নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে ইইউ পর্যবেক্ষক দল আসবে: রাষ্ট্রদূত

জাতীয়, 9 May 2023, 1500 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল আসবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় ইইউ জোটের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।

banner

আজ ৯ মে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইউরোপ ডে উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে ইইউ। স্বাধীন ওই বিশেষজ্ঞ দল জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসবে এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে তাদের মতামত ইইউর হাই রিপ্রেজেন্টিভের কাছে জমা দেবেন। নির্বাচনের সময়ে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।

হোয়াইটলি বলেন, নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য যে বিশেষজ্ঞ দল আসবে তারা ইইউর কোনো কর্মকর্তা নয়। বিষেশজ্ঞ দল এখানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিস্থিতি দেখবে। তারা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে বসবে। তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে।

হোয়াইটলি আরো বলেন, ‘আমরা (ইইউ) নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাতে প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। পর্যবেক্ষক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা যাতে না হয়, তার রিাপত্তা হিসাবে এটা দরকার ছিল।’

ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এখনই বলতে পারছি না যে, অমুক দল অংশগ্রহণ করল বা করল না এবং সেটির ওপর পর্যবেক্ষক পাঠানো নির্ভর করছে।’

বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি কোনো সহিংসতা ইইউ চায় বলেও জানান রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি।

বিএনপির সঙ্গে ইইউর নির্বাচন নিয়ে আলাপের বিষয়ে হোয়াইটলি বলেন, ‘আমরা শুধু বিএনপির সঙ্গে বসিনি, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসেছি, আলাপ করেছি। আমরা সবার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছি। বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচন নিয়ে যা বলে, সেগুলো আমাদের কাছে তুলে ধরেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেন, ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

গাজীপুরে মামা হত্যার আসামি ভাগিনা গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : গাজীপুরে আনিসুর রহমান হত্যার মামলার আসামি ভাগিনা Read more

সদর মডেল থানায় যোগদান করেই কঠোর…

সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য : আজহারুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

চলারপথে রিপোর্ট : ফ্ল্যাট বাসা থেকে শরীর মীর (৪০) নামের Read more

নাসিরনগরে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে আটক

চলারপথে রিপোর্ট : নাসিরনগরে আলম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যবসায়ী Read more

আখাউড়ায় খেলাফত মজলিসের প্রার্থীর মতবিনিময়

মোঃ ইসমাইল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী Read more

৫০ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ৫০ কেজি গাঁজা ও ১টি সিএনজি উদ্ধারসহ Read more

কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের…

অনলাইন ডেস্ক : বর্ষার শেষপ্রহরে নেমে আসা অবিরাম বৃষ্টি ও Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নতুন ওসি আজহারুল…

চলারপথে রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে Read more

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে…

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ঐতিহাসিক Read more

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : কুমিল্লার দাউদকান্দি বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) Read more

মেক্সিকোতে যাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১০জন…

অনলাইন ডেস্ক : মেক্সিকোর আটলাকোমুলকো শহরে একটি পণ্যবাহী ট্রেন ও Read more

কানাডায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

মুমিনুল হক : কানাডার টরেন্টোতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। Read more

এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখা যাবে না: হাইকোর্ট

জাতীয়, 12 March 2025, 257 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া নামের আগে কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ ১২ মার্চ বুধবার বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি সাথীকা হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

banner

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া আজ পর্যন্ত যারা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আগামীকাল ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে আইন ভঙ্গ করে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত

জাতীয়, 18 January 2024, 852 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সমগ্র জেলায় পৌষের শেষ দিক থেকে শীত জেঁকে বসেছে। শীতের দাপটে যেখানে মানুষ থেকে শুরু করে প্রানীকুল তটস্ত।

banner

সেখানে শীতের পাখায় ভর দিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও মলাদহ বিলে অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখিপ্রেমীরা দল বেঁধে আসছেন পাখি দেখতে ঘাটাইল উপজেলার মলাদহ বিলে। বিলটির অবস্থান উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের সবুজ শ্যামল এক গ্রাম ডাকিয়া পটল। এ গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে বিশাল এক জলাধার। নাম তার মলাদহ। এ ছাড়া রয়েছে আরো ছোট কয়েকটি বিল।

