চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগর উপজেলায় কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলনে করে অন্যত্র সরিয়ে জমির শ্রেণি বদল করার অপরাধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে দুজন কে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান ও মাটি কাটার তিনটি এক্সকাভেটরের ব্যাটারি জব্দ করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, গোপন সংবাদের প্রেক্ষিতে গতকাল দিনব্যাপী বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ এর নির্দেশনায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান খান শাওন উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের নিদারাবাদ মৌজায় কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের অপরাধে মোঃ রোশন মিয়া ছেলে মোঃ সুহেল মিয়া ও একই উপজেলার চর ইসলামপুর ইউনিয়নের চর রাজাবাড়ি মৌজায় মাটি উত্তোলনের অপরাধে মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে সাচ্চু মিয়া কে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫ (১) ধারায় ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এসময় মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত ৩ টি এক্সকাভেটরের ৬ টি ব্যাটারি জব্দ করে নিয়মিত আইনে মামলা দায়েরের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা মাটি কেটে জমির শ্রেণি বদল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মামলা দায়ের করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে বিজয়নগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই অভিযান চলমান থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে ২২ কেজি গাঁজাসহ মোজাম্মেল হোসেন (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ ১৮ আগস্ট শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের ভাটিকালিসীমা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মাদকদ্রব্য বহনকাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত মোজাম্মেল হোসেন বিজয়নগর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুপুরে চান্দুরা ইউনিয়নের ভাটিকালিসীমা গ্রামের জিলানী ব্রিক ফিল্ডের সামনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে অটোরিকসাসহ মোজাম্মেল হোসেনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগর উপজেলায় বাবার হাতে এনায়েতুল (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ১ সেপ্টেম্বর রবিবার মধ্যরাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন (৫৫) কে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসহাক মোল্লা গণমাধ্যমকে জানান, নিহত এনায়েতুল মাদকাসক্ত ছিল। সে মাদকের টাকার জন্যে পরিবারের সবাইকে চাপ দিয়ে সংসারে অশান্তি তৈরি করতো। টাকা না পেলে চুরিও করতো। এই অবস্থায় তার বাবা তাকে বিদেশ পাঠায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও সে থাকেনি। দেশে ফিরে আবারও নেশার টাকার জন্যে উৎপাত শুরু করে। এনিয়ে পরিবারে অশান্তি চলছিল।
রবিবার রাতে এনায়েত ঘরে নেশার টাকার জন্যে ঝগড়া করে। এসময় পিতা পুত্রের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে এরই একপর্যায়ে এনায়েতের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। এতে গুরুতর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে রাত দুইটার দিকে মারা যায়।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর নিহতের পিতাকে আটক করা হয়েছে। সকালে মরদেহ জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে ময়নাতদন্তের জন্যে প্রেরণ করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে সংস্কার করা সড়কের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এতে করে ক্ষোভে হাতে টেনে সড়কের কার্পেটিং তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ২৪ জুন মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের অলিপুর মোড় হতে কচুয়ামুড়া পযর্ন্ত ১ কিলোমিটার কার্পেটিং কাজ এর পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এতে করে সড়ক মেরামতের অনিয়মের অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ও ছবি তুলে পোস্ট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কারের অনিয়মের খবরে সরেজমিন পরিদর্শনে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। পরিদর্শনকালে সড়কে মেরামত কাজ চললেও সেখানে এলজিইডির কোন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে পাওয়া যায়নি। শ্রমিকরা তারা নিজেদের মতো করে ঢালাইয়ের কাজ করে যাচ্ছেন ৷ এদিকে অলিপুর মোড়ে সংলগ্ন সড়কে পিচ ঢালাই প্রায় ১ সপ্তাহ পূর্বে দিলেও বর্তমানে সড়কের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সড়কটি মেরামত এর কাজ করছেন মেসার্স রুপালী ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সড়কের এমন দৃশ্য দেখে সাংবাদিকরা মুঠোফোনে ভিডিও ও ছবি ধারণ করতে চাইলে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয়। এক পর্যায়ে সড়ক সংস্কার নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে মেরামত করায় স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদে গর্জে উঠে।
সড়কের অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রাজ্জাককে মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি জানান, সড়কের পিচ মাত্র দেয়া হয়েছে। তাই উঠে যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, সড়কে পিচ ঢালাই দিয়েছে ৬ দিন পার হয়েছে। কাজের গুনগত মান না থাকায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মো. আশিকুর রহমান ভূঞা বলেন, সড়কে মেরামত অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমি পরিদর্শন করেছি। কাজে অনেক অনিয়ম হয়েছে। কাজ সংশোধনের জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কাজ পুনরায় করার পর ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ভারতীয় সীমান্তঘেষা বিজয়নগর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক ও নৈর্সগিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিজয়নগর উপজেলার টিলা ভূমির মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের ফলই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই বিজয়নগরে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে প্রতি বছর এই উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ফল বিক্রি করা হয়।
উৎপাদিত দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন। বিদেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদি। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন, ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচু, ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টা, ৪২ হেক্টর জমিতে পেয়ারা ও ১৬ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু ও প্রায় ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি করা হয়। প্রায় ১ কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পেয়ারা প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা ও প্রায় ১ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় এখানকার ধানি জমি গুলোকেও লিচু বাগানে পরিনত করতে থাকেন চাষীরা।
চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার ৪২০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে এই উপজেলায়। এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর। বিজয়নগরে চাষ করা হয় পাঁচ ধরনের লিচ। এর মধ্যে রয়েছে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু।
বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় রয়েছে এই লিচুর বাগানগুলি। এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১৯ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলার কামালমুড়া গ্রামের মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, তার বাগানে থাকা ৭০ টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকা বিক্রি করছেন। উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের বাগান মালিক কাউছার ভূইয়া বলেন, তার ৪টি বাগানে থাকা ১৭০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর প্রায় ১২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন।
উপজেলার মহেশপুর গ্রামের লিচুর চাষী মাসুদুল হাসান বলেন, তার বাগানে থাকা ৬০টি গাছের লিচু তিনি এ বছর ৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন।
২০১৫ সাল থেকে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে সবুজ মাল্টার চাষ শুরু হয়। গত বছর উপজেলার ৬৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় গত ২০১৬ সাল থেকে বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপন করেন চাষীরা। শুরুতে রসালো এই ফলটির ফলন নিয়ে চাষীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ থাকলে খরচ কম এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাল্টার প্রতি আগ্রহ বাড়ে চাষীদের।
বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে ৭৫৪টি মাল্টার বাগান। গত বছর বাগানগুলোতে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী গ্রামের মালটা বাগানের মালিক মোঃ সোহাগ ভূইয়া জানান, তার বাগানে ১২০টি মালটা গাছ আছে। গত বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রায় দুইশত বছর আগে বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষ শুরু হয়। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় আস্তে আস্তে কাঁঠাল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয় এখানকার চাষীরা। চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমোড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁও এবং পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঠাল বাগান। চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা হয়েছে।
গত দুই বছর ধরে বিজয়নগরে লটকনের চাষ হলেও চলতি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর উপজেলার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ করা হয়। উপজেলার চম্পকনগর, মেরাশানি, সিঙ্গারবিল ও পাহাড়পুর এলাকায় রয়েছে লটকনের বাগান। উপজেলার ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হলেও শুধু উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান।
মেরাশানী গ্রামের লটকন চাষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭/৮ বছর আগে তিনি ময়মনসিংহ জেলা থেকে ১০০ লটকনের চারা এনে একটি বাগান করি। প্রথমে যখন লকটকের বাগান করি এলাকার অনেকেই এনিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। গত ২ বছর ধরে কিছু কিছু গাছে লটকন ধরা শুরু করলেও এবছর সব গাছে লটকন ধরেছে। তিনি বলেন, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার উপর লটকন বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বানিজ্যিকভাবে আমি লটকনের চাষ করবো।
উপজেলার সিঙ্গার বিল গ্রামের লটকন বাগানের মালিক জাকির মিয়া বলেন, এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে পাইকারা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার বাগান থেকে তিনি ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।
একই এলাকার আবদুল হাসিম বলেন, তার বাগানে ১০০টি লটকন গাছ আছে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে লটকন নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাব্বির আহমেদ বলেন, বিজয়নগরের মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপকারি। এই বছর বাণিজ্যিকভাবে উপজেলায় লকটন চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ২০/২৫ জন চাষী ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশাকরি এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন চাষীরা।
তিনি বলেন, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন “সি” তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম।
উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। “মিয়াজাকি” আম গাছও আছে তাঁর বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ হাদিউল ইসলাম সৃজন বলেন, ফলের জন্য উর্বর ভূমি বিজয়নগর উপজেলা। দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সাধ্যমত সব ধরণের সহযোগিতা করা হয় চাষিদেরকে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, ফলের স্বর্গ রাজ্য হিসেবে পরিচিত বিজয়নগর উপজেলা। এই উপজেলায় দেশীয় ফল কাঁঠাল, আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, বড়ুই (বল সুন্দরী), কমলা ও লটকন উৎপাদরের পাশাপাশি বিদেশী ফল আপেল, আঙ্গুর, ড্রাগন ইত্যাদিও চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে “মিয়াজাকি” আম। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম বলা হয়। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে সূর্যডিম আম চাষেই গুরুত্ব দিচ্ছি । এই আমটিকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে বাজারজাত করার জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, আমরা চাষীদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকি। প্রতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রয় করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুখিনা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূ কেঁরি পোঁকা মারার ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সুখিনার শ্বশুর মৃত্যুর কথা শুনে তার লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখেই পালিয়েছে। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুখিনার লাশ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। সুখিনা চম্পকনগর ইউনিয়নের সাটিরপাড়া এলাকার কাইয়ুম মিয়ার মেয়ে ও সৌদি আরব প্রবাসী সাইদুল মিয়ার স্ত্রী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সুখিনা শুক্রবার সকালে স্বামীর সাথে অভিমান করে কেঁরি পোঁকা মারার ট্যাবলেট (চালের পোকা দমনের একজাতীয় ওষুধ) খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। পরে তার শ্বশুর আব্বাস আলী সুখিনাকে প্রথমে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেন। ভর্তির কিছুক্ষণ পর সুখিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর খবর শুনে আব্বাস আলী তার পুত্রবধূ সুখিনার লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে পালিয়ে যান।
সুখিনার মা সবজান বলেন, ১০ বছর আগে উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের বুল্লা গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে সাইদুল মিয়া তার মেয়ে সুখিনাকে প্রেমে ফাসিয়ে বিয়ে করেন। তারপর ৫ লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে সাইদুলকে সৌদি আরব পাঠান। সুখিনাকে বিয়ের পর থেকে নানান ভাবে অত্যাচার করেন সাইদুল। সাইদুল আমার মেয়েকে কোন কিছুতেই স্বাধীনতা দিতো না। আজকে (গত শুক্রবার) সাইদুলের কারণে আত্মহত্যা করেছে। তিনি মেয়ের মৃত্যুর সঠিক বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কেঁরি পোঁকা মারার ট্যাবলেট খেয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে। লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। অভিযোগ প্রেক্ষিতে আইনী ব্যবস্থা নিবো।