আখাউড়ায় অভিভাবকদের বিরুদ্ধে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ

আখাউড়া, 29 August 2023, 1032 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় দেবগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আজ ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

banner

মারধরের শিকার তানভীর আহমেদ আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে ফারুক আহমেদ ও গনেস চন্দ্র দাস নামে আরো দুজন শিক্ষক হামলার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বছর এসএসসি পরীক্ষায় আখাউড়া উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর ফলাফল খারাপ হয়। এর মধ্যে দেবগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৩২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭২ জন পাস করে। পাসের হার ৫৪.৫৫। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবক সমাবেশ করছে শিক্ষা অফিস। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দেবগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন।

মারধরের শিকার ইংরেজির শিক্ষক তানভীর আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, সমাবেশে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ায় শিক্ষকদেরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন কয়েকজন অভিভাবক। এ সময় প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য শিক্ষকদেরকে সমাবেশে বসার ও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সমাবেশ শেষে বিদ্যালয়ের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিষয়টি নিয়ে সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় দেবগ্রাম গ্রামের শেখ সোহেল ও জসিম উদ্দিন দেওয়ানসহ আরো একজন অভিভাবক এসে আমাকে কিল-ঘুষিসহ মারধর করে। এ সময় শিক্ষক ফারুক আহমেদ ও গনেস চন্দ্র দাস আমাকে রক্ষা করতে এলে তারাও হামলার শিকার হন।

তানভীর আহমেদ আরও বলেন, শেখ সোহেল হুমকি দিয়েছেন আমি বিদ্যালয়ে গেলে আমার হাত-পা ভেঙে ফেলবে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এ ব্যাপারে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক ফারুক আহমেদ বলেন, শিক্ষকদেরকে অপমান করার জন্য কিছু লোককে সাজিয়ে সমাবেশে আনা হয়। তানভীর এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিল। এ সময় তারা তার ওপর চড়াও হন।

তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক কোনো ক্লাস নেন না। প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া অনেক ছাত্রছাত্রীকে চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এজন্যই ফলাফল খারাপ হয়েছে। সমাবেশে বিষয়গুলো আমাদেরকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ সোহেল বলেন, আমি ওই শিক্ষককে মারধর করিনি। উল্টো তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। হুমকি দেওয়ার কথা সত্য নয়।

এ বিষয়ে দেবগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। পরে শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত জানাব।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। শিক্ষকের ওপর হামলা হয়ে থাকলে ঘটনাটি দুঃখজনক।

Leave a Reply

রেলপথে মাদক পাচার প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশের…

চলারপথে রিপোর্ট : মাদক চোরাচালান, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ দমন Read more

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ও ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি

আখাউড়া, কসবা, নবীনগর, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 17 October 2024, 1820 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বরখাস্তের প্রতিবাদে ও ২ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ও ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি পালন করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

banner

আজ ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করে। ব্ল্যাক আউটের কারণে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সাথে অভিন্ন সার্ভিস কোড ও অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিত করণের ২ দফা দাবিতে দেশের ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন।

তবে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কোন দাবি পূরণ না করে বরং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ মকবুল হোসেন ও নবীনগরের ডিজিএম আসাদুজ্জামানসহ সারা দেশের প্রায় ২০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।

