অনলাইন ডেস্ক :
রাতের আঁধারে ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্র (ফোর্দো, নাতাঞ্জ আর ইসফাহান) পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন এই হামলার উদ্দেশ্য ইরানের সরকার বদল করা নয় বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রধান। তার মতে, মার্কিন হামলার লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র ইরানের পরমাণু হুমকি ঠেকানো, এই অভিযানের উদ্দেশ্য কখনোই সরকার পতনের ছিল না, এখনো না।
আজ ২৩ জুন সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বাহিনীর হামলার লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র পরমাণু হুমকি ঠেকানো, সরকার পরিবর্তন নয় বলে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ অভিযানের উদ্দেশ্য কখনোই সরকার পতন ছিলো না, এখনো না। সংবাদ সম্মেলনে তার সাথে ছিলেন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ-এর চেয়ারম্যান এয়ারফোর্স জেনারেল ড্যান কেইন।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদনে মার্কিন বাহিনী ফোর্দো, নাতাঞ্জা ও ইসফাহান-এ অবস্থিত ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে ‘নির্ভুল ও পরিকল্পিত হামলা’ চালায়। হেগসেথ বলেন, এই হামলা “যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা” এবং “আমাদের সেনাদের সুরক্ষা” নিশ্চিত করতেই চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কার্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তিনি এটিকে ‘দুঃসাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি প্রমাণ করেছে-যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি কেবল কথা নয়, কাজেও রূপ নেয়।
হেগসেথ নিশ্চিত করেন, হামলার লক্ষ্য ইরানি সেনা বা জনগণ ছিলো না। কেবলমাত্র ইরানের পরমাণু সক্ষমতাকে ধ্বংস করাই ছিল উদ্দেশ্য।
অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার পর বুধবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দেশটি পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়। ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দিয়ে বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে তলব করা হয় পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিককে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় ভারতে থাকা পাকিস্তানি কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে। বুধবারই ভারত জানিয়েছিল, নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা সে দেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা, বিমান উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করা হচ্ছে।
নয়াদিল্লির জানায়, এ সামরিক উপদেষ্টাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। এএনআই সূত্রে খবর, ওই পাক কূটনীতিককে তলব করে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার সরকারি নির্দেশনামা আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়া হয়। ভারতে তাদের উপস্থিতি যে কাম্য নয়, তা বুঝিয়ে দেওয়া।
বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিএস)। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সেই বৈঠক চলেছে। বৈঠকের পর রাত ৯টা নাগাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিসিএসের কর্তারা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান। যতোদিন দিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, তত দিন সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
বন্ধ করে দেওয়া হয় আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্ত। উপযুক্ত নথিপত্র নিয়ে যাঁরা এই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাদের ১ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। ভারত জানায়, ‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ (এসভিইএস)-এর অধীনে কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে আর ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অতীতে এই ভিসায় প্রবেশের জন্য পাকিস্তানিদের যত অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হচ্ছে। এ-ও জানানো হয়, এই ভিসা প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত পাকিস্তানি এখন ভারতে আছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দেশ ছাড়তে হবে।
পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করার পাশাপাশি সে দেশের ভারতীয় দূতাবাসের সদস্য সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে বলে জানায় ভারত।
অনলাইন ডেস্ক :
গ্রিসের নবনিযুক্ত মাইগ্রেশন ও আশ্রয় বিষয়ক মন্ত্রী থানোস প্লেভরিস সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এথেন্সে মন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা গ্রিক মন্ত্রী থানোস প্লেভরিসকে তার নতুন দায়িত্ব পালনের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সফলতার কামনা জানান।
বৈঠকে গ্রিসের নতুন অভিবাসন নীতিমালা, বাংলাদেশি অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা এবং অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের কর্মীদের গ্রিসের কৃষি ও অন্যান্য খাতে অবদানের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকরা গ্রিসের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
মন্ত্রী থানোস প্লেভরিস বাংলাদেশি কমিউনিটির নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশি কর্মীরা গ্রিসের বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
দুই দেশের মধ্যে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় পারস্পরিক সহযোগিতা আরো জোরদার করতে উভয়পক্ষ সম্মত হন। অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে তারা একমত হন।
অনলাইন ডেস্ক :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দেশটির অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কর্মস্থলে অনেকে ভয়ে যাচ্ছেন না । স্কুলে যেতে চাচ্ছে না শিশুরা। তারা ভয় পাচ্ছে। অনেক মা-বাবার কাজ বন্ধ। অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাসা-বাড়ি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিচ্ছে দেশটির বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যরা। স্থানীয় সময় রবিবার থেকে শুরু হয় সাঁড়াশি এ অভিযান। অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। অভিবাসন, মাদক, অস্ত্র আর কাস্টমস বিষয়ক ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের অভিযানে গ্রেফতারের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এখন প্রতিদিন শত শত বৈধ কাজগপত্রহীন অভিবাসীকে আটক করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে, যারা বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে তাদের বহিষ্কার করতে ২০২৪ নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বহু অভিবাসী প্রবেশ করেছিলেন। তাদের বড় অংশের ঠিকানা হয়েছিল টেক্সাস। তখন টেক্সাসের গভর্ণর গ্রেগ অ্যাবট এই অভিবাসীদের বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শাসিত শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছেন না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা–বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
ইউএস কমিটি ফর রিফিউজিস অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্টস নামের আরেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনা মারিয়া বেনা বলেন, ‘শিশুরা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা মা–বাবার কাছ থেকে এসব বিষয়ে শুনছে। সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে শুনছে। আমার মনে হয়, যখন শিক্ষার্থীরা ভয়ের কারণে স্কুলে যেতে চায় না, তখন ওই সম্প্রদায়ের মনের অবস্থা কী, তা অনেকটাই বোঝা যায়?’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় সময় গত রবিবার থেকে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। গতকালপরিচালিত দেশব্যাপী অভিযানে ৯৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযান এক সপ্তাহ ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ইশারায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছেন টম হোম্যান। তিনি আইসিইর সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হোম্যান ঝটিকা অভিযান শুরুর দিনকে ‘একটি ভালো দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই অভিযান ‘মোড় বদলে’ দেওয়ার মতো একটি ঘটনা।
সাক্ষাৎকারের সময় ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে ছিলেন টম হোম্যান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে (অবৈধ অভিবাসন) পুরো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছেন। শিকাগোর জননিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ওপর নজর রাখতে আজ আমরা সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে মাঠে নামিয়েছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আইসিই লিখেছে, রবিবার দেশজুড়ে ৯৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে শিকাগোয় এই ‘বাড়তি অভিযান’ ছাড়াও আটলান্টা, পুয়ের্তো রিকো, কলোরাডো, লস অ্যাঞ্জেলেস, অস্টিন ও টেক্সাস শহরে অভিবাসনসংক্রান্ত কর্মকর্তাদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো। আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শিকাগোয় অভিবাসীদের জন্য ছাড় থাকার কারণে শহরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে যে বাগ্স্বাধীনতার অধিকার দেয়া হয়েছে, সেটি খর্ব করে। একইসাথে চতুর্থ সংশোধনীতে অযৌক্তিক তল্লাশি ও আটকের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে।
অনলাইন ডেস্ক :
সুদানে দেশটির সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ২৯৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি।
এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ মরদেহগুলো রাস্তায় পড়ে থাকে এবং সেগুলি সংগ্রহ করা এই মুহূর্তে খুব বিপজ্জনক। চিকিৎসকদের একটি সিন্ডিকেট হতাহতদের পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বলছেন মঙ্গলবার পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭৪ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন। আহত শতাধিক।
অনলাইন ডেস্ক :
ইতালির ভিসা পেতে অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর ভাগ্য নির্ধারণে আজ গুরুত্বপূর্ণ দিন। উন্নত জীবনের আশায় বৈধ পথে দেশটিতে যেতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেও মাসের পর মাস অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকে। আজ শুরু হওয়া ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর থেকে তারা আশাবাদী একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হবে।
