চলারপথে রিপোর্ট :
ভাঙ্গায় স্মার্ট মাদ্রাসা বিনির্মাণে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৩ জুন মঙ্গলবার বিকালে ভাঙ্গার ইকামাতেদ্বীন মডেল কামিল মাদ্রাসার উদ্যোগে মাদরাসা চত্বরে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আবু ইউসুফ মৃধার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিমউদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জালালউদ্দিন, মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মোঃ আসাদুজ্জামান, ভাঙ্গা উপজেলা একাডেমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রহ্লাদ বিশ্বাস, কাউলিবেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম প্রমুখ।
সভায় মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের স্থান থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দলটিতে ফ্যাসিবাদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য থাকায় দেশের রাজনীতিতে এর কোনো স্থান নেই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।
আজ ৩০ অক্টোবর বুধবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, আপাতত বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা নেই, আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই। তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা পলিটিক্যাল ম্যাশিনারি নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা তাদের স্বার্থ বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। শেখ হাসিনা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ করেছেন বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ তুলেছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে জোর দাবি উঠছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে দলটির ভাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ হয়তো ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তার সরকার এমন কিছু করবে না। কারণ, তারা রাজনৈতিক সরকার নয়। হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সরকার হাসিনাকে ফেরত চাইবে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার রায় ঘোষণার পর ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তাদেরকেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ করতে হবে। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, তার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই। তার সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি। তিনি বলেন, আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে ভারত যে অভিযোগ করছে তার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং খুব অল্প সংখ্যক প্রাণহানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তাদেরকে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। সূত্র: ইত্তেফাক ডিজিটাল।
চলারপথে ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতায় স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী ও অগ্নি সন্ত্রাসীরা কখনই যেন ফিরতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে রিজ কার্লটন হোটেলের হলরুমে আমেরিকায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘খুনী, স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা যাতে আর কখনই ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করুন। এই বিএনপি-জামাত জোট বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত তথাকথিত আন্দোলনের নামে বহু মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ উজাড় করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘এই চক্র দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে একে আবারো উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে।বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। আমরা এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাগুলোকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে দেশে বিদেশে রাষ্ট্র বিরোধী অপপ্রচার চালানোর জন্যে বিএনপি জামাত জোটের কঠোর সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। বিএনপি-জামাত জোট ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ব্যবহার করে আমাদেরই বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে কান না দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। তিনি বলেন, সবাইকে মাথা উঁচু করে ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে চলতে হবে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রতিটি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি।
দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা অনেক অবদান রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান কারণ, সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রেম্যিটান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করতে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের পরও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারনে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলমান যুদ্ধের কারণে উন্নতসহ অনেক দেশ সংকটে পড়লেও বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনও ভালো।
প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন যেন বাংলাদেশ কোন সংকটে না পড়ে।
দেশের দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে কোন চরম দারিদ্র্য থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে বাড়ি দিয়ে আসছে।
তিনি আরো বলেন, তাঁরা ইতোমধ্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় ৩৫ লাখ লোককে বাড়ি দিয়েছেন এবং তাদের জীবিকা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, কারণ সরকার প্রতিটি গৃহহীন লোককে বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এ লক্ষে আরো ৬০ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অন্ষ্ঠুান পরিচালনা করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তিন বিভাগের ১৮টি জেলায় প্রথম ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার জেলাভিত্তিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি জেলার মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়।
পৃথক এসব বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১৬ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থীদের মৌখক পরীক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ ছাড়াও বরগুনা জেলায় ২১ থেকে ২৮ জানুয়ারি এবং নীলফামারীর বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।
পৃথক পৃথক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মৌখিক পরীক্ষার এসব সময়সূচি জানানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রার্থীদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তিগুলোতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছর ৮ ডিসেম্বর রংপুর, সিলেট ও বরিশাল এই তিন বিভাগের ১৮টি জেলায় প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ হাজার ৩৩৭ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে জেলাভিত্তিক সময়সূচি প্রকাশ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