বরখাস্তকৃত অন্য কর্মকর্তারা হলেন এজিএম রাজন কুমার দাস, ডিজিএম দিপক কুমার সিংহ, এজিএম মনির হোসেন, জুনিয়র জেনারেল ম্যানাজার মো. জাকির হোসেন, জিএম মো. হুমায়ুন কবির, ওয়ারিং পরিদর্শক আবু সালাম জাবেদ, ডিজিএম মো. রাহাত, এজিএম আবদুল হাকিম, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. হাসানুজ্জামান, জেনারেল ম্যানাজার মুশফিকুল ইসলাম, জিএম জুলফিকার, জিএম মো. আবুল হাসান, ডিজিএম মো. বেলাল হোসেন, ডিজিএম জাহিদুল ইসলাম, ডিজিএম আবদুল জলিল, এজিএম ইয়াসির আরাফাত ও ডিজিএম সামিউল কবির। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ব্ল্যাকআউটসহ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের স্বপদে পুনর্বহালের আগ পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। এদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় স্থানীয় গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির প্রধান ফটকে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারীরা বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের পুনর্বহালের আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাসিরনগর আঞ্চালিক কার্যালয়ের সহকারী জেনারেল ম্যানাজার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৪ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিতরণ করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বিদ্যুতায়ন বোর্ড পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে যাবতীয় মালামাল ক্রয় করে দেয়। এগুলির বেশীর ভাগই নিম্নমানের হয়। এতে তারা বিপুল পরিমান দুর্নীতি করে থাকে। পল্লীবিদ্যুৎ ও বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও চাকুরী বৈষম্য দুর করতে এ আন্দোলন। আগেও বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রেখেই আন্দোলন করেছি। তারপরও আমাদের ২০জন কর্মকর্তাকে চাকুরীচ্যুৎ করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানজার মো. মুকবুল হোসেনকে চাকুরীচ্যুৎ করায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন কসবা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. মোস্তাফিকুর রহমানকে। তিনি বলেন, চাকুরীচ্যুতদের চাকুরীতে বহাল এবং দাবি আদায়ের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমপ্লিট শাট দিয়েছে। বেলা ১১টা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ আমদানী ও বিতরণ কার্যাক্রম বন্ধ করে রেখেছে।

উল্লেখ্য, পল্লী বিদ্যুতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা দুইটি, নাসিরনগর, নবীনগর, আখাউড়া উপজেলার ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে।

জলাবদ্ধতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ

আখাউড়া, 21 June 2023, 1309 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ঘরের সামনে পানি। পানি উঠেছে চুলায়। পানিতে তলিয়ে গেছে বাথরুমের রিং। নোংরা পানির দুর্গন্ধে অসহনীয় পরিবেশ। পানি জমেছে চলাচলের রাস্তায়। এমন চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার চরনারায়ণপুর এলাকার সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়। গত ১০/১২ দিন ধরে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতায় দু:ষহ জীবন যাপন করছে প্রকল্পের বাসিন্দারা। বিশেষ করে নারী-শিশুরা খুব কষ্ট করছে। বাথরুম, গোসল, রান্না-বান্নাসহ দৈনন্দিক কাজে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হত-দরিদ্র পরিবারগুলো। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবী জানিয়েছে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।

banner

জানা গেছে, মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে সারা দেশের ন্যায় আখাউড়া উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতক ভূমিতে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে আখাউড়ায় সাড়ে ৬’শ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর এলাকায় ৭৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৬০টি উপকারভোগী পরিবার বসবাস করছে। গত কয়েক দিন ধরে আখাউড়ায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের একটি পাইপ বন্ধ যাওয়ায় পানি সরতে পারছে না। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে হত-দরিদ্র পরিবারগুলো।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় পানি জমে আছে। বাথরুমের রিং পানিতে তলিয়ে গেছে। ছোট শিশুরা ঘর বের হতে পারছে না। ময়লা নোংরা পানি মাড়িয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন বাসিন্দারা।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা কাজল মিয়ার স্ত্রী আবেদা বেগম বলেন, আমার এক মেয়ে মৃগি রোগী। তাকে নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তাই থাকি। ছোট একটা নাতি আছে। কখন পানিতে পরে যায় সব সময় এই আতঙ্কে থাকি।

পারুল বেগম নামে আরেক নারী বলেন, বাথরুমের ময়লার রিং পানিতে তলিয়ে গেছে। বাথরুম করতে খুব অসুবিধা হইতেছে। দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। তাছাড়া রান্নার চুলা পানিতে তলিয়ে গেছে। রান্না-বান্না করতে খুব অসুবিধা হয়।

সবিতা রানী বর্মন নামে আরেক নারী দুঃখ করে বলেন, আমরর কষ্টের কপাল কষ্টই করতে অইব। তিনি বলেন, ঘরের সামনে ময়লা নোংরা পানি। রাস্তায় পানি। ঘর থেকে বের হতে পারি না। এভাবে আর ভালো লাগে না। ময়লা নোংরা পানিতে হেঁেট পুলাপাইনের পায়ে ঘা হয়ে গেছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প বাসিন্দাদের সভাপতি নিলেশ বর্মন বলেন, প্রায় ১৫ দিন যাবত পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। চলাফেলা করা যায়। তিনি বলেন, প্রকল্পের পানি নিষ্কাশনের ১টি পাইপ বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য পানি সরে না। পাইপটি মেরামত করে দিলে পানি সরে যেত। বৃষ্টিবাদলার দিন এভাবে পানি জমে আমরা বসবাস করতে পারব না। তিনি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। আমি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিব।

