চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে ৭ বছরের শালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ভগ্নিপতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ ২ জুলাই রবিবার দুপুরে উপজেলার শাহবাজপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতের নজরুল মিয়া (২৩)। তিনি সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামের মধ্যপাড়ার মোঃ নূরুল ইসলামের ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম হোসাইন বলেন, গত ২৫ জুন বিকেলে ৭ বছরের ওই শিশু তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়।
পরদিন ২৬ জুন বেলা ১১টার দিকে ভগ্নিপতি নজরুল মিয়া শিশু শালিকাকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। পরে তার চিৎকার শুনে বোনসহ বাড়ির লোকজন এগিয়ে এলে নজরুল মিয়া পালিয়ে যায়।
পরে বাড়ির লোকজন শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভর্তি করে।
এ ঘটনায় শিশুর পিতা বাদি হয়ে জামাতার বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার দুপুরে পুলিশ নজরুলকে গ্রেফতার করে।
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের সীল-সাক্ষর জালিয়াতি
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পীকে (২৯)কে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা (সিআইডি)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারকের সীল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে গতকাল সোমবার ভোরে তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রাব্বি উপজেলার নিজ সরাইল গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে।
গতকাল সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিআইডির পুলিশ সুপার শাহরিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারকের সীল-সাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে মোটর সাইকেলের লাইসেন্স করে আসছিল। সম্প্রতি একটি মোটর সাইকেল আটকের পরে দেখা যায় ওই মোটর সাইকেলের সীল ও সাক্ষর ভূয়া। পরে ওই চক্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পী ৫নং আসামী। সোমবার ভোরে তার নিজ বাড়ি থেকে বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আদালতে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন শোভনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাপ্পীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল প্রায় চারশত বছরের প্রাচীন আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ। এটি মুঘল আমলের অপরূপ স্থাপত্য শৈলীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো।
এলাকায় জনশ্রæতি আছে ১৬৬২ সালে দরবেশ শাহ আরিফ সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অপরূপ স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য সমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি নির্মান করেন। তার নামানুসারেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আরিফাইল মসজিদ। এর গম্বুজ ও নান্দনিক কারুকার্য মুঘল আমলের উৎকর্ষতার পরিচয় বহন করে। বর্তমানে মসজিদটি পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে প্রতœতত্ত¡ বিভাগ। মসজিদের পাশেই রয়েছে জোড়া কবর যা আরিফাইল মাজার নামে পরচিত।
প্রাচীন এই মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে আখ্যায়িত করে বর্তমানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা তাদের মনোবাসনা পূরন করার জন্যে এই মসজিদে এসে নামাজ পড়েন।
সরাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই আরিফাইল গ্রামে। আরিফাইল গ্রামে রয়েছে বিশাল বড় এক দিঘী। সাগরদিঘী হিসেবে পরিচিত এই দিঘীটির দক্ষিন পাড়েই অবস্থিত প্রাচীন এই আরিফাইল মসজিদটি। আরিফাইল মসজিদের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট।
এর চার কোনায় চারটি বুরুজ ও মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলো মসজিদের ভেতরের অংশকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে। সেগুলোতে সাজানো হয়েছে পদ্মফুলের ছবিতে। এর দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। চুন, সুরকি ও ইটের গাঁথুনি। মসজিদটির মূল গেইট থেকে শুরু করে মসজিদের ভেতরের বিভিন্ন অংশে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক রেজুয়ানুর রহমান মসজিদটির সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ করেন। মসজিদটি সংরক্ষনের জন্য পূর্বের কাঠামো ঠিক রেখে মসজিদটিতে টাইলস এবং চুনকাম করা হয়েছে। মসজিদটিতে প্রবেশ ও বের হতে একাধিক পথ রয়েছে। প্রাচীন এই মসজিদটির সঠিক ইতিহাস স্থানীয়দের জানা না থাকলেও এলাকাবাসীর কাছে এটি গায়েবি মসজিদ হিসেবে পরিচিত। তাই সওয়াব লাভের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মুসল্লী এসে মসজিদটিতে নামাজ পরেন।
মোহাম্মদ আলী নামে স্থানীয় এক মুসল্লী বলেন, এই মসজিদটি কে সবাই গায়েবি মসজিদ হিসেবেই চিনে। এখানে মানুষ কিছু মানত করলে সেই মানত পূরণ হয়।
