আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান :
ইখলাস মানুষের দিলে সৃষ্টি হয়। আর দিল মানুষের আয়ত্তের বাইরে। মানুষের অন্তরে বিভিন্ন খেয়াল আসতে পারে, তাতে করার কিছুই নেই। কিন্তু বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছা করলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। চোখ আমার নিয়ন্ত্রণে, ইচ্ছা করলে দেখতে পারি, না-ও দেখতে পারি। হাত আমার নিয়ন্ত্রণে, ইচ্ছা করলে ধরতে পারি, না-ও ধরতে পারি। চোখ যেহেতু আমার নিয়ন্ত্রণে তাই নামাজের সময় সিজদার স্থানে চোখ রাখতে বলা হয়েছে। রুকু করার সময় চোখকে দুপায়ের ওপর রাখতে বলা হয়েছে। বসা অবস্থায় দৃষ্টি কোলের দিকে থাকবে। সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধ পর্যন্ত যাবে। বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক রাখার বিষয়টি মানুষের নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু নামাজের সময় অন্তরে অনেক খেয়াল আসে, তা ফেরানোর মতো ক্ষমতা মানুষের নেই। তাই নামাজের মধ্যে অন্য কোনো খেয়াল আসতে পারবে না-শরিয়ত এমন কোনো শর্তারোপ করেনি। শরিয়ত বলেছে, দিলের মধ্যে ইখলাস তৈরি কর। নম্রতা ও একাগ্রতা আনয়ন কর। যেহেতু অন্তরের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই নামাজে ইখলাস ও খুশু-খুজুকে ফরজ করা হয়নি। কারণ এটা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহপাক মানুষের ওপর ক্ষমতাবহির্ভূত কোনো হুকুম চাপিয়ে দেন না।’ তবে দিলের মধ্যে খুশু-খুজু তৈরি করার নির্দেশ আল্লাহপাক দিয়েছেন এবং এর নিয়ম-পদ্ধতিও তিনি বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তথা হাত-পা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কর! তাহলে এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তোমার অন্তরে ইখলাস ও তাওয়ায়ু সৃষ্টি হবে। সুন্নত তরিকায় আমল করলে প্রিয়তম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হবেন। অন্তরে খুশু-খুজু সৃষ্টি করার জন্য সুন্নত মোতাবেক আমল করা জরুরি। খুশু-খুজু ও একাগ্রতা মানুষের নিয়ন্ত্রণে হলে ইসলামি শরিয়তে এটাকে ফরজ করা হতো। কারণ খুশু-খুজু ও ইখলাস হচ্ছে নামাজের আত্মা। কিন্তু যেহেতু ইখলাস ও খুশু-খুজু মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাই এটাকে ফরজ করা হয়নি। কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, নামাজে খুশু-খুজু ফরজ। ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত ‘কিমিয়ায়ে সায়াদাত’ ও ‘ইহ্ইয়ায়ে উলুমুদ্দীনে’ লিখেছেন, নামাজে খুশু-খুজু ফরজ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি বলেছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। কারণ খুশু-খুজু মানুষের দিলের ব্যাপার। তাই খুশু-খুজুকে যদি ফরজ বলা হয়, তাহলে খুশু-খুজু না এলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব আমি আমার আগের কথা প্রত্যাহার করলাম। এখন আমি বলছি, নামাজে খুশু-খুজু হচ্ছে মুস্তাহাব।
নামাজ শুরু করার আগে নিয়ত করতে হয়, কিন্তু নিয়ত কী জিনিস, তা অনেকেই জানে না। ফলে তারা পেরেশানি ভোগ করে থাকে। অনেকে আরবিতে সশব্দে নিয়ত করে। অথচ আরবিতে নিয়ত করার সময় তাদের উচ্চারিত আরবি বাক্য ভুল হয়ে যায়। এ ছাড়া নিয়ত হলো দিলের ব্যাপার; মুখের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন জুমার নামাজ পড়তে এসে নিয়ত করলাম, আমি ইমাম সাহেবের পেছনে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি, আল্লাহু আকবার-এতে ফজরের ফরজ আদায় হবে না, জুমার নামাজই আদায় হবে। মুখে যা নিয়ত করেছি, তা হবে না। এমনিভাবে কেউ যদি রমজান মাসে নফল রোজার নিয়ত করে, তাহলেও রমজানের ফরজ রোজা আদায় হবে। নিয়ত খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু তা আদায় করা অত্যন্ত সহজ। শুধু মনে মনে খেয়াল করাই যথেষ্ট। সেখানে উচ্চারণের কোনো প্রশ্ন নেই। তবে যদি অন্তরের নিয়তের সঙ্গে মুখের উচ্চারণও সহিহ হয়, তাহলে খুব ভালো। এ ছাড়া মুক্তাদি যদি এ নিয়ত করে যে ইমাম সাহেব যে নামাজ আদায় করছেন, আমিও সেই নামাজ আদায় করছি, তবু তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
কোনো কোনো চটি বইয়ের মধ্যে লেখা আছে নামাজে আরবিতে নিয়ত করা বেদাত। কারণ কিছু লোক মনে করেন যে আরবিতে নিয়ত না করলে নামাজ আদায় হবে না। এ কথাটি বিভ্রান্তিকর। আসল মাসয়ালা হলো কেউ যদি কোনো মুস্তাহাব আমলকে ওয়াজিব মনে করে কিংবা ওয়াজিবকে ফরজ মনে করে, তাহলে সেটা করা নিষেধ। এতে সমাজের মধ্যে মাসয়ালার পজিশন নষ্ট হয়ে যায়। এসব ভুলভ্রান্তির মূল কারণ হলো মাসয়ালা সম্পর্কে সঠিক ইলম না থাকা। আমাদের অবস্থা এই যে ঈদ কিংবা জানাজায় ইমাম সাহেব যদি নামাজের নিয়ত বলে দেন, তবে তো ভালো, আর যদি নিয়ত না বলে দেন, তো মুসল্লিদের হইচই ও সমালোচনা করতে শোনা যায় যে হুজুর আরবিতে নামাজের নিয়তটিও বলে দিলেন না। কারও যদি আগে থেকে নিয়ত মুখস্থ থাকে, তাহলে তো সহজেই মুখস্থ বলতে পারবে। আর যদি আগ থেকে মুখস্থ না থাকে, তাহলে কি এ সময়ে ইমাম সাহেবের মুখে একবার শুনে নিয়ত মুখস্থ করা সম্ভব? এ কথা সত্য যে মুসলমান হিসেবে আরবি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও আকর্ষণ থাকা স্বাভাবিক। তবে উচিত হলো সময় সুযোগে আরবি নিয়ত মুখস্থ করে নেওয়া। শুধু আরবি মুখস্থ নয়, বরং অর্থসহ শিখে নেওয়া উচিত।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের আকাশে ২৮ মে বুধবার পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ২৯ মে বৃহস্পতিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের জিলহজ মাস গণনা শুরু হবে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ, অর্থাৎ ৭ জুন বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
২৮ মে বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সভায় দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসন, আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে চাঁদ দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাঁদ দেখা যাওয়ার তথ্য জানাতে টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বর খোলা রাখা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদ দেখা যাওয়ার তথ্য আসায় দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব, চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যরাসহ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রমজানের পরে ইবাদেতের সবচেয়ে বড় মৌসুম হলো জিলহজের প্রথম দশক। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর নিকট অন্য যেকোনো সময়ের আমলের চেয়ে জিলহজের প্রথম দশকের আমল অধিক প্রিয় [সহিহ বুখারি]।
দুলাল মিয়া :
অষ্টগ্রাম সিরাজুল উলূম ইসলামিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে ৫০ তম বার্ষিক সভা ও হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ী প্রদান উপলক্ষে ২৫ ডিসেম্বর বুধবার বাদ আছর হতে মাদ্রাসা ময়দানে ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া এর প্রিন্সিপাল উত্তাজুল আসাতিজা, পীরে কামেল আল্লামা মুফতী মুবারকুল্লাহ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান।
বিশেষ অতিথি থাকবেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবিব।
প্রধান বক্তা থাকবেন মাওলানা তাফহীমুল হক্ব, হবিগঞ্জ।
বিশেষ বক্তা থাকবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া সিরাজিরা দারুল উলুম জাদুঘর এর সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা কামাল উদ্দীন কাসেমী, মাওলানা কামাল উদ্দীন দায়েমী, নারায়ণগঞ্জ, চান্দিয়ারা দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুল্লাহ্ সাদী।
আমন্ত্রিত উলামায়ে কেরাম থাকবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়ার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আলী আজম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়াত এর সিনিয়র মুহাদ্দিস হাফেজ মাও: শফিকুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম সিরাজুল ইসলাম মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা মুফতী হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া এর সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল হান্নান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া সিরাজিয়া দারুল উলূম ভাদুঘর এর মুদাররিস হাফেজ মাও: ইসহাক্ব সিরাজী, অষ্টগ্রাম সিরাজুল ইসলাম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হাফিজুল ইসলাম।
উক্ত ইসলামী মহা সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে দ্বীন আখেরাতের অশেষ নেকী হাসিল এবং সকল মুর্দেগানের মাগফিরাত কামনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জাওয়াদ তাহের :
