চলারপথে রিপোর্ট :
ভাঙ্গা-রাজবাড়ি রেলপথের ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নওপাড়া মহল্লায় রেলের এক হাজার ছয়শত স্লিপারের ক্লিপ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা আসার পথে ঘটনাস্থলের আগেই ট্রেনটি থামিয়ে দেন রেলওয়ে পুলিশ। ফলে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান ট্রেনের যাত্রীরা।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভাঙ্গার সাথে রাজবাড়ীর রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৮ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। এর দুই ঘণ্টা পর রেল লাইনের স্লিপারের ক্লিপগুলি আবার স্থাপন করার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটায় বলে জানায় পুলিশ।
ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, রেললাইনের স্লিপারের এক হাজার ছয়শত ক্লিপ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। পরে রাজবাড়ী থেকে রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অভিজ্ঞরা এসে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক করে।
ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার তাকদির হোসেন বলেন, ফরিদপুরের বাখুন্ডা ও পুখুরিয়া পার হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় নিয়মিতই ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা হয়। মাঝে মাঝে যাত্রীরাও আহত হন। তবে এবারের ঘটনা সুপরিকল্পিতভাবে কোনও সংবদ্ধচক্র করে থাকতে পারে। এঘটনায় রাজবাড়ী রেলওয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হবে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় মামলা হবে।খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
গাজীপুরের শ্রীপুরে চারটি প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মামুন।
এসময় শাপলা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, এসআর ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মামুন বলেন, কোনো হাসপাতালের লাইসেন্স হালনাগাদ নেই, কোনোটি আবেদন করা হয়েছে, আবার কোনোটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এসব কারণে বেসরকারি ক্লিনিক অধ্যাদেশ ১৯৮২ ধারায় চারটি ক্লিনিককে জরিমানা করে সতর্ক করে ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কাগজপত্র হালনাগাদ না করলে ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এসময় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সুদেব চক্রবর্তী, উপজেলা সেনিটারি পরিদর্শক ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম দুলাল, উপজেলা প্রশাসন ও শ্রীপুর থানা পুলিশ ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহযোগিতা করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন দু’জন জাপানি পর্যটক। তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় জাপানি ইয়েন, টাকা, আইফোন, ক্রেডিট কার্ড। এরপর লুণ্ঠিত অর্থ নিয়ে দুই ছিনতাইকারী ‘ফুর্তি করতে’ যায় কক্সবাজার। পরে জলপ্রপাত দেখতে তারা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পৌঁছায়। সেখান থেকেই তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো– জিহাদুল ইসলাম মামুন ও আবু রাসেল প্রত্যয়। এর আগে তাদের সহযোগী খায়রুল ইসলাম স্বপনকে মোহাম্মদপুর বোটঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ ২৮ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তিনি জানান, গত ২৪ এপ্রিল দু’জন জাপানি নাগরিক শুক্রাবাদ এলাকার নন্দিনী হোটেলে ওঠেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে তারা রায়েরবাজারে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে যান। আনুমানিক রাত ৯টার দিকে তারা কবরস্থান থেকে বের হতে চাইলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক তাদের ভুল পথ দেখিয়ে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। এরপর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ জাপানি মুদ্রা, বাংলাদেশি ২৮ হাজার টাকা, দু’টি আইফোন, দুটি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, একটি পোর্টেবল হটস্পট ও একটি ব্লুটুথ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেলে চলে যান ভুক্তভোগীরা। পরদিন তারা বিষয়টি হোটেলের ব্যবস্থাপককে জানালে তিনি মোহাম্মদপুর থানা অবহিত করেন।
উপকমিশনার জানান, ২৫ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হওয়ার পর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এ সময় আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িত চক্রটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রথমে ২৭ এপ্রিল মোহাম্মদপুর বোটঘাট এলাকা থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত খাইরুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে রায়েরবাজার শুটকি আড়তের পেছনের কবরস্থানের দেয়াল সংলগ্ন মাঠ থেকে জাপানি নাগরিকের পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, দুটি ক্রেডিট কার্ড ও একটি পাসপোর্ট ছেঁড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, অপর দুই ছিনতাইকারী কক্সবাজারে বেড়াতে গেছে। তখন পুলিশের একটি দল যায় কক্সবাজার। ততক্ষণে ছিনতাইকারীরা চলে যায় সীতাকুণ্ড। সেখান থেকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া একটি আইফোন, ৩০ হাজার জাপানি ইয়েন, একটি পোর্টেবল হটস্পট ও একটি ব্লুটুথ উদ্ধার করা হয়।
উপকমিশনার বলেন, লুণ্ঠিত একটি আইফোন এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আর লুণ্ঠিত জাপানি ইয়েনের মধ্যে ৩০ হাজার উদ্ধার হলেও বাকিটা তারা টাকায় বদলে খরচ করে ফেলেছে। গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে আবু রাসেল প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনের একটিসহ মোট তিনটি মামলা আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল, সহকারী কমিশনার আজিজুল হক, মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান, তদন্তসংশ্লিষ্ট এসআই প্রদীপ কুমার সরকার, মো. নাজমুল ও মো. মাজেদুল।
অনলাইন ডেস্ক :
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের সংকটে, আমাদের সংগ্রামে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম অফুরান এক প্রেরণার উৎস এবং চিরদিন তিনি বাঙালির জীবনে বেঁচে থাকবেন।’
আজ ২৭ আগস্ট রবিবার সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাতীয় কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘এই দিনে আজকে আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ সমূলে তুলে ফেলতে হবে। আজকে আমরা এই শপথ করি। বাংলাদেশের যারা সত্যিকারে বাঙালি তাদের কাছে আমাদের এই চেতনার উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় কবি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা, গানে, চেতনায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমরা এখনো সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছি, তার সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। সা¤প্রদায়িকতা এখনো আমাদের এই স্বাধীন দেশে অগ্রগতির পথে, স্বাধীন দেশের বিকাশের ধারার অন্তরায় রয়ে গেছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আগস্ট মাস শেষ হয়নি, এই আগস্ট মাস বাঙালি জাতির জন্যে ট্রাজেডির মাস, এই মাসে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি আমরা। কাজী নজরুল ইসলামকেও হারিয়েছি। নজরুল আগেও প্রাসঙ্গিক ছিলেন এখনো আছেন, তিনি আমাদের যেকোনো সংগ্রামে অপূরণীয়, তিনি চিরদিন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দলের নেতাদের নিয়ে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সায়েম খান প্রমুখ।
এছাড়া যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
চাঁদপুরের মেঘনায় অভিযান চালিয়ে ২৮টি বাল্কহেড ও তিনটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ পুলিশ। এ সময় ৬২ জন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। শনিবার মুন্সীগঞ্জে নৌ দুর্ঘটনার পর রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। তবে নৌ পুলিশ বলছে, এটি তাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ।
চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান নিজেই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু মালিক ও শ্রমিক রাতে অবাধে বাল্কহেড চালিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে ড্রেজার ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু কাটছিল। ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে বাল্কহেড ও ড্রেজারগুলো জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, যে বাল্কহেডগুলো জব্দ করা হয়েছে, প্রত্যেকটি মেঘনা নদী থেকে উত্তোলন করা বালু নিয়ে যাচ্ছিল। জব্দ করা বাল্কহেড ও আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কামরুজ্জামান বলেন, দু’মাস আগেও মেঘনায় অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক বাল্কহেড এবং শতাধিক শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। নৌ পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি সফিকুল ইসলামের নির্দেশনায় এ অভিযান চালানো হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছে। পদত্যাগ ঘোষণার আগে ‘বিদায়ী ব্রিফিং’–এ ভবিষ্যতের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন হাবিবুল আউয়াল। তাঁর আরও পরামর্শ, এ নির্বাচনে বিরতি দিয়ে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে হবে।
হাবিবুল আউয়ালের ব্রিফিংয়ে পড়া লিখিত ভাষণের শব্দসংখ্যা ছিল সাত শতাধিক। লিখিত ভাষণের শেষে ‘নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে’ তিনি কিছু প্রস্তাবনা দেন। হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বর্তমান ও অতীত থেকে আহৃত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও উপলব্ধি থেকে ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রস্তাবনা সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য রেখে যাওয়া কর্তব্য মনে করছি। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতার কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয়–ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন চার বা আটটি পর্বে, প্রতিটি পর্বের মাঝে তিন থেকে পাঁচ দিনের বিরতি রেখে, অনুষ্ঠান করা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সহজ ও সহায়ক হতে পারে। আমাদের প্রবর্তিত অনলাইনে নমিনেশন দাখিল অব্যাহত রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপটিমাইজ করতে পারলে উত্তম হবে। প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সুনিশ্চিত হতে পারে।’
