চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
আজ ৮ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে মৃতরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত জালু মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়া (৫০) ও আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামের নাসির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২২)।
এছাড়া একইদিন মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই গ্রামে বজ্রপাতে তিনটি গরু মারা গেছে।
মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আল-আমিনুল হক পাভেল জানান, বিকেলে বৃষ্টি শুরু হলে শাহজাহান মাঠে গরু আনতে যান। এ সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। পাশাপাশি একই সময়ে বজ্রপাতে খেওয়াই গ্রামে কৃষক মনা ভূঁইয়ার তিনটি গরু মাঠে ঘাস খাওয়া অবস্থায় মারা গেছে।
তিনি জানান, নিহতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাহিদ আহমেদ জানান, হৃদয় প্রতিদিন মেঘনার চরে চরচারতলা গ্রামের জসীম উদ্দিনের মহিষের পাল দেখভাল করতেন। বিকেলের দিকে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এর পরই মুসলধারে বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় প্রচণ্ড মেঘের গর্জন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের মৃত্যু হয় এবং উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন।
আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলাইমান সেকান্দরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে আশুগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আটকের সময় সোলাইমান পুলিশের সাথে অসজৌন্যমূলক আচরণ করেছে বলে পুলিশের অভিযোগ।
সোলাইমান সেকান্দর আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে হেফাজতে ইসলামের মোদি বিরোধী আন্দোলনের সময় মাদরাসা শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে আশুগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন জানান, আটক ইউপি চেয়ারম্যান সোলাইনের বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে আদালতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রাম। নদী ভিত্তিক গ্রাম হওয়ায় সবসময় এখানে ধরা পরে দেশী প্রজাতির মাছ। আর এই মাছ দিয়েই গ্রামটিতে উৎপাদন হয় শুঁটকি। নদীর তীরবর্তী স্থানে আট-দশ ফুট উঁচু বাঁশের মাচা বানিয়ে চলে এই শুঁটকির ব্যবসা। প্রতিবছর এখানে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এই মৌসুমে নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিক্রি কমার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর সহজশর্তে ঋণ পেলে শুঁটকি ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামের এই মেঘনা পাড়ের শুঁটকি ব্যবসা শত বছরে ঐতিহ্য। এই শুঁটকি পল্লিতে বর্তমানে ২৬টি মাচা রয়েছে, যেটাকে স্থানীয় লোকজন বলেন ডাঙ্গি। তাদের দাবি, গোটা গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি ডাঙ্গি রয়েছে। এসব ডাঙ্গিতে সময়ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন। ২০ আড়তদারসহ প্রায় ১৫০ জন এখানে শুঁটকির ব্যবসা করেন। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলে। লবণযুক্ত ও লবণ ছাড়া মানভেদে কয়েক ধরনের শুঁটকি উৎপাদন হয় এই পল্লিতে।
যে-সব মাছের শুঁটকি করা হয়- পুঁটি, শোল, গজার, বোয়াল, ঘইন্না, টেংরা, চাপিলা, লাসু, পাঙাশ, রুই, গজার, শোল, পাবদা, কাইক্কা, পুঠা মাছ। গুণে মানে ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় লালপুরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী থেকে মাছ ধরে জেলেরা এনে যার যার ডাঙ্গির নিচে রাখে। তারপর সেখানকার মহিলারা বসে পরে মাছ কুটা-কুটিতে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা নয়, শিশু-কিশোরেরাও এসে তাদের অভিভাবককে সহযোগিতা করে। তারপর এগুলো কেটে সেই বাঁশের তৈরি মাচার ওপর দেওয়া হয় শুকাতে। পরে সেই মাছগুলো কয়েকদিন ধরে শুকিয়ে তৈরি হয় শুঁটকি। তারপর এগুলো সংরক্ষণ করে বাজারজাত করা হয়।
শুঁটকি ব্যবসায়ী সুকমল দাস জানান, তিন কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণযুক্ত ও পৌনে চার কেজি মাছ থেকে এক কেজি লবণ ছাড়া শুঁটকি হয়। প্রতি কেজি লবণযুক্ত পুঁটি শুঁটকির পাইকারি দাম ৬০০ টাকা ও লবণ ছাড়া প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে পুঁটি শুঁটকি প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হয়। তাছাড়া শোল ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বাইম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, গনিয়া ৮০০ টাকা, মাঝারি গনিয়া ৬০০ টাকা ও ছোট গনিয়া শুঁটকি ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।
তবে চাহিদা অনুযায়ী নদীতে মাছ না পাওয়ায় উর্ধ্বমুখী মাছের দাম। তাই মানভেদে শুটকির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে বলে জানিয়েছে সুকমল দাস।
ব্যবসায়ী তপন দাস বলেন, এ মৌসুমে মাছের দাম চড়া। তাই ব্যবসার লাভের জন্য শুটকির দামও বাড়াতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়ায় বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। ফলে লাভের বড় অংশ তুলে দিতে হচ্ছে সমিতি ও এনজিওর হাতে।
