চলারপথে রিপোর্ট :
বিভিন্ন সময় হারানো ১৪৩টি মোবাইল ও প্রতারকের খপ্পরে পড়ে খোয়া যাওয়া ২ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে সাতক্ষীরা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল।
আজ ২৫ জুন রবিবার বেলা সাড়ে ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মোবাইল ও উদ্ধারকৃত টাকা ফেরত দেন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম, ডিবির ওসি তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ, অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার এএমজে সোহেল, ডিআইও ওয়ান ইয়াসিন আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, মে-জুন মাসে ১৪৩টি হারানো মোবাইল প্রযুক্তির সহায়তায় উদ্ধার করা হয়েছে। যার মূল্য আনুমানিক ২১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এছাড়া বিকাশে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে ১০ জন গ্রাহকের খোয়া যাওয়া ২ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মোবাইল ও টাকা প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার সাইবার ক্রাইম ইউনিট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রাহকদের এই সেবা দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের সেবা অব্যহত থাকবে।
অনলাইন ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে বিজয়ীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার নারী আসনে বিজয়ীদের নিয়ে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিজয়ী প্রার্থীদের নামে গেজেট প্রকাশের পর তা জাতীয় সংসদের সচিবালয়ে পাঠানো হবে। এরপর সংসদ সচিবালয় এই সদস্যদের শপথ গ্রহণের আয়োজন করবে।
নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মুনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ/জোটের মনোনীত ৪৮ জন এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত দুইজন অর্থাৎ মোট ৫০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
তিনি আরো জানান, দাখিল করা মনোনয়নপত্রসমূহ পূর্ব ঘোষিত সময়সূচি অনুসারে বাছাইপূর্বক ৫০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনো প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। ফলে জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত নারী আসন) নির্বাচন আইন, ২০০৪ এর ধারা ১২ এর উপধারা (১) অনুসারে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হলো।
নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। জোট শরিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনে ৪৮টি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দিয়েছে ২টি আসনে।
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের এমপিরা হলেন-
১. রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), ২. দ্রোপদী দেবি আগরওয়াল (ঠাকুরগাঁও), ৩. আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), ৪. রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট) – আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য সম্পাদক, ৫. কোহেরী কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর), ৬. জারা জেবিন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), ৭. রুনু রেজা (খুলনা), ৮. ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), ৯. ফারজানা সুমি (বরগুনা), ১০. খালেদা বাহার বিউটি (ভোলা), ১১. ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), ১২. উম্মে ফারজানা সাত্তার (ময়মনসিংহ), ১৩. নাদিরা বিনতে আমির (নেত্রকোনা), ১৪. মাহফুজা সুলতানা মলি (জয়পুরহাট), ১৫. পারভীন জামান কল্পনা (ঝিনাইদহ) – আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, ১৬. আরমা দত্ত (কুমিল্লা), ১৭. লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), ১৮. মুন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা) – সদ্য সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, ১৯. বেদৌড়া আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ), ২০. শবনম জাহান (ঢাকা), ২১. পারুল আক্তার (ঢাকা), ২২. সাবেরা বেগম (ঢাকা), ২৩. শাম্মী আহমেদ (বরিশাল) – আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক, ২৪. নাহিদ ইজহার খান (ঢাকা), ২৫. ঝর্ণা আহসান (ফরিদপুর), ২৬. ফজিলাতুন নেছা (মুন্সীগঞ্জ) – সদ্য সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, ২৭. সাহেদা তারেক দিপ্তী (ঢাকা), ২৮. অনিমা মুক্তি গোমেজ (ঢাকা), ২৯. শেখ আনার কলি পুতুল (ঢাকা), ৩০. মাসুদা সিদ্দিক রোজি (নরসিংদী), ৩১. তারানা হালিম (টাঙ্গাইল) – আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, ৩২. শামসুন নাহার (টাঙ্গাইল) – আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক, ৩৩. মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর)- নির্বাচনে পরাজিত, ৩৪. অপরাজিতা হক (টাঙ্গাইল), ৩৫. হাসিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), ৩৬.নাজমা আক্তার (গোপালগঞ্জ), ৩৭. ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর) – আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদক, ৩৮. আশরাফুন নেছা (লক্ষ্মীপুর), ৩৯. কানন আরা বেগম (নোয়াখালী), ৪০. শামীমা হারুন লুবনা (চট্টগ্রাম), ৪১. ফরিদা খানম (নোয়াখালী), ৪২. দিলারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), ৪৩. ডরথি তঞ্চঙ্গা (রাঙামাটি), ৪৪. সানজিদা খানম (ঢাকা) – আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, নির্বাচনে পরাজিত, ৪৫. নাছিমা জামান ববি (রংপুর), ৪৬. নাজনীন নাহার রোশা (পটুয়াখালী), ৪৭. ওয়াসিকা আয়শা খান (চট্টগ্রাম) – আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক, ৪৮. রুমা চক্রবর্তী (সিলেট)। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে আগেরবারের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুন নাহার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ মনে করে না, তারা বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশ মনে করে। আর আমাদের লড়াই হচ্ছে তার বিরুদ্ধে, যাতে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে পারি।
