অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজ ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যায় ৬টায় সেটি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডালিয়া পয়েন্টে পানি পরিমাপক কর্মকর্তা নূর ইসলাম।
এ দিকে পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়ায় ব্যারেজের ভাটিতে থাকা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ।
চলারপথে রিপোর্ট :
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় এক দুর্ধর্ষ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।
এয়ারপোর্টে বিভিন্ন সময় শিকারের আশায় যাত্রীবেশে ঘুরে বেড়ানো অবস্থায় মো কামাল মিয়া নামে এই অভিযুক্তকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক।
এয়ারপোর্ট এপিবিএন সূত্রে জানা যায়, ৩১ আগস্ট ও ৭ সেপ্টেম্বর অজ্ঞান পার্টির দুইটি অভিযোগ পাওয়া যায়। দুইটি অভিযোগেই একই ধরনের প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। ৩০ আগস্ট ওমান থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন সুরুজ আলী। এরপর ২ নম্বর ক্যানোপি দিয়ে বের হওয়ার সময় যাত্রীবেশী কামালের পরিচয় হয়।
কৌশলে প্রতারক সুরুজের গন্তব্য জেনে নেয় কামাল। এর পর নিজেও একই দিকে যাবেন বলে এক সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দেন অভিযুক্ত কামাল। এরপর সুরুজকে বিভিন্ন কথা বলে বহুতল কার পার্কিং এলাকায় নিয়ে গিয়ে গল্প করেন এবং আস্থা অর্জন করে যাত্রী সুরুজকে কামাল কৌশলে জ্যুস পান করান এবং ভুক্তভোগী জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সকল মালামাল হারিয়েছেন।
৭ সেপ্টেম্বর আরো এক প্রবাসীর অভিযোগ পায় এয়ারপোর্ট এপিবিএন। যাত্রী রিপন হোসেন সৌদি থেকে ৬ সেপ্টেম্বর শাহাজালাল বিমানবন্দরে আসেন। ঢাকা ফেরার পর অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। তিনিও সাথে থাকা ৩ হাজার সৌদি রিয়াল, মোবাইলসহ সবকিছু হারান।
এ সকল অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে এয়ারপোর্ট এপিবিএন। তদন্তে প্রতারক কামালকে অজ্ঞান পার্টির সদস্য হিসেবে শনাক্ত করে এপিবিএনের অপারেশন টিম। এর পর জাল বিছিয়ে অপেক্ষা করা হচ্ছিল কামালের। গতকাল মধ্যরাতে অভিযুক্ত কামালকে আবারো যাত্রী বেশেই বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাকে গ্রেফতার করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক আরো জানান, আটক হওয়ার সময় নিজেকে যাত্রী দাবী করছিলেন কামাল। এ সময় যাত্রীর মত ব্যাগ বহন করতে দেখা যায় তাকে। কিন্তু বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পর নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয় কামাল। উপরে আলোচিত দুই যাত্রী রিপন ও সুরুজ দুইজনকেই সে নিজে অজ্ঞান করে মালামাল নিয়ে সটকে পড়েছে বলে স্বীকার করেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ও হাজার হাজার উৎসুক জনতার উপস্থিতে রাউজানের নোয়াজিশপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী ‘নদিমপুর বলিখেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে নদিমপুর-নোয়াজিশপুর এলাকাবাসীর উদ্যোগে নদিমপুর তেঁতুলতলা এলাকায় বিশাল মাঠে এ বলিখেলার আয়োজন করা হয়। বলিখেলায় খ্যতনামা বলিসহ চট্টগ্রামের শতাধিক বলি অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ফটিকছড়ির মাসুদ রানাকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন কক্সবাজারের মুহাম্মদ হোসেন।
বলিখেলা দেখতে রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে যান বলিখেলাপ্রেমীরা। বলিখেলার উদ্ধার ও ফাইনাল রাউন্ড শেষে প্রধান অতিথি থেকে বলিখেলার উদ্বোধন ও পুরস্কার প্রদান করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নোয়াজিশপুর ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন এম সরোয়ার্দী সিকদার।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বখতিয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রয়েল কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার নারায়ণ চন্দ্রনাথ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী, নেছারুল হক, জমিরুল হক, আলফাজ হোসেন চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন দোস্ত মোহাম্মদ মেম্বার, শফিউল বশর মেম্বার, রাশেদ চৌধুরী, ইউপি সদস্য কাজী জিয়াউর রহমান, শওকত ওসমান চৌধুরী, রাকেশ রায় চৌধুরী, সৈয়দুল হক, আকতার হোসেন চৌধুরী, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, আলাউদ্দিন আলম, শফিউল ইসলাম, তাজউদ্দিন খান সোলেমান, কুতুব উদ্দিন সিকদার, তসলিম উদ্দিন সুজন, আবদুল্লাহ আল হারুন, নাহিদুল করিম চৌধুরী, আবদুুল মোতালেব, ফাহিম, রবিউল হোসেন রবিন প্রমুখ।
বলিখেলা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা বসানো হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি যে, কোটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আছে। তেমনি অযৌক্তিকভাবে যে কোটা সংরক্ষণ করা আছে, এগুলোকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা দরকার। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি এবং করব। আমাদের সংবিধানে কোটার কথা বলা আছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অগ্রসরতার জন্য কোটার প্রয়োজন আছে।
আজ ১৩ জুলাই শনিবার দুপুরে মাদারীপুর জেলার শিবচরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে ‘দাদাভাই হাউজিং এস্টেট’ এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তো আর কোটার দরকার নাই। তাদের সন্তানেরাও কোটার বাইরে চলে গেছে। এখন অন্যদেরকে কোটা দেওয়া হবে কিনা তা আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সরকার সেভাবেই কাজ করবে। এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলব, আপনারা আরেকটু অপেক্ষা করুন, ধৈর্যধারণ করুন। এভাবে আপনারা পড়াশোনা নষ্ট করে যেভাবে মাঠে আছেন, আপনাদের প্রতি সিমপ্যাথি থাকা স্বত্বেও আমরা মনে করি আপনারা নিজেদের ক্ষতি করছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা মাঠ থেকে উঠে আসুন, পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুন। সেই সঙ্গে আপনাদের দাবির ব্যাপারেও সোচ্চার থাকুন। আমরা আপনাদের অভিভাবক, আমরা আপনাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব নাই। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিও সংবেদনশীল। আমাদের সরকার অবশ্যই সব দিকেই বিচার বিশ্লেষণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
এর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলার দাদা ভাই উপশহরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে যোগদান করেন। এসময় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিবচরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ২০২৪ বাস্তবায়নের জন্য ছাতিয়ান, কাঠবাদাম, জারুল, চেরি, কাঁঠাল, জলপাই, জামরুল, পলাশ, গাব, জাম্বুরা, দেশী টগর, রাধাচূড়া, নারকেল, সোনালু, নিম, বকুল, করবি, আলমন্ডা, মৌসুন্দা গোলাপি, চালতা, চাইনিজ টগর, সিজিমাস, গোল্ডেন সাওয়ার, ল্যাংড়া আম রঙ্গন গোলাপি, বোতল ব্রাশ, কৃষ্ণচূড়া, পেয়ারা, মেহেদী, শিউলি, লটকন, মেহগনি, বড়ই, আম, ফলসা, জাম, হরতকি,বয়রা, অর্জুন, হিজল, ডেউয়া, আমলকী ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. হামিদুর রহমান খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.আব্দুল মতিন, যুগ্ম সচিব শাহনাজ সামাদ, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক(যুগ্ম সচিব) মো.শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব -শেখ নূর মোহাম্মদ, মো.সোহেল হাসান, আবুল কালাম আজাদ, ফরিদুল ইসলাম, মো.জহিরুল ইসলাম, দেবময় দেওয়ান, মুহাম্মদ ইকবাল হুসাইন, মো.আতিউর রহমান।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান, মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী, পুলিশ সুপার শফিউর রহমান,শিবচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মো. সেলিম মিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন, শিবচর পৌর মেয়র মো. আওলাদ হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার পর্যবেক্ষণে আগ্রহী তারা। তাই বাংলাদেশে আসতে সরকারের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা চেয়েছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘ওনাদের (ওবামা ও হিলারি) জানানো হয়েছে, ওনারা এ ইন্টারভিউ সম্পর্কে জেনেছেন; কিন্তু ওনাদের আসতে হলে তো বিচার শেষ করে দিয়ে ডাকলে হবে না।’
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যে মামলাটা ক্রিমিনাল মামলা, যে মামলাগুলো নিয়ে বক্তব্য আনা হয়েছে, ওনারা এসে যদি দেখেন তাহলে তো ওনারা বুঝতে পারবেন যে, এ মামলার ভেতরে কোনো সারবস্তু নাই।’
এই আইনজীবী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৬৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে; যার মধ্যে দুটি ফৌজদারি ও বাকিগুলো শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা।
তিনি আরো বলেন, গত ৩০ আগস্ট রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রামীণ ব্যাংক এক চিঠিতে ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রামীণ কমিউনিকেশনকে জানায়, তাদের সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করা হবে না। এ ঘটনায় এবার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাড়ে ৯শ শ্রমিকের মামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আত্মবিশ্বাস না থাকায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধানমন্ত্রী বিবৃতিদাতাদের ড. ইউনূসের মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আদালতকে ভয় পেলে চলবে না। আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কোনো বিবৃতিতে প্রভাবিত হবে না। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা আইন অনুযায়ী চলবে।
বিবৃতিদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠান, আইনজীবী পাঠান। দলিল-দস্তাবেজ, কাজগপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কিনা। সবকিছুই আইন মতো চলে।
স্টাফ রিপোর্টার:
আজ মহান বিজয় দিবস, বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেয়ার দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দু’লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্ম সমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির দিন কাল। জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজিবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে।
আদি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন এবং ক্রমবিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বাঙালির শৌর্য-বীর্য যেন আর একবার ধপ করে জ্বলে উঠে। প্রথম আগুন জ্বলে ’৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি। ফাগুণের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য প্রথম বলীদান বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে। সেই থেকে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শেকল ভাঙার লড়াই। পাকিস্তানিদের সাথে হিসেব-নিকেশের হালখাতার শুরুতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। পলাশীর আম্রকাননে হারিয়ে যাওয়া সেই সিরাজদ্দৌলা আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রূপে এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৫২ সালে যে আগুন জ্বলেছিল রাজধানী ঢাকা শহরে সে আগুন যেন ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে সবখানে। যে আগুন জ্বলেছিল মোর প্রাণে, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে। বাঙালির বুকের ভেতর জ্বলে উঠা আগুন যেন সহস্র বাঙালির মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে।
বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। হিসেব-নিকেশ আর দেনা-পাওনায় পাকিস্তানিরাও বসে নেই। তারাও অংক কষতে থাকে কিভাবে বাঙালি জাতিকে যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা যায়। তাদের কাছে এই অলংকারই বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্য। ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ জানিয়ে যায় সময় আসছে হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দেয়ার পালা। অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাড়ের আর খুলির স্তুপ একদিন পাললিক হয়।
মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্য যুদ্ধে। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।
অবশেষে ন’মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূচিত হল মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।