চলারপথে রিপোর্ট :
তিতাস এবং মেঘনা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুটি প্রধান নদী। এ দুটি নদীর অববাহিকায় কৃষক আবাদ করছে বাদাম, টমেটো, শাক সবজি সহ নানাবিধ ফসল। তারমধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে মিষ্টি আলু।
এখানে কৃষি জমিতে যতদূর চোখ যায় এ যেনো এক টুকরো মিষ্টি আলুর রাজ্য। নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নবীনগরে ২২৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে। এখানে মিষ্টি আলুর স্থানীয় জাতের পাশাপাশি কৃষকরা ওয়াকিনাওয়া জাতের জাপানি মিষ্টি আলুর চাষাবাদ শুরু করে সফল হয়েছেন। এ জাতের মিষ্টি আলু অন্য জাত থেকে উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ, রোগ বালাইয়ের প্রকোপও কম হয়। যার ফলে এ জাতের মিষ্টি আলু চাষে স্থানীয় কৃষকদের সফলতা দেখে এখন আশেপাশের অনেকেই মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তারা ওয়াকিনাওয়া জাতের মিষ্টি আলু আবাদে অল্প বিনিয়োগে যেমন ভাল ফলন পাচ্ছে তেমনি তারা আর্থিকভাবেও বেশ লাভবান হচ্ছেন।
নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আমীন জানান, অধিকাংশ স্থানীয় জাতে উৎপাদন কম হয়, ওয়াকিনাওয়া জাতের মিষ্টি আলুর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ, রোগ বালাই প্রকোপ কম। আমরা এই জাত নিয়ে আশাবাদী। কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠে এসে তদারকি করছেন।
নবীনগর উপসহকারী কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম এনি জানান, স্থানীয় জাতের পাশাপাশি এখানে গত কয়েক বছর ধরে আবাদ হচ্ছে জাপানি মিষ্টি আলু ওয়াকিনাওয়া। স্থানীয় আলুর তুলনায় এই আলুর আকার বেশ বড় এবং ভিতরের অংশ কমলা রঙের। এ জাতের মিষ্টি আলু অন্য ফসলের তুলনায় উৎপাদন যেমন বেশি, বাজার দরও ভাল। এখানে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উপজেলার সবচেয়ে বেশি মিষ্টি আলু আবাদ হয় নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের নবীপুর, লাপাং, চর লাপাং, দড়িলাপাং গ্রামের নদীর অববাহিকায়। তাছাড়া বীরগাঁও, কৃষ্ণনগর, সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়। তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় জাপানি মিষ্টি আলু ওয়াকিনাওয়া অনেক বেশি ফলন হয়। যার ফলে এ জাতের মিষ্টি আলু চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
বিশেষ প্রতিনিধি :
নবীনগরে আজ ৩ মে বুধবার উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি বাস্তবায়নে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল সিদ্দিক এর সভাপতিত্বে ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেকের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল এম.পি।
প্রধান আলোচক ছিলেন মো. আখতার হোসেন মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জুয়েনা আজিজ সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ড. মো. কাউসার আহাম্মদ সদস্য সচিব পরিকল্পনা কমিশন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, মো. মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব (এসডিজি) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মনির, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নবীনগর সার্কেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ সদস্য মো. নাসির উদ্দিন, শিউলি রহমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নবীনগর, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহান, নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুদ্দিন আনোয়ার সহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এই প্রথম স্বাধীনতার পর সরকারি ভাবে নবীনগর উপজেলায় চারজন সচিব পদমর্যাদার ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের যে অভীষ্ট লক্ষ্য তা মানুষের কাছে উপস্থাপন করার জন্য একসাথে উপস্থিত হয়েছেন। অতিথিগণ সকলেই এসডিজির ১৮ টি লক্ষ্যমাত্রা তা সুন্দর ও সাবলীল ভাবে সকলের নিকট উপস্থাপন করেন। এসডিজির বাস্তবাবনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে। আমরা সকলেই সমন্বিত ভাবে কাজ করলে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার কাজটি ত্বরান্বিত করতে সহজ হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে এসডিজির ১৮টি গোল্ড বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রথম হওয়ায় জাতিসংঘ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে বাদশা মিয়া (১৭) নামক এক কিশোরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে বখাটেরা। মেয়েকে উত্যক্ত করার জের ধরে এ খুনের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় আরো চারজন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দু’জনকে আশংকাজনক অবস্থায় কুমিল্লা ও ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় আবু কালাম মিয়ার প্রতিবেশী মিয়াদের বাড়িতে ঢাকা থেকে এক কিশোরী মেয়ে সম্প্রতি বেড়াতে আসেন। মেয়েটির সাথে গ্রামের অনিক ও তার বন্ধুরা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা চালায়। অন্যদিকে গ্রামের সাইফুল, জিহাদ, তারেক ও তার বন্ধুরা মেয়েটির সাথে কথা বলতো। শুক্রবার মেয়েটির সাথে কথা বলা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় একটি দাওয়াতে গ্রামের বাহিরে ছিল বাদশা মিয়া। বিষয়টি মিমাংসার জন্য গ্রামের মুরুব্বিদের অবগত করা হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অনিকের পক্ষের লোকজন বাড্ডা পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানে গিয়ে মেয়েটির খোঁজ নিতে গিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় অনিকের লোকজনের অতর্কিত হামলায় সাইফুল গুরুতর আহত হলে বাদশা চিৎকার দিলে হামলাকারীরা তাকে উপর্যপুরি কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। একে একে তারেক ও জিহাদকে কোপায়। গুরুতর আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা ও ঢাকায় প্রেরন করে। ঢাকায় নেওয়ার সময় পথিমধ্যে বাদশা মিয়া মারা যায়।