আজ ২ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহসচিবসহ আলেম উলামাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা পথে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের দুর্ঘটনাকবলিত একটি বাস নিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মিথ্যাচার সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম আমরা যাতে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি এটাই আমাদের লক্ষ্য। হিন্দুত্ববাদীরা মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়েছে, তারা মিথ্যা দিয়ে পৃথিবীকে জয় করতে চায়। আল্লাহর আইন হচ্ছে সত্যের জয় হবে এবং মিথ্যা পরাজিত হবে।
আজ সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের স্থানীয় বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চ ময়দানে ঐতিহাসিক শহীদ বাবরী মসজিদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিবাদী কনফারেন্সে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হেফাজতের আন্দোলনে গণহত্যা, ২০২১ সালের মোদি বিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যা বিচার দাবি ও বাবরী মসজিদ দিবস উপলক্ষে জামিয়া ইসলামীয়া ইউনুছিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতী মুবারক উল্লাহ’র সভাপতিত্বে প্রতিবাদী কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলিম নির্যাতনসহ মসজিদ ধ্বংস করা হচ্ছে। যারা নিজের দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে কথা বলার। তিনি ভারত তথা সমগ্র বিশ্বে মুসলিমদের নির্যাতন নীপিড়নের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি বলেন, এদেশের তৌহিদি জনতা ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে ভারতীয় হেজেমনিকে উৎখাত করেছে। তারা আর কোনোদিন ভারতীয় হেজেমনি বা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে এদেশে প্রত্যাবর্তন করতে দিবেনা।
সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে বিভাজন থাকতে পারে কিন্তু দেশের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তাহলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে পারবেনা। যদি ফাটল থাকে তাহলে ফ্যাসিবাদ আবারো প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাও: জুনাইদ আল হাবিব, কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক মুসা আল হাফিজ, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আতাউল্লাহ আমিন, লেখক ও গবেষক রুহুল আমীন সাদী, আলী হাসান তৈয়ুব, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আশরাফ মাহদী প্রমুখ।
এসময় ড. মাহমুদুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে আমাদের দেশে এখন অপপ্রচার হচ্ছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন আমাদের দেশে হিন্দুদের চাকরী বেশী। বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদে আছে। আমাদের দেশের আলেমগণ তাদের বক্তব্যে হিন্দুদের নিরাপত্তার কথা বলেন। মন্দির পাহারা দেন। আর ভারতীয়রা মুসলমানদের হত্যার কথা বলে, কী পার্থক্য এবার বুঝেন। ভারতে মুসলমানদের প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে আমরা বারবার ব্যর্থ হয়েছি। অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুব ফোরামের উদ্যোগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল ২৪ অক্টোবর বুধবার রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরদিনই নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ সিদ্ধান্তে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে গতকাল রাতেই বিবৃতিতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান নিষিদ্ধকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শক্তি ছিল ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন। তবে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের অনেকের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব, মারামারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক বাণিজ্য, বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে হামলা, দমনপীড়ন, অস্ত্রবাজির মতো অপরাধের শত শত অভিযোগ ওঠে।
এই সময়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অন্তত অর্ধশত প্রাণহানি ঘটেছে। ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস এবং ২০১৯ সালে আবরার হত্যায় সংগঠনটি ধিকৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘গেস্ট রুম’ নামে নিপীড়নের কুখ্যাতিও রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল দমনকারীর ভূমিকায়। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরুর পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মারমুখী ছিল। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নজিরবিহীন মারধর করে, যা থেকে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিনেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অভ্যুত্থান দমনে অস্ত্র হাতে রাজপথে দেখা যায়। অভ্যুত্থানের সময় এবং শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র পাওয়া যায়। মধ্য জুলাই থেকেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়েছে অভ্যুত্থানকারীরা। ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
প্রজ্ঞাপনেও ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ। এসবের প্রমাণ দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীর অপরাধ আদালতেও প্রমাণ হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও জনগণের ওপর আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী; অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক, উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সরকারের কাছে এসব কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন নামাঙ্কিত রাজনৈতিক শাখা-২-এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।
আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী, নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদনে ৩০ দিন সময় পাবে ছাত্রলীগ। আবেদন করলে সরকার তা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ পাবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কার্যালয় বন্ধ করবে সরকার। ব্যাংক হিসাব বা অন্য সম্পদ জব্দ হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করতে পারবে না। সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে বিবৃতি, বিজ্ঞপ্তি, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসমক্ষে বক্তৃতা নিষিদ্ধ হবে।
