বিকল্প সড়ক না করেই সেতু ভাঙায় দুর্ভোগ

বাঞ্চারামপুর, 9 July 2023, 1080 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন সেতু নির্মাণ করতে হবে। তাই ভেঙে ফেলা হয় বেইলি সেতু। এর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। বিকল্প রাস্তা নির্মাণ না করেই সেতুটি ভেঙে ফেলায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।

banner

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ গ্রামের বেইলি সেতুটি গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে ভেঙে ফেলেন ঠিকাদার। ঢাকা-বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর-কুমিল্লা সড়কে ছিল সেতুটি। বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে পাশের কাঁচা মাঠ দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ বেইলি সেতুটি ভেঙে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতাস নদী থেকে বারিয়াদহ বিলের সঙ্গে যুক্ত খালের ওপর একটি বেইলি সেতু ছিল। ১৯৯০ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এই সেতু দিয়ে ঢাকার সঙ্গে বাঞ্ছারামপুর, মুরাদনগর, দেবীদ্বার, নবীনগর, হোমনা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। ফরদাবাদ গ্রামের শান্তির বাজারসংলগ্ন খালটির ওপর ৩১ দশমিক ৪২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করছে আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স (জেবি) নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। গত ২ জানুয়ারি কার্যাদেশ পায় প্রতিষ্ঠান দুটি। কাজটি ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি শেষ করতে হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, পুরোনো বেইলি সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখনও নির্মাণ হয়নি বিকল্প সড়ক। এ কারণে রাস্তার পাশের ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহন। মাঠের নরম মাটিতে যানবাহন প্রায়ই আটকে গিয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে বড় বড় গর্ত ও মাটি কাদা হয়ে যাওয়ার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুই মাস ধরে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। মাটি কাটার কারণে সেতুর দক্ষিণ পাশের ফরদাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতল মার্কেটের দুটি কলামের মাটি সরে গিয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। উত্তর পাশের আলমগীর হোসেনের বাড়িতে নির্মিত মার্কেটের তলার মাটি সরে গিয়ে মার্কেটে ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি দোকানের ভাড়াটিয়া তাদের মালপত্র নিয়ে সরে গেছে।

ফরদাবাদ গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু হলেও কিছুদিন পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই যানবাহনগুলো স্কুলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। যানবাহন চলার কারণে মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারের ব্যবসায়ী কবির হোসেনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বৃষ্টি হলেই মালবাহী ট্রাক মাঠের কাদামাটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করেই সেতুটি ভাঙা কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বাবু মিয়া বলেন, হটাৎ করে সেতুটি ভেঙে ফেলায় ও বিকল্প সড়ক নির্মাণ না করায় এই সড়ক দিয়ে যেতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে।

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির স্থানীয় প্রতিনিধি মোস্তফা কামালের দাবি, জায়গা না থাকায় বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই মাঠ দিয়ে রাস্তা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এই জায়গায় ইট-সুরকি ফেলে দেওয়া হবে।

পাশের ভবনগুলোতে ফাটল ও ঝুঁকির বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, উন্নয়নকাজের সময় কিছু সমস্যা হতে পারে। ৭-৮ মাস ধরে নির্মাণসামগ্রী এনে রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, যাবতীয় কাজের দায়িত্ব ঠিকাদারের। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করার জন্য তাঁকে বলে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মাইশা আফরিন সুবর্ণা (১৪) নামের এক কিশোরী বিয়ের তিনমাসের মাথায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে কিশোরীর মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মাইশা আফরিন সুবর্ণা উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামের নাসির উদ্দিনের মেয়ে। নাসির উদ্দিন বলেন, তার কিশোরী মেয়ে সুবর্ণা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পার্শ্ববর্তী বিন্নিঘাট এলাকার ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মনির হোসেন (২২) তার মেয়েকে পছন্দ করতেন। পরে পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য তার মেয়ে সুবর্ণাকে অত্যাচার করতো মনির। বিয়ের সময় মনিরকে ১ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়ার পর সে আরও যৌতুককের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তার মেয়েকে তালাক দিবে একথা বলেন মনির। সে কথা শুনে সুবর্ণা শনিবার বিকেলে শোবার ঘরের বাশের তীরের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি আরও বলেন, মনিরের চাপের কারণে তার মেয়ে সুবর্ণাকে বিয়ে দিতে হয়। মনিরের কারনে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এক কিশোরী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মরদেহ উদ্ধারের পর জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

