অনলাইন ডেস্ক :
আমরা ক’জন সিডনি অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে গতকাল ২৬ এপ্রিল শনিবার দুপুরে ইস্ট ক্যাম্বলটাউন কমিউনিটি হলে ‘আমাদের বৈশাখ’ শিরোনামে পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেওয়া হয়। সুমনা বড়ুয়া, কুহেলী বড়ুয়া ও দেবযানীর সঞ্চালনায় দুপুর দুইটায় বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান জাতীয় সংগীত, দলীয় সংগীত, বাচ্চাদের দলীয় নৃত্য এবং গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। দেশীয় সংস্কৃতির রঙে রঙিন হয়ে ওঠে পুরো বর্ষ বরণের আয়োজনটি। বিকাল ৪ টায় বৈশাখের খাবারে ছিল নানান রকমের ফল, মিস্টি, ফিরনি, নারিকেলের নাড়ু, স্ন্যাকস, পিঠা পুলি ও চা।
বাচ্চাদের ছবি আঁকা, একক গান, কবিতা আবৃত্তি এবং নাচের পর পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় স্থানীয় শিল্পীরা নাচ ও গানে অংশ নেয়।
আমন্ত্রিত অতিথিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, কাউন্সিলর ইব্রাহিম খলিল মাসুদ, শঙ্খনাদের সভাপতি গণেশ ভৌমিক, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া বুডিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ বড়ুয়া, সন্তোষ বড়ুয়া, নারী সংগঠক জুই সেন পাল। আয়োজক কমিটি অতিথিদের নিয়ে বাংলা বর্ষবরণের কেক কাটেন।
আয়োজক কমিটির পক্ষে পবিত্র ও হৈমন্তী বড়ুয়া বাংলা বর্ষবরণের আয়োজনে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি তারা সংগঠনের সকল সদস্যদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠান শেষে রাতের সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
পর্তুগালের লিসবনের আলমাদা শহরে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে মাহবুবুল আলম নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ১৩ জুন শুক্রবার তার স্ত্রী এবং ১০ ও ১৪ বছর বয়সী নাবালিকা কন্যার সামনেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিহত মাহবুবুল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মানিককোনা গ্রামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নান্না মিয়ার ছেলে। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে পর্তুগালে সপরিবারে বসবাস করছিলেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার দোকানে প্রবেশ করে এবং দোকানের অর্থ লুটপাটের চেষ্টা চালায়। এতে মাহবুবুল বাধা দিলে হামলাকারীরা তার বুকে পর পর ৩ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ এবং জরুরি সেবা সংস্থা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
জানা গেছে বন্দুকধারীরা ছিল ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী দুই যুবক। তারা কালো পোশাক পরে এবং হুড পরে ছিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে তিনটি গুলি চালায়।
ভুক্তভোগী প্রায় তিন বছর আগে তার পরিবারের সাথে ইংল্যান্ড থেকে পর্তুগালে এসেছিলেন। পর্তুগালের বিচার বিভাগীয় পুলিশ ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করেছে এবং হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে।
হাকিকুল ইসলাম খোকন:
বিশ্বখ্যাত স্থপতি এফ আর খান, সেতার বাদক আলী আকবর খান, লেখক রুমানা আলম, কবি শহীদ কাদরি, সাহিত্যিক-লেখক ঝুম্পা লাহিড়ি, বাংলাদেশের মুুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা এনায়েতুর রহিম, বিজ্ঞানী দেবব্রত বসু, মূলধারার লেখক, অমিতাভ ঘোষ, বিজ্ঞানী ইকবাল কাদির, ইউটিউবের কো-প্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ করিম, সারাবিশ্বের তরুণ-তরুণীকে বিনা ফি-তে অংক শেখানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘খান একাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সালমান খান, ইন্টেলের চেয়ারপার্সন বিজ্ঞানী ওমর ইশরাকের মত বাঙালিরা বহুজাতিক আমেরিকায় বাংলা ও বাঙালিদের পরিচিতিকে মহিমান্বিত করেছেন। নিউইয়র্কে বসবাসরত বাঙালিরা বিশ্বের রাজধানী খ্যাত উক্ত সিটি তথা স্টেটে বাঙালি সংস্কৃতির ফল্গুধারা বিকাশের নিরন্তর প্রয়াস চালাচ্ছেন।