গত ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একই আইনে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের আবেদনে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিলের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নুসরাত তাবাসসুম বলেন, জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন আজ। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায়। আর কোনো ছাত্র সংগঠন যেন এমন সন্ত্রাসী না হয়।
সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, যারা কথায় কথায় আন্দোলনে জঙ্গিবাদ খুঁজত, তাদেরকেই জঙ্গি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের গর্ত থেকে বের করে ধোলাই দিতে হবে।
আশরিফা খাতুন বলেন, আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ রাজাকার দমন হয়েছে বলে উল্লাস করেছিল। যখনই কোনো ন্যায্য দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়েছি, ছাত্রলীগ মেরেছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে, সেখানেও মারত। কোনোভাবেই ছাত্রলীগ যেন ফিরতে না পারে।
অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে না বললেও উচ্ছ্বাস দেখায়নি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ছাত্রলীগ খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি, গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে; ছাত্রলীগ এককভাবে বেশি করেছে। ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে এবং শহীদ হয়েছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে ছাত্র রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। সুস্থ রাজনীতিচর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধই সমাধান নয়। সংগঠনটির যারা সন্ত্রাস করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ডা. সাদেক আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে ছাত্রলীগ। সন্ত্রাস, নিপীড়ন, নির্যাতনের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে চায় না। ছাত্রলীগের অপরাধীদের বিচার চায়।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড বলেন, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকে সাধুবাদ জানাই। নিষিদ্ধ হলেই অপতৎপরতা বন্ধ হবে না। অপরাপর সংগঠনের সঙ্গে আলাপে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ছাত্রলীগের তৎপরতা বন্ধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বোস বলেন, নির্বাহী আদেশে কয়েক দিন আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনে তা বদলেও গেছে। একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা কতখানি ফলপ্রসূ হবে, জানি না। নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে কতটুকু নিঃশেষ করা যাবে, জানি না। ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করতে হবে আদর্শের জায়গায় এবং মাঠের রাজনীতিতে। রাজনৈতিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
শিরায় রক্ত জমাট বাড়াচ্ছে মৃত্যু ঝুঁকি। এক্ষেত্রে একটানা দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে থাকা, অস্ত্রোপচার, শিরায় আঘাত, ক্যানসার, স্থূলতা, ধূমপান ও বেশকিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) হয়ে এই ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আজ ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘শিরা ব্লক’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।
সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি ছিলেন- আমেরিকান ভাসকুলার সার্জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম. আবিদুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন ইবনে সিনা ট্রাস্টের মেম্বার এডমিন অধ্যাপক ড. একেএম সদরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম বীর প্রতীক, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
সেমিনারে শিরা ব্লকজনিত পা ফোলা রোগের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলেজের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিএম মকবুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম মহিবুল আজিজ। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. একেএম জিয়াউল হক ও সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাজমুল হাসান।
এ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, নানা কারণে শরীরে এক বা একাধিক গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। যেমন- দীর্ঘ ফ্লাইট বা বিছানায় বিশ্রামের সময় এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। জেনেটিক এবং পারিবারিক ইতিহাস থাকলে রোগটিতে আক্রান্তের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না করলে ওই জমাট বাঁধা রক্ত ফুসফুসে জমা হয়ে প্রাণঘাতী পালমোনারি এমবোলিজম হতে পারে। পালমোনারি এমবোলিজম হল ফুসফুসে রক্তের জমাট বাঁধা, যা শরীরের অন্য অংশে যেমন- বাহু বা পায়ে জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যায় এবং ফুসফুসের রক্তনালীতে জমা হয়। যা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ডিভিটি অথবা শিরা ব্লক প্রতিরোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলা, নিয়মিত কিছু সময় হাটাহাটি করা বা সক্রিয় থাকা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়ানো এড়ানো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সদ্য উদ্বোধন হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ব্যবহারকারী যানবাহন সংখ্যা লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ দিনে এই টানেল ব্যবহার করেছে ৯৭,১৪৫টি যানবাহন। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৬০ টাকা। রবিবার দিবাগত রাতের মধ্যে ব্যবহারকারী যানবাহন সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘টানেল ব্যবহারকারী যানবাহন সংখ্যা লাখ ছুঁই ছুঁই। গত ১৪ দিনে যে হারে যানবাহন চলেছে সে হিসেবে রবিবার মধ্যে ব্যবহারকারী যানবাহন লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। এখানে প্রতিদিন রাত ১২টায় যানবাহন ও টোলের হিসেব করা হয়।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সকাল ৬টা থেকে সাধারণের চলাচলের জন্য টানেলটি খুলে দেওয়া হয়।