চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত মোঃ ইশতিয়াক ভূইয়া বলেছেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। আজ ২৩ এপ্রিল বুধবার বেলা ১১টায় তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সদর উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের কড়া নজরদারীর কারনে এবার রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর বাজার মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিলো। মহাসড়কগুলোতে কোন ধরনের যানজট ছিলোনা। মানুষ নির্বিঘ্নে মার্কেটগুলোতে কেনা-কাটা করতে পেরেছে। ঈদ-উল ফিতরের আগেও পরে সদর উপজেলায় কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকেই যদি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করি তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে। তিনি বলেন, ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দালালমুক্ত করতে ও অবৈধ দখলবাজদের কবল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাত উদ্ধার করতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদেরকে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবেনা।
তিনি বলেন, কাউতলী ব্রীজের দক্ষিণপাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা সিএনজি স্ট্যান্ডটিকে উচ্ছেদ করা হবে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সীমনা সড়কে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধে ও হ্যালমেটবিহীন মোটর সাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান আরো জোরদার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
সভায় সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দালালমুক্ত করতে হলে বে-সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিক ও চিকিৎসকদের সহযোগীতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, শহরের ছিনতাই কমেছে, তবে সম্প্রতি শহরের কয়েকটি বাড়িতে দিনের বেলায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব চোরদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে। সকলের সহযোগীতা ছাড়া মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা, জেলা এনজিও ফোরামের সমন্বয়ক এস.এম. শাহীন, উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান, ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম মোল্লা, ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান শফিক প্রমুখ।
সভায় বক্তারা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রনে পর্যাপ্ত ট্রাফিক মোতায়েন, শহরের দক্ষিণ পৈরতলা মোড়, বিরাসার বাসস্ট্যান্ড ও গোর্কণঘাট এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রনে ট্রাফিকিং ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখতে বাজারগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান জোরদার করার বিষয়ে তাগিদ দেন ও এসব ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে গুরুত্বরোপ করেন।
সভায় সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুক্তা গোস্বামীসহ, সদর উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগন, জনপ্রতিনিধিগণ ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
যাত্রী বেশে মাদক পাচারের সময় ৪ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সুরাইয়া আক্তার প্রকাশ স্বপ্না (২৫) নামে এক নারীকে আটক করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পুনিয়াউট বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক সুরাইয়া আক্তার ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাদেদন্তা গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে।
৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে পুনিয়াউট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে তার সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাসী করে ৪ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল সদর থানায় এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান ও পরিচিতি সভা ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেল কুমারশীল মোড়স্থ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির আয়োজনে উক্ত ‘অভিষেক অনুষ্ঠান ও পরিচিতি সভার’ উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশের ট্রাস্টি, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এআইজি, বীরমুক্তিযোদ্ধা মালিক খসরু (পিপিএম)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, কবি ও গীতিকার মফিজ উদ্দীন আহমেদ ফরিদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন পিপিএম, সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, কবি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক জয়দুল হোসেন, নবীনগর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, সোহাগপুর ইসলামিয়া পাঠাগারের সভাপতি, প্রফেসর মোঃ আলমগীর, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম লিমন, আয়োজক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোক্তা ও প্রধান সমন্বয়ক মোঃ ইমাম হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ এখলাছউর রহমান, সমন্বয়ক শিবচরণ বিশ্বাস।
সংগঠনের নব নির্বাচিত জেলা কমিটির সভাপতি, কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাদৈর মৈত্রী পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা, উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি, লোকো গবেষক জহিরুল ইসলাম স্বপন, কবি ও গীতিকার আব্দুর রহিম, বজলুর রহমান পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা নারী মুক্তি সংসদের সভাপতি ফজিলাতুন নাহার, মাতৃভাষা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, কবি আনিস মুহাম্মদ, তরী পাঠাগারের সদস্য, কবি ও গল্পকার শিরিন আক্তার, এএম টিভি নিউজ বাংলার বার্তা সম্পাদক কবি রুদ্র মুহাম্মদ ইদ্রিস, পথিক টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কবি লিটন হোসাইন জিহাদ প্রমুখ।
সংগঠনের নবনির্বাচিত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ-এর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক, সরাইল সফেরা বেগম স্মৃতি গণপাঠাগারের সভাপতি মোঃ শরিফ উদ্দিন। কোরআন তেলওয়াত করেন মাতৃভাষা একাডেমির সদস্য মাওলানা আমানুল্লাহ মুর্তাজা, গীতা পাঠ করেন নাসিরনগর হরিশচন্দ্র স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক তাপসী রায়।
সভায় উদ্বোধক বীর মুক্তিযোদ্ধা মালিক খসরু তাঁর বক্তব্যে বলেন- বর্তমান যুগে ডিজিটালাইজেশনের যুগে তরুণ প্রজন্ম মোবাইল আসক্তিতে মাতারা হয়ে থাকে। মাত্রারিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফলে তরুণ প্রজন্ম যেভাবে জ্ঞানহীনভাবে বেড়ে উঠছে, সেই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে একমাত্র পাঠাগার আন্দোলনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। দেশব্যাপী পাঠাগার আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি পাঠাগার আন্দোলনে সকলকে সক্রিয় হতে উদাত্ত আহ্বান জানান।
সভায় প্রধান অতিথি মফিজ উদ্দীন আহমেদ ফরিদ তার বক্তব্যে বলেন- আমার ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে ছোট একটি পাঠাগার দেখেছি। সাধারণ বাঁশের তাকে বাবার বানানো সেই পাঠাগারই আমাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আমি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারছি এবং লেখালেখির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারছি। তিনি বলেন- বিভিন্ন পাঠাগারে যে বইগুলো থাকে এগুলোই মূলত পাঠ্যবই। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা পড়ানো হয় তাকে আমরা পাঠ্য বই ভেবে ভুল করি। আর আমরা যাকে আউট বই মনে করি সেই আউট বই তথা পাঠাগারের বই-ই আসল বই। এই বই পড়ার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারি।
সভায় কবি জয়দুল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন- বর্তমানে যেভাবে ঘরে ঘরে মোবাইল পৌঁছে গিয়েছে, সেভাবেই প্রতিটি ঘরে ঘরে ছোট করে হলেও একটি করে পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। বক্তব্যে সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন- সরকারকে ‘একটি বাড়ি-একটি পাঠাগার’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় প্রধান সমন্বয়ক মোঃ ইমাম হোসাইন তার বক্তব্যে বলেন- দেশের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য পাঠাগার গড়ে উঠলেও আর্থিক সংকট, নানা অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা এবং সরকারের তদারকি না থাকায় দেশের অসংখ্য পাঠাগারের কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এসব পাঠাগারকে পুনরায় চালু করতে হবে এবং নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। তিনি তরুণ প্রজন্মকে পাঠাগারমুখী করতে সরকারি ব্যবস্থাপনাসহ সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার প্রায় নয় ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। এতে অন্যান্য ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ৮ মার্চ শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর ডাউন পথের এক নম্বর লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিলো। ঘটনার প্রায় নয় ঘণ্টা পর দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে ছেড়ে গেছে। দুর্ঘটনা কবলিত বগিটি রেখে সকাল পৌনে নয়টার দিকে ট্রেনটি নির্ধারিত গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
