ইসলাম ডেস্ক :
মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো হিংসা ও অহংকার। হিংসা এবং অহংকার মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে করে তুলে বিষময়। হিংসা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ ও বিষময়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আল্লাহর জমিনে তোমরা দম্ভ ভরে চলো না, কেননা তুমি কখনই এ জমিন বিদীর্ণ করে এর নিচে যেতে পারবে না, আর উচ্চতায় তুমি কখনো পর্বতসমানও হতে পারবে না। (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৩৭)।
সুরা হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ, তোমাদের কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়েও উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়েও উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।
ইমানের পর মন্দ নামে ডাকা কতই না নিকৃষ্ট। যারা এ আচরণ থেকে ফিরে না আসবে তারা জালেম। আমাদের মনে রাখতে হবে হিংসা-বিদ্বেষ একটি মারাত্মক ব্যাধি। হিংসুক ব্যক্তি যখন হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয় তখন তাকে পরিত্যাগ করা অবশ্য কর্তব্য।
মানুষ কেন একজন আরেকজনকে হিংসা করে? সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে তা হলো- পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা, দাম্ভিকতা, একে অপরকে ঈর্ষা করা, নেতৃত্ব পাওয়া, নিজেকে যোগ্য ভাবা, ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিল করা, ক্ষমতা পাওয়া ইত্যাদি।
হিংসুক ব্যক্তি মনে করে সে-ই সমাজে সম্মানিত ও দামি আর সবাই তার চেয়ে নগণ্য। এ জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হিংসা-বিদ্বেষ থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য পবিত্র কোরআনে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
সুরা ফালাকের ৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- ‘হিংসুক ব্যক্তির হিংসার অনিষ্ট থেকেও আমি তোমার আশ্রয় চাই, যখন সে হিংসা করে। ’
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন কাঠের টুকরাকে খেয়ে ফেলে। (জ্বালিয়ে দেয়)। (আবু দাউদ, মিশকাত)।
হিংসুটেকে সমাজে কেউ পছন্দ করে না। সবাই তাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে। সমাজে সবার সঙ্গে বসবাস করলেও কেউ তাকে ভালো জানে না।
সুরা নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন সেজন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে?
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও ঈর্ষাকারীকে পছন্দ করেন না। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অহংকারও অনেক বড় গুনাহের কাজ। আমাদের মনে রাখতে হবে অহংকারের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছিল প্রথম পাপ।
অহংকারীকে আল্লাহতায়ালা কখনো পছন্দ করেন না। কবিরা গুনাহর মধ্যে অহংকার অন্যতম। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা বুঝে না বুঝেই অহংকার করি। যা কাম্য নয়। কারণ অহংকাই পতনের মূল।
আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব, যারা আমার ইবাদত নিয়ে অহংকার করে তারা শিগগিরই অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরা মুমিন (৪০), আয়াত ৬০)।
অহংকারবশত ইবলিশ আল্লাহর আদেশ অমান্য করল এবং আদমকে সেজদা না করার দরুন জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হলো।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা করা হবে। আর, শবে মেরাজ পালিত হবে আগামী ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। আজ ১ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
সভায় ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
এ সময় সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আব্দুর ছালাম খান, তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের প্রশাসক মো. ফখরুল ইসলাম, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান খান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. আবদুল মালেক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রুহূল আমিন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান,সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার প্রধান মাওলানা অধ্যক্ষ মিঞা মো. নূরুল হক, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের সানি খতিব মুফতি আফনান মুহাম্মাদ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান উপস্থিত ছিলেন।