দুইদিনের সফরে আজ ঢাকা আসছেন ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসি। সফরে নিয়মিত ও বৈধ অভিবাসন নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হবে।
অবৈধ পথে ইতালি যাওয়া বন্ধ করতে বাংলাদেশ ও ইতালি উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নেওয়ার জন্য দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে যাচ্ছে।
আগামীকাল ৬ মে মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে ইতালির এই এমওইউ স্বাক্ষর হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল রবিবার রাতে গণমাধ্যমকে জানান, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে পাড়ি দিচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি নাগরিক।
ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অনেক বাংলাদেশি মারাও যাচ্ছেন। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইতালি। এ কারণে দুই দেশের আলোচনাসাপেক্ষে একটি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সই করতে যাচ্ছে দুই দেশ।
এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ইতালি সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের কথা হয়েছে। তারা লক্ষাধিক দক্ষ-অদক্ষ কর্মী নেবে। ইতালির সঙ্গে এর আগে কোনো এমওইউ ছিল না। এই এমওইউ স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের শ্রমিকদের ভাগ্য খুলবে। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় ইস্কাটন গার্ডেনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে অভিবাসনসংক্রান্ত এমওইউ স্বাক্ষর হবে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আজ বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা আছে। এর আগে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে দুই দেশের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, আন্তর্জাতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আজ দুপুরে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
বৈঠক ও এমওইউ স্বাক্ষর শেষে মঙ্গলবার তিনি নিজ দেশে ফিরে যাবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতালিতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অনেক কর্মী ভিসা পেতে অপেক্ষায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও তারা ভিসা পাচ্ছেন না। ইতালির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনেক বাংলাদেশি ইতালি যাওয়ার জন্য যে ভিসা আবেদন করেছেন, সেখানে তারা ভুয়া নথিপত্র জমা দিয়েছেন। সে কারণে অধিকতর যাচাই-বাছাই করার জন্য ভিসা দিতে দেরি হচ্ছে। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে এই বিষয়টির সুরাহা হবে বলে জানা গেছে।
ইতালিতে যেতে ইচ্ছুক প্রবাসী কর্মীদের ভিসা পেতে বিলম্বের বিষয়ে একাধিকবার ব্যাখ্যা দিয়েছে ভিসা আবেদনপত্র ও ডকুমেন্টস প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল। এক বিবৃতিতে বলা হয়, একটি দায়িত্বশীল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত ভিসা আবেদনকারীদের সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে করে তারা সতর্ক থাকেন এবং শেষ মুহূর্তের সমস্যা এড়াতে জলদি ভিসার জন্য আবেদন করেন।
গত ৩১ মার্চ থেকে ইতালির ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন ই-মেইল ভিত্তিক অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং সিস্টেম চালুর কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বৈধ ‘নুল্লা ওস্তা’ থাকা আবেদনকারীদের ই-মেইলে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ ও সময় জানানো হচ্ছে। ‘নুল্লা ওস্তার’ বৈধতা ইতালীয় দূতাবাস যাচাই করে এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের সংখ্যাও তারাই নির্ধারণ করে। ‘নুল্লা ওস্তা’ পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে আবেদনকারী যদি সঠিকভাবে মেইল করলে ওই ‘নুল্লা ওস্তা’ বাতিল হয় না।
আবেদনকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে ভিএফএস গ্লোবাল বলছে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণের অন্য কোনো উপায় নেই, প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যারা ভিন্ন তথ্য পাচ্ছেন, (তাদেরকে) প্রতারণা বা অননুমোদিত মধ্যস্থতাকারীদের বিশ্বাস না করে, ভিএফএস গ্লোবাল এবং ইতালির দূতাবাসে রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। স্মরণ করা যায়, জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনাময় গন্তব্য ইতালি চলতি বছর স্পন্সর ভিসায় বিভিন্ন দেশ থেকে ১ লাখ ৯১ হাজারের বেশি শ্রমিক নেবে। তবে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো সেই তালিকায় বাংলাদেশি নেই। ফলে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী বেছে নিচ্ছেন অবৈধ পথ। দেশটিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ ভিসার দ্বার খুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও জোরালো পদেক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র মতে, সম্প্রতি ইতালির নতুন অভিবাসন নীতি কার্যকর হয়েছে। এই নীতির আওতায় আলবেনিয়া হয়ে অবৈধ বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ইতালির জর্জা মেলোনির সরকার। অবৈধ অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্তসহ কঠোরতার খড়গ যাতে বাংলাদেশিদের ওপর না পড়ে সে বিষয়ে সফরে আসা দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে ঢাকা।
সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