এ ঘটনায় ২১জনের নাম উল্লেখ করে নিহতের বোন পপী আক্তার বাদী হয়ে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত রাসেল মিয়া (৩২), ইউনুস মিয়া (৩৫), শাকিল আহমেদ (১৯) ও মাসুদ মিয়া (২০) নামে এজহার নামীয় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার বাদী পপি আক্তার জানান, আমাদের তিন বোনের মাঝে একমাত্র ভাই বাদশা। ভাই বিদেশ যাওয়ার কথা ছিলো কয়েক মাসের ভিতরে। আমার ভাই মেয়ের ঘটনার সাথে জড়িত না। তারা আমার ভাইকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ।
নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, একটি মেয়েকে উত্যক্ত করার জের ধরেই বাদশাকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় অনিককে প্রধান করে ২১ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।’ নিহতের মরদেহ জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ময়নাতদন্তের শেষে পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে তিতাস নদীর পাড় থেকে অবৈধ ভাবে মাটি উত্তোলনের দায়ে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুরে উপজেলার বগডহর তিতাস নদীর পাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করেন নবীনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান।
জরিমানাপ্রাপ্ত মানিক মিয়া উপজেলার চিত্রি এলাকার খুরশিদ মিয়ার ছেলে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান জানান, কিছু প্রভাবশালী ভূমিখেকু চক্র নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সরকারি ও মালিকানাধীন কৃষি জমি ও নদীর পাড় থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করছিলেন। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুপুরে উপজেলার বগডহর তিতাস নদীর পাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানিক মিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী মানিক মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি আরো জানান, ভবিষ্যতে সে আর অবৈধ ভাবে মাটি কাটবে না বলে মুচলেকা আদায় করা হয়। জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহয়তায় কয়েক বছর ধরেই উন্নত মানের চিনাবাদাম চাষ হচ্ছে। চাহিদা থাকায় কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনাবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়, এর চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে চাষে। বিশেষ করে নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নে কৃষকরা চিনাবাদাম চাষ করে ইদানিং বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলার নবীপুর ব্লকের দড়ি লাপাং গ্রামের কৃষক ফজলুল হক জানান- কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগমের উৎসাহে প্রথম বার বাদাম চাষে আগ্রহী হয়েছি। কৃষি অফিসের প্রণোদনার আওতায় বিনা চিনাবাদাম- ৪ জাতের বীজ দেওয়া হয়। জমির ফলন দেখে অনেক কৃষক আগামীতে বীজ নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বীরগাঁও ইউনিয়নের নজরদৌলত ব্লকের কৃষক ধন মিয়া, পৌরসভা ব্লকের সুহাতা গ্রামের রুকিয়া বেগম ও রাজস্ব প্রদর্শনী কার্যক্রমের আওতায় বিনা চিনাবাদাম- ৪ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন- বছরের যে কোন সময় এর চাষ করা যায়, তবে রবি মৌসুমে (অক্টোবর – ফেব্রুয়ারির) এবং খরিফ মৌসুমে (জুলাই – সেপ্টেম্বর) বীজ বপন করলে ফলন ভাল পাওয়া যায়। ফলন ভাল পেতে বিঘা প্রতি অন্যান্য সারের পাশাপাশি ৩০-৩৫ কেজি জিপসাম সারের প্রয়োগ করতে হবে। অতীতে নবীনগর উপজেলায় স্থানীয় বাদামের আবাদ করা হত বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই মূহুর্তে বারি চিনাবাদাম- ৬ এবং বিনা চিনাবাদাম-৪ আবাদ নিয়ে কৃষকদের মাঝে কাজ করছেন, এ বছর সন্তোষজনক ফলন এসেছে। বিঘা প্রতি ফলন ৮-১০ মন। চিনাবাদামে মনো- আনস্যাচুরেটেড এবং পলি- আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট নামের দুই ধরনের চর্বি জাতীয় পদার্থ রয়েছে, যা কোলেস্টেরল কমায়। খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন অন্তত ১০ গ্রাম চিনাবাদাম গ্রহণ করতে হবে। চিনাবাদামের ফুল মাটির উপরে ফুটলেও গর্ভাশয়ের নীচের যে বৃন্তটি গুটি গঠন করে, সেটি মাটির নীচে চলে যায় এবং সেখানে পুষ্ট হয়ে বাদামে পরিণত হয়। এ কারণে হাল্কা, ঝুরঝুরে দোঁয়াশ মাটিতে বাদাম চাষ করা উচিত। খাদ্য হিসেবে চিনাবাদাম আমাদের দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে- কলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে, ওজন কমায়, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।