ইসলামের ইতিহাসে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা এই দিনগুলোর গুরুত্ব বোঝাতে কোরআনে এর নামে শপথ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ ফজর কালের। এবং ১০ রাতের।’ (সুরা : ফজর, আয়াত : ১-২)
মুফাসসিরদের মতে, এখানে ফজর বলতে বিশেষভাবে জিলহজের ১০ তারিখের ফজর বোঝানো হয়েছে। আর যে ১০ রাতের শপথ করা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত।
১০ দিনের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ :
হজ ও কোরবানি, আরাফাহ দিবস—এসব মিলিয়ে এই দিনগুলোর রয়েছে বিশেষ ফজিলত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই, যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজ মাসের এই ১০ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়।
সাহাবারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করাও কি (এত প্রিয়) নয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জানমাল নিয়ে যদি কোনো লোক আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দুটির কোনোটিই নিয়ে যদি সে আর ফিরে আসতে না পারে তার কথা (অর্থাৎ সেই শহীদের মর্যাদা) ভিন্ন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৭)
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিলহজের এই ১০ দিনের বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো, এ সময় শরিয়তের মৌলিক কিছু ইবাদতের সম্মিলন ঘটে। শরিয়তের প্রধান ইবাদত হলো নামাজ, রোজা, সদকা ও হজ।
এ ধরনের সমাবেশ বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না।
(ফাতহুল বারি, আসকালানি : ২/৪৬০)
১০ দিনের বিশেষ কিছু আমল :
সামর্থ্যবানদের জন্য হজ ও কোরবানি ছাড়া এই মাসে আছে বিশেষ কিছু আমল, যার মাধ্যমে সে রাঙিয়ে নিতে পারে নিজের জীবন। যারা হজ আদায় করবে তারা নির্ধারিত স্থান থেকে হজের বিধানাবলি পূরণ করবে। এ ছাড়া অন্যরা এসব আমল বেশি বেশি করবে।
বেশি পরিমাণে তাকবির বলা :
এই ১০ দিনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখা; বিশেষ করে তাকবির বলা।
আমাদের মাঝে এই আমলটি প্রায় ছুটে গেছে। তাই এই দিনগুলোতে তাকবিরের প্রতি গুরুত্বারোপ করা চাই। ইবনে ওমর ও আবু হুরায়রা (রা.)-এর আমল ছিল, এই ১০ দিন তাকবির বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাঁদের তাকবিরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবির বলত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোনো আমল নেই। সুতরাং তোমরা এ সময় অধিক পরিমাণে তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) পাঠ করো। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৭৫৮)
রোজা রাখা :
এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমাল হচ্ছে, জিলহজের প্রথম ৯ দিন আল্লাহর জন্য রোজা রাখা। আহমদ ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর কোনো স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে রাসুল (সা.) জিলহজ মাসের ৯ দিন, আশুরার দিন এবং প্রতি মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন। মাসের প্রথম সোমবার এবং দুই বৃহস্পতিবার। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৪১৭)
আরাফাহর দিনের রোজার বিশেষ ফজিলত আলাদাভাবে এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আরাফাতের দিনের রোজা সম্পর্কে আশা করি যে তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৯)
নখ-চুল না কাটা :
এই ১০ দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে জিলহজের চাঁঁদ ওঠার পর নখ, চুল এবং শরীরের অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি কর্তন না করা; বরং কোরবানি দেওয়ার পর এগুলো পরিষ্কার করবে। এই আমল সবার জন্য প্রযোজ্য, চাই সে কোরবানি করুক বা না করুক। ঈসা ইবনে হিলাল আস-সাদাফি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ এক ব্যক্তিকে বললেন, ইয়াওমুল আজহাকে ঈদের দিন করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের জন্য এ দিনকে ঈদে পরিণত করেছেন। তাই তুমি তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ ছোট করবে এবং তোমার নাভির নিচের পশম মুড়ে ফেলবে। আল্লাহর নিকট এটাই তোমার পূর্ণ কোরবান। (তাহাবি শরিফ, হাদিস : ৬১৭২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
মো. আমিনুল ইসলাম :
আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আমরা এ ইবাদত কতটুকু ঠিকভাবে করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছি তা ভেবে দেখার বিষয়। কিংবা কীভাবে ইবাদত করলে আমরা তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারব তা আমাদের সবার জানা উচিত। সুরা মায়েদার ৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’সুরা হুজুরার ৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ সুতরাং যারা দুনিয়ার বুকে বিচার করেন তারা যেন অবশ্যই সুবিচার করেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।
সুরা বাকারার ৩ ও ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা গায়েবের ওপর ইমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং তিনি যা কিছু দান করেছেন তার থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে এবং তাদের রবের কাছ থেকে পাওয়া হেদায়েতের ওপর রয়েছে এরাই হচ্ছেন সফলকাম।’ সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নামাজ আদায়, জাকাত আদায়, গায়েবের ওপর ইমান আনা এবং সর্বোপরিভাবে আল্লাহ-প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালিত করা। ধৈর্যশীলরাও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় সত্য কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী তাদের পুরস্কার প্রায় অগণিত।’ সুরা জুমার আয়াত ১০। যারা তওবাকারী ও গুনাহ করার পর আল্লাহর স্মরণে লজ্জিত হন এবং ক্ষমা চান তারাও আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা। এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে বসে কিংবা এর দ্বারা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে এবং সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে?’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৩৫।
যারা আল্লাহর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসে তারাও দুনিয়ার বুকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিচিত। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার (নবীর) কথা মেনে চল, আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ আয়াত ৩১। সুবহানাল্লাহ! এ আয়াতটি কত মর্যাদাপূর্ণ।
আল্লাহর রসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে যে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া ও গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায় এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে। তাকওয়া অবলম্বনকারী ও মুত্তাকি হওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি।
সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলগুলো পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাও এতে কোনো নেকি নিহিত নেই, বরং বড় সত্য কাজ বা নেকির কাজ হচ্ছে ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং নবী-রসুলদের ওপর। আর সম্পদের ওপর তার ভালোবাসা থাকার পরও তা ব্যয় করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির ভিক্ষুক ও বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার কাজে। আর যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে। এরাই হচ্ছে প্রকৃত সত্যাশ্রয়ী ও তাকওয়া অবলম্ব^নকারী মানুষ।’ আয়াত ১৭৭।
– লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার
চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশের আকাশে আজ ৩০ মার্চ রবিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ৩১ মার্চ সোমবার সারা দেশে উদযাপিত হবে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ-উল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জেলা ঈদগাহ ময়দানে। এতে ইমামতি করবেন – জেলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সিবগাহতুল্লাহ নূর।
তবে, বৈরী আবহাওয়া থাকলে জেলা জামে মসজিদে নির্ধারিত সময়ে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদ জামাত পালনে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন।
এছাড়াও জেলা শহরের ট্যাংকের পর জামে মসজিদ, শেরপুর জামে মসজিদ, কাউতলী নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামের আউটার স্টেডিয়াম, ভাদুঘর ফাঁটা পুকুর ঈদগাহ ময়দান, ভাদুঘর শাহী মসজিদ প্রাঙ্গণ, পূর্বমেড্ডা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ, শরীফপুর ঈদগাহ মাঠ, মধ্যপাড়া ভাওয়াল দিঘীরপাড় মসজিদসহ জেলার ৭৮০টি ঈদগাহ ও ৫১০টি মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।