শুধু জায়নামাজ-ছাতা নিয়ে ঈদগাহে যাওয়ার অনুরোধ

জাতীয়, 28 June 2023, 880 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তাব্যবস্থা সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। এসময় তিনি ঈদের নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের জায়নামাজ ও ছাতা ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে না আসার অনুরোধ করেছেন।

আজ ২৮ জুন বুধবার সকালে ঈদগাহে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

কমিশনার বলেন, ঢাকায় ঈদের বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে। এখানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ ৩০-৩৫ হাজার লোক নামাজ পড়বেন। যারা ঈদগাহ আসবেন, তারা শুধুমাত্র জায়নামাজ আর ছাতা সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারেন। অন্য কোনো লাগেজ বা ব্যাগ না নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি। প্রত্যেককে চেকপোস্টে তল্লাশি শেষে ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। গাড়ি কোথায় থামবে সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে অনেকদূর হেঁটে আসতে হবে তাই বৃষ্টির দিনে সবার সঙ্গে ছাতা থাকা বাঞ্ছনীয়। আবহাওয়ায় যদি আরও বড় দুর্যোগ না হয় তাহলে মুসল্লিরা এ অবস্থায় নির্বিঘ্নে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ঈদের সময়টাতে জাতীয় ঈদগাহসহ গোটা রাজধানীজুড়ে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। তবে জঙ্গি হামলার কোনো শঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি। কমিশনার বলেন, এবারে ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে কয়েকস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। ঈদে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই, তবে অতীত ইতিহাসের বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশের সব ইউনিট তৎপর রয়েছে।

ডিএমপি প্রত্যেকটা ঈদের জামাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে। বিভিন্ন ইউনিটের পোশাকধারী সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। কমিউনিটি পুলিশ ও বিট পুলিশিংও স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তার বিষয়ে তৎপর থাকবে। এছাড়া, অন্য কোনো হুমকি থাকাকালে সিটিটিসি প্রস্তুত থাকবে।

জাতীয় ঈদগাহে ডিএমপির পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডগ স্কোয়াডেরর মাধ্যমে সুইপিং করা হয়েছে। র‍্যাবও ফোর্স নিয়োগ করবে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।

ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ঈদে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাতে অনেকেই বাসা খালি রেখে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন, সেখানেও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এবারও আশা করছি সে অবস্থা বজায় থাকবে। ঢাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। স্থানীয় সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে যোগাগাযোগ থাকবে। কোনো তথ্য আমাদের জানালে তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ এটেন্ড করবে। তারপরেও যারা গ্রামে যাচ্ছেন, মূল্যবান সম্পত্তি খালি বাসায় না রেখে ঘনিষ্ঠদের বাসায় অথবা ব্যাংকে রেখে যান। যদিও পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে, তাও ফাঁকা বাসায় মূল্যবান সামগ্রী থাকলে ঝুঁকি থেকে যায়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কসাইয়ের ছদ্মবেশে রেকি করে অপরাধের বিষয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে জানাবেন। কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশকে জানিয়ে দিন। যে কোনো তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।

কমিশনার বলেন, ডিএমপির ৩২ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৩-৪ হাজার জনকে হয়তো ছুটি দিব। বাকিরা নগরবাসীর সেবায় ঢাকায় দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের ঈদ নেই। আশা করি সবার নিরাপদে ঈদ উদযাপিত হবে।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে Read more

ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় Read more

এইচএসসি পরীক্ষা: কোচিং সেন্টার বন্ধ ৪৩ দিন

জাতীয়, 8 August 2023, 630 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, আগামী ১৭ আগস্ট থেকে উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এর আগে ১৪ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৩ দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

আজ ৮ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে জাতীয় মনিটরিং ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে তিনি এ তথ্য জানান।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ও নকলমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সূচি গত ৮ জুন প্রকাশ করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশারের সই করা সূচিতে জানানো হয়, পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে বহু নির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উভয় অংশের পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না।

এতে বলা হয়, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে মোবাইল ফোন আনতে পারবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।

জুয়া খেলার সময় পুলিশের হাতে আটক ৫ জুয়াড়ি

জাতীয়, 11 May 2023, 1131 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ভোলার তজুমদ্দিন থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাঁচ জুয়াড়িকে আটক করেছে। আটক ৫ জনের বিরুদ্ধে জুয়া আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পরে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

থানা সূত্রে জানা গেছে, তজুমদ্দিন থানার এস আই রাসেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় চাচড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড’র আনন্দ বাজারের পুর্ব পাশে গিয়াস উদ্দিনের মুদি দোকানের মধ্যে প্রকাশ্যে জুয়া খেলার সময় তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলো, উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বালিয়াকান্দি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সোহাগ (২৫), আব্বাসের ছেলে ঈমন (১৯), মান্নানের ছেলে জসিম (৩৭), সামছুল হকের ছেলে আলাউদ্দিন (৪৫) ও মনোয়ার আলীর ছেলে আলাউদ্দিন (৪৬)।

এসময় গ্রেফতার ব্যক্তিদের জুয়া খেলার স্থান হতে নগদ টাকা, জুয়া খেলার খোলা তাস আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে আটক ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কোর্টে চালান দেয়া হয়।

থানার অফিসার ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, প্রকাশ্য জুয়া খেলা রোধে জুয়া আইনে মামলা করা হয়।পাঁচ আসামীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

