই করছি।
বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করে ৪টা ৫৫ মিনিটে শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী। ৩৫ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি বলেন, আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছি। তারা কি দিয়েছে। বারবার সংবিধান লঙ্ঘন ও জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছে। কোনো কাজ করেনি। শুধু ভোগের জন্য তারা ক্ষমতায় এসেছে।
বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশের মঞ্চে পৌঁছার পর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সরকারি আলিয়া মাদরাসার মাঠ। তার বক্তব্যের আগে শীর্ষ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের বক্তব্যকালে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা ৮ লাখ ৪১ হাজার মানুষকে ঘর দিয়েছি। প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের ভাতা দিচ্ছি। ৩৬ লাখ নারীকে এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই দেশকে এগিয়ে নিতে আর তারা (বিএনপি-জামায়াত) এগিয়ে নিতে দিতে চায় না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝে যেমন ছিল নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস তেমনি তার বক্তব্য শোনার জন্য ছিল নীরবতা। মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় অবস্থান করেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। নিরাপত্তার কারণে চারপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন অনেকে। বিশেষ করে একমাত্র মাঠের পশ্চিম দিকে প্রবেশের স্থান রাখায় মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের মাঠে প্রবেশে বেগ পেতে হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বিএনপিকে চাই না। খালেদা জিয়াকে চাই না, তারেক রহমানকে চাই না। এরা মানুষ মারে। এরা মানুষ না, দানব। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। এদের বাংলাদেশে রাখা যাবে না।
খেলা হবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ধর্মঘট ভুয়া, রাজনীতি ভুয়া। তারা বলেছিল ডিসেম্বরে খালেদা জিয়া দেশ চালাবে, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবেন। কিন্তু অনেকে পালিয়েছেন। বিএনপি লালকার্ড পেয়ে গেছে।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রেসিডয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছো হক, সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, ইনাম আহমদ চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রবাসী কল্যাণ, বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, আবু জাহির এমপি, হাবিবুর রহমান এমপি, মুহিবুর রহমান মানিক এমপি প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ হেলাল প্রমুখ।
সিলেটের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ওসমানী বিমানবন্দর পৌঁছান। দুপুরে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। সিলেট সার্কিট হাউসে অবস্থানের পর বিকেলে সমাবেশের মঞ্চে পৌঁছান। ওই সময় শিল্পীরা ‘বাবা শাহ জালালের দেশ সিলেট ভূমিরে…ও কোন মেস্ত্ররি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়’…গান দুটি পরিবেশন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা ছিল নগরজুড়ে। সমাবেশস্থলের পার্শ্ববর্তী চৌহাট্টা মোড় থেকে আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, রিকাবি বাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশের মাজার এলাকার রাস্তাও বন্ধ রাখা হয়। নগরীর প্রত্যেক প্রবেশ মুখ থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা এবং সংসদ সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে যোগ দেন। তাদের পরনে রঙিন গেঞ্জি ও মাথায় ক্যাপ ছিল।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাসের বিতরণ প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
গতকাল ২১ এপ্রিল রবিবার দিবাগত রাত ১টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ঘাটুরা এলাকায় অবস্থিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বিতরণ প্ল্যান্টে ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবাহ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের অন্তত ১২ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েছেন।
মূলত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে তা গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ২২ হাজারেরও বেশি। এসব গ্রাহকদের প্রতিদিন প্রায় ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, গতকাল রাতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের বিতরণ প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এর ফলে বাখারাবাদের গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। জেলা সদর ও সরাইল উপজেলার একাংশের গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, ত্রুটি মেরামতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি দুপুরের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।
স্টাফ রিপোর্টার:
আজ মহান বিজয় দিবস, বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেয়ার দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্ম সমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির দিন কাল। জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজিবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে।
আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আর একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ’৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলীদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানিদের সাথে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন সহস্র বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে।
বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। হিসেব-নিকেশ আর দেনা-পাওনায় পাকিস্তানিরাও বসে নেই। তারাও অংক কষতে থাকে কিভাবে বাঙালি জাতিকে যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা যায়। তাদের কাছে এই অলংকারই বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্য। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ জানিয়ে যায় সময় আসছে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেয়ার পালা। অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাড়ের আর খুলির স্তুপ একদিন পাললিক হয়।
মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্য যুদ্ধে। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।
অবশেষে ন’মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূচিত হল মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।