অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাসের যে রায় দিয়েছেন তাতে প্রমাণিত হয়েছে সত্য কখনো চেপে রাখা যায় না। মেঘের আড়াল ভেদ করে সত্যের আলো আসবেই আসবে। আজ ২৭ মে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন আমলে আমাদের শীর্ষ ৬ নেতাকে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে কার্যত জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। এছাড়া আরো অনেক নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। সর্বশেষ ’২৪- এর গণ-আন্দোলনে অনেক মানুষকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের এই নেতারা যদি বেঁচে থাকতেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন। যদি দেশের সেবা করার সুযোগ আমাদের কাছে আসে, তবে প্রতিহিংসার রাজনীতি এ দেশ থেকে বিলুপ্ত করবো। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে যা যা করণীয় আমরা করবো।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেন শোভনের আনন্দ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজ ছাত্র আশরাফুল রহমান ইজাজকে হত্যার ঘটনায় হাসান আল ফারাবী জয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল ৭ জুন শুক্রবার ভোরে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়ার গ্রামের একটি ঝোঁপ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।
আজ ৮ জুন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ৫ জুন বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন (আনারস প্রতীক) বিজয়ী হওয়ার খবরে তার সমর্থকেরা বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজপাড়া এলাকার খান টাওয়ারের সামনে আসলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশরাফুল রহমান ইজাজ গুলিবিদ্ধ হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফারাবী তাকে গুলি করে কোমড়ে পিস্তল রেখে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাচ্ছে। এ সময় তার (ইজাজের) বন্ধুরা তাকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।
এ ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের পিতা হাজী আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫জনকে আসামী করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের একটি বিশেষ টিম, সদর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার দল অভিযান পরিচালনা করে শুক্রবার ভোরে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে হাসান আল ফারাবী জয়কে গ্রেপ্তার করে।
প্রেসব্রিফিংয়ে আরো বলা হয়, গ্রেফতারের পর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদী আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের একটি ব্রীজের পাশের ঝোপের মধ্য থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর হাসান আল ফারাবী জয় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী পূর্ব বিরোধের জের ধরে ও এলাকায় তাদের একক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইজাজকে মাথায় পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে।
পুলিশের কাছে দেয়া জয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জালাল হোসেন খোকা এবং জয় খুবই ঘনিষ্ঠ, ইজাজও তাদের সাথে চলাফেরা করতো, তারা একই পাড়ার বাসিন্দা। কলেজপাড়া এলাকায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতো খোকা ও জয়। তবে তাদের সব সিদ্ধান্ত ইজাজ ও তার সাথে কয়েকজন মেনে না নিয়ে কিছু কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতো। আর এ কারনেই ইজাজ ও তার কয়েকজন বন্ধুর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলো খোকা ও জয়। এই বিরোধ আস্তে আস্তে চরম আকার ধারন করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো বলা হয়, মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) জয়নাল আবেদীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ বিল্লাল হোসেন, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেনসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, অতি শিগগির নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে দেশে ব্যবহৃত অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট।
নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনার পর এ ঘোষণা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আজ ২১ জানুয়ারি রবিবার বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক ড. মো. সোহেল রানার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিটিআরসি জাতীয় পরিচিতি ও নিবন্ধিত সিম কার্ডের সঙ্গে ট্যাগিং করে প্রতিটি মোবাইল ফোন নিবন্ধনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি সেবাগ্রহণ বা প্রদান নিশ্চিত করা, অবৈধভাবে উৎপাদিত বা আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করার উদ্দেশে এনইআইআরের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের চুরি ও অবৈধ ব্যবহার রোধ হবে।
এনইআইআরের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করতে শিগগির অবৈধ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক হতে বিচ্ছিন্ন করা হবে। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে বৈধতা যাচাই করে নিতে হবে।
মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে মেসেজ অপশন থেকে KYD<space>15 ডিজিটের IMEI নম্বর লিখে (উদাহরণ স্বরূপ: KYD 123456789012345) ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই করা যাবে।
গত ১৬ জানুয়ারি বিটিআরসিতে এক সভায় নতুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দেশে অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলা পঞ্জিকা মতে পয়লা আষাঢ় আজ। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের প্রথম দিন আজ। আষাঢ়ের প্রথমদিনেও আকাশে নেই মেঘের ঘনঘটা। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি নেই। অথচ বর্ষার বৃষ্টিতে পুরাতন জঞ্জাল ধুয়েমুছে জেগে ওঠে প্রাণচাঞ্চল্যে। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এ মাসের মধ্য দিয়েই বাংলার প্রকৃতিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় প্রিয় ঋতু বর্ষার। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাল তমাল, ঝুঁই, শাল পিয়াল আর মরাল কপোতের বন বীথিকায় চোখে পড়ে বকুল, কদম, জারুল, পারুল, কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়াসহ অসংখ্য ফুল।
সবুজের সমারোহে নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে এসেছে আষাঢ়। আকাশ ছেয়েছে মেঘের ঘনঘটায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আঘাঢ়ে প্রথম দিনে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে এবং এবার বর্ষায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
মেঘদূতের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে আষাঢ়। গাছের পাতা, টিনের চাল কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে এবং খোলা আকাশের প্রান্তর জুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দিন। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার অঙ্গন আষাঢ় বন্দনায় নিবেদিত, উচ্ছ্বসিত। কবির কবিতায়, শিল্পীর সুরে-গানে, চারুশিল্পীর তুলির আঁচড়ে, চলচ্চিত্রে, নকশিকাঁথার ফোঁড়ে ফোঁড়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে বর্ষার বৃষ্টির রূপবর্ণনা রয়েছে।
যদিও কয়েক দিন আগে থেকে কালবৈশাখীকে সঙ্গী করে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেশে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্ত স্নিগ্ধতা ও সবুজে ভরে তোলে আষাঢ়। বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় মাস। এ মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন ফিরে পায় প্রাণ। নতুন আনন্দে জেগে উঠে প্রকৃতি।
আষাঢ় মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামল বাঙলার কৃষি নবজন্ম পায় বর্ষার বৃষ্টিতে। আষাঢ়ের প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দুই চোখের কোণে ভেসে ওঠে, ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়।
ঋতু পরিবর্তিত চিরায়ত ধারায় আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাসকে ঘিরে আসে বর্ষাকাল। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি। বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বাজে এই বর্ষায়।
পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। বর্ষায় আবেগ ও অনুভূতির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক, তা নয়-সাধারণ মানুষও। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ- কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি।
অপরূপ রূপবতী মেঘবতীকে সঙ্গী করে বাংলায় আসে বর্ষা। বহুকাল আগে মহাকবি কালীদাস তার ‘মেঘদূত’ কাব্যে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বিরহ কাতর যক্ষ মেঘকে দূত করে কৈলাশে পাঠিয়েছিলেন তার প্রিয়ার কাছে। এর আগে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন: ‘এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর, এ ভরা ভাদর, মাহ ভাদর; শূন্য মন্দির মোর।’
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার ‘বর্ষা-মঙ্গল’ কাব্যে লাবণ্যস্নিগ্ধ রূপবতী বর্ষাকালকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনাল মনে। গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু, বাজিল ক্ষণে ক্ষণে। তোমার ললাটে জটিল জটার ভার, নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার, বাদল আঁধার মাতাল তোমার হিয়া, বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন:রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে, কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরর্ষে।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন- এ বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘গ্রীষ্ম চলিল, বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল;/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল: ‘বাওয়া ক্ষেত কর তল, এই তো কখন নেমেছে বৃষ্টি, অবিরাম তবু ঝরছে; না পেয়ে উপায় রাখালের দল ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।’
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে খাল বিল পানিতে ভরে ওঠে। বর্ষায় প্রধানত পদ্ম ও শাপলা ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এগুলো নদী-নালা, খাল-বিলে ফুটতে শুরু করেছে। কদম, চালতা, নিশিপদ্ম, সুলতানচাঁপা, কেয়া, চাঁদমালা, কামিনী, চামেলি, ঝুমকো লতা, মালতি, লিলি ইত্যাদি ফোটে এ সময়। কয়েক প্রজাতির বিদেশি ফুলও ফোটে এই বর্ষায়। শুধু ফুল নয়, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডও ফোটে এই সময়। এগুলোকে বর্ষার ফুলও বলা যায়। এ বর্ষায় মেলে মুখরোচক ফল কাউফল, ডেউয়া, লটকন, বিলেতি গাব, বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা। এ ছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, চালতা, তাল ইত্যাদি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলও পাওয়া যায় এ ঋতুতে।
বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে শ্যামলে। একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। শহরে বায়ু দূষণ বন্ধ করে বৃষ্টি। অন্যদিকে বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভরশীল। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে।
প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর বর্ষাকে স্বাগত জানাতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদ বর্ষাবন্দনা অনুষ্ঠান করছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূত্রধর অর্জন সেতার বাজানোর মাধ্যমে আয়োজন এগিয়ে দেন। এ সময় তবলা বাজান হরিপদ সূত্রধর। বর্ষা উৎসবে নৃত্য, সঙ্গীত, বর্ষাকথন ও আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হবে।
এবার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সারাদেশে ৫৫ হাজার তালগাছ রোপণ করা আলোচিত ব্যক্তি চিত্তরঞ্জন দাস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে বর্ষা বরণের। সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও নানা আয়োজনের দেখা মিলবে।
অনলাইন ডেস্ক :
সৌদি আরবের আল নাজাদ অঞ্চলের আপিপ শহরে কাজে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় তিন জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
১৩ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ও সৌদি সময় সকাল ৯টার দিকে আপিপ থেকে নির্মাণ কাজে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সময় তিন শ্রমিকের মধ্যে সবুজ গাড়ির চালক ছিলেন। নিহতরা হলেন সবুজ চৌকিদার (৩৮), মো. সাব্বির (২১) ও মো. রিফাত (২০)।
নিহত শ্রমিকদের মধ্যে সবুজ ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পশ্চিম বিশকাটালি গ্রামের জামাল চৌকিদারের ছেলে। অপর নিহত সাব্বির পার্শ্ববর্তী হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রামের ছৈয়াল বাড়ির ইসমাইল ছৈয়ালের ছেলে এবং রিফাত আলগী উত্তর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
আজ ১৪ জুন শুক্রবার সকালে নিহত তিন শ্রমিকের বাড়িতে গিয়ে শোকের মাতম দেখা গেছে। আসন্ন ঈদুল আজহার সময় দুর্ঘটনাটি প্রতিটি পরিবারে হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রিফাত তিন বছর আগে সৌদি আরবে যায়। সে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো।
রিফাতের বাবা বলেন, কয়েকদিন আগেও ছেলের সাথে কথা হয়েছে। বাবার আবেদন ছিল ছেলে যেন বাড়িতে এসে ঈদ করে। কিন্তু তা আর হলো না। রিফাত খুব কম বয়সী। এমন দুর্ঘটনায় সবাই মর্মাহত। ছেলেটি তাদের সংসারে উপার্জনের হাল ধরেছিল।
নিহত সাব্বিরের বাবা ইসমাইল ছৈয়াল ও মা ফাতেমা বেগমের একটাই দাবি তাদের সন্তানকে দেশে আনার জন্য যেন সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয়। মা ফাতেমা বেগম ছেলের শোকে অনেকটা বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিয়েও মাকে বুঝাতে পারছেন না। কিছু সময় পর পর ছেলের নাম নিয়ে কেঁদে উঠেন।
সাব্বিরের বোন স্নেহা বলেন, ভাই আমাকে ফোনে অনেক স্বপ্নের কথা বলতেন। দেশে আসলে কি কি করবেন। গত কয়েকদিন আগে কথা হলে আমি দেশে আসার জন্য বলি। কিন্তু ভাইয়ের আর আসা হলো না। দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি ছোট। বড় ভাইও সৌদিতে থাকেন। সাব্বির ও রিফাতকে সৌদিতে কাজের জন্য নিয়ে যায় সবুজ চৌকিদার। তিনি তাদেরকে আপিপ শহর ও আশপাশের এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করাতেন। নিজেদের গাড়িতে করে তারা কাজে আসা-যাওয়া করতেন। গাড়িটির চালক ছিলেন সবুজ।
জামাল চৌকিদার বলেন, তার ছেলে সবুজ প্রায় ১৮ বছর সৌদিতে থাকেন। বেশ কয়েকবার দেশে এসেছেন। তার স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদেরকেও ভ্রমণ ভিসায় কয়েকবার সৌদিতে নিয়েছেন। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ পূর্বে দেশ থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সৌদিতে নিয়েছেন। তারা এখন সৌদি আরবে আছেন।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি সময় ৪টায় সবুজসহ তিন জনের দুর্ঘটনার খবর পান। রাত ১০টায় সেখানে অবস্থানরত স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সবুজের মৃত্যুতে তার মা ও স্বজনরা শোকাহত। তার মৃত্যুতে ছেলের বউ ও নাতনিরা কেমন আছেন। তাদের কথা মনে করে কেঁদে উঠেন। আমি আমার ছেলেকে নিজ চোখে এবং একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই।
নিহত তিনটি পরিবারের দাবি, তাদের সন্তানের মরদেহ আনার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যাতে সহযোগিতা করে।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা জানান, সৌদি আরবে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। তবে আমাদের জানালে তাদের জন্য যেসব করণীয় আছে, তাদের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ইউপি সদস্য পিয়াস দাস (৩৪) আটক হয়েছেন।
আজ ৩০ অক্টোবর বুধবার দুপুরে তিনি পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশে যান, কিন্তু তার বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা থাকায় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
জানা যায়, পিয়াস দাস শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবুজবাগ গ্রামের বাসিন্দা এবং তিনি সদর ইউপি’র ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য। তার বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে তিনি ১নং আসামি হিসেবে উল্লেখিত।