সাজগোজেও গুনতে হবে বাড়তি খরচ

জাতীয়, 1 June 2023, 830 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
২০২৩-২৪ প্রস্তাবিত অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি কসমেটিকস আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি (শুল্ক কর) বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন সাজতে গেলে বেশি টাকা গুনতে হবে।

আজ ১ জুন বৃহস্পতিবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তব্যে তিনি জানান, কসমেটিকস আমদানিতে শুল্ক কর আরও ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে অর্থাৎ ২০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশি কসমেটিকস আমদানিতে আগে শুল্ক কর ছিল ৩ শতাংশ। এখন থেকে তা হবে ২০ শতাংশ।

এতে অর্গানিক সার্ফেস অ্যাকটিভ উপকরণ, বার কেক ও বিভিন্ন সাবান তৈরির উপকরণ, ওয়াশিং ক্রিম, লিকুইড ক্রিম ও বিয়ের উপকরণের দাম বাড়বে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি সাবান, লিকুইড সাবান ও ডিটারজেন্টের শুল্ক কর ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশীয় বাজারে বিদেশি কসমেটিকস জাতীয় পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি। অধিকাংশ সময়ই লাগেজ পার্টির মাধ্যমে কিংবা অবৈধ উপায়ে বিদেশি কসমেটিকস আমদানির অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য বিদেশি উপকরণসহ কসমেটিকস শুল্ক কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর আগে জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় বাজেট অধিবেশন। অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের ১৫তম বাজেট এটি।

নতুন অর্থবছরের এ বাজেট প্রস্তাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, চারটি মূল স্তম্ভের ওপর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি।

আমরা যুদ্ধ ও সংঘাত চাই না : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 24 March 2023, 1108 Views,
ফাইল ছবি

চলারপথে ডেস্ক :
সব প্রকার বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ ও সংঘাত চাই না, নর-নারী-শিশু হত্যা আমাদের তীব্রভাবে ব্যথিত করে। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। টেকসই শান্তি বিরাজমান থাকলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শান্তির নীতি অনুসরণ করি।’
তিনি সব প্রকার বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানান।

২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে বিশ্বের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি স্মরণ করেন একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে আত্মোৎসর্গকারী সব শহিদদের, যাদের তাজা রক্তের শপথ বীর বাঙালিদের অস্ত্রধারণ করে স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছর ধরে শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার প্রয়াসে সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন। সেই থেকে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর একুশ দফা, ’৬২-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সব আন্দোলন সংগ্রামে অত্যন্ত দূরদর্শীতার সঙ্গে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।

তিনি ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এদেশটির নাম হবে পূর্ব-পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ’। তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করেছিলেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পুরো জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাক-সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা শুরু করে। বৈঠকের মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করে তারা নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন; ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন এবং ১৫ মার্চ থেকে ৩৫ দফা নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ সারা পূর্ব-বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সব প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তার আদিষ্ট পথেই পরিচালিত হতে থাকে। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার শাসন সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। ইয়াহিয়া-ভুট্টো বারবার সমঝোতার প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে এদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে অটল থাকেন। ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সারা দেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাংক নিয়ে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ পরিচালনা করে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং রাজারবাগে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। এর অব্যবহিত পূর্বেই জাতির পিতা স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান- ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন-চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও’। যা প্রথমে ইপিআর’র ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিরা বন্দি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়; এমনকি তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। ১৩ জুন সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস যুক্তরাজ্যের একটি পত্রিকার প্রথম পাতায় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের নির্মম বর্বরতার বাস্তব চিত্র নির্ভর একটি বিস্তারিত নিবন্ধ প্রকাশ করলে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি ত্বরান্বিত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারায় এবং গোটা দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর আমরা জাতিসংঘের গণহত্যা বিরোধী কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শান্তির সংস্কৃতির ওপর রেজুলুশন গ্রহণের প্রস্তাব করি, যা ১৯৯৯ সালে গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তির সংস্কৃতির বর্ষ’ এবং ২০০১-২০১০ সময়কে ‘শান্তির সংস্কৃতি এবং অহিংস দশক’ ঘোষণা করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সাল থেকে সব নির্বাচনে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে গত ১৪ বছরের বেশি সময় একটানা তাদের ভাগ্যোন্ননের জন্য কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।’

তিনি বলেন, আমরা ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছি। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণহত্যা এড়াতে ভীত-সন্ত্রস্ত ১১ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছি: ভবিষ্যত প্রজন্ম এই পরিকল্পনাকে সময়োপযোগী করে বাস্তবায়ন করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।

সূত্র : বাসস

আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

জাতীয়, 25 March 2024, 383 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ সত্যিই বাংলায় এসেছে সেই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। আর আজ বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি।

বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একই সঙ্গে গৌরব ও শোকের। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকেরা শোষণ এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে আগ্রাসন চালিয়েছিল, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধিকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালিরা। তারা ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে প্রতিটি বাঙালির মনে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুপণ লড়াই ও রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা।

প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দিবসটি উদযাপন করে গোটা জাতি। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতার রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি।

এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালি জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে উঠেছিল জেনারেল আইয়ুবের গদি। জনতার সাগরে সৃষ্টি হয়েছিল তাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত ছিল গ্রাম-শহর, জনপদ। শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের ‘নীলনকশা’।

কিন্তু ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় মুক্তির দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ছবি।

কিন্তু বাঙালির আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা।

সেই কালরাত্রি থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদ, পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।