বাঙালিরা নতুন বছরের প্রথম দিন ‘পয়লা বৈশাখ’ ঘটা করে টাইমস স্কোয়ারসহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে উদযাপন করছেন। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন তথা ‘পহেলা বৈশাখ; বরণে এখোন হাজারো নারী-পুরুষের সাথে নতুন প্রজন্মের বাঙালিরাও উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। বাংলাদেশ, ভারত এবং আমেরিকার শতাধিক সংগঠনের শিল্পী-কলা-কুশলিরা হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাঙালি সংস্কৃতির জয়গান করেন। পাশাপাশি মেধা আর শ্রমের বিনিয়োগ ঘটিয়ে নিউইয়র্ক স্টেট তথা আমেরিকার উন্নয়নেও বাঙালিরা অবদান রেখে চলছেন। তেমন অবয়বকে আরো গৌরব আর অহংকারের সাথে উদ্ভাসিত করতে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ‘১৪ এপ্রিলকে নিউইয়র্কে বাংলা নববর্ষ’র স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে সিনেটর লুইস সেপুলভেদা ১৫ জানুয়ারি সিনেটে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
২৩৪ নম্বরের এই রেজ্যুলেশন (Memorializing Governor Kathy Hochul to proclaim April 14, 2025, as Bangla New Year Day in the State of New York) ২২ জানুয়ারি সর্বসম্মতভাবে পাশে হয়েছে। অর্থাৎ আসছে ১৪ এপ্রিল ঘটা করে পালিত হবে ‘বাংলা নববর্ষ’ এবং তা স্টেট, সিটি, কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস বরো-সহ সকল পর্যায়ে এ উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণে আর কোন বাধা থাকবে না। এ ধরনের একটি ঘোষণাপত্র শীঘ্রই স্টেট গভর্ণর ক্যাথি হোকুল বিতরণ করবেন। স্টেট সিনেট সূত্রে এ সংবাদদাতা আরো জানতে পেরেছে যে, নিউইয়র্কস্থ মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বিশ্বজিৎ সাহা এমন একটি রেজ্যুলেশনের জন্যে স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তা উল্লেখ রয়েছে পাশ হওয়া রেজ্যুলেশনে।
বাঙলা নতুন বছরকে ঘটা করে বরণের অভিপ্রায়ে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের এই রেজ্যুলেশনে উল্লাস প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী-সমর্থক আর শিল্পী-কলাকুশলীরা।
কারণ, সর্বশেষ গত বছরও নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে প্রথমবারের মতো শতকণ্ঠে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে কলকাতা, ঢাকা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রথিতযশা শিল্পীরা অংশ নিয়েছেন। এর পরদিন জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস। এরও দুই দশক আগে থেকে মুক্তধারাসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে এই স্টেটের বিভিন্ন স্থানে ‘পয়লা বৈশাখ’ বরণের বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এসব অনুষ্ঠানে পান্তা-ইলিশের আয়োজন ছাড়াও বাঙালি পোশাকে জড়ো হওয়া নর-নারী-শিশু-কিশোরের মধ্যে ঐতিহ্যের পরিপূরক খাবার পরিবেশিত হয়।
হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে :
২৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার শহরের প্রাণকেন্দ্রে বোম্বে গ্রীলে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায় অমর একুশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। মোয়াজ্জেম ইকবালের সভাপতিত্বে ও সালেহ করিমের সঞ্চালনে সন্ধ্যা সাতটায় এই মহতী অনুষ্ঠান শুরু হয়। সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিনের সাগত বক্তব্যর মাধ্যমে কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং সকল শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাভাষার অবদান এবং ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র সম্মান শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নেন জসীম উদ্দিন, সালেহ করিমুজ্জামান, আকম রুমেল ও মোয়াজ্জেম ইকবাল। সকলের বক্তব্যে ফুটে উঠে মহান ভাষা আন্দোলন এবং অমর একুশ ছিল বাঙালির অমিত প্রেরণার অনিঃশেষ উৎস। একুশের অভিলাষী যাত্রায় বাঙালী ফিরে পেয়েছে মুক্তির ঠিকানা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠার অধিকার। বাঙালির আত্মর্যাদা গৌরবের বিজয় তিলক, এই পবিত্র ভাষা আন্দোলন। ভাষা শহীদরা রফিক জব্বার সালাম বরকতরা তৈরী করেছিল আসাদ জোহা মতিউর সহ ত্রিশ লক্ষ শহীদ।
যাঁদের অমর রক্তের কণিকায় দাঁড়িয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, বিশ্ব ফিরে পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার অধিকার। আজ সারাবিশ্বে ভাষা আন্দোলনের পীঠস্থান অমর একুশকে স্মরণ করছে বিনম্র শ্রদ্ধায়। ভাষা শহীদ, স্বাধীনতা শহীদ সকল মুক্তি আন্দলোনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন জসীম উদ্দীন। অনুষ্ঠানটির সাফল্য ও ভাব গাম্বীর্য রক্ষায় সদা সর্বদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন প্রধান উপদেষ্টা মাহবুব রহমান মিলন এবং উপদেষ্টা ফখরুল আহসান শেলী। স্বাধীন বাংলার শিল্পী মুক্তিযোদ্দা খসরু”র সুললিত কণ্ঠে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্পন পর্ব। সে এক অপূর্ব শিহরণ। প্রথমে নেতৃবৃন্দ, অতিথি বৃন্দ পরে সর্ব সাধারণ লাইন দিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নতুন প্রজন্ম মা বাবা সহ ফুল নিয়ে এগিয়ে আসে, যা ছিল প্রজন্ম তরে স্মৃতি তর্পনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। এসময়ে তাদের সহায়তা করেন ফারজানা, নবনী, তাননি, ইউসুফ, ইউনুস, শহীদ, জাহাঙ্গীর, রাহাত প্রমুখ।
