আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান :
ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর দিল মানুষের আয়ত্তের বাইরে। মানুষের অন্তরে বিভিন্ন খেয়াল আসতে পারে, তাতে করার কিছুই নেই। কিন্তু বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছা করলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। চোখ আমার নিয়ন্ত্রণে, ইচ্ছা করলে দেখতে পারি, না-ও দেখতে পারি। হাত আমার নিয়ন্ত্রণে, ইচ্ছা করলে ধরতে পারি, না-ও ধরতে পারি। চোখ যেহেতু আমার নিয়ন্ত্রণে তাই নামাজের সময় সিজদার স্থানে চোখ রাখতে বলা হয়েছে। রুকু করার সময় চোখকে দুপায়ের ওপর রাখতে বলা হয়েছে। বসা অবস্থায় দৃষ্টি কোলের দিকে থাকবে। সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধ পর্যন্ত যাবে। বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক রাখার বিষয়টি মানুষের নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু নামাজের সময় অন্তরে অনেক খেয়াল আসে, তা ফেরানোর মতো ক্ষমতা মানুষের নেই। তাই নামাজের মধ্যে অন্য কোনো খেয়াল আসতে পারবে না-শরিয়ত এমন কোনো শর্তারোপ করেনি। শরিয়ত বলেছে, দিলের মধ্যে ইখলাস তৈরি কর। নম্রতা ও একাগ্রতা আনয়ন কর। যেহেতু অন্তরের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই নামাজে ইখলাস ও খুশু-খুজুকে ফরজ করা হয়নি। কারণ এটা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহপাক মানুষের ওপর ক্ষমতাবহির্ভূত কোনো হুকুম চাপিয়ে দেন না।’ তবে দিলের মধ্যে খুশু-খুজু তৈরি করার নির্দেশ আল্লাহপাক দিয়েছেন এবং এর নিয়ম-পদ্ধতিও তিনি বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তথা হাত-পা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কর! তাহলে এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তোমার অন্তরে ইখলাস ও তাওয়ায়ু সৃষ্টি হবে। সুন্নত তরিকায় আমল করলে প্রিয়তম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হবেন। অন্তরে খুশু-খুজু সৃষ্টি করার জন্য সুন্নত মোতাবেক আমল করা জরুরি। খুশু-খুজু ও একাগ্রতা মানুষের নিয়ন্ত্রণে হলে ইসলামি শরিয়তে এটাকে ফরজ করা হতো। কারণ খুশু-খুজু ও ইখলাস হচ্ছে নামাজের আত্মা। কিন্তু যেহেতু ইখলাস ও খুশু-খুজু মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাই এটাকে ফরজ করা হয়নি। কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, নামাজে খুশু-খুজু ফরজ। ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত ‘কিমিয়ায়ে সায়াদাত’ ও ‘ইহ্ইয়ায়ে উলুমুদ্দীনে’ লিখেছেন, নামাজে খুশু-খুজু ফরজ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি বলেছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। কারণ খুশু-খুজু মানুষের দিলের ব্যাপার। তাই খুশু-খুজুকে যদি ফরজ বলা হয়, তাহলে খুশু-খুজু না এলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব আমি আমার আগের কথা প্রত্যাহার করলাম। এখন আমি বলছি, নামাজে খুশু-খুজু হচ্ছে মুস্তাহাব।
নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করতে হয়, কিন্তু নিয়ত কী জিনিস, তা অনেকেই জানে না। ফলে তারা পেরেশানি ভোগ করে থাকে। অনেকে আরবিতে সশব্দে নিয়ত করে। অথচ আরবিতে নিয়ত করার সময় তাদের উচ্চারিত আরবি বাক্য ভুল হয়ে যায়। এ ছাড়া নিয়ত হলো দিলের ব্যাপার; মুখের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন জুমার নামাজ পড়তে এসে নিয়ত করলাম, আমি ইমাম সাহেবের পেছনে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি, আল্লাহু আকবার-এতে ফজরের ফরজ আদায় হবে না, জুমার নামাজই আদায় হবে। মুখে যা নিয়ত করেছি, তা হবে না। এমনিভাবে কেউ যদি রমজান মাসে নফল রোজার নিয়ত করে, তাহলেও রমজানের ফরজ রোজা আদায় হবে। নিয়ত খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু তা আদায় করা অত্যন্ত সহজ। শুধু মনে মনে খেয়াল করাই যথেষ্ট। সেখানে উচ্চারণের কোনো প্রশ্ন নেই। তবে যদি অন্তরের নিয়তের সঙ্গে মুখের উচ্চারণও সহিহ হয়, তাহলে খুব ভালো। এ ছাড়া মুক্তাদি যদি এ নিয়ত করে যে ইমাম সাহেব যে নামাজ আদায় করছেন, আমিও সেই নামাজ আদায় করছি, তবু তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
কোনো কোনো চটি বইয়ের মধ্যে লেখা আছে নামাজে আরবিতে নিয়ত করা বেদাত। কারণ কিছু লোক মনে করেন যে আরবিতে নিয়ত না করলে নামাজ আদায় হবে না। এ কথাটি বিভ্রান্তিকর। আসল মাসয়ালা হলো কেউ যদি কোনো মুস্তাহাব আমলকে ওয়াজিব মনে করে কিংবা ওয়াজিবকে ফরজ মনে করে, তাহলে সেটা করা নিষেধ। এতে সমাজের মধ্যে মাসয়ালার পজিশন নষ্ট হয়ে যায়। এসব ভুলভ্রান্তির মূল কারণ হলো মাসয়ালা সম্পর্কে সঠিক ইলম না থাকা। আমাদের অবস্থা এই যে ঈদ কিংবা জানাজায় ইমাম সাহেব যদি নামাজের নিয়ত বলে দেন, তবে তো ভালো, আর যদি নিয়ত না বলে দেন, তো মুসল্লিদের হইচই ও সমালোচনা করতে শোনা যায় যে হুজুর আরবিতে নামাজের নিয়তটিও বলে দিলেন না। কারও যদি আগে থেকে নিয়ত মুখস্থ থাকে, তাহলে তো সহজেই মুখস্থ বলতে পারবে। আর যদি আগ থেকে মুখস্থ না থাকে, তাহলে কি এ সময়ে ইমাম সাহেবের মুখে একবার শুনে নিয়ত মুখস্থ করা সম্ভব? এ কথা সত্য যে মুসলমান হিসেবে আরবি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও আকর্ষণ থাকা স্বাভাবিক। তবে উচিত হলো সময় সুযোগে আরবি নিয়ত মুখস্থ করে নেওয়া। শুধু আরবি মুখস্থ নয়, বরং অর্থসহ শিখে নেওয়া উচিত।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
ইসলাম ডেস্ক :
জুমার নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার নামাজ গুরুত্বের সাথে পড়া উচিত। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস। পবিত্র কোরআনে সূরা আল জুমায় ইরশাদ করা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আল জুমা, আয়াত: ৯)
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।
মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ তায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।’ আরবি শব্দ জুমুআ- এর অর্থ একত্র হওয়া। শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন।
শুক্রবারের দিন যোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তার খুতবায়।
যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩)।
হজরত সালমান (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)।
জুমার নামাজ প্রত্যেক বালেগ পুরুষের জন্যই ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ) মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব- অপরিহার্য কর্তব্য। (সুনানে নাসায়ী)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অবহেলা অলসতা করে পর পর তিন জুমা নামাজ ছেড়ে দিল, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। (আবু দাউদ)।
আরেক হাদিসে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ওজর এবং অনিষ্টের ভয় ছাড়া জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করে না, মুনাফিকের এমন দপ্তরে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, যা কখনো মোছা বা রদবদল করা হয় না।
কারোর জুমার নামাজ এক রাকআত ছুটে গেলে বাকি আর এক রাকআত ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমা হয়ে যাবে। অনুরূপ কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকুর আগে থেকে পেলেও ওই রাকআত এবং তার সঙ্গে আর এক রাকআত পড়লে তারও জুমার নামাজ হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ শেষ হওয়ার পর জামাআতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমার নামাজ পাবে না। এই অবস্থায় তাকে যোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর ৪ রাকআত ফরজ পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, সৌদি উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)।
আর কেউ যদি জুমার নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমা শেষ হয়ে গেছে তবে তাকে যোহরের নামাজ পড়তে হবে। কারণ জামাআত ছাড়া জুমার নামাজ হয় না।
হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকূ না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।’ (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানী, বায়হাকী, আলবানী : ৬২১)।
কোনো ইমাম সাহেব যদি বিনা ওজুতে জুমার নামাজ পড়িয়ে নামাজের শেষে মনে হয়, তাহলে মুক্তাদির নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। আর ইমাম ওই নামাজ কাজা করতে ৪ রাকআত জোহর পড়বেন। (আল-মুন্তাকা মিন ফাতাওয়াল ফাওয়া : ৩/৬৮)।
জুমার খুতবা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। জুমার খুতবা হলো ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন কোনো প্রকার কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ কর’ এ কথাও বলা যাবে না। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল, তুমি চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে’।
