চলারপথে রিপোর্ট :
মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে প্রায় এক মাস ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। কিন্তু নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের কাজ।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন। এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তন হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের মেঘনা নদীর অংশ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম করে মাসখানেক ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা অংশ থেকেও নিয়মিত বালু তোলা হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ছে উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের ওপর।
জানা গেছে, এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ভৈরব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোশারফ হোসেন মিন্টু ও সেখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন মুসা। যদিও বালু উত্তোলনের জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের অনুমতি নেই। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝখানে ও কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিন বসানো। এর প্রতিটি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একেকটি বাল্কহেড। প্রতিটি বোটে ১২/১৩ জন লোকের পাহারা। বেলা ১২টার দিকে দেখা গেল মেন্দিপুর এলাকার মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দেদারচ্ছে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্ডহেডের মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তারা নড়েচড়ে বসে। ছবি তুললে তাদের অনেককেই ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের পিছু নিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। তারা তাদের স্পিডবোট দিয়ে সাংবাদিকদের স্পিডবোটকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরক্ষণেই প্রভাবশালী মহলটি সাময়িক সময়ের জন্য বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ করে দেয়।
সরাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। আমাদের গ্রাম নদী গ্রাস করে নিচ্ছে।
প্রবীণ বাসিন্দা নিজাম মিয়া বলেন, আমার তিন কানি জমি ছিল। এর মধ্যে দুই কানি জমির মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। আমি ছাড়াও অন্যান্য মানুষের ফসলি জমিও চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জীবনটা বাঁচব।
আজব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কাজী লিয়াকত মিয়া বলেন, নদীটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করতাম। ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।
নদীর পাড়েই দু’তলা ভবনের মালিক জুনায়েদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভেঙে চলছে। মূলত অবাধে বালু তোলার কারণে সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন জানে আমাদের ভবন পানিতে চলে যায়। প্রভাবশালী চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আবুল বাশার বলেন, ‘ভৈরবের মুসা মিয়ার (মোশারফ হোসেন) নেতৃত্বে অনুমতি ছাড়াই এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টু মোবাইল ফোন বলেন, ‘বৈশাখ মাস পর্যন্ত আমি নদী ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করেছি। আমার সঙ্গে ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনও ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। এখন কে বা কারা বালু তুলছে জানি না। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ড্রেজারগুলো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বালু তোলে। আমার কাজের সময় ব্যবহার করা একই রকম ড্রেজার যদি তুলে থাকে তাহলে তো আমার কিছুর করার নেই। ’
এ বিষয়ে ভৈরবের আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুসার মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। মন্ত্রণালয় থেকেও এই বিষয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। শুনেছি কখনো তারা মেন্দিপুর আবার কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অংশে বালু তুলে। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও কাজ শেষ। বালু উত্তোলনকারীরা আসলে আমাদের কথা বলে সুবিধা নিতে চায়। যারা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা জয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমানের সঙ্গে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারিভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বর্তমানে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভাঙন রোধে সরাইল, পানিশ্বরসহ বিভিন্ন ভাঙনপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সম্ভাব্যতা প্রকল্পের কাজ চলছে। সম্ভাব্যতা প্রকল্পের সুপারিশের আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে ওই অঞ্চলগুলোতে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে ৪ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে সরাইল থানা পুলিশ। আজ ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নারীসহ ৪ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তারা হল সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের ধামাউড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে মতর আলী (৭৭) ও একই গ্রামের আহাদ আলীর স্ত্রী জোহেরা খাতুন (৭৬)।
দুইজনের স্বজনরা জানান পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত সাতদিন আগে তাদের প্রতিবেশীদের সাথে একটি মারামারি হয়ে আহত হয়েছিল, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেইনি।
কালীকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দিপাড়া গ্রামের মৃত রন্জিত শুক্ল দাসের ছেলর অজয় শুক্ল দাস (৪২) ও শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের মিলন মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৪৫)। বাকি দুইজন নিহতদের ঘটনার সম্পর্কে কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নী।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল হাসান বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঠিক কারণ জানা যায়নি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক নেতা রিয়াজ উদ্দিন জামির মৃত্যুতে সরাইল প্রেসক্লাবে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ১০ মার্চ শুক্রবার বাদ আছর সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান বাবুলের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন সরাইল প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কামরুজ্জামান ইউসুফ, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল করিম, সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রিপন, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ সামসুল আরেফিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক দীপক কুমার দেবনাথ, উপজেলা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেলু, সরাইল উপজেলা উদীচী শিল্পি গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক সুমন পারভেজ, ন্যাপ নেতা আব্দুল জব্বার প্রমুখ।আলোচনা সভা শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ আইয়ুব খান।
সভায় সাংবাদিক নেতা রিয়াজ উদ্দিন জামির মৃত্যুতে সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করার পাশাপাশি শোক সন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। সাংবাদিক নেতা রিয়াজ উদ্দিন জামির মৃত্যুতে সরাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়।
এদিকে প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী মাস্টারের অসুস্থতায় দোয়া করাসহ প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিকদের সার্বিক মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
সভা শেষে উপস্থিত সকল সাংবাদিকবৃন্দ প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী মাস্টারের বাসায় তাঁকে দেখতে যান ও সার্বিক খোঁজ খবর নেন।
সরাইল প্রতিনিধি :
সরাইলে খাদিজা বেগমের (৪৫) পরিবারের দুই ছেলে প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে আশেক মিয়া (২২) শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী। মেজ ছেলে লাদেন মিয়া (১৮) শারীরিক প্রতিবন্ধী। মিথ্যা মামলায় স্বামী দুলাল মিয়া (৫০) জেলখানায়। মেয়ে একটি নবম শ্রেণিতে পড়ে। বইখাতা ও বেতনের অভাবে লেখাপড়া বন্ধের পথে।
বড় ছেলে আশেক জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। কিছুটা চলাফেরা করতে পারলেও লাদেন ঘরের বাইরে যেতে পারে না। লাদেনের যখন আট বছর বয়স তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। সে সময় লাদেনের বাবা জমিজমা বিক্রি করে দেশের নামিদামি বহু হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও লাভ হয়নি। সেই থেকে লাদেনের হৃদয় যেন বেদনার বালুচর।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধূলা করা ছোট্ট লাদেন এখন হয়ে গেছেন প্রতিবন্ধী। তখন থেকে বাইরে বের হয়ে দিনের সূর্য আর রাতের চাঁদ কিছুই দেখা হয় না তার। ছোটবেলার ছোটাছুটি আর বন্ধুদের সঙ্গে মাতামাতি এখন কেবলই স্মৃতি। সবই বিধাতার খেলা। আশা ছেড়ে দিয়েছেন সুস্থ হওয়ারও। এখন আর চিকিৎসা করার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই। কোথায় পাবেন অত টাকা? কোথায় করাবেন চিকিৎসা? প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কোনোরকমে অর্ধাহার-অনাহারে চলে তাদের সংসার।
সকালে খেলে বিকালের খাবার থাকে না। ক্ষুধায় ছটফট করে কাটে সারারাত। তাদের শেষ সম্বল যেটি ছিল, সেই ভিটেবাড়িটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। অসুস্থ ছেলেমেয়েদের মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় খাদিজা আশ্রয় নিয়েছেন লাদেনের চাচার বাসায়।
এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী খাদিজার স্বামী ফেঁসে গেছেন মিথ্যা মামলায়। জেলখানায় রয়েছেন ছয় মাস ধরে। একদিকে দুই সন্তান অসুস্থ, মেয়ের পড়ার খরচ, স্বামী জেলখানায়। অন্যদিকে ২০১২ সাল থেকে বেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত খাদিজা। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। চারবার করিয়েছেন বেস্ট ক্যান্সারের অপারেশন। তাতেও সফল হয়নি। ক্যান্সারের জীবাণু ছড়িয়ে গেছে পুরো শরীরে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বেলা থাকতেও যেন আঁধার এসে গ্রাস করেছে তাকে। শুধু মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই তার।
উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে বৃহস্পতিবার সরেজমিন যান এ প্রতিবেদক। তার কাছে নিজের এ ভাগ্যবিড়ম্বনার কথা তুলে ধরেন মৃত্যুশয্যায় ক্যান্সারে আক্রান্ত খাদিজা। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই চান স্বামীর। জানান বাঁচার আকুতি। বাঁচাতে চান ছেলেমেয়েদেরও। দুই ছেলের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করতে চান। পড়াতে চান মেয়েকে। আর এ জন্য দেশবাসীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন তিনি। চাইছেন তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়াক। আর এ জন্য দিয়েছেন বিকাশ নম্বর। খাদিজার বিকাশ নম্বর ০১৭৭২২৯৪৬৮৪।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যায় ধুকছে। দীর্ঘদিন ধরে গাইনি ও সার্জারি চিকিৎসকসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদায়ন না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এতে গর্ভবতী নারী ও শিশুসহ গুরুতর রোগীদের দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারে অকেজো হয়ে পড়ে আছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবায় ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাও করা হয়। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪০০-৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তবে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এর সুফল পাচ্ছেন না উপজেলাবাসী।