ভাষণে দেশের প্রতিটি নির্বাচনের ইতিহাস তুলে ধরেন হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, দেশের প্রথম সাংবিধানিক সাধারণ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল। ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচন সামরিক শাসনামলে হয়েছে। ফলাফল নিয়ে বিতর্ক ছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচন রাজনৈতিক রূপরেখার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন হয়েছিল। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন, সূক্ষ্ম বা স্থূল কারচুপির সীমিত সমালোচনা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সংসদে মাত্র ২৭টি এবং আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। নিরাপদ প্রস্থান বিষয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেনাসমর্থিত অসামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দর–কষাকষির বিষয়টি প্রকাশ্য ছিল। সে প্রশ্নে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থানও গোপন ছিল না। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধানমতে দলীয় সরকারের অধীন হয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দলই অংশগ্রহণ করেনি উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ফলে সেই নির্বাচনও ২০২৪ সালের অনুরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। আসন পেয়েছিল মাত্র ৬টি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৫৮টি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বর্তমান কমিশনের অধীন। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। কমিশন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার আহ্বান করা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না–করার বিষয়টি দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে দেওয়ার মতো কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। সে কারণে অনেকেই কমিশনকে দোষারোপ করছেন। নির্বাচন কখন, কী কারণে, কত দিনের জন্য স্থগিত করা যাবে, তা–ও সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। অতীতে কখনোই কোনো কমিশন নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেননি। সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে; দলের মধ্যে নয়। ২৯৯ আসনে ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
পদত্যাগী সিইসির কথা, ‘নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সব দোষ বা দায়দায়িত্ব সব সময় কেবল নির্বাচন কমিশনের ওপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে; কিন্তু সব সময় সব কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালোটাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচনী পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে হওয়া অতীতের অন্যান্য নির্বাচন ছাড়াও ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিতর্কিত বা সন্দিগ্ধ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন পরবর্তী সব নির্বাচন সতর্কতার সঙ্গে আয়োজনের চেষ্টা করেছে। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে দিনের বেলায় ব্যালট পেপার প্রেরণ, কিছু উপনির্বাচনে ভিডিও পর্যবেক্ষণ, ইভিএম ব্যবহার, দেশের সব জেলায় একই দিনে তবে প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক সীমানার মাঝে তিন থেকে পাঁচ দিন বিরতি দিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠান, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপকভাবে রদবদল ইত্যাদি গৃহীত ব্যবস্থা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খল করতে অনেকটাই সহায়ক হয়েছিল। নির্বাচন মূলত একদলীয় হওয়ার কারণে কারচুপি বা সরকারিভাবে প্রভাবিত করার প্রয়োজনও ছিল না। নির্বাচন দলের ভেতরেই হয়েছে; মধ্যে হয়নি। উইথইন হয়েছে, নট বিটুইন।
নিজেদের কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দুই বছর সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের ৯৯২টি, উপজেলা পরিষদের ৪৯৬টি, জেলা পরিষদের ৭১টি, পৌরসভার ৯০টি এবং সিটি করপোরেশনের ১৬টি নির্বাচন করেছে। নির্বাচনগুলোর সততা, সিদ্ধতা, নিরপেক্ষতা অবাধ হওয়া নিয়ে অতীতের মতো ব্যাপক বিতর্ক বা সমালোচনা হয়নি। উপনির্বাচনসহ জাতীয় সংসদের মোট ৩১৮টি আসনে কমিশন নির্বাচন করেছে। দলীয়ভাবে ইনক্লুসিভ না হওয়ার কারণে নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এটি সঠিক ও যৌক্তিক। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোনো নির্বাচন কমিশন সংবিধান উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেছে এবং সেই কারণে নির্বাচন হয়নি-এমন উদাহরণ নেই। সরকার বারবার বলছে, ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচন বারবার ব্যর্থ হওয়ার প্রকৃত সত্য ও কারণ এ কথার মধ্যেই নিহিত।
হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, ‘কমিশনের সদস্যরা সংবিধান মেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আমাদের কর্মকালে আমরা গণমাধ্যম, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীসহ আবশ্যক সবার সহযোগিতা পেয়েছি। কৃতজ্ঞচিত্তে তা স্মরণ করছি।’