banner

অসমাপ্ত আত্মজীবনী ছাত্র-যুবসমাজকে আত্মনির্ভরশীল করবে : ক্যাপ্টেন (অব.) তাজ

বাঞ্চারামপুর, 23 September 2023, 973 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কিমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্নকে হৃদয়ে ধারণ করে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠে ছাত্র ও যুব সমাজের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা সৃষ্টি করবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলের বেশি করে বই পড়তে হবে।

banner

আজ ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের উদ্যোগে শাহ-রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, একদল ষড়যন্ত্রকারী নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশে ঘুরে ঘুরে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই সামনের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহনে নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তুষারের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ লামাগনা সদস্য ট্রাস্টিবোর্ড ড. কারমেন জেড, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ডক্টর হাসিনা খান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পরিচালক ওমর ফারুক বাবলু, বিশিষ্টি শিক্ষানুরাগী ফারাহ ইসলাম প্রভা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কি মিত্র চাকমা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি প্রিন্সিপাল আবুল খায়ের দুলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাদিদ আল রহমান জনি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম ভূঁইয়া বকুল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জলি আক্তার, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী আতিকুর রহমান, পৌর মেয়র তফাজ্জল হোসেন, শাহ রাহাত আলী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সোহেল রানা, ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী, মাওলানা জাকির হোসেন, শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া প্রমুখ।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

বাঞ্চারামপুর, 21 August 2024, 464 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামকে ২১ মাস আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা এক মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আজ ২১ আগস্ট বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালতের বিচারক সাদেকুর রহমান তাঁর ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

banner

ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি ২০০৮ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৯৬ সালে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। একই সঙ্গে তিনি দলটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন। পরে কমিটি থেকে বাদ পড়েন। গতকাল ২০ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে তাজুল ইসলামকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে মিছিল বের করাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষ চলাকালে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রফিকুল পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল হোসেন বাদী হয়ে ৩০২ ধারাসহ (হত্যা) বিভিন্ন ধারায় বিএনপির ১৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই মামলার এজাহারে সাবেক সংসদ সদস্য তাজুলের নাম নেই, তবে এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

জানতে চাইলে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় পেছন থেকে ইন্ধনদাতা হিসেবে তাজুল ইসলামের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এ কারণে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ওসি সহিদুল ইসলাম বলেন, ওই মামলায় জেলা গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল আহমেদ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতে ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর আগে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তিনি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, আজ দুপুরে তাজুল ইসলামকে পুলিশের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালতের ভেতর বিএনপির আইনজীবীরা ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনের জন্য হইচই করেন। আওয়ামী লীগের চারজন আইনজীবী সেখানে উপস্থিত হলেও পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় কোনো কথা বলেননি। একপর্যায়ে তাঁরা এজলাস ত্যাগ করে চলে যান। তিনটায় আদালতের রায়ের পর প্রিজন ভ্যানে তুলে পুলিশ তাঁকে আদালত থেকে নিয়ে যায়। এ সময় বিএনপির আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

কয়েকজন আইনজীবী বলেন, আদালত প্রথমে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আইনজীবীদের হইচইয়ের কারণে পরে ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামান মামুন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম খান ও জেলা ‍যুবদলের সহ-সভাপতি আইনজীবী আবদুর রহিম বলেন, ছাত্রদল নেতা রফিকুল হত্যা মামলায় তাজুল ইসলামের ইন্ধন রয়েছে। সে সময় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ গ্রহণ করেনি। আদালতে পুলিশসহ ৬০ জনের বেশি আসামি করে মামলা দিলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

এদিকে তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের খবরে আজ দুপুরে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় আনন্দমিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুরে উপজেলার মুসা মার্কেট থেকে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নেতাকর্মীরা আনন্দমিছিল বের করে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করেন।

এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল মহসিন, সদস্য সাখাওয়াত হোসেন, আবদুল করিম, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল করিম, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ৬৭তম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ

বাঞ্চারামপুর, 7 August 2023, 1052 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দূর্গারামপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ৬৭তম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখতে এভাবে ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন।

banner

আজ ৭ আগস্ট সোমবার বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ঋণ বিতরণের অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও ইষ্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক, ইষ্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।

