চলারপথে রিপোর্ট :
নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে ১২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ ২২ জুলাই শনিবার বেলা ২টার দিকে লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশু আলফাজ হোসেন উপজেলার মহেশপুর গ্রামের আলমের ছেলে।
লালপুর ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ সাব্বির আহমেদ জানান, আলফাজসহ তিনবন্ধু শনিবার বেলা ২টার দিকে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নামে। কিন্তু আলফাজ সাতার না জানায় নিজের অজান্তেই নদীতে ডুবে যায়। এদিকে দু বন্ধু আলফাজকে না পেয়ে স্থানীয় লোকজনকে জানায়। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আলফাজকে উদ্ধার করে লারপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলফাজকে মৃত ঘোষণা করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা প্রাথমিকভাবে লো প্রোফাইল বজায় রেখে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ছদ্মবেশে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু পরে তারা বিপজ্জনকভাবে আন্দোলনের সামনের সারিতে চলে আসে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিসতিয়াগা ওচহোয়া ডি চিনচিক্রু আজ ২৮ জুলাই রোববার গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাইমুল ইসলাম খান সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সূত্র : বাসস
এই প্রসঙ্গে তিনি কোভিড হাসপাতাল,মেট্রো রেল, এক্সপ্রেসওয়ে,সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন এবং ডেটা সেন্টারের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন,‘আমাদের সকল উন্নয়নের প্রতীক,যা জনগণকে স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধা দিয়েছিল,সেগুলো ধ্বংসের শিকার’ হয়েছে।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধৈর্য দেখিয়েছেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন,তার দল আওয়ামী লীগের প্রায় ২১ জন এই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন।
দলমত নির্বিশেষে তিনি নিহত বা আহত সকলকে সাহায্য করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমি তাদের সাহায্য করার সময় দলীয় পরিচয় বিবেচনা করিনি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,তারা আন্দোলনের গতির শীর্ষে থাকতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার কারণে দেশে কোটার অস্তিত্ব ছিল না। তিনি বলেন,‘তখন তাদের দাবির যৌক্তিক ভিত্তি কী হবে?’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, সরকার মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বেঁচে থাকা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা ও তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে।
স্পেনের রাষ্ট্রদূত শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে সেনা মোতায়েন এবং কারফিউ জারির প্রশংসা করে বলেন, ‘এখন ধীরে ধীরে সবকিছুর উন্নতি হচ্ছে।’
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তিনি বোঝেন এবং এর প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন,‘আমি টেলিভিশনে সবকিছু দেখেছি কিন্তু ভাষার পার্থক্যের কারণে সেগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি, তবে সংবাদপত্র থেকে আমি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং মারামারি থেকে ধ্বংসের বিষয় জানতে পেরেছি।’
রাষ্ট্রদূত জানান, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে কয়েকটি ভাংচুর স্থান পরিদর্শন করেছেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেট বরাদ্দ জনগণের কল্যাণে সরকারের আন্তরিকতা নিশ্চিত করে। ‘অনেক দেশে এই ধরনের বাজেট সমর্থন বিদ্যমান নেই’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় এম্বাসেডর এট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
লাল-সবুজের পতাকা হাতে বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন নাজমুন নাহার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি ১৬৭টি দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন। সর্বশেষ ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ সেন্ট লুসিয়া ভ্রমণের মাধ্যমে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন নাজমুন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ জোসেফ পিয়ের এক বিশেষ সাক্ষাতে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে ‘সুপার ব্রেভ গার্ল’ আখ্যা দেন।
ভ্রমণের নতুন রেকর্ড গড়ার পর নাজমুন নাহারকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেন্ট লুসিয়ার অন্যতম প্রধান পত্রিকা ‘দ্য ভয়েস’। খ্যাতনামা সাংবাদিক মার্বেলা অ্যান্থনির লেখায় তাঁর স্বপ্ন, সংগ্রাম ও বিশ্ব অভিযাত্রার কঠিন চ্যালেঞ্জের কথা উঠে এসেছে। নাজমুন নাহার দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে এভাবেই গৌরবের সঙ্গে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববাসীর কাছে।
২০০০ সালে ভারতের ভূপালের পাঁচমারিতে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা হয়। এর পর থেকে ছুটে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দেশ। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ১ জুন ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক স্পর্শ করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ওপর। ১৫০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওতমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে তিনি এবার অভিযাত্রা শুরু করেছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম ও গায়ানা থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, গ্রেনাডা, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইন, বার্বাডোস ও সেন্ট লুসিয়া পর্যন্ত।
২২ বছর ধরে এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিভিন্ন জনপদের মাঝে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরছেন নাজমুন নাহার। এ ছাড়া তিনি পরিবেশ রক্ষা ও বাল্যবিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করেন। নাজমুন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় শান্তি ও ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু ও তরুণদের উৎসাহিত করেন।
বেশিরভাগ দেশ সড়ক পথে ভ্রমণ করেছেন নাজমুন। ২২ বছরের বিশ্ব অভিযাত্রার মাঝে তিনি বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। মৃত্যুমুখে পড়েছেন বহুবার। তবুও একের পর এক দেশ ভ্রমণ করছেন লাল-সবুজ পতাকা হাতে। শিরোনাম হয়েছেন বিশ্ব গণমাধ্যমে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর সদরে জন্ম নেওয়ায় নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এশিয়া বিষয়ে পড়াশোনা করেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। নাজমুন নাহারের আশা, বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের সব দেশে যাবেন।
অনলাইন ডেস্ক :
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় তেলবাহী ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে সিলেট থেকে ঢাকা বা চট্টগ্রামের কোন ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়নি। আজ ২৪ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকা- চট্টগ্রাম রেল সড়কের মনতলা স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের মাস্টার (গ্রেড-৪) গৌর প্রসাদ দাশ।
তিনি জানান, তেলবাহী ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। সামান্য ত্রুটির কারণে ট্রেনের পেছনের বগিটি লাইনচ্যুত হয়।
তবে ট্রেনটি তৃতীয় লাইনে আটকা পড়ায় এতে অন্য কোন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। বগিটি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। পরে বিকাল ৩টার দিকে রিলিফ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
বিশেষ প্রতিনিধি :
একসময় রাজা-বাদশাহদের বাহন ছিল ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি। যুদ্ধক্ষেত্রেও তার ঘোড়া ব্যবহার করতো। যদিও এখন এই বাহন হিসেবে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি সেই আদিকাল থেকেই কৃষিকাজে ঘোড়ার ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে ঘোড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজে গরু-মহিষও ব্যবহার হতো। কৃষকরা গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ করতো। কিন্তু কালের বির্বতনে ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল আজ বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কৃষকরা পশু দিয়ে চাষাবাদ না করে উন্নতমানের যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে জমিতে হালচাষ করছেন। এতে কম খরচে স্বল্প সময়ে অধিক জমি চাষ করা সম্ভব।
যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে যখন গরু দিয়ে হালচাষ বিলুপ্তির পথে তখন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মো. হানিফ (৫০) নামের এক কৃষক।
দীর্ঘকাল ধরে রণক্ষেত্রের পাশাপাশি মালামাল ও মানুষ পরিবহনে ঘোড়া ব্যবহৃত হয়ে আসলেও কালের পরিক্রমায় তা আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করা এক বিরল ঘটনা এমনটাই বললেন স্থানীয়রা।
হানিফ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউপির উত্তর পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার বিকালে সরজমিন দেখা যায়, ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করছেন কৃষক হানিফ। হালচাষ দেখতে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়ান।
কৃষক হানিফ জানান, বর্তমান বাজারে এক জোড়া হালের গরুর দাম কমপক্ষে এক লাখ টাকা। সেই তুলনায় বর্তমান বাজারে গরুর চেয়ে ঘোড়ার দাম কম। কিছুদিন পূর্বে তিনি মাত্র ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ছোট সাইজের ঘোড়া কিনেছেন। এ ঘোড়া দুটি দিয়ে তিনি প্রতিদিন এক থেকে দেড় বিঘা জমি চাষ করছেন। তিনি নিজের জমি ছাড়াও গত ৩ বছর ধরে অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন।
তিনি আরো জানান, গরুর চেয়ে ঘোড়া হাঁটে-চলেও অনেক বেশি। ফলে গরুর হালের চেয়ে একই সময়ে ঘোড়া দিয়ে তিনগুণ বেশি জমি চাষ করা যায়। ঘোড়া দিয়ে তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে হালচাষ করতে পারেন। তিনি জমি চাষ করতে বিঘাপ্রতি ৬০০ টাকা করে নেন। এতে তার প্রতিমাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। ঘোড়া দুইটির খাদ্য বাবদ দৈনিক ১০০ টাকা করে খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পরিবারের ৫ সদস্যের খরচ চলে। এ ঘোড়ার হাল দিয়েই তিনি ঘোড়াচ্ছেন তার জীবিকার চাকা। ঘোড়ার হাল দিয়ে অন্যের জমি চাষ করে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই তিনি সংসারের চাহিদা পূরণ করছেন। হালচাষ বা জমিতে মই দিয়ে যা পেয়ে থাকেন তা দিয়েই সংসার ভালোভাবেই চলে।
কৃষক নুরুল আলম, হেলাল জানান, ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করলে মাটি গভীরভাবে খনন হয়। মই দেয়ার সময় জমির উঁচু-নিচুও ভালোভাবে সমান হয়। এতে জমিতে পানি সমানভাবে ধরে রাখা সহজতর হয়। একদিনে অনেক জমিতে হালচাষ করা যায়। ফলে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হয়। তাই এলাকায় হানিফের ঘোড়ার হালের বেশ চাহিদা রয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, কৃষকরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘোড়ার গাড়িও উঠে গেছে। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা দুর্লভ একটি বিষয়। এটা পারসেনট্রিনের মধ্যে পড়ে না। কৃষি বিভাগ আধুনিক মানের যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে।
অনলাইন ডেস্ক :
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রধান বাহক ছিলেন। তিনি গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি হিসেবে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পাশাপাশি তিনি সমাজের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচারের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে আইনি সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং সমাজে অবিচার ও অসমতা মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘স্ট্রেংদেনিং ক্যাপাসিটি অব জুডিসিয়াল সিস্টেম ফর চাইল্ড প্রোটেকশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশু সংবেদনশীল আদালত কক্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
ন্যায়বিচার ও সমতার নীতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় দূরদৃষ্টি, সাহস ও নিষ্ঠা বাঙালি জাতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথপ্রদর্শক উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথমেই নব্য স্বাধীন দেশের আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, যাতে সকলের নাগরিক অধিকার সু-প্রতিষ্ঠিত হয় ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, নতুন অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু বিশ্বমানের একটি সংবিধান প্রণয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এবং মাত্র ১০ মাসের মধ্যে তা সম্ভব করে তুলেছিলেন। এই সংবিধানে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতি নির্ধারণ করা হয়, যা দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু সংবিধান প্রণয়ন ছাড়াও সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইনের সংস্কার ও নতুন নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, শিশুদের নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন করা হয়। এরও ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শিশু আইন প্রণয়ন করেন, যা বাংলাদেশে শিশু অধিকার ও শিশু সুরক্ষার ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
আনিসুল হক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের কল্যাণে যুগান্তকারী বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০১৩ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়, যা শিশুদের সুরক্ষা, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য একটি আইনি কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেছে। শিশুদের কল্যাণ ও সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত প্রচেষ্টা আমাদের সকলের নিকট অনুসরণীয় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাঁর সরকারের আমলে প্রণীত শিশু আইনের বিভিন্ন ধারায় আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশু, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুর অধিকার রক্ষাসহ শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের কার্যকর বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট, পৃথক আদালত কক্ষ, উপযুক্ত পরিবেশ এবং প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। একই সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রাসঙ্গিক জ্ঞান ও দক্ষতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, ইউনিসেফ সুরক্ষা ও পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে, এমন সকল শিশুর ক্ষেত্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রয়োগে বিশ্বাস করে। আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুদের স্বাধীনতা হরণ এবং আটকাবস্থা শুধু শেষ উপায় এবং যতটা সম্ভব কম সময়ের জন্য ব্যবহার করা উচিত।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক শেখ হুমায়ুন করীর বক্তৃতা করেন।