ইসলাম ডেস্ক :
আল্লাহ ইরশাদ করেন,
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ
অর্থ : রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাকের মতো এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাকের মতো। আল্লাহ জানেন তোমরা তোমাদের নিজেদের সঙ্গে অবিচার করছিলে। তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন।
এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পারবে এবং অনুসন্ধান কোরো মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন। (বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭)
উল্লিখিত আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, বারা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.)-এর যুগে সাহাবীদের আমল ছিল, রোজা রাখার পর ইফতারের সময় হলে যদি ইফতার করার আগেই ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে এই রাত ও পরের দিন সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই আহার করা যাবে না।
কায়স ইবন সিরমা আনসারি (রা.) একবার রোজা পালন করছিলেন। ইফতারের সময় তিনি স্ত্রীর কাছে এসে বললেন, কোন খাবার আছে? স্ত্রী বলল, নেই।
তবে আপনার জন্য কিছু খুঁজে আনছি।
এদিকে ওই সাহাবি সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত থাকায় তার দুই চোখে ঘুম চলে আসে। তার স্ত্রী এসে তাকে ঘুমন্ত দেখে বলল, হায়, আপনিত বঞ্চিত। পরদিন দুপুরে ওই সাহাবি বেঁহুশ হয়ে পড়েন।
নবী (সা.)-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তখন এই আয়াত নাজিল হয়-
(أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ)
অর্থ : ‘রোহার রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে।’
তখন এই খবরে সাহাবিরা খুবই আনন্দিত হন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৩৪)
চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ১৯৭২ সাল বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের বছর। ৭২ সালে এমন এক চেতনা ও সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল যা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছিনতাই করা হয়েছে।
৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে অবস্থিত হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া মাদরাসায় অনুষ্ঠিত দস্তারবন্দী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আল্লামা সাজিদুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি খলিল আহমদ কাসেমীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ-ইসলাম এক সূত্রে গাথা। বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন হলে স্বাধীনতা টিকবে না। যারা ইসলামবিদ্বেষী তারাই বাংলাদেশের শত্রু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গৌরবময় বছর এবং ১৯৭২ সাল বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের বছর। ৭২ সাল কলঙ্কের কারণ, এ বছরের শেখ মুজিবুর রহমান নতুন চেতনা তৈরি করেছিলেন যা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছিনতাই করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৯ মাস পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশে না এসে, চলে গেলেন লন্ডনে। সেখান থেকে বাংলাদেশে না এসে চলে গেলে ভারতের নয়াদিল্লি। দেখা করলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। তখন ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবুর রহমান এর মুজিব কোটে কিছু নীতিকথা লিখে একটি চিরকুট ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই চিরকুটের কথা ছিল বাংলাদেশের গোলামির জিঞ্জির, স্বাধীনতা যুদ্ধের কৃতিত্ব ও চেতনাকে ছিনতাই করার মন্ত্র। তাই ৭২ সালের সংবিধান চার নীতি ভারতের সংবিধান থেকে পাচারকৃত।
আরও পড়ুন
ডালিম খেলে কী কী উপকার হয়?