ঢাকের তালে জীবন চলে ঢুলিদের

আখাউড়া, 17 October 2023, 902 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিয়ে, গায়ে হলুদ, পুজা, খেলা-ধুলা বা মিছিলে বাদ্য বাজানোর জন্য ডাক পরে তাদের। কাঁধে ঢোল ঝুলিয়ে দু’হাতে ঢাকে কাঠির বারি দিয়ে ছন্দের আওয়াজ তুলেন। সেই ছন্দে মানুষ নেচে গেয়ে আনন্দ করে। মানুষকে আনন্দ দিয়েই চলে ঢুলিদের সংসার। পুজা এলেই কদর বাড়ে তাদের। ঢাকের বাদ্য ছাড়া পুজার আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ। তাই আসছে দুর্গাপুজায় বাদ্য বাজানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের করুয়াতলী ঋষিদাস পাড়ার ঢুলিরা। শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপুজা।

banner

সোমবার দুপুরে ঋষি পাড়ায় ঢুকতেই কানে আসে ঢোলের আওয়াজ টেম-টে টেটেম..টেম.। সেই আওয়াজের ছন্দে শিহরণ জাগায়। মনে করিয়ে দেয় পুজা আসছে। উঠানে গিয়ে দেখা যায় বাদ্যযন্ত্র পরখ করে নিচ্ছেন ঢুলিরা। কেউ বা আঙ্গুলের আলতো ঁেছায়ায় ঢোলে তাল তুলছেন। তাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।

ঢুলিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিক ঐতিহ্য ঢাক-ঢোল বাদ্য-বাজনার পেশা ধরে রেখেছে ঋষিদাস পাড়ার ৫/৬টি পরিবার। বিয়ে-গায়ে হলুদ, পুজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তারা। তাছাড়া ঢাক-ঢোল মেরামত আর মাঝে মধ্যে বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করেও কিছু আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। তবে তাদের ভাষ্য, দিন দিন আয় রোজগার কমে যাচ্ছে। তবু বাপ-দাদার পেশা বলে আকড়ে ধরে রেখেছেন।

ঢুলির সর্দার বিশাম্বর ঋসি প্রায় ৫০ বছর ধরে ঢাক-ডোল বাজাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার বাবা ঢুলি ছিলেন। ১০/১২ বছর বয়স থেকে বাবার সাথে ঢোল বাজাতে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। এভাবেই ঢোল বাজানো শিখি। শখ থেকেই ঢোল বাজানো পেশা হয়ে গেছে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি বাবার পেশা ধরে রেখেছি। প্রায় ৫০ বছর ধরে ঢাক-ঢোল বাজানোর সাথে জড়িত আছি। ২ মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। তিন ছেলে আছে তারাও আমার সাথে বাজনা বাজায়।

তিনি আরও বলেন, বছরের অন্য সময় বিয়ে-গায়ে হলুদ, মিছিলে বাদ্য বাজনার ডাক পরে। বছরের ২০/২৫টি অনুষ্ঠান করতে পারি। তবে পুজার সময় কাজের চাপ বাড়ে। এবার দুর্গাপুজায় ৪টি মন্ডপে কাজ পেয়েছি। একটি মন্ডপে ১০/১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। লোকজনকে দিয়ে নিজের কিছু থাকে। বাপ-দাদা এ পেশায় ছিল। আমিও করছি। আমার ছেলেরাও করবে। তিনি বলেন আয় রোজগারের পাশাপাশি, ভক্ত-বৃন্দ আনন্দ পায় এটাই আমাদের আনন্দ।