ইফতেফার হোসেন নামে স্থানীয় আরেক মুসল্লী বলেন, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে মসজিদের বিষয়ে শুনেছি। তারাও বলতে পারেননি এই মসজিদটি কে কবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে এটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই মসজিদে এসে নামাজ আদায় করেন। আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে আসেন মানত করতে। এখানে যদি কেউ মানত করেন সেই মানত আল্লাহতায়ালা পূরন করেন।
আমরা মসজিদের বাইরে যেন মানুষ নামাজ পড়তে পারেন সেজন্য খোলা জায়গাতে একটি ছাউনী করে দেয়ার জন্য দাবি জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল শুক্কুর বলেন, আমার বয়স এখন ৮৮। আমার দাদা বেঁচেছিলেন ১০৪ বছর। তিনিও মসজিদের সঠিক ইতিহাস বলতে পারে নি।
এদিকে মসজিদটির পাশেই জোড়া কবর রয়েছে। স্থানীয়দের ধারনা দরবেশ শাহ আরিফ এবং তার স্ত্রী এই জোড়া কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।জোড়া কবর বর্তমানে আরিফাইল মাজার নামে পরচিত। এ ব্যাপারে আরিফাইল মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মজিদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এই মসজিদে প্রতিদিন শত শত মানুষ নামাজ আদায় করেন। জুম্মারদিন এই মসজিদে মুসল্লীদের স্থান সংকুলান হয়না। মানুষ কষ্ট করে বাইরে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। তিনি মুসল্লীরা যাতে মসজিদের খোলা জায়গায় নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য খোলা জায়গাতে একটি ছাউনী করে দেয়ার জন্য দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, মসজিদটি এখন প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের অধীনে। মসজিদটির পাশে জোড়া কবর রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ এসে এখানে মানত করেন। টাকা পয়সা দান করেন। প্রতিমাসে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা রেখে মসজিদটির উন্নয়ন কর্মকান্ড তরান্বিত করার আহবান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, আমি মসজিদটি দেখতে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে মাজারে টাকা তোলার বিষয়টি আমরা জানা ছিল না। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মাজারের আয়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মাইশা আফরিন সুবর্ণা (১৪) নামের এক কিশোরী বিয়ের তিনমাসের মাথায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে কিশোরীর মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মাইশা আফরিন সুবর্ণা উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামের নাসির উদ্দিনের মেয়ে। নাসির উদ্দিন বলেন, তার কিশোরী মেয়ে সুবর্ণা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পার্শ্ববর্তী বিন্নিঘাট এলাকার ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মনির হোসেন (২২) তার মেয়েকে পছন্দ করতেন। পরে পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য তার মেয়ে সুবর্ণাকে অত্যাচার করতো মনির। বিয়ের সময় মনিরকে ১ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়ার পর সে আরও যৌতুককের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তার মেয়েকে তালাক দিবে একথা বলেন মনির। সে কথা শুনে সুবর্ণা শনিবার বিকেলে শোবার ঘরের বাশের তীরের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি আরও বলেন, মনিরের চাপের কারণে তার মেয়ে সুবর্ণাকে বিয়ে দিতে হয়। মনিরের কারনে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এক কিশোরী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মরদেহ উদ্ধারের পর জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
যথাযথ মর্যাদায় সরাইলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে।
উদযাপন উপলক্ষে একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১মিনিটে সরাইল উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরাইল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইঁয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. রকিবুল হাসান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা, সরাইল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস।
সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমত আলী, আওয়ামী লীগের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. নাজমুল হোসেন, উপজেলা বিএনপির পক্ষে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. নুরুজ্জামান লস্কর তপু, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরিদ, আওয়ামী লীগ নেতা মো.মাহফুজ আলী সহ উপজেলার প্রশাসনের র্কমকর্ত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নেতা কর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে এগারোটায় উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সরাইল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মঈন উদ্দিন। আলোচনা শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।
এছাড়াও সকল ভাষা শহীদ ও প্রয়াত ভাষা সৈনিকদের আত্মার শান্তি কামনা করে উপজেলা সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল, মোনাজাত এবং অন্যান্য সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।