মামুনুল হক বলেন, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতির সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান অঙ্গীকার করেছিলেন কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তৈরি করবেন না। ৭২-এর সংবিধান করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান অঙ্গীকার ভুলে গেছেন। তাই বলি ৭২ এর সংবিধান গাদ্দারের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সংবিধান, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার সংবিধান। সংবিধানে চার মূলনীতির এক নীতি ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদ বাংলাদেশে ছিল না। এই নীতি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সুনাম করে মামুনুল হক বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সকল রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সেখানে ভারত আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বকালের নজিরবিহীন ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। আমরাও ঘোষণা করতে চাই ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখতে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি দিল্লিতে পাঠিয়ে দিতে হবে।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খতিবে বাঙাল আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি শাখাওয়াত হোসেন রাজি প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
ইবাদত, পর্দা, পবিত্রতা, সাজ-সজ্জা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু ভিন্নতা রয়েছে নারীদের। শরিয়তের বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে আলাদা এসব মাসয়ালা জানা নারীদের জন্য জরুরি। নিচে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল তুলে ধরা হলো।
অজু-গোসলে নারীদের যেসব মাসয়ালা জানা জরুরি
* শিশুকে দুধ পান করানোর কারণে অজু ভঙ্গ হবে না। তবে নামাজ অবস্থায় কোনো শিশু দুধ পান করে নিলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/৬২৫)
* দুগ্ধপায়ী ছোট বাচ্চা মুখ ভরে বমি করলে তা বড় মানুষের মতোই নাপাক এবং তা কাপড়ে পড়লে ধৌত করতে হবে। মুখ ভরে বমি না করলে তা নাপাক হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৩৭)
* অজু-গোসলের সময় মহিলাদের নাক-ফুলের ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৮০)
* ফরজ গোসলে মহিলাদের চুল খোলা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ। আর বাঁধা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ নয়। কেবল চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। (শরহু মুশকিলিল আসার, হা. : ৩৮৫৪)
* ফরজ গোসলে মহিলাদের লজ্জাস্থানের বহিরাংশে পানি পৌঁছালে ফরজ আদায় হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। আর রোজা অবস্থায় মহিলাদের ভেতরাংশে যেন পানি না পৌঁছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা ভেতরে যাওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৫২)
* গর্ভাবস্থায় সন্তান হওয়ার আগে শেষের দিনগুলোতে মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যে পানি বের হয়ে মহিলাদের শরীর ও কাপড় নষ্ট হয়ে যায়, এতে মহিলার ওপর গোসল ফরজ হবে না, তবে অজু ভেঙে যাবে এবং নির্গত পানি থেকে শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নামাজ পড়তে হবে। কেননা সেগুলো নাপাক। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৫৯, ইমদাদুল ফতোয়া: ১/১০৭)
* যেসব নারী ধাতুরোগে আক্রান্ত, তাদের অজু নষ্ট হওয়ার ভয়ে যদি কেউ টিস্যু বা তুলা ধাতু আসার রাস্তায় এমনভাবে রাখে, যাতে ধাতু বাইরে আসতে না পারে, তাহলে এমতাবস্থায় সব ইবাদত আদায় করতে কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এটিই রোগীর জন্য উত্তম পন্থা। হ্যাঁ, তুলা বা টিস্যু পেপারের বহিরাংশ যদি ভিজে যায়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১০)
* মহিলাদের ‘হায়েজ’ তথা মাসিক রক্তস্রাবের ওপর শরয়ি বিধানের ক্ষেত্রে সর্বনিম্নে তিন দিন আর ঊর্ধ্বে ১০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লিখিত দুই সংখ্যার প্রথমটির কম হলে কিংবা দ্বিতীয়টির বেশি হলে তখন তা ‘ইস্তিহাজা’ বা রোগ হিসেবে ধর্তব্য হয়। আর দুই স্রাবের মাঝখানে ১৫ দিন পবিত্র থাকা আবশ্যক। কারো যদি স্রাবের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, আর সে কোনো মাসে অভ্যাসের বিপরীত ১০ দিনের পরও রক্ত দেখতে পায়, তাহলে অভ্যাসের ভেতরে আসা রক্তগুলোকে হায়েজ ধরতে হবে এবং অতিরিক্তগুলোকে ইস্তিহাজা। অনুরূপ কারো যদি এক হায়েজ শেষ হওয়ার পর ১৫ দিনের আগেই আবার রক্ত দেখা দেয়, আর এভাবে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে, তাহলে তার এই অনিয়ম চালু হওয়ার আগের হায়েজের অভ্যাস হিসাব করে ঠিক তার ১৫ দিন পরেই দ্বিতীয় হায়েজের সময় শুরু হবে, মাঝে আসা রক্তগুলোকে ইস্তিহাজা ধরতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/২৮৯)
* কোনো কারণে আগের মাসের অভ্যাস খেয়াল না থাকলে দশের বেশি হলে তার বিধান হচ্ছে, যেহেতু হায়েজের শেষ সীমা ১০ দিন, তাই ১০ দিনের পর নিয়মিত নামাজ-রোজা শুরু করবে। এক্ষেত্রে আগের মাসের পরিমাণ খেয়াল না থাকলে খুব চিন্তাভাবনার পর প্রবল ধারণা অনুযায়ী যত দিনের অভ্যাস খেয়াল হবে, ততদিনই হায়েজ হিসেবে গণ্য হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৮৬)
* সন্তান প্রসবের পর জরায়ু থেকে যে রক্ত আসে, তাকে নিফাসের রক্ত বলা হয়। এর সর্বোচ্চ সীমা ৪০ দিন। এর সর্বনিম্ন সীমা নেই, অল্প কিছুক্ষণও হতে পারে। ‘নিফাস’ অবস্থার সব বিধান মাসিক স্রাবের অনুরূপ। নারীরা মাসিক ও প্রসবজনিত বিশেষ দিনগুলোতে নামাজ-রোজা পালন করতে পারবে না। পরে এসব নামাজের কাজাও নেই, তবে রোজা কাজা করে নিতে হবে। ইস্তিহাজা অবস্থায় শরিয়তের বিধিবিধান যথা—নামাজ, রোজা ইত্যাদি পূর্ণরূপে পালন করতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনেও কোনো অসুবিধা নেই। (মাবসুতে সারাখসি: ৩/১৫৪-১৫৫)
* অনুরূপ হায়েজ-নিফাস অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকা একান্ত অপরিহার্য। তবে অপারগতাবশত গুনাহ থেকে বাঁচার মানসে হাঁটু থেকে নাভির মধ্যবর্তী অংশ বাদ দিয়ে অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা যৌনস্পৃহা নিবারণ করার অবকাশ আছে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/২৯২)
* তদ্রূপ বিশেষ দিনগুলোতে কোরআন শরিফ পড়া এবং স্পর্শ করা জায়েজ নেই। ওই সময় শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা না দেওয়াই শরিয়তের প্রকৃত বিধান, তথাপি প্রয়োজনবশত একেক শব্দ ভিন্ন ভিন্ন করে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। তবে ওই অবস্থায় তাদের কোরআন পড়া শোনা যাবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮)
* বই-পুস্তক বা দ্বীনি কিতাবাদি, যেখানে কোরআন শরিফের আয়াতও লিখা থাকে, এ অবস্থায় পড়া বা স্পর্শ করা জায়েজ। তবে কোরআনের আয়াত পড়া বা স্পর্শ করা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৭৬)
* তদ্রূপ ওই সময়ে দোয়ার অর্থবহ আয়াত বা সুরা দোয়ার নিয়তে পড়া জায়েজ। যেমন দোয়ার নিয়তে আয়াতুল কুরসি বা সুরায়ে নাস ও ফালাক ইত্যাদি পড়া জায়েজ হবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৬৮, রদ্দুল মুহতার: ১/১৭২, আহসানুল ফতোয়া: ২/৭১)
* ওষুধের মাধ্যমে স্রাবের সময় পিছিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি বলেন, ‘এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে না’, তাহলে প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যাবে। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪)
নারীদের পোশাক ও সাজসজ্জার মাসয়ালা
* পোশাকের মধ্যে শরয়ি নীতিমালা হলো- এমন পোশাক পরবে, যা দ্বারা মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সারা শরীর ঢেকে যায় এবং কাপড় এতটুকু মোটা হওয়া চাই, যাতে ওপর দিয়ে শরীর দেখা না যায়। নারীরা পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব পুরুষের ওপর, যারা মহিলাদের আকৃতি ধারণ করে এবং ওই সব মহিলাদের ওপর, যারা পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।’ (বুখারি: ৫৮৮৫)
* ভ্রু প্লাক, দাঁত চিকন করে মাঝে ফাঁকা করা, শরীর খোদাই করে অঙ্কন করা জায়েজ নেই। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অভিশাপ করেছেন ওই সব মহিলার ওপর, যারা নিজের শরীর খোদাই করে ও করায়, যারা ভ্রুর চুল উঠায় ও উঠিয়ে দেয় এবং দাঁত চিকন করে। কেননা তারা সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে ফেলে।’ (বুখারি: ৪৮৮৬)
