বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই

জাতীয়, 12 April 2023, 1080 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে ডেস্ক :
বর্তমান সময়ের আলোচিত ব্যক্তিত্ব গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওইয়ান্না ইলাইহি রাজিউন)। জানা যায় ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রীসহ স্বজন ও দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। পরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি স্যারের জীবনের অবসান ঘটেছে।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। আমরা জানাজা-দাফনের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।’

জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সেনানী ও সংগঠন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজানে এক মুসলিম পরিবারে তার জন্ম । ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া মানুষটি ব্যক্তিগত যশখ্যাতি ও সমৃদ্ধির জীবনকে পেছনে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাটির টানে দেশে ফিরে এসে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি নিরব লড়াই চালিয়ে যান।

অন্যদিকে দেশে রাজনীতির সুস্থধারা ফিরিয়ে আনতেও নিজের অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলেছেন বার বার। আর এসব কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার অবদানের কথা অজানা ছিল তাদের কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

বাংলাদেশের জন্য অন্তপ্রাণ এই মানুষটির বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। রাজধানী ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছেন তিনি।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে ভাস্কুলার সার্জারিতে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

জানা যায়, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর সেনানী ও সংগঠক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর লন্ডনে রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে এফআরসিএস পড়ার সময় শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ।

৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার প্রতিবাদে জনসম্মুখে পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলেন। তারপর বৃটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের’ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সংগ্রহ করেন ভারতীয় ভিসা।

দেশের টানে বিলেতের সুখ-সুবিধা ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে লন্ডন থেকে ভারতে এসে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন।

ভারত থেকে দেশে এসে যোগ দেন সম্মুখ সমরে। গেরিলা যোদ্ধা থেকে হয়ে উঠেন রণাঙ্গনের চিকিৎসক। যুদ্ধাহতদের জন্য খোলেন ফিল্ড হাসপাতাল।

মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ গড়তে নিজেকে নিয়োজিত করেন বৃটেনে প্রথম বাংলাদেশি সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ)’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়ে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, আমার পাশে আমার মা থাকবে না, সে দেশে থেকে লাভ আছে? আমার মা বাংলাদেশে ছিল, আমি বিলেতে ছিলাম। আমার মায়ের নির্দেশ ছিল দেশ রক্ষা করো। সে নির্দেশ মেনে আমরা তিন ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।

যুদ্ধে আহত মুক্তিকামী মানুষকে সেবা দিতে বন্ধু ডা. এমএ মবিনের সহায়তায় ডা. জাফরুল্লাহর গড়ে তোলা ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পেতেন যুদ্ধে আহতরা।

শুধু তাই নয়, তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন। যা দিয়ে তারা যুদ্ধে আহত রোগীদের সেবা করতেন। ত্রিপুরার ওই ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে অগণিত মুক্তিযোদ্ধা ফিরেছিলেন যুদ্ধের ময়দানে। তার এই অভূতপূর্ব সেবা পদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে বহনকারী যে হেলিকপ্টারটি হামলার শিকার হয়েছিল তাতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে Read more

ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় Read more

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল সংসদে পাস

জাতীয়, 24 January 2023, 1217 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে ডেস্ক :
সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের পৃথক গেজেট জারি করে এই পেনশন ব্যবস্থায় আনার সুযোগ বিলে রাখা হয়েছে। আজ ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপণ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

বিলটির বেশকিছু অসঙ্গতি তুলে ধরে বিরোধী দলীয় সদস্যরা সমালোচনা করেন। তারা বলেন, এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব বিষয়ে তারা সংশোধণের প্রস্তাব করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।

এই চাঁদার হার কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আইন হওয়ার পর সংশিতষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে। মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঁঞ্জিভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশনুসুবিধা পাবেন। সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ হবে ঐচ্ছিক।

বিলে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন। যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। বিলে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এই পেনশনুব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।

বিলে একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। এঁদের নিয়োগ করবে সরকার।

বিলে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বাস অব কমার্সের সভাপতি এর সদস্য হবেন। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।

বিলে বলা হয়েছে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত এক বা একাধিক তপসিলি ব্যাংক জাতীয় পেনশন তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে।

বিরোধী দলীয় সদস্যদের সমালোচনা

বিল পাসের আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘উদ্যোগটি চমৎকার হলেও এই পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ সরকারি চাকুরিজীবীরা যেভাবে পেনশন পান তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কিভাবে পাবে তা পরিস্কার নয়। এটি অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মত। এই বিলটি পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, “এই বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার৷’ মানুষের কাছ থেকে চাদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে। এই বিল পাস করার কোনো সুযোগ নেই।”

জাপার আরেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মত। গুঞ্জন আছে, সরকারের টাকার অভাব হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কী সরকার চলবে?’ টাকা পাচার, বিদেশে বাংলাদেশীদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন। বোবার শত্রু কম। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কানে কথা পৌঁছে কি না জানা নেই। তাঁর কোনো ফিডব্যাক, উদ্যোগ দেখা যায় না।’