ব্যবসায়ী লিটন চন্দ্র দাস জানান, গত ৫ বছর ধরে তিনি শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি করছেন। তার ডাঙ্গিতে পুঁটি, বাইম ও চাপিলা শুকটি চাষ করেন তিনি। তবে মাছ সংকট ও অতিরিক্ত দামের কারণে উৎপাদন কমে এসেছে। আর যতটুকুই উৎপাদন হবে তা আগের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়াতে হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাজী আব্দুল কাইয়ূম খাদেম জানান, শুঁটকি পল্লির ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা রয়েছে। তারা জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা নিতে পারবে।
এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ও খালবিলে পানি কম থাকায় এবার মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণে শ্রমিক-ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর রেল সেতুতে ধাক্কা লেগে পণ্য বোঝাই একটি বাল্কহেড তলিয়ে গেছে। তবে বাল্কহেডে থাকা লোকজন নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আজ ১৪ জুন শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে আশুগঞ্জ-ভৈরবের একটি সড়ক, দুটি রেলসেতুর দুটি পিলার ও একটি জাহাজের সাথে ধাক্কা বাল্কহেড নদীতে ডুবে যায়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল থেকে সিলেকশন পাথরবাহী এম ভি রিফাত ইসলাম নামের একটি বাল্কহেড মেঘনা নদী দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
অরুয়াইলের মো. সাইমন নামের এক ব্যক্তি বাল্কহেডটির মালিক। সড়ক ও রেলসেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাল্কহেডটির মাঝখান দিয়ে ভেঙে নদীতে তলিয়ে যায়। তবে বাল্কহেডে থাকা লোকজন নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আশুগঞ্জ নৌবন্দরের একাধিক শ্রমিক জানান, অরুয়াইল থেকে একটি বাল্কহেড আশুগঞ্জের মেঘনা নদীতে আসে। সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাল্কহেডটি প্রথমে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর ৩ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এরপর মেঘনার নদীর পুরাতন রেলসেতুর দুই নম্বর পিলার এবং সর্বশেষ নতুন রেলসেতুর ২ নম্বর পিলারের সঙ্গে বাল্কহেডের ধাক্কা লাগে। নতুন রেলসেতুর পাশে আগে থেকে একটি জাহাজ ভিড়ানো ছিল। সেটির সঙ্গেও বাল্কহেডের ধাক্কা লাগে। এতে বাল্কহেডটি মেঘনা নদীতে ডুবে যায়।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব নৌ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. রাশেদ স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, আশুগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী একটি বাল্কহেড সড়ক ও রেলসেতুর পিলারে সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ভেঙে বা ফুটো হয়ে বাল্কহেডটি মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ অংশে ডুবে যায়। আজ ভোরে এ ঘটনা ঘটেছে। কেউ ভালো করে বিষয়টি দেখেওনি। ধারণা করা হচ্ছে বাল্কহেডে সিলেকশন পাথর বা বালু ছিল এবং এটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। তবে এতে কেউ হতাহত হননি বা কেউ নিখোঁজ নেই। খবর পেয়ে ভৈরব নৌ পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটি উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ-এর সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে বলে শুনেছেন বিআইডব্লিউটিএ-এর আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নৌবন্দরের পরিদর্শক মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভোর পাঁচটার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে। এটি কার, কোথায় থেকে আসছিল এবং কোন দিকে যাচ্ছিল, কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে কিছুই জানতে পারিনি। আমাদের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এটি নৌপুলিশের আওতায় পড়েছে। বাল্কহেডের মালিক এটি উদ্ধারের বিষয়ে হয়তো সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’
বিশেষ প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদের (মোটর গাড়ী) প্রতিক প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মুছা মিয়া গ্রেফতারের পর এবার নিখোঁজ হয়েছেন প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে তিনি নিখোঁজ আছেন। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, আবু আসিফের বাড়ির সামনে দিন-রাত সাদা পোশাকধারী লোকজন অবস্থান করছেন। গত শুক্র ও শনিবার তার বাড়িতে তল্লাশী করা হয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
তিনি উপ-নির্বাচনে বিএনপির সাবেক নেতা এবং এই আসন থেকে নির্বাচিত পাঁচবারের সাবেক সংসদ ও বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়ার (কলারছড়ি প্রতীক) এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি।
এর আগে গত বুধবার আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে থাকা মুছা মিয়া (৮০) কে হামলা ও সংঘর্ষ মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আবু আসিফের নির্বাচন সমন্বয়কারি ও তার শ্যালক সাফায়েত সুমন ইতিমধ্যেই আত্মগোপনে আছেন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। এরা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া-(কলারছড়ি প্রতিক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী-(লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এই আসনের ২ বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (আপেল প্রতীক), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল-(গোলাপ ফুল), ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ-(মোটর গাড়ী প্রতীক)।
তবে, প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন।
উপ-নির্বাচনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করলেও উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া সমর্থক গোষ্ঠির ব্যানারে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা আজাদ ওরফে শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কলারছড়ির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতৃবৃন্দ ভোটের দিন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্থানীয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
আজ ২৯ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে প্রার্থী আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরন্নিছা মেহরীন জানান, আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমার বাড়ির সামনে সাদা পোশাকে লোকজন অবস্থান করছেন। আমার বাড়িতে একাধিকবার তল্লাশী হয়েছে। আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি।
তিনি বলেন, ‘তার (আবু আসিফ) শুভাকাক্সক্ষীরা তাকে দাঁড় করিয়েছেন। তারা এখন বলছেন সে যেখানেই থাকুকনা কেন প্রচারণায় তারা কাজ চালিয়ে যাবেন। তারা কেন্দ্রেও যাবেন। তবে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা সেটা এখন বড় বিষয়।
আবু আসিফের বাড়ির দারোয়ান মোঃ ইউসুফ বলেন, পরশু রাতে কয়েকজন এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে পুরো বাড়ি তল্লাশী করে। পরের দিন আবার আসে। বাসার সামনে সাদা পোশাকধারী লোকজন অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, আবু আসিফ আহমেদ নিখোঁজ কি-না সে বিষয়ে পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বাড়ির সামনে সাদা পোশাকধারী কারো অবস্থানের বিষয়টিও তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
পূর্ণাঙ্গ নৌ-বন্দর ঘোষণার প্রায় ১ যুগ হলেও এখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দেশের পূর্বাঞ্চলের এই নৌ-বন্দরটি দেশের অন্যান্য নৌ-বন্দরের তুলনায় অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তবে বিআইডব্লিওটিএ কর্তৃপক্ষের দাবি আধুনিকমানের প্রস্তাবিত অবকাঠামো নির্মিত হলে বর্তমানে বন্দরটিতে চলমান অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১০ সালে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরকে পোর্ট অব কল থেকে নৌ-বন্দর ঘোষনা করা হয়। পরে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানা বিদুৎ কেন্দ্রের জন্য মালামাল পরিবহন করা হয় এই বন্দর দিয়ে। এর পর থেকে আর্ন্তজাতিকভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে এই নৌ-বন্দরটি। পরে ভারত এই বন্দরটি ব্যবহার করে কয়েক দফায় ভারি স্টীলজাত পন্য, খাদ্য শস্য পরিবহন করে। বর্তমানে এই নৌ-বন্দরটি দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদার পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে। যার কারণে বন্দরটিকে নমনীয় ঋনে আধুনিকরনের উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার। অবশ্য তার আগে থেকেই আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর ফেরীঘাট এলাকায় নোঙর করতো পণ্যবাহী ছোট-বড় জাহাজ ও বাল্কহেড।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের কলকাতার হলদিয়া বন্দর, বাংলাদেশের মোংলা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ সহ অন্যান্য নৌ-বন্দরের সাথে সহজে অভ্যন্তরীন এবং আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে পন্য আমদানী- রপ্তানী হয়ে আসছে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের মাধ্যমে। বর্তমানে এই বন্দরের সাথে বিভিন্ন কোম্পানী নিজেদের এজেন্টদের মাধ্যমে মালামাল সরবরাহ করে আসছেন। এর ফলে দিন দিন আশুগঞ্জ নদীবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন বাড়ছে। এতে করে গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে এই বন্দরটি।
বর্তমানে প্রতি মাসে রড, সিমেন্ট, পাথর, সার, ধান ও গমসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই ছোট-বড় শতাধিক কার্গো জাহাজ আসে আশুগঞ্জ নদীবন্দরে। তবে বন্দরের জেটি সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ জাহাজ বন্দরে আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নৌ-বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পর্যাপ্ত জেটির অভাবে পণ্য আনলোডিংয়ে অতিরিক্ত সময় লাগে। এতে করে জাহাজ মালিককে যেমন অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, তেমনি বন্দরে অবস্থানকালীন বার্থিং ফিও দিতে হয় ইজারাদারকে। সবমিলিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, চাহিদা বিবেচনায় বন্দরে কমপক্ষে আরো ৫টি জেটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। এতে করে বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও প্রসারিত হবে।
আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া বলেন, পণ্য পরিবহনে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ব্যবহারে চাহিদা বাড়লেও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনো হয়নি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বন্দরে মাত্র দুটি জেটি রয়েছে। অথচ একেকটি জাহাজ থেকে পণ্য আনলোডিংয়ে সময় লাগে ৪-৫দিন। একটি জাহাজের পণ্য আনলোডিং না হওয়া পর্যন্ত অন্য জাহাজ গুলোকে বন্দরেই নোঙর করে থাকতে হয়। এতে করে নদীতে প্রায়ই জাহাজের জটলা সৃষ্টি হয়। মূলত জেটির স্বল্পতার কারণেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন লোড-আনলোডিংয়ের জন্য বন্দরে কমপক্ষে আরো ৫টি জেটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। জেটি সংখ্যা বাড়লে বন্দরে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ জাহাজ আসবে বলে জানান তিনি।
বন্দরের ব্যবসায়ী মোঃ নাসির মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠান ১ যুগ হয়ে গেলেও নৌ-বন্দরের কাঙ্খিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। জেটি স্বল্পতার কারনে নির্ধারিত সময়ে জাহাজ থেকে পণ্য আনলোড করা যায় না। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকের জন্য একটি ট্রাকইয়ার্ড প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দরে প্রতিদিনই পন্যবাহী জাহাজ আসে। একটি জাহাজের পণ্য আনলোডিং না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য জাহাজগুলোকে বন্দরেই নোঙর করে রাখতে হয়। মূলত জেটি স্বল্পতার কারণেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে।
বন্দরের ব্যবসায়ী শাহীন শিকদার বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় বন্দরটিতে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেননা ব্যবসায়ীরা। বন্দরে রয়েছে জেটি স্বল্পতা। বন্দরে পন্য খালাসের জন্যে নেই ইয়ার্ড। নৌ-বন্দরে কোনো ওয়ার হাউজ না থাকায় সার সহ বিভিন্ন পন্য খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। ট্রাক ইয়ার্ড না থাকায় লোড-আনলোডের পর ট্রাকগুলোকে এলোপাথারিভাবে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় রাখা হয়। তিনি বলেন, কমপক্ষে আরো ৫টি জেটি নির্মান করা হলে বন্দরের কার্যক্রমে আরো গতি আসবে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ নদীবন্দরের ইজারাদার তৌহিদুল ইসলাম নাসির বলেন, ইজারা মূল্য অনুযায়ী বন্দরে তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। পর্যাপ্ত জেটি না থাকায় পণ্য আনলোডিংয়ে বেশি সময় লাগে। তিনি বলেন, বন্দরে থাকা ২টি জেটির মধ্যে একটি জেটির অবস্থা ভালো না। এছাড়া বন্দরে ওয়্যারহাউজও নেই। এর ফলে আনলোডিংকৃত পণ্য ডেলিভারীতে বিলম্ব হলে পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। তিনি বলেন, বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে ব্যবসা যেমন প্রসারিত হবে, তেমনি সরকারও লাভবান হবে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ শহর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন ইপটি বলেন, একযুগ হয়ে গেলেও বন্দরে অবকাঠামোগত দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। জেটি স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ে জাহাজ থেকে পণ্য আনলোড করা যায়না। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকের জন্য একটি ট্রাক ইয়ার্ড প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমানে বন্দরে ১ হাজার ২ শত থেকে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
তিনি বলেন, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরটি আধুনিককরন করা হলে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের পাশপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে উত্তর পূর্ব ভারতের যে ৭টি অঙ্গরাজ্য আছে সেখান থেকে আমাদানী-রপ্তানী কার্যক্রম জোরদার সহ ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মেচন হবে।
এদিকে বিআইডব্লিওটিএ সূত্র জানায়, বন্দরের সমস্যা লাঘবে ভারতীয় নমনীয় ঋনে ১ হাজার ২শত কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে সাড়ে ৩২ একর জমির উপর আধুনিক মানের নৌ-বন্দর নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেছে সরকার। তবে প্রথম দফায় আহবানকৃত দরপত্রটি বাতিল হওয়ায় বন্দরটির উন্নয়ন কাজ পিছিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিওটিএ ভৈরব-আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর উপ-পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর আধুনিকরন কাজের প্রথম দফার দরপত্রটি সফল না হওয়ার কারণে দরপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। দরপত্রটি ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কাছে পুনরায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতিপত্র পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারো দরপত্র আহবান করা হবে।
তিনি বলেন, সরকার দ্রুত আধুনিকরণ কাজ শেষ করতে চায়। তাই ভারত থেকে সম্মতি আসলেই দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করা হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রাথমিক পর্যায়ে নৌ-বন্দর নির্মান কার্যক্রমের কাজ এগিয়েছে। বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণ করে তারা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে আধুনিকমানের বন্দর নির্মানের জন্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছিলো। তবে প্রথম দফায় প্রয়োজনীয় দরদাতা না পাওয়ার কারণে দরপত্রটি বাতিল করা হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে পুনরায় দরপত্রের বিষয়ে সম্মতি চাওয়ায় হয়েছে। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ার পর আবারো দরপত্র আহবান করা হবে।