চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে চোর সন্দেহে বজলু মিয়া (২২) নামে এক যুবককে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা হয়েছে। এ সময় গণপিটুনিতে বজলু মিয়ার সাথে থাকা সুজন মিয়া নামে অপর যুবকও আহত হয়। গতকাল সোমবার গভীর রাতে উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে প্রেরণ করে।
নিহত বজলু মিয়া লোপাড়া গ্রামের আলী আফজলের ছেলে। আহত সুজন মিয়া একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। আহত সুজন মিয়াকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, সোমবার গভীর রাতে বজলু ও সুজন মিয়া একই গ্রামের মৃত আলফাজ মিয়ার বাড়িতে আলফাজ মিয়ার কন্যা রাজিয়া বেগমের ঘরে চুরি করতে যায়। রাজিয়া বেগম বিষয়টি টের পেলে বজলু ও সুজন দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজিয়া বেগমের চিৎকারে প্রতিবেশীরা বজলু ও সুজনকে ধরে আলফাজ মিয়ার বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে তাদেরকে বেদম মারধোর করলে বজলু মিয়া মারা যায় ও সুজন মিয়া আহত হয়। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ গিয়ে নিহত বজলুর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল হাই বলেন, সোমবার গভীর রাতে বজলু মিয়ার মা ও তার বোন আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন, গ্রামের লোকজন বজলু মিয়াকে ঘর থেকে তুলে আলফাজ মিয়ার বাড়িতে নিয়ে গেছে।
পরে আলফাজ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখি বজলু ও সুজনকে গ্রামের লোকজন আলফাজ মিয়ার ঘরের বারান্দার একটি পিলারের সাথে বেঁধে মারধোর করছে। তখন গ্রামের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি তারা রাজিয়া বেগমের ঘরে চুরি করতে আসছিলো। আমি সুজন ও বজলুকে চুরির ঘটনা জিজ্ঞেস করলে তারা কিছু বলেনি। পরে আমি তাদের হাতের বাঁধন খুলে দেই।
এক পর্যায়ে ফজর নামাজের আজান পরলে আমি তাদেরকে যেন আর মারধোর করার অনুরোধ করে সেখান থেকে চলে যাই। সকালে খবর পাই বজলু মিয়া মারা গেছে। ইউপি সদস্য আবদুল হাই আরো বলেন, সুজন মিয়ার স্বভাব চরিত্র ভালো নয়। তবে বজলুর বিষয়ে কখনো কোন খারাপ কথা শুননি।
এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জেনেছি, সুজন ও বজলুর স্বভাব চরিত্র ভালোনা।
সোমবার গভীর রাতে তারা এলাকার মৃত আলফাজ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার কন্যা রাজিয়া বেগমে ঘরে চুরি করতে গেলে গ্রামবাসী তাদেরকে ধরে গণপিটুনি দিলে বজলু মারা যায় ও সুজন আহত হয়। আমরা নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থীর তিনজনই জামানত হারাচ্ছেন।
৫ নভেম্বর রবিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগের কম পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। উপ-নির্বাচনেও যারা এক ভাগের কম ভোট পেয়েছেন তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপ-নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ১৩ হাজার ৫৪৪ ভোটের বেশি। তাই জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ লাঙল প্রতীকে ৩ হাজার ১৮৬, জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল গোলাপ ফুল প্রতীকে ৫৫১ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুর রাজ্জাক আম প্রতীকে ৭৩৯ ভোট পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলারছড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৭৭ ভোট।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে সারোয়া উরপে লাল খাঁ (২৫)।
এ ঘটনাটি ঘটেছে ২৯ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় সরাইল উপজেলার সদরের বড্ডাপাড়া কুমার বাড়ি সংলগ্ন সড়কে।
এসময় ঘটনাস্থলে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত জসিম মিয়া (৩৭) নামে একজনকে ছুরিসহ হাতেনাতে এলাকার জনতা আটক করে সরাইল থানা পুলিশের হাতে তোলে দেন। একজন পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আটক জসিম’কে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাৎক্ষনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা আলামিন (৩৫) কে সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লাল খা হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার জসিম মিয়া (৩৭) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানাধীন নরসিংসার এলাকার নুর মিয়া’র ছেলে, সে উপজেলা সদরের সৈয়দটুলা (হাফিজটুলা) এলাকায় শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে বসবাস করত এবং অপর আসামি আলামিন (৩৫) বিজয়নগর থানাধীন সেজামুড়া এলাকার মৃত সফিক মিয়া’র ছেলে, তবে বর্তমানে সরাইল বড্ডাপাড়া গ্রামে মৃত হাফিজ মিয়া’র বাড়িতে ভাড়া’য় থাকে আলামিন।