জাপার আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে আইনটি ভাল। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট করে এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না। সরকার কী মুনাফা দেবে তা পরিস্কার নয়।’ তিনিও দাবি করেন, এই আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাপার আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মত। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে আর ব্যাংক দেদারছে টাকা বিদেশে পাচার করবে। ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো বারো ভুঁইয়াদের কাছে চলে গেছে। সব সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা।’ এসময় বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেখার কেউ নেই। যারা টাকা পাচার করছে তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’

বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এই বিলটি আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যাঁরা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন তাদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে।’

এমপিদের আজীবন পেনশনের দাবি

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু সাবেক সংসদ সদস্যদের আজীবন পেনশন স্কিম চালু করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অফিসের পিয়ন, গার্ডরা পেনশন পেয়ে থাকে। এমপিদের জন্য এমন ভাতার দাবিতে সংসদে আগেও আলোচনা হয়েছে। যারা একবার সংসদ সদস্য হিসেবে পদ পাবে, তারা যেন আজীবন একটা পেনশন স্কিম পায়।’

বিলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাঁর একজন শিক্ষক ৩৬ বছর চাকরি করার পরেও এখনও পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি। জনগণ পেনশনের টাকা জমা দিবে কিন্তু তারা তো অফিসের বারান্দাই চেনে না। এই টাকার নিরাপত্তা কী? নতুন বিলে সেই নিশ্চয়তা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

লাশের স্তূপের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ বাহিনী সংস্কারের বিষয়ে যা বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

জাতীয়, 1 September 2024, 117 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
জাতিসংঘের তদন্ত দলের প্রস্তাব অনুযায়ী পুলিশের সংস্কার আনা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আজ ১ সেপ্টেম্বর রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি পুলিশের যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। সেই ভিডিও দেখার পর পুলিশ বাহিনীকে কোনোভাবেই সংস্কার সম্ভব কি না, কিংবা মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন আসবে, আপনি যদি তাদের কার্যপরিধি দেখেন, সেখানে উল্লেখ আছে এই ঘটনা যাতে আর কখনো না ঘটে, সেজন্য সিকিউরিটি রিফর্মস কি কি নিতে হবে সেগুলোর ব্যাপারেও তারা আমাদেরকে বলবে। এছাড়া একটা পুলিশ কমিশনের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে যা ঘটে গেছে সেটা তো আমরা আনডু (ফিরিয়ে নেওয়া) করতে পারব না। যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ছোটবেলায় পড়েছিলাম দুষ্ট লোকেরা পুলিশ দেখলে ভয় পায়, কিন্তু আমরা এমন একটা সমাজে বাস করেছি যে ভালো লোকেরাই পুলিশকে দেখলে ভয় পায়। পুলিশ যে মানুষের বন্ধু-এটা প্রমাণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। পুলিশ হয় এই দলকে দিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে, না হয় ওই দলকে দিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ আর তাদের হয়ে ওঠা হয়নি। পুলিশের মধ্যেও কিন্তু পরিবর্তনের একটা বিশাল তাড়া আছে। তারা বুঝতে পারছে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে অনেক কাজ করতে হবে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, আপনি ১৮৬১ সালের ব্রিটিশ আমলের পুলিশ আইন দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ চালাচ্ছেন। ব্রিটিশরা কি বাংলাদেশে এসেছিল জনমুখী একটা পুলিশ দিতে? তা তো তারা আসেনি। সবকিছুই আলোচনা হয়েছে, পুলিশ কমিশন যখন হবে, যখন জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো আমরা পাব, সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে কেমন করে একটা জনমুখী পুলিশ গড়ে তুলতে পারি সেটাই আমাদের ইচ্ছা।

সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৬

জাতীয়, 4 March 2023, 969 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি বেসরকারি অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২০ জন।

নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন-সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা ফরিদ (৩৫), সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার শামসুল আলম (৫০), নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ছোট মনগড়া গ্রামের মিকি রেঙি লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫) এবং নোয়াখালীর সুধারাম থানার অলিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (৫০)। বাকিদের পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে।

দুর্ঘটনার কারণও তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। ৪ মার্চ শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার কদমরসুল ইউনিয়নের ছোট কুমিরা এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি সিলিন্ডারে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট রাত সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহতদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতরা হচ্ছেন-নূর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২), মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬) এবং জাহিদ হাসান (২৬)। আহত ১৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অনেকের হাত-পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহতদেরকে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আহত এবং নিহতদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসতে শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। খবর পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি উপস্থিত হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। এ সময় আহত এবং নিহত স্বজনদের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ক্ষত-বিক্ষত শরীরের লাশগুলো আনা হয় প্যাকেটে ভর্তি করে। এছাড়া গুরুতর আহতদের ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে। যাদের মধ্যে কারও চোখ, কারও মাথায়, কেউ আবার হাত-পায়ে গুরুতর আহত হয়।