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সম্বনয়হীনতার কারণে সেখানে বিরাজ করছে চিকিৎসক সংকট। হাসপাতালটি পরিচালনায় মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিলিয়ে ৩০ জন থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বর্তমানে ২২ জন চিকিৎসক দিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে কার্যক্রম। বিশেষ করে ৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে গাইনি, সার্জারি, চর্ম ও নাক-কান-গলার চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গাইনি চিকিৎসকের অভাবে গত এক বছরে হাসপাতালটিতে একটি সিজারও হয়নি। বর্তমানে ছোট খাট ১-২টি অপারেশন ছাড়াও গুরুতর কোনো অপারেশন হচ্ছে না। এতে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অনেকটা অকেজো হয়েই পড়ে আছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জনসাধারণ সেবা না পেয়ে ছুটতে হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালসহ আশ পাশ প্রাইভেট ক্লিনিকে। বিশেষ করে গর্ভবর্তী নারীদের নিয়ে অন্যত্র যাতায়াত করার ফলে তাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে।
এছাড়াও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে অতিরিক্ত খরচ করে স্বাস্থ্য সেবা নিতে হয়। এতে হতদরিদ্ররা অনেকটা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। গত ৮ মাস আগে একজন গাইনি চিকিৎসককে এই হাসপাতালে পদায়ন করা হলেও তিনি কেবল যোগদান করে আর একদিনের জন্যও হাসপাতালে আসেননি। পরে তিনি এখান থেকে অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যান। এ অবস্থায় দ্রুত সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
সরাইল মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুব খান বাবুল বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের পর প্রান্তিক জনপদের হতদরিদ্ররা কম খরচে সরকারি চিকিৎসা পাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে উপজেলাবাসী তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালটির আরো একটি সমস্যা হচ্ছে এখানে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ও গাইনি চিকিৎসককে একত্রে পদায়ন করা হয় না। এতে বছরের পর বছর ধরে সিজার বা সার্জারির কাজ ব্যাহত হয়ে আসছে। আমরা চাই সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে হাসপাতালটি পরিচালিত হোক।
চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া জানান, দ্রুত চিকিৎসক পদায়নের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবেই চলছে।
এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. একরাম উল্লাহ জানান, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও গর্ভবতী নারীদের নিরাপদ সন্তান প্রসব নিশ্চিত করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দ্রুত সময়ের মধ্যে গাইনিসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পদায়ন করা হবে। সেই সঙ্গে সিজারিয়ান বিভাগ দ্রুতই পুরোদমে চালু করা হবে। এতে উপজেলাবাসীর দুর্ভোগ কমে আসবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। যোগদানের ৪/৫ দিন পরই গ্রহন করেন ব্যতিক্রম উদ্যোগ। দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে ছুঁটে চলেছেন মাঠে। টিআর কাবিখা কাবিটা ও ঠিকাদারী কাজ সরজমিনে নিয়মিত তদারকি করে আলোচনায় আসেন তিনি। কাজের অনিয়ম ও ভুলক্রটি সংশোধনে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ তিনি। কিছুটা নড়েচড়ে সতর্ক অবস্থানে এখন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। স্বস্থিতে আশার আলো দেখছেন সাধারণ মানুষ।
সূত্র জানায়, সকল নির্বাহী কর্মকর্তাই নিজ উপজেলার সুনাম খ্যাতি অর্জনের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। চেষ্টা করেন নিজের সবটুকু দিয়ে। তাদের মধ্যেও কাজে কর্মে কিছু ব্যতিক্রম ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের উদ্যোগ ও কর্মকা- মানুষের নজর কাড়ে। মনে স্বস্তি দেয়। এমনই একজন ইউএনও মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। তিনি সরাইলে যোগদান করেছেন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর। যোগদানের ৪-৫ দিন পরই দাপ্তরিক ও প্রশাসনির কাজের বাহিরে ওঁর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এলাকার সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে।
তিনি সকাল বিকাল দুপুর কোন নোটিশ ছাড়াই ছুটে যান ঠিকাদারদের কাজ তদারকি করতে।
সরজমিনে হাজির হয়ে ইষ্টিমিট আর ওয়ার্ক অর্ডার ধরে কাজের স্বচ্ছতা ও মান দেখেন। তদারকি করতে থাকেন টিআর, কাবিখা আর কাবিটা’র কাজ। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ফিতা ধরে মেপে দেখেন। অনিয়ম, অস্বচ্ছতা বা কোন ধরণের ক্রুটি পেলে দ্রুত সংশোধনের নির্দেশ দেন। সরাইল সদরের আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ধরা পড়লে ঠিকাদারকে দ্রুত সংশোধনের নির্দেশ দেন ইউএনও। স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজটি পুনরায় করতে বাধ্য হন ঠিকাদার। সরজমিন তদারকিতে এখন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী সতর্ক অবস্থানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঠিকাদারী কাজের মান অনেকটা ভাল হচ্ছে। টিআর কাবিখা’র টাকা লুটপাটের সুযোগ পাচ্ছেন না এক শ্রেণির লোকজন। এতে প্রত্যেকটা ইউনিয়ন ও গ্রামের লোকজন স্বস্তি বোধ করছেন। ইউএনও’র পরিশ্রমের বদৌলতে মানসম্মত কাজ পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, একসময় কাজের নামে লেফপুজ করে বিল উত্তোলন করে ফেলতো। কাজ না দেখেই বিল দিয়ে দিতেন। বর্তমান ইউএনও মহোদয়ের সরজমিন তদারকির ফলে সেটা আর হচ্ছে না। কাজে ক্রটি থাকলে তিনি বিল আটকে দিচ্ছেন। এই উদ্যোগ জনগণ ও দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে। কাজের মানে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমার এই উদ্যোগের ফলে সরকারের দেয়া পাবলিক মানির অপচয় রোধ ও কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। সরকারি অর্থে আমার তত্ত্বাবধানে নির্মিত কাজের মান ভালো হবে। সরকারের উন্নয়ন জনগণের কাছে ভালভাবে দৃশ্যমান হবে। জনগণ এর উপকার ভোগ করতে পারবেন। একই সাথে আমার উপর অর্পিত দায়িত্বও যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।