কথা হয় রাখাল ঋসির সাথে। তিনি বলেন, ৬৫ বছর বয়স হয়েছে। ছোট বেলা থেকেই ঢাক-ডোল বাজাই। পুজার সময় রোজগার বেশি হয়। তাই সারা বছর পুজার জন্য অপেক্ষা করি। ঢাক বাজাতে বিভিন্ন জেলাতে চলে যাই। পুজাতে ঢাক বাজিয়ে বেশি আনন্দ পাই। তিনি আরও বলেন, বিয়ে-গায়ে হলুদ, মিছিলে ২/৩ হাজার টাকা পাওয়া যাই। এভাবেই আমাদের সংসার চলে। বয়স হয়েছে। জানি না আর কত দিন ঢোল বাজানোর কাজ করতে পারবো। আখাউড়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক বিশ^জিত পাল বাবু বলেন, পুজার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহার। এটি আদিকাল থেকেই ছিল। এখনও আছে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে আয়ের স্বল্পতার কারণে অনেকেই এ পেশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ঋষিদাস পাড়ার কয়েকটি পরিবার পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখে কোন রকমে টিকে আছে। আশা করি, সরকারসহ স্থানীয়রা তাদের প্রতি নজর দিবেন।

স্বামীর সাথে অভিমান করে গৃহবধুর আত্মহত্যা

আখাউড়া, 27 April 2023, 1501 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে নিয়ে না যাওয়ায় আখাউড়ায় স্বামীর সাথে অভিমান করে সাথী ইসলাম (২৬) নামে এক গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। আজ ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত সাথী ওই গ্রামের অটো চালক মোস্তাফা কামালের স্ত্রী। সে কে ঘরের তীরের সাথে ওড়না প্যাচিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় নিহতের মরহদেহ উদ্ধার করে আখাউড়া থানায় নিয়ে এসেছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ আত্মহত্যার ঘটনা বলে ধারনা করছে।

banner

আখাউড়া থানা ওসি (তদন্ত) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে সাথী ইসলাম তার স্বামীকে ঘুরতে নিয়ে যেতে বলে। ঈদ মৌসুমে গাড়ি চালিয়ে ভালো রোজগার হওয়ায় পরে ঘুরতে নিয়ে যাবে বলে অটোচালক স্বামী। এরইমধ্যে একদিন ঘুরতে নিয়ে যায়। বুধবার আবার স্বামীর কাছে ঘুরতে যাওয়ার বায়না ধরে। কিন্তু বলেন এখন যাত্রী বেশি ঈদ মৌসুম শেষ হলে আবার ঘুরতে নিয়ে যাব। একথা বলে তিনি বিকালে বাড়ি থেকে চলে যায়। রাত ১২ টার দিকে মোস্তাফা কামাল বাড়িতে ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ পেয়ে ডাকাডাকি করলে সাথী রাগ করে দরজা না খুলে তাকে অন্য ঘরে ঘুমাতে বলে। মোস্তাফা কামাল তখন তার ভাতিজার সাথে অন্য ঘরে ঘুমায়। সকাল ৬ টার দিকে স্ত্রীকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে তার স্ত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

এ ব্যাপারে মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৩ বছর আগে মোস্তাফা কামাল ও নারায়নগঞ্জ জেলার সাথী ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ে হয়। ঈদুল ফিতরের পর সাথী তার স্বামীকে কুটি কাঠের পুল এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যেতে বলে।

কিন্তু ঈদের মৌসুমে যাত্রী বেশি থাকায় কুটি না নিয়ে আখাউড়া চেকপোষ্ট এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যায়। বুধবার বিকালেও সে আবার ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। এ নিয়ে স্বামীর প্রতি অভিমান করে সে আত্মহত্যা করেছে।

আখাউড়ায় রান্নাঘরের গর্ত থেকে ১১ কেজি গাঁজাসহ আটক ১

আখাউড়া, 13 April 2025, 167 Views,

মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, আখাউড়া থেকে :
আখাউড়ায় থানা পুলিশের এক বিশেষ অভিযানে রান্নাঘরের গর্ত থেকে ১১ কেজি গাঁজাসহ ১ জনকে আটক করা হয়। ১২ এপ্রিল শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদবাদ গ্রামের কামাল ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালানো সময় রান্নাঘরের গর্ত থেকে ১১ কেজি গাঁজাসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়।

banner

গ্রেফতারকৃত হলেন- কামাল ভূঁইয়া (৩৪)। গ্রেফতারকৃতকে আজ ১৩ এপ্রিল রবিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন জানান, শনিবার রাতে সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদবাদ গ্রামের কামাল ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।

এ সময় একটি টিনশেড দোচালা ঘর, যেটি রান্নার কাজের ব্যবহৃত হয় সেখানে গর্তে লুকিয়ে রাখা ১১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ সময় গ্রেফতার করা হয় কামাল নামের একজনকে। এ ঘটনার তার বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় মামলা করা হয়েছে।