নিহত লাল খা’র বুকের উপরে, নীচে এবং বামহাত মিলিয়ে মোট ৩টি ছুরিকাঘাত করে। লাল খা’র চিৎকারে স্থানীয় জনগণ এগিয়ে আসেন এবং দ্রুত তাকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরিক্ষা–নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: এমরানুল ইসলাম জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডে আটক জসিম ও আল আমিনকে আসামি করে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার সময় দুটি ভেকু ও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি বিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভেকু ও ট্রাক্টর জব্দ করেছে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি বিলে কয়েকটি চক্র ফসলি জমি খননযন্ত্র দিয়ে পুকুরের মতো কেটে মাটি উত্তোলন করছেন। সে সব মাটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে নিয়ে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করছেন। তারা ফসলি জমিগুলোতে নষ্ট করে ফেলছেন।
বিকেলে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি বিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা কালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে ভূমিখোরেরা পালিয়ে যাই। পরে অভিযানে দুটি ভেকু ও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করে স্থানীয় মেম্বারের জিম্মায় রাখা হয়।
তিনি আরো জানান, এর আগে ধরন্তি বিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা এক জনকে আটক করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। ধুরন্তি বিলে চলতি মাসে এটি পঞ্চম অভিযান। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ সময় সরাইল থানা পুলিশ ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলো।
৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইলকে মুক্ত করেন। এদিন সকালে বিনা বাধায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী শহরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে হানাদারমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্ত দিবস উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও সরাইল উপজেলা প্রশাসনসহ নানা সংগঠন। সূত্রমতে, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শত্রুমুক্ত করতে জেলার আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় মিত্রবাহিনী সদস্যরা পাকবাহিনীর ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালাতে থাকে।
১ ডিসেম্বর আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় ২০ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়।
৩ ডিসেম্বর আখাউড়ার আজমপুরে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সেখানে ১১ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। শহীদ হন ৩ মুক্তিযোদ্ধা। এরই মধ্যে বিজয়নগর উপজেলার মেরাশানী, সিঙ্গারবিল, মুকুন্দপুর, হরষপুর, আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, রাজাপুর এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে।
৪ ডিসেম্বর পাক হানাদাররা পিছু হটতে থাকলে আখাউড়া অনেকটাই শত্রুমুক্ত হয়। এখানে রেলওয়ে স্টেশনের যুদ্ধে পাক বাহিনীর দু’শতাধিক সেনা হতাহত হয়।
৬ ডিসেম্বর আখাউড়া উপজেলাকে শত্রুমুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের চারপাশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক হানাদাররা। ৬ ডিসেম্বর শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকারদের সহায়তায় তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে.এম লুৎফুর রহমানসহ কারাগারে আটকে রাখা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক হানাদাররা। পরদিন ৭ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পাক হানাদাররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। এর ফলে ৮ ডিসেম্বর বিনা যুদ্ধে মুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওই দিন সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন কাচারি ভবনের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান জহুর আহমেদ চৌধুরী। একই দিনে শত্রুমুক্ত হওয়ায় সরাইল থানা চত্বরেও উত্তোলন করা হয় লাল-সবুজ পতাকা।
এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।