শীতকাল এলেই এই মলাদহ বিল অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে। বিলটি পাখির কারণে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, উড়ে চলা, নীরবে বসে থাকা-মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলে মুহুর্তেই। তাই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন একনজর পাখি দেখার জন্য এখানে আসেন।

এখানে উল্লেখযোগ্য পাখিগুলো হচ্ছে বালিহাঁস, পাতিহাঁস, সারস, পানকৌড়ি, নারিলা ও ডাহুক। চারদিকে সবুজ শ্যামলের সমারোহে বিলগুলো। মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিলবেষ্টিত ডাকিয়া পটল গ্রাম। সকালে এ গ্রামের বিলের কচুরিপানার মাঝে জলকেলিতে মাতে অতিথি পাখি। আর বিকেলের সোনালি রোদে গ্রামের গাছের ডালে ডালে পানকৌড়িসহ বিবিভন্ন পাখির পালক জ্বলজ্বল করে। এ গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে শত ব্যস্ততার মাঝেও পাখি দেখে অনেক পথচারি একটু দাঁড়িয়ে চোখ জুড়িয়ে নেন।

স্কুলশিক্ষক বাবর হোসেন জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের মৌসুম চলে গেলে পাখি যখন চলে যায় তখন বুকটা ফাঁকা লাগে। আবার যখন শীতে ফিরে আসে তখন বুক ভরে যায়। পাখিদের সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। এখানে পাখি আসে বলেই প্রতিদিন অনেক পাখিপ্রেমী দেখতে আসেন।

পাখিপ্রেমী আব্দুল মোতাকাব্বির স্বাধীন বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের দেশে আসা অতিথি পাখি যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

আনেহলা ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখে। তাই পাখিদের প্রতি সকলকে সহনশীল হতে হবে। আমার ইউনিয়নের যেসব স্থানে অতিথি পাখি আসছে, সেখানে যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য পরিষদের পক্ষ থেকে নজরদারি রয়েছে।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জাফরুল হাসান রিপন বলেন, ‘পাখি প্রকৃতির অলংকার। এ অলংকার ধ্বংস করা মানে পরিবেশ ধ্বংস করা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণ ক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে। অতিথি পাখিরা যেন ‘মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওর বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে তার ব্যবস্থা অবশ্যই আমাদের করতে হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান দৈনিক যায়যায়দিন কে জানান, ‘প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণ ক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশ ক্রমে ক্রমে অতিথি পাখির জন্য ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুধু আইন দিয়েই পাখি শিকার বন্ধ করা যাবে না, এ জন্য প্রয়োজন সবার সচেতনতা।’

অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ

জাতীয়, 9 September 2024, 557 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ রাখা যাবে না এবং ক্রেতাদেরকে দেওয়া যাবে না। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা এর সম্মুখে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের ক্রয়ের জন্য রাখা হবে। এখানে তরুণ বা শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হবে।

banner

তিনি বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ১ অক্টোবর থেকে শপিং ব্যাগ পরিহারের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার হবে। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

আজ ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় তার বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে সকল সুপারশপের সঙ্গে সভা করে পাটের শপিং ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরিবেশ অধিদপ্তর ইএসডিও’র সঙ্গে মিলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিকল্প পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি পাট বা বস্ত্রের ব্যাগের উৎপাদনকারীদের নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করবে। মেলায় সুপার শপের কর্তৃপক্ষ এবং উৎপাদনকারীরা নিজেদের চাহিদা এবং সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করতে পারবে।

হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে জনপদ

জাতীয়, 4 January 2023, 1587 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
ভোর থেকে কুয়াশার প্রকোপ কম থাকলেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। একদিকে অধরা সূর্য অন্যদিকে উত্তরের বাতাস- সব মিলিয়ে শীতে জবুথবু ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের সব জেলার জনপদের মানুষজন। গত দুই দিন ধরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা সারাদেশ। তাপমাত্রার পারদ নামছে। পৌষের শেষার্ধে কনকনে ঠান্ডায় শীতার্ত হয়ে পড়েছে প্রাণীকুল। সারাদিন সূর্যের দেখা নেই।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী তিন দিন শীতের দাপট অব্যাহত থাকবে। এরপর কিছুটা কমে আবার নামবে। থেমে থেমে এভাবেই জানুয়ারি মাসটাই শীতে পার হয়ে যাবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া কখনও উঞ্চ, কখনও আর্দ্র এবং এর বাইরে সমভাবাপন্ন। সমুদ্র, পাহাড়, নদ-নদী, সবুজ-বনানী ও সমতলভূমির কারণে এখানকার আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয় না। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনে সাম্প্রতিক সময়ে এতে পরিবর্তন ঘটেছে। এখন অসময়ে বর্ষা খরা ও শীতের প্রবণতা বাড়ছে। এখনকার আবহাওয়া পঞ্জিকার হিসাব মানছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে শীতের তীব্রতা থাকায় বিপাকে পড়ছেন কর্মজীবীসহ সাধরাণ মানুষেরা। বিশেষ করে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শীতের কারণে মাঠ-ঘাট প্রায় ফাঁকা। ফসলের ক্ষেতে কাজ করতে তেমন একটা দেখা যায়নি দিনমজুরদের। রিকশাভ্যান-ইজিবাইকের সংখ্যাও কম রয়েছে রাস্তায়। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলার তৃণমূল পর্যায়ের হাট-বাজারেও লোক সমাগম কম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কালিসীমা এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মামুন মিয়া বলেন, শীতের কারণে আজ কাজে যেতে পারিনি। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর। আমাদের চেয়ে বয়স্করা আরও বেশি কষ্টে আছেন। হাড়ভাঙা শীতে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
এদিকে শীতের কারণে জেলায় শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধ বিক্রি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শেরপুরের ওষুধের দোকানি মো. সানাউল হক বলেন, বিকেল হলেই দোকানে শিশুদের ঠাণ্ডা-কাঁশির ওষুধ নিতে ভিড় পড়ে যায় মায়েদের। গত কয়েক দিনে ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধ বিক্রি বেড়েছে।
উত্তরের হিমেল বাতাস আর মেঘে ঢাকা সূর্য। দুইয়ে মিলে কনকনে শীত বিরাজ করছে প্রকৃতিতে। আর এই কনকনে ঠাণ্ডায় জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের জন সাধারণ আর ছিন্নমূল মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এদিকে এই বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করতে থাকলে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে বলে জানান খেটে খাওয়া মানুষেরা।
ঢাকার আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসের একজন সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে বর্ষা মওসুম যাত্রাবিরতি দিলে নভেম্বর মাস থেকে উত্তরে বায়ুপ্রবাহ শুরু হয়। হিসাবে তখন থেকেই বাতাসে ঠান্ডার প্রভাব বাড়তে থাকে। কিন্তু শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়- তার বেশ পরে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি। বর্ষাকালে ২৬ দশমিক ৭ এবং শীতে ১৮ দশমিক ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার দিনগত শেষরাতে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৬ ও সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে এবং আট ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ছয় থেকে আট ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেটিকে মাঝারি এবং তারও নিচে নেমে এলে তখন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে শীত সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ বলতে নারাজ আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগের উপ-পরিচালক বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান দুপুরে বলছিলেন, চলতি শীতের বড় কারণ কুয়াশা। তিনি বলছিলেন, শীতকালে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে শীতল থাকে। রাত-দিনে সময়ের ব্যবধান বেড়ে যায়। বাতাসে ভেসে বেড়ানো জলীয়বাষ্পকণা ঘনীভূত হয়ে ধূলিকণার সাথে মিশে কুয়াশা তৈরি করে। এই কুয়াশা সূর্যকিরণকে ভূপৃষ্ঠে নামতে বাধা দেয়। দিনের তাপমাত্রা কমে যায়। আর এতে করে ঠান্ডার অনুভূতি তীব্র হয়।
আগামী তিন দিন কুয়াশার তীব্রতায় শীতের পূর্বাভাস জানিয়ে হাফিজুর রহমান জানান, এখন সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে। ঢাকা শহরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেখানে ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়া, সেখানে শেষরাতের তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল প্রায় একই রকম শীতল থাকছে। তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার বড় কারণ এটাই। গত দুই দিন ধরে কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা এক কিলোমিটারেরও নিচে নেমে এসেছে। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সবধরনের যান্ত্রিক কিংবা অযান্ত্রিক বাহন চলাচল সীমিত হয়ে গেছে।
১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্ববাংলার ঢাকায় আবহাওয়া অফিস চালু হয়। পুরনো রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ৪০ বছর পর ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে বিরাজমান জলীয়বাষ্পকনা উষ্ণতার কারণে বরফে পরিণত হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে এখানে শীতের তীব্রতা সত্ত্বেও পেঁজা তুলোর মতো বরফ জমে না। ১৯৬৮ সালে সিলেট অঞ্চলে পানির উপরিভাগে পেঁয়াজের খোসার মতো পাতলা আবরণ তৈরি হয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ঢাকায় ১৯৬৪ সালের ১৮ ও ২০ ফেব্রুয়ারি তাপমাত্রা নেমেছিল ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আবহাওয়া বিভাগের কাছে সংরক্ষিত সর্বনিম্ন রেকর্ড।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলো থেকে তাপমাত্রার যে রেকর্ড জানা গেছে তাতে ঢাকায় সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১, টাঙ্গাইলে ১৮ দশমিক ৫, রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ২ এবং সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৯, রংপুরে সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৪ সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১৩, সিলেটে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ১২, চট্টগ্রামে ২৫ দশমিক ৭ ও ১৪ দশমিক ৯, খুলনায় ২১ দশমিক ৫ ও ১৩ দশমিক ৫, যশোরে ১৭ দশমিক ৪ ও ১৪, বরিশালে ২৫ দশমিক ৪ ও ১৩ দশমিক ১, কুমিল্লায় ২৬ দশমিক ৩ ও ১৫, নোয়াখালীতে ২৫ দশমিক ৩ ও ১৫ দশমিক ৫, চাঁদপুরে ২৪ দশমিক ২ ও ১৫ দশমিক ৪, কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ২৭ ও সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। কোথাও বৃষ্টিপাতের খবর নেই। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে।