এদিকে, দুর্ঘটনার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ের স্টেশনের এক নং লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় অন্যান্য ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মো. কবির হোসেন, সহকারী স্টেশন মাস্টার সাকির, ট্রেন যাত্রী এমরান উদ্দিন ও মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের আনঅফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে। ট্রেনটি থামার আগ মুহূর্তে মাঝামাঝি থাকা ‘ঝ’ বগি লাইন থেকে সরে যায়। এতে ট্রেন বেশ ঝাঁকুনি খায়। ট্রেনের কয়েকটি বগিতে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এতে করে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরে আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত বগি সরিয়ে নেয়। মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদেরকে একই গন্তব্যের তুর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে আন্ত:ধর্মীয় উদ্যোগ গ্রহনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে স্থানীয় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের হল রুমে আয়োজিত ‘ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আন্ত:ধর্মীয় সম্প্রীতি’ বিষয়ক এক সেমিনারে এ অঙ্গীকার করা হয়। ‘রূপসা’ নামে একটি সংস্থা এ সেমিনারের আয়োজন করে। এ সময় বক্তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন। সেমিনারে জানানো হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পুরো জেলাব্যাপি এ ধরণের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রূপসার নির্বাহী পরিচালক হিরন্ময় মন্ডল।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আশেকুর রহমান, জাতীয় ইমাম পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, মডেল মসজিদের ইমাম মো. জয়নুল আবেদীন, ব্রাহ্মণ সংসদ কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জয়শঙ্কর চক্রবর্তী, ব্রাহ্মণ সংসদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি খোকন কান্তি আচার্য্য, সহ-সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাপিস্ট চার্চের প্রাক্তন পাল কর বার্ট বিজন ঘোষ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘কোনো ধর্মেই হানাহানির কথা বলা নেই। বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এমন একটি দেশ গড়ে তুলবো যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং সহানুভুতি বিরাজ করে। আমরা সামাজিক অন্যায় মোকাবেলা করতে এবং সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তুলতে সহযোগিতার সঙ্গে কাজ করবো যেখানে সকলে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারে।
চলারপথে রিপোর্ট :
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সংস্কৃতির রাজধানীখ্যাত তিতাস বিধৌত জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মুক্তিযুদ্ধে এই জেলার রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। যুগে যুগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক জ্ঞানী, গুনী মহাপুরুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানুষ সংস্কৃতিমনা ও অতিথি পরায়ন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এখানকার ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে মিষ্টি, ছানামুখী, মেলা/বান্নি, হাঁসলি মোরগ, গরুর দৌড়, নৌকা বাইচ ও পুতুল নাচ।
এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুল নাচ দেশে ও বিদেশে বিখ্যাত ছিলো। পুতুল নাচের সংস্কৃতি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে সমৃদ্ধ করেছিলো দেশে-বিদেশে। তবে কালের আর্বতে পুতুল নাচের আগের জৌলুস আর নেই। আধুনিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ এখন বিলুপ্তির পথে।
বাঙ্গালীর অন্যতম উৎসব পহেলা বৈশাখ, বসন্ত উৎসবসহ হাতেগুনা দুই/একটি উৎসবে পুতুল নাচে অনুষ্ঠান ছাড়া তেমন আর চেখে পড়েনা।