ইমাম আহমদ তার বর্ণনায় হাদিসে আরো বর্ধিত করেন, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো অনর্থক কর্ম করল, তার জন্য ওই জুমায় আর কিছু রইল না।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদের ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সম্মানী ভাতা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় এই ভাতা দেওয়া হবে। প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ সম্মানী চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি মসজিদগুলোকেও এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
প্রাথমিকভাবে ইমামকে দেয়া হবে ৫ হাজার টাকা, মুয়াজ্জিন ৪ হাজার এবং খাদেম পাবেন ৩ হাজার টাকা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে ১৭ লাখের বেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন রয়েছেন। এর বাইরে শহরের মসজিদগুলোতে খাদেম রয়েছেন। সরকার পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ কর্মসূচি চালু করবে। পরে ধাপে ধাপে সব মসজিদ এর আওতায় আসবে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি মসজিদকে ১২ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।’
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একইভাবে মন্দিরের পুরোহিত ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ভাতার আওতায় আসবেন বলে।
এর আগে গত বছরের ৪ মার্চ জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কর্ম অধিবেশন শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ‘প্রতিটি জেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যদের তালিকা প্রস্তুত করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছে। তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন কর্মরত। এর মধ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এবং জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে তিনজন খতিব, ছয়জন পেশ ইমাম ও ছয়জন মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ১ মার্চ শনিবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ২ মার্চ রবিবার রোজা শুরু হবে।
১ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ দেখা কমিটি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। কমিটি জানায়, চাঁদ দেখা যাওয়ায় শনিবার ২৯ তম দিনে শেষ হচ্ছে শাবান মাস। আর আগামীকাল রবিবার শুরু হবে রমজান মাস। ফলে আজ দিবাগত রাতে সাহরি খেয়ে রবিবার থেকে রোজা রাখবেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
রমজান মাসের চাঁদ দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১ মার্চ শনিবার বাদ মাগরিব জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
এদিকে, গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সৌদি আরবে হিজরি ১৪৪৬ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়। ফলে আজ ১ মার্চ শনিবার দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রোজা।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের আকাশে আজ ২৪ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এজন্য আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। তাই আগামী ৬ সেপ্টেম্বর (১২ রবিউল আউয়াল) পালিত হবে পবিত্র মিলাদুন্নবী (স.)।
২৪ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
আরবি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র শাব্দিক অর্থ- মহানবীর (স.) জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী হয়রত মুহম্মদ (স.) এর জন্ম ও মৃত্যু (ওফাত) দিবস হিসেবে পালন করে। কারণ এ দিনেই রাসুলে করীম (স.) ইন্তেকালও করেন। সেই হিসেবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ১২ রবিউল আউয়াল। বাংলাদেশে মিলাদুন্নবীর (স.) দিন সাধারণ ছুটি।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। আরবের মরুপ্রান্তরে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার শুরু করেন তিনি। তার আবির্ভাব এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
দীর্ঘ ২৩ বছর ইসলাম ধর্ম প্রচার করে ৬৩ বছর বয়সে ১২ রবিউল আউয়ালই মহানবী (স.) মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি মিলাদুন্নবী (স.) হিসেবে সারা বিশ্বের মুসলমানরা পালন করে থাকেন।
মিলাদুন্নবীর (স.) দিনে মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মুফতি আবদুল্লাহ নুর:
সুপথ গ্রহণে অসৎ সঙ্গ একটি বাধা। অসৎ মানুষরা তাদের সঙ্গীকে সৎ হওয়ার সুযোগ দিতে চায় না। সঙ্গীদের কেউ সুপথে চলতে চাইলে অসৎ মানুষ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। যেমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অতীত পাপের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া, আল্লাহর ক্ষমা লাভের ব্যাপারে হতাশ করা, পার্থিব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় দেখানো ইত্যাদি। যারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তাঁদের প্রতি পরামর্শ হলো আপনি আপনার ইচ্ছার ওপর অটল থাকুন, ধৈর্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। অচিরেই আল্লাহ আপনার জন্য রাস্তা খুলে দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তুমি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। যারা নির্ভর করে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)। আর যারা আপনাকে অসৎ পথে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় তাদের এড়িয়ে চলুন। কেননা এসব মানুষ ও জিন শয়তান পরস্পরকে সাহায্য করে যেন আপনাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে। এ জন্য আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘বলুন! আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রভুর কাছে, মানুষের মালিকের কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে খান্নাস শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে। যারা মানুষের বক্ষে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষ ও জিনদের মধ্যে থেকে।’ (সুরা : নাস, আয়াত : ১-৬)। তাদের সান্নিধ্য ত্যাগ আপনার ভেতরও বিরহ জাগিয়ে তুলতে পারে, তবে তা সাময়িক। কিন্তু আপনি যখন ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হবেন, তখন এই ব্যথা আপনার কাছে বিতৃষ্ণায় পরিণত হবে। কেননা তখন আপনি বুঝতে পারবেন অসৎ বন্ধুরা পরকালে আক্ষেপের কারণ হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমাকে সে বিভ্রান্ত করেছিল আর কাছে উপদেশ আসার পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ২৭-২৯)। যখন তারা আপনাকে বিরক্ত করবে অথবা নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হবে, তখন আপনি মনকে বোঝাবেন আল্লাহর আনুগত্য উত্তম, নাকি মন্দ মানুষের? আল্লাহর অনুগ্রহ বেশি, নাকি অসৎ বন্ধুদের? আল্লাহ বেশি হকদার নাকি তাঁর অবাধ্য সৃষ্টিরা? আপনি অবিরাম আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকুন, তাঁর সাহায্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করুন। ঈমান ও তার দাবি সম্পর্কে সচেতন হোন। আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। কেননা আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, ‘আল্লাহ তাদের দৃঢ়পদে রাখবেন, যারা ঈমান এনেছে শাশ্বত বাণীর ওপর দুনিয়ার ও আখিরাতের জীবনে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৭)। আপনাকে যদি তারা ত্যাগ করে, সুন্দর আচরণ ও সহযোগিতার দুয়ার বন্ধ করে দেয়, তবে আপনি বিখ্যাত সাহাবি কাআব বিন মালিক (রা.)-এর ঘটনা স্মরণ করুন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সাহাবিকে বলেছিলেন, তাঁরা যেন তাঁকে বয়কট করে চলে, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ফায়সালা আসে। তখন তাঁর নিকট গাসসানের বাদশাহ এই মর্মে চিঠি লেখেন—‘আমি জানতে পেরেছি যে আপনার সাথি আপনার সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না এবং শেষ করেও দেবেন না। সুতরাং আপনার উচিত আমাদের সঙ্গে মিলে যাওয়া।’ সে চেয়েছিল এই সাহাবিকে মদিনা থেকে বের করে নিয়ে নিজের দলে টেনে নিতে, যেন তিনি অমুসলিম দেশে গিয়ে ঈমানহারা হয়ে যান। কিন্তু কাআব (রা.)-এর দৃঢ়তা দেখুন! তিনি বলেন, আমি তা পাঠ করে বললাম, এটিও একটি পরীক্ষা। আমি চিঠিটি দলা পাকিয়ে চুলার মধ্যে ছুড়ে ফেললাম এবং তা পুড়িয়ে ফেললাম। আপনিও এমন দৃঢ়তা অবলম্বন করবেন, যেন শয়তান ও তাদের দোসরদের মন ভেঙে যায়, তারা হতাশ হয়ে ফিরে যায় অথবা আপনার দৃঢ়তা দেখে তারা ঈমান ও ইসলামের পথে ফিরে আসবে। আল্লাহ আপনাকে বলছেন, ‘অতএব, আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, আর এই অবিশ্বাসীরা যেন আপনাকে বিপথগামী করতে না পারে।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ৬০)। আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের ওপর অটল থাকার তাওফিক দিন। আমিন।