জলবায়ু তহবিলের ১০০ কোটি ডলার পাচ্ছি: একনেকে প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 12 September 2023, 1036 Views,
ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :
বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার পাচ্ছে। এ অর্থ শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যাবে। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে সুন্দরবন রক্ষা প্রকল্প। এ-সংক্রান্ত প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা ডেলটা প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বয় করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

banner

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে আজ ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এসব নির্দেশনা ও পরামর্শ দেন তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা এবং একনেক বৈঠকের অন্যান্য বিষয় তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জলবায়ু তহবিল নিয়ে আলোচনা হয়। ১০০ কোটি ডলার পাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু সম্পর্কিত ‘উচিত প্রকল্প’ করে তাদের বুঝিয়ে অর্থ আনতে হবে। এ অর্থ পেতে কোনো নির্ধারিত সময়সীমা নেই। তবে দুই-তিন বছরের মধ্যে যখন যা লাগে, তারা দেবে। ডেলটা প্ল্যানের সঙ্গে মিল রেখে প্রকল্প নিতে হবে, যাতে একই ধরনের একাধিক প্রকল্প না থাকে।

প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনা সম্পর্কে এম এ মান্নান জানান, বন্যার ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনীয় পয়েন্টে আরও বেশি কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে পানির চাপ বেশি, সেখানে নতুন করে কালভার্ট নির্মাণ করা হলে আর সড়ক ভাঙবে না। সেতু নির্মাণে উচ্চতার বিষয়ে আবারও সতর্ক করেছেন তিনি। সেতুর নকশার বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন, যাতে প্রকল্পের মাঝপথে সেতু ভাঙতে না হয়। এ ছাড়া বাণিজ্য-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আগস্টে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ডিম-মুরগির কারণে

আগস্টে খাদ্যপণ্যে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগস্টে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির কারণ ছিল ডিম ও মুরগি। এ দুটি পণ্যের দর বৃদ্ধির প্রভাবে এত বেশি মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে স্বাভাবিক মূল্যস্ফীতিতে ফিরে আসা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতির চক্রে পড়েছি আমরা।’ প্রতি বছরই আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। নভেম্বর থেকে আবার কমে আসে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার কারণেও মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক কমানো, কৃষিতে ভর্তুকি, সুদের হার বাড়ানোসহ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে যায়নি।’

১৯ প্রকল্প অনুমোদন

একনেকে বিভিন্ন খাতের ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর ৪৫০ কোটি এবং বাকি ১২ হাজার ৬০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব জোগান।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১২টি নতুন এবং সাতটি সংশোধিত। এ ছাড়া নতুন করে ব্যয় না বাড়িয়ে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একটি প্রকল্পের। সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে মোংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে। এ অর্থের ৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন সরকার। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী ডিসেম্বরে কাজ শুরু এবং ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।