মাইকে তখন চলতে থাকে প্রতিথযশা গুণী শিল্পী খসরু”র কালজয়ী দেশপ্রেমের গান। অতঃপর বোম্বে গ্রীলের পক্ষ থেকে সকলকে সুস্বাদু বিরানি ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। পরিশেষে সভাপতি দূর দূরান্ত থেকে আগত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্মরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
হাকিকুল ইসলাম খোকন :
পোশাক শিল্পের নতুনত্বে ফ্যাশন ডিজাইনারদের অবদান অনস্বীকার্য।পোশাকের মাধ্যমে মানুষের রুচিশীল মনোভাব ব্যক্তিত্ব ও রুচিবোধের প্রকাশ পেয়ে থাকে। আর তাই ফ্যাশন নিয়ে অন্ত নেই গবেষণার। সময়ের সাথে ছুটে চলেছেন ফ্যাশন অনুসারীরা তাদের পছন্দের ডিজাইনারদের সৃষ্টি নিয়ে।ফ্যাশন এর প্রচলিত ধারা প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছেন ডিজাইনাররা তাদের মেধা দিয়ে।
আত্মবিশ্বাস ও পরিবর্তনশীল চিন্তাধারায় সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে ডিজাইনার রোজিনা আহামেদ রুনি রয়েছেন দীর্ঘদিন যাবত এই পোশাক শিল্পে একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। যা তার নেশা এবং পেশা দুটোই বলা যেতে পারে।
তারই প্রেক্ষাপটে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার নিউইয়র্ক এর জ্যামাইকার মান্নান সুপার মার্কেট সংলগ্ন ‘জাশন’ পার্টি সেন্টারে(১৬৫-২৩ হিলসাইড এভিনিউ) দেশি গার্লস বাই মিলিয়া লেনিন আয়োজন করেছেন ডিজাইনার রুনির একক পোশাক প্রদর্শনী। এ তথ্য জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক সংগঠক নিসার জামিল শুড্ডু। দুপুর দুটো থেকে রাত এগারোটা অবদি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে সকল প্রবাসীের সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ডিজাইনার রুনি,তার এই প্রচেষ্টায় একাত্ম্য হওয়ার জন্য।
এবারে তার ফ্যাশন আয়োজনে রয়েছে ট্র্যাডিশনাল ক্ল্যাসিক, রেট্রো, ফিউশন, আংরাখা, বক্স প্লিটেড সহ বৈচিত্র্যময় নানা প্যাটার্নের সালোয়ার-কামিজ, ডাবল লেয়ারড সালোয়ার-কামিজ, লং-কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস, ডাবল লেয়ারড কুর্তি, টিউনিক, কাফতান, প্যান্টসহ টপস, টপস-স্কার্ট।
শাড়ির বৈচিত্র্যপূর্ণ ডিজাইনে থাকছে মোটিফের ব্যবহার, কালার কম্বিনেশন সহ আরো নানা আকর্ষণীয় ডিজাইন। আপনাদের উপস্থিতি ডিজাইনার রুনি’র উৎসাহের উৎস হয়ে থাকবে বলে আয়োজকদের বিশ্বাস।
হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে :
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আসেফ বারী টুটুল। জ্যাকসন হাইটসের সবচেয়ে পরিচিত ভবনগুলোর মধ্যে একটি, ‘ব্রুসন ভবন’, এখন থেকে পরিচিত হবে ‘বারী টাওয়ার’ নামে। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি শুধু ভবনের নাম বা মালিকানার পরিবর্তন নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়ন এবং স্বপ্ন পূরণের এক উদাহরণ। এ সংবাদ পরিবেশন করেছেন সাইয়েম শুভ।
বাংলাদেশি ও মূলধারার ব্যবসায়ীদের অফিসে ঠাসা জ্যাকসন হাইটসের প্রাণকেন্দ্র ৩৭তম এভিনিউ, ৭৩ ও ৭৪ স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবস্থিত ৭৪-০৯ ঠিকানার বিখ্যাত ‘ব্রুসন বিল্ডিং’টি ছিলো একটি আধুনিক অফিস ভবন, যা দীর্ঘ ইতিহাস এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে আজও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
১৯৪৯ সালে নির্মিত এই ভবনটি ২০১৬ সালে আধুনিক রূপে পুনর্গঠন করা হয়। এই বিশাল ভবনটি সম্প্রতি কিনে নিয়েছেন আসেফ বারী ও তাঁর সহধর্মিণী মুনমুন হাসিনা বারী। ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ভবনটির ক্রয় ও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ উপলক্ষ্যে বারী পরিবার আয়োজন করে এক দোয়া মাহফিলের। এতে উপস্থিত ছিলেন বারী গ্রুপের কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ থেকে আগত মুনমুন হাসিনা বারীর বাবা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, এবং মা সালেহা কবির চৌধুরী।
