চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, প্রবীন সাংবাদিক মোঃ ইউসুফ সারোয়ার (৭৩) আর নেই। আজ ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোর সাড়ে ৫ টায় পৌরশহরের রাধানগরস্থ নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন (ইন্না নিল্লাহে… রাজিউন)। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ মেয়ে, এক ছেলেসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
দীর্ঘ ৪ দশকের সাংবাদিকতা জীবনে ইউসুফ সারোয়ার দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক রূপসী বাংলা (কুমিল্লা) পত্রিকায় আখাউড়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া মাসিক আখাউড়া সংবাদ এর সম্পাদক ছিলেন।
এদিকে, সাংবাদিকতার পাশাপাশি ইউসুফ সারোয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের আখাউড়া অফিসের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে কয়েক বছর আগে চাকুরী থেকে অবসরে যান।
এদিকে সাংবাদিক ইউসুফ সারোয়ারের মৃত্যুতে আখাউড়ার সাংবাদিক সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দীর্ঘদিনের সহকর্মী, সাংবাদিক নেতাকে হারিয়ে শোকাভিভূত হয়ে পড়েছেন সাংবাদিকরা।
সকালে তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তাকে শেষ বারের মতো দেখতে বাড়িতে ছুটে যান আত্মীয় স্বজন, বন্ধু- শুভাকাক্সক্ষী, রাজনৈতিক সহকর্মী ও সাংবাদিক সমাজ। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত্যু সংবাদ পোষ্ট করে শোক প্রকাশ করেন।
আখাউড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী হান্নান খাদেম বলেন, আমার সাংবাদিকতা জীবনের দীর্ঘদিনের একজন অভিভাবককে হারালাম। আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমি নিহতের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতবাসী করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার হরিজন সম্প্রদায়ের এক নারী তার মেয়েকে ফিরে পেতে সাংবাদিকদের কাছে এ আকুতি জানিয়েছেন। আজ ২১ মে রবিবার দুপুরে হরিজন কলোনীর নিজ বাড়িতে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আকুতি জানান।
ভুক্তভোগী মেয়েকে ফেরত পেতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এক পর্যায়ে বলে ফেলেন, ‘এই পুলার ভয়ে আমি কম বয়সে মায়ারে বিয়া দিছি। বিয়ার পরে এই পুলা আমার মাইয়ারে অপহরণ কইরা নিয়া গেছে। অহন থানাত গিয়া বিচার দিলে ভাগায় দেয়। অহন আমি আফনেরার কাছে বিচার চাই। আমার মায়ারে জামাইয়ের কাছে ফিরাই দেন।’
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারীর ভাতিজা লিখিত বক্তব্য পাঠ করার সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মেয়েকে ফেরত পেতে সহযোগিতা চান।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, আল্পনা (ছদ্মনাম) নামে হরিজন কলোনীর এক মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কলেনীর রানা হরিজন নামে এক ছেলে তাকে উত্যক্ত করতো। এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে সালিশও হয়। এতেও রানা দমে না যাওয়ায় মেয়েটিকে গত ৩ মে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সারতে মেয়েটি বাবার বাড়িতে এলে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় রানা। এ বিষয়ে থানায় মামলা দিতে গেলে সেটা নেওয়া হয়নি।
রানা হরিজনের ভাই নয়ন হরিজন বলেন, ‘নানা কারণে আমার ভাই রানাকে ত্যাজ্য পুত্র করেছে বাবা। তবে এটা ঠিক যে আমার ভাই ওই মেয়েকে অপহরণ করেনি। বরং ওই মেয়ে আমার ভাই নানাভাবে বকায়দায় ফেলে তাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলছে। তবে মেয়েটির এক কাকাতো ভাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে।’
এ বিষয়ে আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। উভয় পক্ষকে সোমবার বিকেলে থানায় ডাকা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় ছয়গড়িয়া শাহআলম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
আজ ১০ জুন সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ছয়গড়িয়া গ্রামে স্কুল সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে কমিটির সদস্য, জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এলাকাবাসী বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ চারটি পদ শূন্য রয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক পদে দুইবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগম নিজের পদ ধরে রাখার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন না। অন্যান্য পদেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কৌশলে নিয়োগ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছেন।
এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কমিটির সাবেক সভাপতি ও ভূমিদাতা আবুল বাশার মোবারকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মিথ্যা মামলা করেছেন। তাছাড়া তিনি বর্তমান কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরীসহ কমিটির তিনজন সদস্যের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান সদস্য মো. তাজুল ইসলাম, কমিটির সদস্য আবুল বাশার, সাবেক সদস্য সহিদ মিয়া (মেম্বার), আবু তাহের প্রমুখ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. সেলিনা বেগম বলেন, আমি যাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে অভিযোগ করছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।
চলারপথে রিপোর্ট :
লক্ষ্মী রানী দাস। তিনি ভারত থেকে স্বামী ও সন্তান নিয়ে আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
