অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনি-মিনি খেলতে দেওয়া হবে না, আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, ‘সামান্য আন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না; যতক্ষণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে ততক্ষণ ভয়ের কিছু নেই। আমরা অগ্নিসংযোগ-সন্ত্রাসকে আর বরদাস্ত করব না। এটা কখনই মেনে নেওয়া হবে না।’
জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে আজ ৩১ জুলাই সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পুরস্কার-২০২৩’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব একথা বলেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনি-মিনি খেলতে দেব না।’
তিনি বলেন, ‘একটি কথা মনে রাখবেন, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সমর্থন দেয়নি, তাদের মনের শত্রুতা এখনো কাটেনি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘তবে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকবে।’
তিনি বলেন, জীবনে সমস্যা আসবে এটা স্বাভাবিক, তবে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হলে মনোবল ও শক্তি প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই শক্তি (মনোবল) নিয়ে এগিয়ে গেলে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমি এটি বিশ্বাস করি।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করছে, এমনকি দুস্থ সম্প্রদায়েরও। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুর্দশা গ্রামীণ এলাকায় প্রায় নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা সরকারি কর্মচারীদের জনগণের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের সেবা করা তাদের দায়িত্ব।পাশাপাশি তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের সর্বদা উদ্ভাবনী ধারণা খুঁজে বের করার এবং তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করে দেশকে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএন আশেকুর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
অনলাইন ডেস্ক :
বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ১৬ মে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান আছে সেগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ নজর দিতে হবে।
এছাড়া প্রতি তিন মাস পরপর এসব প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে একনেকে প্রতিবেদন দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম জানান, যেসব সরকারি কর্মকর্তা নানা সময়ে বিদেশে প্রশিক্ষণে যান। সেখান থেকে ফেরার পর তাদের প্রশিক্ষণের ধরন অনুযায়ী প্রকল্পে নিয়োগ দিতে বলেছেন। এ ছাড়া যাদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, চলতি অর্থবছরে ৩০ জুনের মধ্যে ৩৫৬টি প্রকল্প শেষ হবে। যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ প্রকল্প এক অর্থবছরে শেষ হচ্ছে। এ ছাড়া এবার এডিপিতে ৪ হাজার কোটি টাকা সরকারি খরচ কমেছে। বিদেশি অর্থায়ন ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। মোট এডিপি বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকা।
চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪৩০। আজ সকালে সোনালি সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। নববর্ষ বিদায়ী বছরের গস্নানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায়
মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্রজাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ-কুটির হতে বিলাসবহুল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের মেগাসিটি-সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফলগুধারা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে উদযাপন করে উৎসবের আমেজে। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্র করার আর কুসংস্কার ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধা-বিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। নতুন পোশাক পরে সবাই মিলিত হন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের যে প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু করেছিল তা আজ বিশ্ব জুড়ে বর্ষবরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরে বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগরজীবনে এই দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান।
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজু উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে জাতি তার স্বকীয়তা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তি সঞ্চয় করে, সচেষ্ট হয় আত্মপরিচয় ও শিকড়ের সন্ধানে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যে আবদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করে স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৪২৯-এর আনন্দ বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। ১৪৩০ সনকে বরণ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে ঘরোয়া পরিবেশে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হলো বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানমালা আমাদের সেই ঐতিহাসিক চেতনাকে প্রোজ্জ্বল করে। স্বদেশ মানস রচনায় বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সর্বোপরি ইতিহাসের আলোকে রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনাকে পরিহার করে আধুনিক ও প্রাগ্রসর অভিধায় জাতিসত্তাকে যথাযথ প্রতিবাদ করার সম্মিলিত প্রতিশ্রম্নতি বাংলা নববর্ষকে দান করেছে অনবদ্য মাঙ্গলিক যাত্রাপথ।
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো বাংলা বর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। আর বাঙালিদের কাছে বাংলা নববর্ষ বরণ হলো একটি প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মঙ্গলশোভাযাত্রা। ইউনেস্কো বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরও সুদৃঢ় করুক, নববর্ষের উদার আলোয় ও মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই হোক নতুন বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ এর প্রত্যাশা।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার ও সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া। বাঙালির বর্ষবরণ ইলিশ ছাড়া হয় না। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওযার ব্যবস্থা থাকে। ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখের জনপ্রিয় খাদ্য। এই দিনের একটি পুরানো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকে নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ও কুস্তি। হাল আমলে ক্রিকেট ও ফুটবল যুক্ত হচ্ছে।
দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয় সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গস্নানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেন। এদিনে তারা হালখাতা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ ভোর থেকে শুরু হয়। ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।
হালখাতা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরানো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন লাল রংঙের হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে। ১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীযের্র সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।
আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরও একটি শোভাযাত্রা। তখন প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অশুভ মানুষের কথা ভেবে মুখোশ করা হয় শোভাযাত্রায়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার পহেলা বৈশাখকে জাতীয় পার্বণ হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছায়ানটের গানে গানে যে প্রতিবাদের ধারা সৃষ্টি করেছিল তা মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার পথে বড় শক্তি যুগিয়েছে। ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পরে যেমন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছায়ানট যেন মানবতার পক্ষে লড়াইয়ে তাদের প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করছে বারবার। আজ সেই আলোড়ন পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে।
অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রহিমা ওয়াদুদের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ ৭ মে রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজায় মরহুমার মেয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ছেলে ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপু, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, পানিসম্পদ বিষয়ক উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদসহ পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, তার প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকর্মীসহ অন্যান্যরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে বিভিন্ন স্তরের মানুষের পক্ষ থেকে মরহুমার কফিনে ফুলের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
রহিমা ওয়াদুদের ছেলে ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপু বলেন, আমার মা সব সময় দেশের কথা ভেবেছেন, দেশের জন্য কাজ করেছেন। তিনি অত্যন্ত দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন। আমি আপনাদের কাছে তার জন্য দোয়া প্রার্থী।
উল্লেখ্য, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের সহধর্মিণী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মা রহিমা ওয়াদুদ। তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান, সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। শিক্ষকতার জীবনে তিনি বহু শিক্ষার্থীর মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে শুরু করে সব মুক্তির আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন রহিমা ওয়াদুদ। তার মৃত্যুতে জাতি একজন নির্লোভ, দেশপ্রেমিক ও একনিষ্ঠ শিক্ষককে হারাল বলে মন্তব্য বিশিষ্টজনদের।
এর আগে ৬ মে শনিবার দুপুর ১১টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন রহিমা ওয়াদুদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি ছেলে ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপু ও মেয়ে ডা. দীপু মনিসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। আজ ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে চলতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়।
প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কোনো কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। এছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণসহ অন্যান্য বছরের শিক্ষার্থীরাও ভর্তির জন্য বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে।
বিদেশি কোনো বোর্ড বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে তার সনদের মান নির্ধারণের পর ভর্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
অনলাইনে আবেদনের জন্য ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.xiclassadmission.gov.bd শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন করতে পারবে।
অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা টাকা আবেদন ফি জমা সাপেক্ষে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবে।
ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন শেষ হবে ২০ আগস্ট। আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে ২১ থেকে ২৪ আগস্ট। শুধুমাত্র পুনঃনিরীক্ষণে ফলাফল পরিবর্তিত শিক্ষার্থীদের আবেদন ৩১ আগস্ট। পছন্দক্রম পরিবর্তনের সময় ৩১ আগস্ট।
প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা। শিক্ষার্থীর নিশ্চায়ন ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা। দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণের ফল ১৬ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নিশ্চায়ন ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর।
তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ২১ সেপ্টেম্বর। পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা। তৃতীয় পর্যায়ে আবেদনের ফল ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। তৃতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীর নিশ্চায়ন ২৪ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর। ভর্তি শুরু হবে ২৬ সেপ্টেম্বর এবং শেষ হবে ৫ অক্টোবর। আর ক্লাস শুরু হবে ৮ অক্টোবর।