এ সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম মাইমূন কবির, কালেরকণ্ঠ শুভ সংঘের পরিচালক মো. জাকারিয়া জামান, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো, চাঁন মিয়া সরকার, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক মো. মোশারফ হোসেন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অফিসার মো. আমির হোসেন আনোয়ার, অফিসার মো. শাহজাহান, আলমগীর হোসেন, মুজিবুর রহমান, মো. অলি উল্লাহ, মো. কবির হোসেন ও মো. বাছির মিয়া।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ইমদাদুল হক মিলন বলেন, পৃথিবীর কোথাও সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয় বলে আমার জানা নেই। মানুষের কল্যাণের জন্য এভাবে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করছে বাংলাদেশের সুনামধন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। মানুষের কল্যাণ হউক এইটাই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের চিন্তাধারা।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের এই ঋণ দিয়ে সচ্ছল করে তোলাই একমাত্র লক্ষ ও উদ্দেশ্য। অর্থনীতির মূল ধারায় বরাবরই অবহেলিত ও পিছিয়ে থাকা, সেসব তৃণমূল মানুষকে সামনে এগিয়ে নিতে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। বাংলাদেশে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ একটি মডেলের নাম। এভাবে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যদি বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের মতো গরিব লোকদের কাছে এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়ত হতদরিদ্র লোকগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে উঠতে পারতেন।

সভাপতি ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দেশের অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে বিভিন্ন ক্লান্তিকালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ।

সেখানে উপস্থিত সব মা-বোনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই ঋণের টাকা দিয়ে যাতে অসামাজিক ও অবৈধ কোনো ব্যবসায় কাজে বিনিয়োগ না করা হয়। আজ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ৩৪৪ জন হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত লোক বসুন্ধরা গ্রুপের সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ পেয়ে ৩৩টি স্কিমের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এর জন্য দোয়া চান যাতে করে বসুন্ধরা গ্রুপ সব অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত লোকদের সেবা করতে পারে।

তিনি আরও জানান, সোমবার ৪৩১জন উপকারভোগীর মাঝে ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৮৭ জনের প্রত্যেককে ১৫ হাজার করে ২৮ লাখ ৫ হাজার, দ্বিতীয় ধাপে ২৪৪ জনকে ১৫ হাজার করে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই ঋণ শুধু নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর মাধ্যমে তারা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল এবং শাক-সবজি চাষসহ ৩২ ধরনের কাজে এই ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করে উপকার পাচ্ছেন। ২০০৫ সাল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। এই ঋণের পরিধি প্রথমদিকে শুধু বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা পার্শ্ববর্তী উপজেলা হোমনা ও নবীনগরে বিস্তার লাভ করেছে।

বাহেরচর গ্রামের নার্গিস আক্তার (৪০) বলেন, ৫ হাজার টাকার ঋণ পেয়ে দুইডা ছাগল কিন্না এহন বেশি হইতে হইতে প্রায় ২ লাখ টাকার ছাগল বেচ্চি। বসুন্ধরা আমারে ৩ বার টেহা দিছে। বসুন্ধরার হগল মালিকগনের লাইগা দোয়া করি আল্লায় যেন ভালো রাহে।

কমুলপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী ফুল মালা (৪০) জানান, আমার জামাই মাছের ব্যবসা করেন। আমি বসুন্ধরার ঋণের টাকা আমার জামাইয়ের কাছে দিয়ে মাছের ব্যবসায়ে লাগিয়েছি। এখন আমরা লাভে আছি।

দূর্গারামপুর গ্রামের রুপা (৩২) বলেন, আমি এই টেহা নিয়া সেলাই মেশিন কিনছি। আমি এবং আমার মাদরাসা পড়ুয়া মেয়ে হেইডা চালাই। যা দিয়া আমার পরিবারের খাওনের চাহিদা মিডাইয়া মাইয়ার মাদরাসার পড়ালেহার খরচ জোগাই।

বাঞ্ছারামপুরে কাঠের রেক চাপায় নৈশপ্রহরী নিহত

বাঞ্চারামপুর, 21 November 2023, 917 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :

banner

বাঞ্ছারামপুরে কাঠের রেকের চাপায় নারায়ণ চন্দ্র দাস (৬০) নামে এক নৈশপ্রহরীর মৃত্যু হয়েছে।

২১ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উলজেলার রূপসদী ইউনিয়নের বাল্লাকান্দি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। দুপুরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

নারায়ণ চন্দ্র দাস উপজেলার রুপসদী ইউনিয়নের আশ্রাফপুর গ্রামের দক্ষিণ দাস পাড়ার মৃত দেবেন্দ্র চন্দ্র দাসের ছেলে।

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নারায়ণ গত দুই বছর যাবত রূপসদী ইউনিয়নের বাল্লাকান্দি বাজারের নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করছিল। প্রতিদিনের মত সোমবার রাতে প্রতিদিনের মতো ডিউটিতে যায় নারায়ণ। ভোরে একটি দোকানের সামনে বসলে ভারি কাঁচযুক্ত কাঠের একটি রেক নারায়ণের উপর পড়ে গেলে এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নারায়ণ মারা যান। পরে স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।