* কোনো মহিলার চেহারায় দাড়ি-মোচ উঠলে তা উপড়ে ফেলা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭৩)
* অপ্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল পুরুষের মতো ছোট করা নাজায়েজ। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮)
* নারীরা হাতে, পায়ে ও গোটা শরীরে মেহেদি দিতে পারবে, বরং তা মোস্তাহাব। তবে এমন কোনো পলিস ব্যবহার করতে পারবে না, যার কারণে অজু-গোসলের পানি শরীরের চামড়ায় পৌঁছে না। নারীরা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে এমন পোশাক ও বোরকা পরে বের হবে, যা শালীনতা নির্দেশ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘পুরুষের সাজসজ্জা হলো সুগন্ধি লাগানো, যা আকর্ষণীয় রঙের হবে না। আর নারীদের সাজসজ্জা হলো রংবেরঙের, তবে তার সুগন্ধি যেন বাইরে না ছড়ায়।’ (তিরমিজি: ২৭৮৭)
নারীদের পর্দার মাসয়ালা
* নারীরা স্বামী, পিতা, দাদা, নানা ও এদের বরাবর ওপরের দিকের পূর্বপুরুষ, নিজের ছেলে, নাতি ও এর বরাবর নিচের দিকের সব পুরুষ, আপন ভাই, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই, এসব ভাইয়ের সন্তান, বোনের ছেলে, মামা, চাচা, স্বামীর বাবা, স্বামীর দাদা-নানা ও এদের বরাবর ওপরের পূর্বপুরুষ, স্বামীর আগের ঘরের সন্তান, মেয়ে ও নাতনি জামাই, দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভাই এবং দুধ-সম্পর্কীয় এসব স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ। এর বাইরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা জায়েজ নেই। (সুরা নিসা: ২২, ২৩; বুখারি: ২৬৪৫)
* শরিয়তের বিধানমতে, স্বাভাবিক অবস্থায় মহিলারা উল্লিখিত মাহরাম পুরুষের সামনে তার মাথা, মুখমণ্ডল, গলা, পুরো হাত, পায়ের পাতা খুলতে পারবে। অনুরূপ বুক, পায়ের গোছা, বাহু খোলার অনুমতি থাকলেও বিনা প্রয়োজনে না খোলাটাই উত্তম, তবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা হলে এগুলোও ঢাকা জরুরি। বর্তমান ফিতনার যুগে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৭)
* প্রয়োজনে মহিলারা মাহরাম পুরুষের সামনেও বাচ্চাদের দুধ দিতে পারবে, তবে ফিতনার আশঙ্কা হলে তা করবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩২৮)
* অতি প্রয়োজনে অনন্যোপায় হলে মাহরাম ছাড়া পরপুরুষের সামনে—যেমন ডাক্তারের সামনে চেহারা ও অন্যান্য অঙ্গ প্রয়োজন অনুপাতে খোলা জায়েজ। (আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩৭০)
* এমন বৃদ্ধ নারী, যাদের প্রতি সাধারণত কামদৃষ্টি যায় না, তারা পরপুরুষের সামনে চেহারা খুলতে পারবেন। পুরুষদের জন্য তাদের দেখা বৈধ। (মাবসুতে সারাখসি: ১০/১৫৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম নারীদের তাদের আলাদা মাসয়ালাগুলো জানার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। নারী-পুরুষ সবাইকে ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলা, নির্যাতন ও গণহত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম।
প্রতিবাদ সমাবেশে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান দাবি করেন, ইহুদিরা মুসলমানদের প্রধান শত্রু এবং ইসলামের ইতিহাসে তাদের অবস্থান বরাবরই বিরোধপূর্ণ। চলমান গণহত্যার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, নেতানিয়াহু বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী।
আজ ৭ এপ্রিল সোমবার দুপুরে ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাবেশে তিনি আহ্বান জানান।
এসময় তিনি বলেন, দ্রুত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানাতে হবে। ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ইসরায়েলের গণহত্যাকে মানবতাবিরোধী কাজ উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব বলেন, নেতানিয়াহু বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। সব মানুষের জন্য এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানানো জরুরি। প্রয়োজনে জিহাদের ডাক দিয়ে ফিলিস্তিন গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।