যাত্রাকালে আগরতলা ইমিগ্রেশনে সুষ্ঠু ও স্বাচ্ছন্দ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এলেও আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে এসে রীতিমত অবাক হক তিনি। বসারও সুব্যবস্থা নেই এখানে।
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ালেও ছোট কক্ষটিতে নেই কোনো ফ্যান। হঠাৎ ১২ বছর বয়সী ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করার জন্য কোনো স্থান না পেয়ে ইমিগ্রেশন ভবনের এক কোনায় বসে তার সেবা যত্ন করেন। আশেপাশে ছিল না কোনো টিউবওয়েল। যাও বা ট্যাংকের পানি জুটেছে, তাও তীব্র তাপদাহে তপ্ত। তা দিয়েই ছেলেকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান।
লক্ষ্মী রানী দাসের বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশনে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ও সুন্দর পরিবেশে আরামে সব কাজ করে এসেছি। বন্দর থেকে গাড়িতে আমাদের ফ্রি চেকপোস্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। অথচ আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে এসে নাজেহাল হতে হলো। এখানে কোনো কিছুরই সুব্যবস্থা নেই। একতলা পুরোনো ভবনের ছোট্ট কক্ষে শত শত লোক ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে। এখানকার ইমিগ্রেশনের অব্যবস্থাপনা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। এখানে যাত্রীদের জন্য পরিষেবা বাড়ানো উচিত। আশা করব, বাংলাদেশ সরকার দুই দেশের যাত্রীদের কথা বিবেচনায় এনে ইমিগ্রেশন উন্নত করবে।
আগরতলা থেকে আসা আরেক যাত্রী খোকন মিয়া বলেন, আমি গত ছয় বছর ধরে এ চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করছি। ইমিগ্রেশনটি যে হালতে দেখেছিলাম, সে হালতেই আছে। একজন রোগী এলে যে বসবে, সে উপায় নেই। এখানে যে পরিমাণ জায়গা দরকার, সে তুলনায় খুবই কম আছে।
বন্দরটি ঘুরে দেখা গেছে, মূলফটক পার হলেই একতলা বিশিষ্ট তিন রুমের একটি ভবন। এর মধ্যে দুটি ছোট রুম ও একটি মাঝারি রুম। একটিতে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বসেন, আরেকটি হচ্ছে ব্যারাক। মাঝারি কক্ষটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম। পুরোনো ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে গেছে। প্রতিদিন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই গাদাগাদি করেই চলে কার্যক্রম। যাত্রীদের মালপত্র বারান্দায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসার জন্য ইমিগ্রেশন কক্ষে কোনো জায়গা নেই। আর বাইরে টিনের একটি ছাউনি আছে, যেখানে ১৫/২০টি চেয়ার থাকলেও কোনো টেবিল নেই। অথচ ফরম পূরণ করতে টেবিল প্রয়োজন। ফরম পূরনের জন্য দেখা গেছে কেউ বারান্দার মেঝেতে বসে, আবার কেউ কেউ বিদ্যুৎতের জেনারেটরের ওপরে ফরম রেখে পূরণ করছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্যও জায়গা নেই। কক্ষটিতে এসির ব্যবস্থা থাকলেও ভিড় থাকায় যাত্রীদের লাইন কক্ষের বাইরে বারান্দায় চলে যায়। ফলে এসিগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় গরমে কষ্ট সহ্য করে ইমিগেশনের কাজ শেষ করতে হয়।
তবে বিড়ম্বনা এখানেই শেষ নয়। কাস্টমসের কাজ করতে পাড়ি দিতে হচ্ছে অন্তত দুইশ গজ দূরবর্তী অন্য আরেকটি ভবনে। মূলত এক ভবন ও এক ছাদের নিচে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ করতে না পারায় তাদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে চালু হয় আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম। সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে অনেকেই আখাউড়া ইমিগ্রেশন ব্যবহার কররে ভারতে যাতায়াত করছেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন অত্যন্ত এক হাজার যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ভারতে যান। যা থেকে প্রতি মাসে ৭৫ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে সরকারের। বিগত ছয় মাসে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন আধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও ২০১৭ ও ২০১৯ সালে সীমান্ত আইনের অজুহাতে বিএসএফ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
মৌলভীবাজার জেলা থেকে ভারতগামী বাংলাদেশি যাত্রী সুমন আহমেদ বলেন, আমি ইমিগ্রেশনের পরিবেশ দেখে হতবাক হয়ে গেছি। এখানে লাইনের কোনো শৃঙ্খলা নেই। কোনো ধরনের আধুনিকায়ন নেই। অথচ আগরতলা ইমিগ্রেশনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফারহানা মিলি নামে এক নারী চিকিৎসক তার বাবার চিকিৎসা জন্য ভারতে যাওয়া সময় আক্ষেপ করে বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশন ও আখাউড়া ইমিগ্রেশনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমাদের এখানে ভালো ব্যবস্থা নেই। মালপত্র রাখার জায়গা পাই না। আরেকজনের কাছে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। বছরের কয়েকবার যেতে হয়। তবে এর উন্নতি দেখছি না। এখানে দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগুক সেই কামনা করি।
মুক্তি খান নামে এক যাত্রী বলেন, বর্তমানে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন নামেমাত্র টিকে আছে। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে কোনোমতে ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী ভবন তৈরির পর এক ছাদের নিচে সব পরিষেবা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশিদের আসা যাওয়া আরও বেড়ে যাবে। যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগও লাঘব হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছেন। তবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালানোর জন্য যে ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে, তা খুবই অপ্রতুল। নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সেবার মান বাড়বে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, এ ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের পর্যাপ্ত সুবিধার কমতি রয়েছে। আমাদের নতুন একটি ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজ চলছিল, তা বিএসএফের বাধায় বন্ধ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে আমরা ভবনটির কাজ আবার শুরু করতে পারব। এছাড়া বলে রাখি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক বন্দর নিমার্ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩.৫৭ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ হাতে নিয়েছি। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। যাত্রীসেবার মানও উন্নত হবে।
তিনি আরো বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে এবং আধুনিক স্থলবন্দরটি তৈরি হলে আখাউড়াই হবে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থলবন্দর।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের ছুরিকাঘাতে খাইরুল ইসলাম নামে এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে শিবনগর এলাকা। ওই ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ফলে পুলিশের ভয়ে দিনে তো নয়ই, রাতেও বাড়ি ফিরছেন না গ্রামের কোনো পুরুষ।
সরেজমিনে শিবনগর গ্রামে গিয়ে কোনো পুরুষের দেখা মেলেনি। রাস্তাঘাটও অনেকটা ফাঁকা। কয়েকটির বাড়িতে নারীদের দেখা গেলেও কোনো সাড়াশব্দ নেই। ছোট ছোট শিশুরা বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। কিন্তু অপরিচিত মানুষ দেখে পুলিশ মনে করে তারাও ভয়ে পালিয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৭০-ঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধা জানান, গ্রামে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। সবাই ভয়ে আছে যদি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কারণ পুলিশের ওপর হামলার মামলা। ছাড়া পেতে মুশকিল হয়ে যাবে। তাই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
মনিয়ন্ধ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবুজ বলেন, ওই দিন রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে শুরু করে পুলিশ। এরপরই শিবনগর গ্রামে গ্রেফতার আতঙ্ক শুরু হয়। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও আইনের মাধ্যমে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, শিবনগর গ্রামটি মাদকপ্রবণ এলাকা হিসেবেই পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রামে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। প্রতিদিন কোটি টাকারও বেশি মাদক কেনাবেচা হয় এই গ্রামে। প্রতি মাসে মাসোহারা দিয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এছাড়া এ গ্রামে একটি মানব পাচারকারী চক্রও সক্রিয় রয়েছে। এর আগেও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে এসে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন হামলার শিকার হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আখাউড়া থানা পুলিশে পরিদর্শক (ওসি) মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ না, যারা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও ওই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এরাই পুলিশের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। দোষীদের ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ৫ মে শুক্রবার রাতে আখাউড়া থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নে মাদক উদ্ধারে অভিযান চালায়। সেখানকার শিবনগর এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে সেলিম নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার সময় সে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ সদস্য খাইরুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করে মাদক ব্যবসায়ী পালিয়ে যায়। এতে তিনি মাথায় ও পেটে গুরুতর আঘাত পান। পরে আহত অবস্থায় পুলিশ সদস্য খায়রুলকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করে সেই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৫৬ জনকে আসামি করা হয়। এদিকে হামলার ঘটনায় পুলিশ শিবনগর গ্রামে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ বলছেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রত্যেকেই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধী। তাদের নামে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে।
আখাউড়ায় প্রায় এক কোটি টাকার ভারতীয় পণ্যসামগ্রী ও মদ জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজ ৫ অক্টোবর শনিবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর সীমান্তবর্তী জয়নগর খলাপাড়া এলাকা থেকে সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের (বিজিবি-৬০) সদস্যরা এই ভারতীয় পণ্য ও মদ জব্দ করে। এদিন দুপুরে বিজিবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এই সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে উপজেলার গঙ্গাসাগর সীমান্তবর্তী জয়নগর খলাপাড়া এলাকায় সুলতানপুর ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-৬০) টহল দলের অভিযানের সময় ৬৪৮ পিস ভারতীয় অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের ডিসপ্লে, দুই লাখ পিস বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় ট্যাবলেট, ২৪টি হুইস্কি মদের বোতল এবং ২৪টি বিয়ারের বোতল জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি তিন লাখ টাকা।
এ সময় বিজিবি টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবির এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়।