চলারপথে ডেস্ক :
সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের পৃথক গেজেট জারি করে এই পেনশন ব্যবস্থায় আনার সুযোগ বিলে রাখা হয়েছে। আজ ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপণ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।
বিলটির বেশকিছু অসঙ্গতি তুলে ধরে বিরোধী দলীয় সদস্যরা সমালোচনা করেন। তারা বলেন, এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব বিষয়ে তারা সংশোধণের প্রস্তাব করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।
এই চাঁদার হার কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আইন হওয়ার পর সংশিতষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে। মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঁঞ্জিভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশনুসুবিধা পাবেন। সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ হবে ঐচ্ছিক।
বিলে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন। যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।
বিলে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। বিলে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এই পেনশনুব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।
বিলে একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। এঁদের নিয়োগ করবে সরকার।
বিলে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বাস অব কমার্সের সভাপতি এর সদস্য হবেন। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।
বিলে বলা হয়েছে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত এক বা একাধিক তপসিলি ব্যাংক জাতীয় পেনশন তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে।
বিরোধী দলীয় সদস্যদের সমালোচনা
বিল পাসের আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘উদ্যোগটি চমৎকার হলেও এই পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ সরকারি চাকুরিজীবীরা যেভাবে পেনশন পান তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কিভাবে পাবে তা পরিস্কার নয়। এটি অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মত। এই বিলটি পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, “এই বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার৷’ মানুষের কাছ থেকে চাদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে। এই বিল পাস করার কোনো সুযোগ নেই।”
জাপার আরেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মত। গুঞ্জন আছে, সরকারের টাকার অভাব হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কী সরকার চলবে?’ টাকা পাচার, বিদেশে বাংলাদেশীদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন। বোবার শত্রু কম। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কানে কথা পৌঁছে কি না জানা নেই। তাঁর কোনো ফিডব্যাক, উদ্যোগ দেখা যায় না।’
জাপার আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে আইনটি ভাল। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট করে এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না। সরকার কী মুনাফা দেবে তা পরিস্কার নয়।’ তিনিও দাবি করেন, এই আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জাপার আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মত। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে আর ব্যাংক দেদারছে টাকা বিদেশে পাচার করবে। ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো বারো ভুঁইয়াদের কাছে চলে গেছে। সব সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা।’ এসময় বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেখার কেউ নেই। যারা টাকা পাচার করছে তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’
বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এই বিলটি আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যাঁরা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন তাদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে।’
এমপিদের আজীবন পেনশনের দাবি
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু সাবেক সংসদ সদস্যদের আজীবন পেনশন স্কিম চালু করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অফিসের পিয়ন, গার্ডরা পেনশন পেয়ে থাকে। এমপিদের জন্য এমন ভাতার দাবিতে সংসদে আগেও আলোচনা হয়েছে। যারা একবার সংসদ সদস্য হিসেবে পদ পাবে, তারা যেন আজীবন একটা পেনশন স্কিম পায়।’
বিলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাঁর একজন শিক্ষক ৩৬ বছর চাকরি করার পরেও এখনও পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি। জনগণ পেনশনের টাকা জমা দিবে কিন্তু তারা তো অফিসের বারান্দাই চেনে না। এই টাকার নিরাপত্তা কী? নতুন বিলে সেই নিশ্চয়তা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম। এরপর প্রেমিকের ডাকে তার বাড়িতে ছুটে যান। প্রেমিকের মায়ের বকুনি খেয়ে নিজ বাড়ি ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক পোশাককর্মী (১৯)।
গত মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার বরুড়ার শাকপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো– শাকপুর গ্রামের মো. রুবেল, মো. শামীম ও জাকির হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ঘটনার পর থেকে অন্য আসামি ও ওই তরুণীর প্রেমিক আমান ওরফে রাফি পলাতক রয়েছে।
আজ বৃহস্পিতবার কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, পাঁচ মাস আগে ফেসবুকে তরুণীর সঙ্গে রাফির পরিচয়। মঙ্গলবার রাতে ফোন করে তাঁকে বাড়িতে ডেকে নেন রাফি। এ সময় তাঁর মা ভুক্তভোগীকে গালমন্দ করেন এবং রাত সাড়ে ১০টার দিকে বের করে দেন। সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলে পথে শামীম ও জাকির তার গতিরোধ করে।
তিনি আরো জানান, তারা তরুণীকে জোর করে গ্রামের একটি বাগানবাড়ি নিয়ে যায়। রুবেল আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিল। এরপর অটোচালককে ভয় দেখিয়ে তিনজন রাত ১২টা পর্যন্ত ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে এবং পরে অটোরিকশায় তুলে দেয়। ভুক্তভোগী পরদিন ভোরে বরুড়া থানায় প্রেমিকসহ চারজনের নামে মামলা করেন।
বরুড়া থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, অটোচালকের তথ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা রাফির ইন্ধনে তরুণীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।
তিনি আরো জানান, রাফিকে গ্রেতারের চেষ্টা চলছে। রুবেল ও জাকিরের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ তিনটি এবং শামীমের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।