শহরের প্রবীন ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ভারতীয় উপমহাদেশে পুতুল নাচের সৃষ্টি করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বিপিন পাল। বিপিন পালকে ভারতীয় উপমহাদেশে পুতুল নাচের জনক বলা হয়। তিনি প্রথম আধুসিক পুতুল নাচের প্রচলন করেন। তিনি হিন্দু ধর্মের বা পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে ও তৎকালীন সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পুতুল নাচ করতেন।এ ছাড়াও গ্রামীন জীবনের নানা দৃশ্যপট তুলে ধরতেন তার পুতুল নাচে। তাঁর পুতুল নাচ দেখে শিশু থেকে সব বয়সী মানুষ আনন্দ পেতো। বিশেষ করে শিশুদের আনন্দের সীমা ছিল না, এই ভাবনা থেকেই তিনি প্রথমে মাটির পুতুল, ক্রমান্বয়ে স্টিক পুতুল, স্প্রিং পুতুল ও সূতোর তৈরি পুতুল তৈরী করেন। একই এলাকার কয়েক জন শিষ্যকে সাথে নিয়ে তিনি চমক তৈরি করে ছিলেন পুতুল নাচ সৃষ্টির মাধ্যমে। পুতুল নাচের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে তাঁর পরিবার সহ মতি মিয়া, রমনাথ বাবু, তারু মিয়া ও সিদ্দিক মিয়াকে সাথে নিয়ে বৃদ্ধি করেন পুতুল নাচের প্রচার ও প্রসার। তাঁর এ শিষ্যরা দীর্ঘবছর তাঁর সাথে থেকে পরবর্তীতে যার যার এলাকায় পুতুল নাচের দল তৈরি করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনপদে পুতুল নাচের সাথে জড়িত আরো কয়েকজনের নাম জানা যায়। এরা হলেন জেলার নবীনগরের কৃষ্ণনগর গ্রামের গিরীশ আচার্য্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা গ্রামের ধন মিয়া, কালু মিয়া ও মোঃ রাজ হোসেন। এক সময় ধন মিয়ার পুতুল নাচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
ধন মিয়ার পুতুল নাচ দলের নাম ছিলো রয়েল বীনা অপেরা। ধন মিয়া শুধু দেশে নয়, বিদেশে ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
১৯৮০ সালে ধন মিয়া পুতুল নাচ দেখাতে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে ধন মিয়া রাশিয়ার মস্কো, তাসখন্দ, সমরখন্দসহ বিভিন্ন শহরে ২০ দিন অবস্থান করে পুতুল নাচ দেখিয়ে বাংলাদেশের নাম বিশ্ব পরিমন্ডলে ছড়িয়ে দেন। ধন মিয়ার পুতুল নাচের মধ্যে ছিলো “বড়শি বাওয়া” “বাঘে কাঠুরিয়াকে ধরে নেওয়া” এবং “বৈরাগী বৈরাগিনীর ঝগড়া” অন্যতম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুল নাচের জৌলুস এখন আর আগের মতো নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য পুতুল নাচ এখন বিলুপ্তির পথে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সূর্যমুখী কিন্ডার গার্টেন এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে পুতুলের আদলে অসাধারণ নৃত্য প্রদর্শন করা হয়। যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা পায়ের আঙ্গুলের সাথে হাতে সূতো বেঁধে, মাথায় ঘুমটা দিয়ে ও গায়ে বাঙ্গালীয়ানা পোশাক পরিধান করে নাচ প্রদর্শন করে।
পুতুলের আদলে ২৬ জন শিশু গানের তালে তালে অসাধারণ নৃত্য প্রদর্শন করে। ৫ মিনিটের মনোমুগ্ধকর পুতুলের আদলে নাচের ভিডিও উপস্থিত অতিথি ও অভিভাবকদের মুগ্ধ করে, তাদের হৃদয় জয় করে। সেই নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে সূধীজনরা প্রশংসা করছেন। পুতুলের আদলে শিশুদের নাচ নতুন প্রজন্মের সাথে পুতুল নাচের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
পুতুলের আদলে শিশুদের দিয়ে এই নৃত্যের মূল কারিগর শহরের পশ্চিম মেড্ডা এলাকার তরুন নৃত্য শিল্পী মোহাম্মদ আল সাইফুল আমিন জিয়া। তিনি পশ্চিম মেড্ডা এলাকার মৃত রমজান মিয়ার ছেলে। তিনি সূর্যমূখী কিন্ডার গার্টেন এন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ১১ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক (নৃত্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ব্যাপারে নৃত্যশিল্পী মোহাম্মদ আল সাইফুল আমিন জিয়া বলেন, ছোট বেলায় পুতুল নাচ দেখতাম। সূতা দিয়ে পুতুল নাচানো হতো। তবে এখন আর পুতুল নাচ সেভাবে হয় না। আমি ভাবলাম একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান ও সংস্কৃতির কর্মী হিসেবে বিলুপ্ত হতে থাকা পুতুল নাচের জৌলুসকে আবারো আনতে। নতুন প্রজন্মকে পুতুল নাচের সাথে পরিচিত করার ভাবনা থেকেই এই পুতুল নাচটি তৈরী করি। তিনি আরো বলেন, আমার প্রদর্শিত পুতুলের আদলে শিশুদের নৃত্যটি দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হওয়ায় আমি অনেক খুশি। আমি মনে করি আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। তিনি বলেন, আমি নিজের চেষ্টায় ৬ বছর বয়স থেকে নাচ করি, এবং ১৫ বছর বয়স থেকে নাচ করাই। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি।