চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে গুঞ্জন পাঠাগার। মাত্র ৩টি বই নিয়ে যাত্রা করা গুঞ্জন পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারের বই দিয়ে পড়াশুনা করে। ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ ছোট একটি টিনের একচালা ঘরে যাত্রা শুরু করা পাঠাগারটি এখন ১ তলা বিশিষ্ট ভবন।
গুঞ্জন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া (৩২)। তিনি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মরহুম স্বপন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে স্বপন মিয়া জেলার কসবা উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।
স্থানীয়রা জানান, ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো স্বপন মিয়ার। ২০০৪ সালে স্বপন মিয়া যখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই তিনি তার বাড়ির একটি টিনের ঘরে মাত্র তিনটি বই দিয়ে পাঠাগারটি চালু করেন। পাঠাগারের নামকরন করেন “গুঞ্জন পাঠাগার”। প্রায় ১৯ বছরে পাঠাগারটি এখন ১০ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। পাঠাগারে গ্রামের ছেলে মেয়েরা এক সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র দেড় বছর বয়সে পিতাকে হারান স্বপন মিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন মা রাজিয়া খাতুন। তিনি মাটি কাটার কাজ করে সন্তানদের খুবই কষ্টে লালন-পালন করেন। স্বপনের দুই ভাই রিকশা চালক।
স্বপন মিয়া যখন গ্রামের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই একটি পাঠাগার গড়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। তখন তিনি পরিবারের সদস্যদের অমতে একটি এনজিও থেকে ৮ হাজার টাকা ঋন নিয়ে বাড়ির জায়গায় একটি ছোট একচালা টিনের ঘর তৈরী করে মাত্র তিনটি বই দিয়ে গুঞ্জন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাগারটি নিয়ে স্বপনের পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। বড় দুই ভাই তাকে শর্ত দেন, পরিবারে থাকতে হলে পাঠাগার ছাড়তে হবে। কিন্তু স্বপন পরিবারকে ছেড়ে পাঠাগারকে আকড়ে ধরে রাখেন। পরবর্তীতে স্বপনের মা রাজিয়া খাতুন স্বপনকে সম্মতি দেন।
এক পর্যায়ে নিজের পড়াশুনা, সংসার আর পাঠাগার দেখাশুনা করতে স্বপন মিয়া দিন-মজুরি শুরু করেন। পথে ঘাটে ফেরি করে পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ করেননি।
উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
পরে তিনি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সোয়া ২ শতাংশ জায়গা পাঠাগারের নামে দান করে সেখানে ঋণের টাকায় একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন করেন। পাঠাগারেই রাত্রিযাপন করেন তিনি। কলেজ থেকে যে টাকা বেতন পান, তার বেশির ভাগই ব্যয় করেন এই পাঠাগারে।
বর্তমানে প্রতি শুক্রবারে পাঠচক্র বসে পাঠাগারে। সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতার।
নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের রমজান জানান, তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সাথে কৃষি কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে স্বপন তাকে গুঞ্জন পাঠাগারে নিয়ে আসেন। এই পাঠাগারে থাকা বই দিয়েই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনার্স শেষ করে বর্তমানে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স করছেন।
নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ জাহান চৌধুরী জানায়, সে নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ে সে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সবধরনের বই আছে এখানে। এছাড়া তার কয়েকজন সহপাঠীও পাঠাগারে এসে বই পড়ে।
উপজেলার কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রোকসানা জেবিন মলি জানান, গুঞ্জন পাঠাগারের মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পাঠাগারটি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।
পাঠাগারে নিয়মিত আসা পাঠক ও কসবা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তুহিন কান্তি দাস বলেন, নবীনগর তথা পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারটি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ও বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে পাঠাগারটি।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া বলেন, পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও অনেক ব্যক্তি তাকে সহায়তা করেছেন। যার জন্য তিনি পাঠাগারটিকে একচালা টিনের ঘর থেকে পাকা ভবন তৈরি করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘সমাজে আমার মতো অনেকেই আছে- যারা বই কিনে পড়তে পারে না। অর্থের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কথা চিন্তা করেই পাঠাগারটি করা হয়েছে। এই পাঠাগারের জন্য আমাকে পরিবার থেকে আলাদা হতে হয়েছিল। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমি রাস্তায় ফেরী করে পান-সিগারেট বিক্রি করেছি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ হতে দেইনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই পাঠাগারের বই পড়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সুহাতা গ্রাম আলোকিত হয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারের আলোতে। আমি চাই জ্ঞানের এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পাঠাগারের জন্য স্বপন তার নিজের ব্যক্তি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছে। গুঞ্জন পাঠাগার শুধু জ্ঞানের আলোই ছড়াচ্ছে না, ছেলে-মেয়েদের মাদক থেকেও দূরে রাখতে সহায়তা করছে। বই পড়ার কারণে মেধার বিকাশ হচ্ছে, জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরের সাবেক পৌর কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিনের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাইবার ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় নবীনগরের ৫ সাংবাদিককে অব্যাহতি দিয়েছেন মহামান্য আদালত।
আজ ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত চট্টগ্রামের বিচারক জহিরুল কবিরের বেঞ্চ তাদের অব্যাহতি দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি দেবনাথ বলেন, ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত চট্টগ্রামে দায়ের হওয়া মামলায় গতকাল মঙ্গলবার দুই পক্ষের শুনানী শেষে ৫ সাংবাদিককে মহামান্য আদালত অব্যাহতি দিয়েছেন।
অব্যাহতি পাওয়া পাঁচ সাংবাদিক হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক সমকালের উপজেলা প্রতিনিধি মাহবুব আলম লিটন, এশিয়ান টিভির উপজেলা প্রতিনিধি জয় বুলবুল, দৈনিক বর্তমান উপজেলা প্রতিনিধি সফর আলী, নবীনগর থানা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পদক মমিনুল হক রুবেল, আমার সংবাদের উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ বাবুল মিয়া।
মামলার বাদী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. হাসান রেজা নাজমী ভূইয়া ডেভিড।
প্রসঙ্গত: পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নবীনগরের পৌর কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিন গত ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত চট্টগ্রামে মামলা করেছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৬ আগস্ট শনিবার বিকালে ইউনিয়নের পালবাড়ি বাজারে এই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক মো. নরু মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক কে.এম মামুন অর রশিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, নবীনগর উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ও প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কাজ করে যাচ্ছি। আমি নবীনগর উপজেলা কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে চাই। দোয়া করবেন যেন বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে আপনাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারি। বিগত ১৭ বছরে আপনারা ব্যাংকে যে টাকা জমা রেখেছেন, সেই টাকা বিগত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার জালিয়াতি করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ সময় ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য সচিব মো. নজরুল মিয়ার সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল আমিন, উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বাবুল, নবীনগর পৌর কৃষকদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে স্ত্রীকে চা বানানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে বাড়িতে লাশ হয়ে ফিরলেন মো. বাচ্চু মিয়া (৭৫)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কাচারির মোড়ে অটোরিকশা উল্টে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
নিহত বাচ্চু মিয়া (৭৫) উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বাচ্চু মিয়া অটোরিকশা দিয়ে নবীনগর আসার পথিমধ্যে শ্রীরামপুর গ্রামের কাচারি মোড় সড়কে অটোরিকশাটি উল্টে গেলে বাচ্চু মিয়া ছিটকে রাস্তায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে গাড়ির চালকসহ স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে বলেছেন, তুমি চা বানাও, আমি ঘুরে এসে চা খাব। ওনার কথামতো চা বানিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় খবর এলো তিনি অটোরিকশা থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখি তিনি মারা গেছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ৮ অক্টোবর ভারত উপমহাদেশের রাগ সঙ্গীতের কিংবদন্তি সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ১৬১তম জন্মদিন।
১৮৬২ সালের আজকের এই দিনেই তিনি তৎকালীন ত্রিপুরা প্রদেশের শিবপুর গ্রামে, যা বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
তার বাবা সবদর হোসেন খাঁ এবং মা সুন্দরী বেগম। শিশুকাল থেকেই সুরের প্রতি তার এক অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। বাল্যকালে বড় ভাই ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি হয়। সুরের প্রতি তার এতটাই মোহ ছিল এই সুরের জ্ঞান অর্জনে তিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন।
কিশোর বয়সে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কলকাতার প্রখ্যাত সংগীত সাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের শিষ্যত্বে সাত বছর সরগম সাধন করে যন্ত্রসংগীত সাধনায় নিযুক্ত হন। এরপর থেকেই তিনি ভারতে বসবাস শুরু করে বাদ্যযন্ত্রের তালিম নিতে থাকেন। তিনি তার সুরের মূর্ছনায় তৎকালীন ব্রিটিশ রানী থেকে সুর সম্রাট উপাধিসহ ভারত উপমহাদেশে দুর্লভ উপাধি ও সম্মানে ভূষিত হন।
এদিকে, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদের দিনটি পালনে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নিজ জন্মভূমি শিবপুর গ্রামে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাগসঙ্গীতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এই সঙ্গীতজ্ঞ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর রোডে নান্দুরা অবস্থিত প্রভাতী ব্রিক্স। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গোকর্ণ হয়ে নবীনগর এর সঙ্গে মূল সংযোগ সড়কের পার্শ্বে অবস্থিত এবং আশে পাশে জনবসতী ও লক্ষ্য করা যায়।
জানা যায়, প্রভাতী ব্রিক্স এর নামে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর এর ছাড়পত্র নিয়ে মালিক পক্ষ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু ২০১৮ ইং সনে তাদের অনুমোদিত সকল কাগজপত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়, তারপর থেকে মালিক পক্ষ কোন রকম সরকারি অনুমোদন বা ছাড়পত্র ছাড়াই আজ অবদী নির্বিঘ্নে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। দেখা যায় ব্রিক্স ফিল্ডের পার্শ্বে একাধিক জনবসতী যেখানে ছোট ছোট বাচ্ছা ও মহিলা বৃদ্ধসহ অনেক পরিবার বসবাস করে। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হলে পরিবেশের উপর সরকারি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ এবং জলজ পরিবেশের ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। যা আশে পাশে অবস্থিত জনবসতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে এবং নবীনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিআরডি প্রধান সড়ক এর নিকটবর্তী হওয়ায় ব্রিক্স ফিল্ডের যাতায়াতকৃত যানবাহন এর দ্বারায় সড়কটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ছাড়পত্র বা সরকারি অনুমোদনের ব্যাপারে প্রভাতী ব্রিক্স এর একজন পরিচালক আমলগীর হোসেনের সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের আগে অনুমোদন ছিল কিন্তু ২০১৮ইং সনের পরে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। এখন কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করচেন অনুমোদন ছাড়া জানতে চাইলে তিনি অপর একজন পরিচালকের নাম এবং নাম্বার দিয়ে ওনার সাথে বিস্তারিত জানতে বলেন এবং পরবর্তী অপর একজন পরিচালক শাহিন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ২০১৮ ইং সনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে পুণরায় ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে তারা দেয়নী। তার প্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্ট একটি রিট করি তার প্রেক্ষিতে ব্যবসা পরিচালনা করিতেছি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিবেচনায় পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ব্রিক্স ফিল্ডের পরিচালনার ছাড়পত্র না দিলে হাইকোর্ট রিট করে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় কিনা এই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিদর্শক মোঃ রাকিবুল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
২০১৯ইং সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে একটি গেজেট পাস হয়। যার ৩নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, ২০১৩ সনের ৫৯নং আইনের ধারা ৪এর প্রতিস্থাপন উক্ত আইনের ধারা ৪এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা প্রতিস্থাপন হইবে। যথা:- ৪। লাইসেন্স ব্যতীত ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধ:- আপাদত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত কোন ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও প্রস্তুত করিতে পারিবে না। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থা নিবেন কী না?