চলারপথে রিপোর্ট :
মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে প্রায় এক মাস ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। কিন্তু নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের কাজ।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন। এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তন হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের মেঘনা নদীর অংশ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম করে মাসখানেক ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা অংশ থেকেও নিয়মিত বালু তোলা হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ছে উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের ওপর।
জানা গেছে, এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ভৈরব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোশারফ হোসেন মিন্টু ও সেখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন মুসা। যদিও বালু উত্তোলনের জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের অনুমতি নেই। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝখানে ও কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিন বসানো। এর প্রতিটি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একেকটি বাল্কহেড। প্রতিটি বোটে ১২/১৩ জন লোকের পাহারা। বেলা ১২টার দিকে দেখা গেল মেন্দিপুর এলাকার মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দেদারচ্ছে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্ডহেডের মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তারা নড়েচড়ে বসে। ছবি তুললে তাদের অনেককেই ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের পিছু নিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। তারা তাদের স্পিডবোট দিয়ে সাংবাদিকদের স্পিডবোটকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরক্ষণেই প্রভাবশালী মহলটি সাময়িক সময়ের জন্য বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ করে দেয়।
সরাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। আমাদের গ্রাম নদী গ্রাস করে নিচ্ছে।
প্রবীণ বাসিন্দা নিজাম মিয়া বলেন, আমার তিন কানি জমি ছিল। এর মধ্যে দুই কানি জমির মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। আমি ছাড়াও অন্যান্য মানুষের ফসলি জমিও চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জীবনটা বাঁচব।
আজব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কাজী লিয়াকত মিয়া বলেন, নদীটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করতাম। ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।
নদীর পাড়েই দু’তলা ভবনের মালিক জুনায়েদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভেঙে চলছে। মূলত অবাধে বালু তোলার কারণে সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন জানে আমাদের ভবন পানিতে চলে যায়। প্রভাবশালী চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আবুল বাশার বলেন, ‘ভৈরবের মুসা মিয়ার (মোশারফ হোসেন) নেতৃত্বে অনুমতি ছাড়াই এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টু মোবাইল ফোন বলেন, ‘বৈশাখ মাস পর্যন্ত আমি নদী ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করেছি। আমার সঙ্গে ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনও ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। এখন কে বা কারা বালু তুলছে জানি না। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ড্রেজারগুলো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বালু তোলে। আমার কাজের সময় ব্যবহার করা একই রকম ড্রেজার যদি তুলে থাকে তাহলে তো আমার কিছুর করার নেই। ’
এ বিষয়ে ভৈরবের আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুসার মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। মন্ত্রণালয় থেকেও এই বিষয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। শুনেছি কখনো তারা মেন্দিপুর আবার কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অংশে বালু তুলে। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও কাজ শেষ। বালু উত্তোলনকারীরা আসলে আমাদের কথা বলে সুবিধা নিতে চায়। যারা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা জয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমানের সঙ্গে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারিভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বর্তমানে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভাঙন রোধে সরাইল, পানিশ্বরসহ বিভিন্ন ভাঙনপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সম্ভাব্যতা প্রকল্পের কাজ চলছে। সম্ভাব্যতা প্রকল্পের সুপারিশের আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে ওই অঞ্চলগুলোতে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে পুকুরের এক ফুট পানির নিচে ঝুলে রয়েছে পিডিবির বৈদ্যুতিক লাইন। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন সেখানকার বিদ্যুৎ গ্রাহক ও স্থানীয়রা।
সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার এলাকায় বিদ্যুতের এ বেহাল দশার অবস্থা। পিডিবির বৈদ্যুতিক লাইন পুকুরের এক ফুট পানির নিছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পড়ে রয়েছে। প্রায় এলাকাতেই জরাজীর্ণ তার এলোমেলোভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ তারে টানানো এই লাইনে মেরামতের অভাবে বৈদ্যুতিক তার ঝুলে রয়েছে। দেখে মনে হয় যেন বৈদ্যুতিক লাইন পানির নিচ দিয়ে টানানো হয়েছে।
এ অবস্থায় পুকুরের পানিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ সৃষ্টি হয়ে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত রয়েছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একাদিকবার অবহিত করা হলেও তেমন কোনো প্রতিকার হচ্ছে না বলে জানান তারা।
এদিকে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার, আইরল, আঁখিতারা ও বছিউড়া এই ৪টি গ্রামের মানুষ বৈদ্যুতিক লো-ভোল্টেজ সমস্যায় চরম দুর্ভোগে আছেন। একদিকে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মানুষ, অন্যদিকে লো-ভোল্টেজের কারণে অচল হয়ে পড়ছে জনজীবন।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য ফারুক মিয়া বলেন, পুকুরের পানিতে বিদ্যুতের তার পরে রয়েছে। এ বিষয়ে অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি ভয়ে কেউ পুকুরে গোসল করতে নামছে না।
নাজমুল মিয়া বলেন, লো-ভোল্টেজের কারণে আমার ফ্রিজের মাছ মাংস প্রায় সময় পচে যায়। আর ফ্যান ও বাতি কোনো রকমে চলে। বুঝার উপায় নেই যে বিদ্যুৎ আছে।
এ বিষয়ে সরাইল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ বিতরণ) মো. আব্দুর রউফ যুগান্তরকে বলেন, নোয়াগাঁও ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় আমি অনেক কাজ করেছি। কাটানিশার ও আইরল এলাকায় বিদ্যুৎ কিছুটা দুর্বল রয়েছে। কাটানিশারে একটা ট্রান্সফরমার দরকার। ট্রান্সফরমার বসানো গেলে বিদ্যুতের লাইন ঠিক হয়ে যাবে। আমি সামনের বাজেটে চেষ্টা করব ট্রান্সফরমার দিতে। আর কোনো পুকুরে বিদ্যুতের তার পড়ে রয়েছে আমার জানা নেই। খবর নিয়ে দেখব।
চলারপথে রিপোর্ট :
হত্যা মামলায় আট দিনের রিমান্ড শেষে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমকে (শিউলি আজাদ) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্বাগত সাম্য এ আদেশ দেন। এর আগে রিমান্ড শেষে উম্মে ফাতেমাকে আদালতে হাজিরের পর কারাগারে রাখার আবেদন করে সরাইল থানা-পুলিশ। একই সঙ্গে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান খান পাঠান আদালতকে লিখিতভাবে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সরাইল থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় উম্মে ফাতেমাকে ৬ অক্টোবর রাতে ঢাকার নিকেতনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ওই রাতেই তাঁকে সরাইল থানা-পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সরাইলের চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সুলতান উদ্দিন বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ ৬৭ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় এলাকায় আসামিদের গুলিতে নিহত হন উপজেলার কাটানিশার গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়া (২৭)।
রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মামলাটির বিষয়ে শিউলি আজাদের দেওয়া তথ্যের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল হাসান। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে তাঁকে আবারও রিমান্ডে আনার আবেদন করা হবে।
এদিকে শিউলি আজাদের আইনজীবী জয়নাল উদ্দিন জানান, আগামী ৩ নভেম্বর শিউলি আজাদের জামিন আবেদনের ওপর আদালতে শুনানি হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নিখোঁজের একদিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে রোকেয়া বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের বিশুতারা গ্রামের তার নিজ বাড়ির পাশে কিচ্ছালডি খালের পাড় থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। রোকেয়া বেগম ওই গ্রামের পশ্চিম পাড়া বড় বাড়ীর আবুল কালামের স্ত্রী। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
নিহতের ভাতিজা ইয়াকুব আলী বলেন, বুধবার বিকালে থেকে আমার চাচিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা ধারণা করেছি হয়তো মেয়ের বাড়িতে গিয়েছে। তাই তেমন খোঁজাখুজি করি নাই। সকালে খবর পায় কিচ্ছালডি খালের পাড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ পরে রয়েছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে উপজেলার কালিকচ্ছ বিশুতারা গ্রামে গিয়ে কিচ্ছালডি খালের পাড় থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় এ বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সিঁধ কেটে চুরির চব্বিশ ঘন্টা পর বিশেষ অভিযান চালিয়ে দুই চোরকে গ্রেপ্তার করেছে সরাইল থানা পুলিশ। গত রোববার দিবাগত রাত ২টায় উপজেলার নোয়াগাঁও থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটক ব্যাক্তিরা হলেন উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো.রকিব মিয়া (১৯) ও মো. ছোয়াব মিয়া (২২)।
পুলিশ সূত্রে জানায়, গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় উপজেলার নোয়াগাঁও (মধ্যপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা শিখা আক্তারের ঘরে সিঁধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণের দোল, স্যামসাং এ্যানড্রয়েট মোবাইলসহ সর্বসাকুল্যে ৭২ হাজার টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। সরাইল থানা পুলিশ চুরির এই সংবাদে রবিবার রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে দুই সিঁধেল চোরকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া মো. রকিব মিয়া ও মো. ছোয়াব মিয়ার কাছে থেকে নগদ ১৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সিঁধেল চুরির মামলা রুজু হয়েছে। গতকাল সোমবার তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম ও মাদকের বিস্তৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা।
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জনপ্রতিনিধি ও সদস্যরা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ইউএনও মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর।
শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, আমাদের ইউনিয়নের একটি এলাকায় কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ব দিনদিন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। ওই গ্যাং এর সদস্যরা ওঠতি বয়সের মেয়ে ও স্কুলে যাওয়া আসার সময় নারী শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং করছে।
বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকরা আতঙ্কে আছেন। লোক লজ্জার ভয়ে অনেক অভিভাবক মুখ বুঝে সহ্য করছেন। আর মাদকের বিস্তৃতি বলে শেষ করা যাবে না। প্রতি সভায় মাদক নিয়ে বলছি। কোন ভাবেই প্রতিরোধের পথ পাচ্ছি না।
শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোছাম্মৎ আছমা বেগম উনার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের ইউনিয়নে বর্তমানে মাদক ও জুয়ার বিস্তৃতিটা বেশী।
৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য বলেছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মাদকের ছড়াছড়ি বেশী।
কালিকচ্ছ ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছায়েদ হোসেন ডাকাতি ও মাদক প্রতিরোধে সরাইল-নাসিরনগর সড়কের কদমতুলি এলাকায় সওজের জায়গায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদের প্রস্তাব দিয়েছেন।
অরুয়াইলসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নে কিশোর গ্যাং-এর দাপট ও তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় দাবি জানিয়েছেন সরাইল মহিলা কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মাহবুব খান।
তিনি অরুয়াইলের সরকারি ঘাটলা উদ্ধার ও ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করায় উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অনেক এলাকায় মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন জনপ্রতিনিধি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন- পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আ. স. ম. মো. আতিকুর রহমান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন, নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনসুর আহমেদ, চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, পাকশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার হোসেন, পানিশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সরাইল প্রেসক্লাবের সম্পাদক তৌফিক আহমেদ তফছির, টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান ও সুকের পরিচালক।