জ্যাকসন হাইটস একটি বৈচিত্র্যময় ও সংস্কৃতিমণ্ডিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। ব্রুসন বিল্ডিংয়ের এই এলাকায় অবস্থানই তার অন্যতম বড় সম্পদ। আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, দোকান, এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণ। যা শুধু অফিস কর্মচারী নয়, ক্লায়েন্টদের জন্যও এক বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ভবনটি ৭৪ স্ট্রিট-ব্রডওয়ে স্টেশন থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত, যা ৭ ট্রেনের মাধ্যমে ম্যানহাটনসহ কুইন্সের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করে। এই সুবিধাটি ব্যবসার জন্য চমৎকার এক সংযোগ স্থাপন করেছে।
এই বিল্ডিংয়ের নতুন সংস্করণটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত, যা আধুনিক অফিস ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করেছে। ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইন অত্যাধুনিক, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য একদম উপযোগী। ভবনটি বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের জন্য আদর্শ এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক হাব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবনটি শুধু একটি ইমারত নয়, এটি জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্যও একটি পরিচিত নাম। এটি একটি পেশাদারদের ব্যবসায়িক হাব, যেখানে অনেক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এবং মূলধারার বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে আস্থা ও গৌরবের প্রতীক ছিল। এই ভবনের মালিকানা পরিবর্তনের খবরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
আসেফ বারী টুটুল, যিনি বারী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, নিশ্চিত করেছেন যে, “বারী টাওয়ারের চতুর্থ তলা হবে বারী হোম কেয়ার এবং প্রবাসের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা “বাংলা পোস্ট” এর নতুন অফিস। তিনি বলেন, “দু-এক মাসের মধ্যেই আমরা বারী গ্রুপের সকল কার্যক্রম নতুনভাবে এই ভবন থেকে পরিচালনা শুরু করবো। আমার এবং আমার পরিবারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যাতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারি।”
নিউইয়র্কের মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ শহরে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করা এক বিরল অর্জন। রংপুরের সন্তান আসেফ বারী টুটুল সেই বিরল উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম। কেবল ব্যবসায়ী হিসেবেই নয়, তিনি তাঁর কর্মনিষ্ঠা, মানবিক মূল্যবোধ, এবং নেতৃত্বগুণ দিয়ে নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজে নিজেকে এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি তাঁর সাফল্যকে সবসময় কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু আমার বা আমার পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো কমিউনিটির জন্য একটি অর্জন। আমাদের সবার জন্য এটি গর্বের বিষয়।” বারী গ্রুপ ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রম প্রসারের জন্য বারী টাওয়ারকে একটি ব্যবসায়িক এবং সামাজিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে।
আসেফ বারী টুটুল জানান, “ভবিষ্যতে এখানে একটি গ্র্যান্ড ওপেনিং অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে, যেখানে কমিউনিটির সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কমিউনিটির জন্য কাজ করা। সবার দোয়া আমাদের শক্তি যোগায়। আশা করছি, এই নতুন যাত্রা আমাদের এবং কমিউনিটির জন্য আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।” আসেফ বারী জানান, ভবনের ব্যবস্থাপনায় এমন কিছু পরিবর্তন আনা হবে, যা বাংলাদেশি কমিউনিটির মার্কিন মূলধারার সঙ্গে আরও গভীর সংযোগ স্থাপন করবে।”
আসেফ বারীর সাফল্যের গল্প শুধু তাঁর একার নয়। এটি একটি পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিচ্ছবি। তাঁর জীবনসঙ্গী মুনমুন হাসিনা বারী এবং তাদের তিন সন্তান আদিব বারী, সাবাহ বারী, এবং মাহি বারী নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে বারী গ্রুপকে একটি সুপরিচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছেন। বারী গ্রুপের নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়ন এবং দেশের সামাজিক অগ্রগতির জন্য তারা নানা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শীঘ্রই তিনি নিউইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন দাতব্য কার্যক্রমে লায়ন্স ক্লাব ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।