এদিকে এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবিএম ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এই কমিটি গঠন করে দেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টটি অবস্থিত। এই প্লান্টে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে তা বিক্রি করা হয়। সেখানে অর্ধশত শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায় গ্যাস ভরার সময় এই প্লান্টে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে লেগে যায় আগুন। কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা বিস্ফোরণের সময় প্লান্টের ভেতরে ছিলেন। বিস্ফোরণে কারও কারও দেহের বিভিন্ন অংশ উড়ে যায়।

এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন থেকে বাঁচতে তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, বায়েজিদ ও সীতাকুণ্ড থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। হাতহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল ও আশপাশের হাসপাতালে প্রেরণ করে উদ্ধারকর্মীরা।

চমেক হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী পরিবেশ: শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালে অবস্থান করে দেখা যায় নিহতদের বীভৎস চিত্র। আর আহতদের দুর্বিষহ অবস্থা। স্বজনদের কেউ কেউ পাগলের মতো ছুটে প্রবেশ করতে দেখা যায় জরুরি বিভাগে। আবার কেউ স্বজনের খোঁজ নিতে ছুটতে দেখা যায় এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে।

এরই মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে আহতদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এলে সবাইকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে না গিয়ে সরাসরি চলে আসেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখা যায়, একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চল্লিশোর্ধ এক যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। ওই যুবকের মাথার খুলির একাংশ বিচ্ছিন্ন। তার হাতের কব্জি ছিল না। পেট থেকে বেরিয়ে আসে নাড়ি-ভুঁড়ি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন পরিদর্শনে আসেন।

রাত ৯টায় চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আহত ১৮ জনকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ১০ জন, ইএনটি ওয়ার্ডে ২ জন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, অবজারবেশনে ১ জন চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বজনের খোঁজ নিতে আসা মো. আরাফাত বলেন, ‘বিস্ফোরণের খবর পেয়ে আমার বাবার খোঁজে হাসপাতালে এসেছি। বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। তিনি ওই প্লান্টে কর্মরত ছিলেন।’

খবর পেয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান পরিদর্শনে এসে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য আইসিইউ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ কাজে লাগাব।’

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি: সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হোসেনকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই সময় তিনি ৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন। ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে ঘটনার কারণ উদঘাটন করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়। চমেক হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য একটি বুথ খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০২২ সালের ৪ জুন রাতে সীমা অক্সিজেন প্লান্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ২০০ লোক। ওই ঘটনার পর একই এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্টের দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা এই শিল্প এলাকার মানুষকে আবারও ভাবিয়ে তুলেছে।

মোটরসাইকেলের জন্য মহাসড়কে পৃথক লেন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

জাতীয়, 9 May 2023, 921 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের প্রত্যেক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য পৃথক লেন চেয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘বিশেষ’ ব্যক্তির অপরাধের কারণে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ না করারও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ ৯ মে মঙ্গলবার পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটে এ সম্পূরক আবেদন করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার, ইয়ারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খোন্দকার।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, আবু হানিফ হৃদয় নামের যাত্রাবাড়ীর এক বাসিন্দা এ রিট করেন। এর আগেও তিনি এ সংক্রান্ত একটি রিট করেছিলেন। যেটি গত ১৫ জানুয়ারি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন হাইকোর্ট।

রিটে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। এরপর নতুন করে তিনি একই বিষয়ে আবার রিট করেন।

ওই রিট বিচারাধীন অবস্থায় গত ২২ এপ্রিল উদযাপিত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পদ্মা সেতু মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় সরকার যা এখনও কার্যকর রয়েছে। এ পর্যায়ে আগের রিটের সঙ্গে রিটকারী হানিফ হৃদয় হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন দায়ের করেন।

গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। পরদিন ২৬ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে এদিন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণে পরে এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ২৭ জুন ভোর ৬টা থেকে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় মোটরসাইকেল চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়।

শপথ নিলেন নতুন ৭ প্রতিমন্ত্রী

জাতীয়, 1 March 2024, 381 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মন্ত্রিসভায় আরও ৭ জন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হলেন। আজ ১ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

আগামী ৩ মার্চ রবিবার রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় অনুষ্ঠানটি ছোট পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।

শপথ নেওয়া নতুন প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার, রাজশাহী-৫ আসনের আবদুল ওয়াদুদ, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের চার সংসদ সদস্য রোকেয়া সুলতানা, শামসুন নাহার, ওয়াশিকা আয়শা খান এবং নাহিদ ইজহার খান।

এর আগে আজই ৭ জন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাদের টেলিফোনে বিষয়টি অবগত করা হয়। সরকারি পরিবহন পুল থেকে নতুন গাড়িও তাদের নিজ নিজ বাসায় পাঠানো হয়। নতুনদের নিয়ে মন্ত্রিসভার আকার গলো ৪৪ সদস্যের।

গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গত ১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন।