চলারপথে রিপোর্ট :
উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। ভারতে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি যাত্রী পারাপারও হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে। ধীরে ধীরে যাত্রীদের কাছে পছন্দের রুট হয়ে উঠছে আখাউড়া স্থলবন্দর। ফলে যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদ সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ছে। তবে যাত্রীর সঙ্গে রাজস্বের পরিমাণ বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা মিলছে না আখাউড়া স্থলবন্দরে। আন্তর্জাতিক এই স্থলপথের যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পণ্য রপ্তানি বাণিজ্য চলছে। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ায় ২০০৮ সালে স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে আখাউড়া স্থলবন্দর। বর্তমানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি টাকার বরফায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, পাথর, তুলা, প্লাস্টিক ও কাঠের ফার্নিচারসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। রপ্তানিকৃত পণ্য ত্রিপুরা থেকে সরবরাহ করা হয় উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতেও।
পণ্য রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি সরকার যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদও বিপুল রাজস্ব পায় আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে। চিকিৎসা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন আটশ থেকে এক হাজার যাত্রী আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারত গমন করে থাকেন। বিভিন্ন উৎসবের সময় এই সংখ্যা প্রায় তিনগুণ হয়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর পার হলেই আগরতলা শহর। সেখান থেকে মাত্র মিনিট বিশেকের পথ পাড়ি দিলেই আগরতলা বিমানবন্দর। এছাড়া রেলস্টেশনও শহরের কাছাকাছি। এর ফলে আকাশ ও রেলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশি যাত্রীরা সহজে কলকাতা, গৌহাটি, দিল্লি, চেন্নাই, জয়পুর, গ্যাংটক ও শিলংসহ দেশটির পর্যটন শহরগুলোতে যাতায়াত করতে পারেন। এতে খরচও সাশ্রয় হয়। মূলত এসব কারণেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার বাড়ছে। এছাড়া আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন চার লেনের জাতীয় মহাসড়কের কাজ শেষ হলে আখাউড়া স্থলবন্দর যাত্রী পাপারের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম রুট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পারাপার হয়েছেন দুই লাখ ৫৭ হাজারের কিছু বেশি যাত্রী। এ সময় যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদ সরকার রাজস্ব পেয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৩ হাজার। সরকার রাজস্ব পেয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকার কিছু বেশি। বিগত অর্থবছরে যাত্রীর ভ্রমণ কর পাঁচ শ টাকা থাকলেও চলতি অর্থবছর থেকে তা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। ভারতীয় যাত্রীরা বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্যও এই কর দিতে হয়। তবে বন্দরে কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
জরাজীর্ণ কাস্টমস ভবনের ছোট্ট এক কক্ষে কাস্টমসের কাজ শেষ করে যাত্রীদের আরেক ভবনে যেতে হয় ব্যাগেজ স্ক্যানিংয়ের জন্য। এরপর সেখান থেকে বিজিবি চৌকি পার হয়ে যেতে হয় ইমিগ্রেশন ভবনে। রুগ্ণ ইমিগ্রেশন ভবনটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে আরও কয়েক বছর আগেই। তবুও ঝুঁকি নিয়ে এই ভবনে যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের কাজ করা হয়।
ছোট্ট ইমিগ্রেশন ভবনের বেশির ভাগ অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী আবুল কাশেম জানান, ঢাকা থেকে ভারতের সব শহরে ফ্লাইট সুবিধা নেই। এছাড়া ঢাকা থেকে ফ্লাইটে খরচও বেশি। এক্ষেত্রে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলা থেকে আকাশপথে ভারতের বিভিন্ন শহরে সহজেই যাতায়াত করা যায়। এতে সময় যেমন বাঁচে, তেমনি খরচও লাগে কম। ফলে আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করেন তিনি। তবে আগরতলা স্থলবন্দরের তুলনায় আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রীদের জন্য তেমন কোনো সেবা নেই।
ফজলে রাব্বি নামে আরেক যাত্রী জানান, ট্রলি সুবিধা না থাকায় যাত্রীদের লাগেজ বহনে সমস্যা হয়। এছাড়া ইমিগ্রেশন ভবনে যাত্রীদের জন্য সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই। এতে করে নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। অথচ আগরতলা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এবং ব্যাগেজ স্ক্যানিং সুবিধা মিলে একই ছাদের নিচে। সেখানে যাত্রীদের জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী মাহাবুবুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, ছোট্ট ইমিগ্রেশন ভবনে একসঙ্গে অনেক যাত্রী বসার সুবিধা নেই। ফলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে গরমের সময় ভোগান্তি বাড়ে। এছাড়া বৃষ্টি হলে জমে হাঁটুপানি। এসব সমস্যা নিরসন করলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার আরও বাড়বে এবং সরকারও বেশি রাজস্ব পাবে বলে জানান তিনি।
যাত্রী দুর্ভোগ কমানোর পাশাপাশি যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আখাউড়া স্থলবন্দরে আধুনিক ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্টরা। ২০১৬ সালে পুরাতন ইমিগ্রেশন ভবনের পাশে শুরু হয় ছয়তলা বিশিষ্ট নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণকাজ। তবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন জটিলতায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আপত্তিতে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভবনের নকশা পরিবর্তন এবং দুইতলা ভবন নির্মাণের শর্তে নির্মাণকাজ শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু একতলা করার পর ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে আবারও বাধা আসে বিএসএফের তরফ থেকে। ফলে এখনো বন্ধ রয়েছে নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণকাজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) হাসান আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা নিজেরাও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন ইমিগ্রেশন ভবনটি হয়ে গেলে যাত্রীরা এক ছাদের নিচেই সব ধরনের সেবা পাবেন। তখন আর দুর্ভোগ থাকবে না। তবে সীমান্ত আইন জটিলতায় ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণকাজটি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ ফের শুরু হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া সীমান্ত এলাকা থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আজ ৪ নভেম্বর শনিবার সকালে ওই যুববকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার রাতে উপজেলার মনিয়ন্দ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। আটক রাব্বি মিয়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ মিনারকোট গ্রামের মৃত কবির মিঞার ছেলে।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মনিয়ন্দ সীমান্তবর্তী গ্রাম দক্ষিণ মিনারকোট এলাকায় ইয়াবা কেনবেচার সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ রাব্বি নামক এক যুবককে আটক করে। তার প্যান্টের পকেট থেকে বিশেষ ভাবে রক্ষিত এক হাজর ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় মাদক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দের জের ধরে মো. মোরসালিন ভূঁইয়াকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামীদের তিনটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশি পাহারার মধ্যেই আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল পৌণে নয়টার দিকে আসামী আব্দুল্লাহ, সেলিম ও শাহদুল এর তিনটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে পরিবারসহ হত্যা মামলার আসামীরা পলাতক থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই এলাকাতে এখনো পুলিশ মোতায়েন করা আছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত রবিবার আখাউড়ায় দেনাদারের বাড়িতে মো. মোরসালিন ভূঁইয়া (২৬) নামে এক পাওনাদারের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর থেকে মো. আব্দুল্লাহ নামে অভিযুক্ত দেনাদার পরিবারসহ পালিয়ে গেছে। মোরসালিনের পরিবারের পক্ষ থেকে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতানামা কয়েকজনকে আসামী করে আখাউড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, আব্দুল্লাহর কাছে মোরসালিন দুই লাখ ৪০হাজার টাকা পেতেন। পরিকল্পিতভাবে তাকে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাকে তালাবদ্ধ ঘরে ফেলে রাখা হয়। পাশাপাশি অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ পরিবার নিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত ও অভিযুক্ত দু’জনই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি। এসব নিয়ে দেওনা-পাওনা নিয়ে বিরোধেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। অভিযুক্ত আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১৬টি মামলা আছে। মোরসালিনের বিরুদ্ধে আছে চারটি মামলা। তবে তারা একসঙ্গেই চলাফেরা করতো বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
নিহত মোরসালিন উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মিনারকুটগ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে। রবিবার বিকালে একই ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের মঙ্গল মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহর তালাবদ্ধ বসত ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়।
সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে তার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে দাফন করা হয়।
মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী দীপক বলেন, আগুন লাগানোর বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি সেখানে যাবো। তবে কে বা কারা লাগিয়েছে সেটি বুঝতে পারছি না।
আখাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশ একটু সরে অন্যদিকে যাওয়ার সুযোগে আগুন জ্বালিয়ে তিনটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানার চেষ্টা চলছে। তবে হত্যাকান্ড ঘটনো পরিবারটির উপর এলাকাবাসীরও ক্ষোভ ছিলো। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন আছে। আগুন লাগার ঘটনায় অভিযোগ দিলে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আখাউড়া প্রতিনিধি :
আখাউড়ায় একটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী জাকির খাঁ (৪৫) কে আটক করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আখাউড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর মোঃ কামরুজ্জামান সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে আজ ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার ভোরে ঢাকার শাহজাহানপুর এলাকা তাকে আটক করে। আটক জাকির খাঁ উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের আমানত খাঁর পুত্র। সে ৭ বছর ধরে পলাতক ছিল।
পুলিশ ও ভূক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সনের আগস্ট মাসের ৬ তারিখ উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয় শরীফ খাঁ (৫০)। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাজেদা বেগম বাদী হয়ে একই পরিবারের ৪জনসহ ৫জনকে আসামী করে আখাউড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলো আমানত খাঁ ও তার তিন ছেলে জাকির খাঁ, গাজি খাঁ, মাহবুব খাঁ এবং আমান খাঁর ভাতিজা আমীর খাঁ। মামলা হওয়ার থেকেই জাকির খাঁ ও তার দুই ভাই পলাতক ছিল।
বিগত ২০২২ সনের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই হত্যা মামলায় জাকির খাঁসহ তার দুই ভাইয়ের মৃত্যুদন্ড এবং তাদের পিতা আমানত খাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়। আমানত খাঁ বর্তমানে কুমিল্লা কারাগারে সাজা ভোগ করছে। এই মামলার আরেক আসামী আমির খাঁ ২০১৮ সালে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শরীফ খার ছেলে মোঃ রাসেল খা বলেন, আসামী আটক হওয়ায় আমরা খুশি। এজন্য প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সরকারের কাছে আবেদন দ্রুত আমার পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়। তাহলেই আমরা শান্তি পাবো।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সনে উপজেলার চানপুর গ্রামে একটি হত্যা হয়। যার প্রেক্ষিতে আখাউড়া থানায় হত্যা মামলা হয়। মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী ৭ বছর পলাতক জাকির খাকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়। সে ছদ্মবেশে অজ্ঞাত স্থানে অবস্থান করে অটো চালাতো। শনিবার দুপুরে তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অপর দুই আসামী পলাতক রয়েছে। শোনা যাচ্ছে তারা বিদেশে অবস্থান করছেন।
আখাউড়া প্রতিনিধি :
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছাতে শুরু করেছে আখাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশে নির্বাচনমুখি নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করছে আওয়ামীলীগ। দলের সাংগঠনিক অবস্থা তুলে ধরতে আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌরসভা ভবনের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল লিখিত বক্তব্য পাঠ করে দলের সাংগঠনিক অবস্থা তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নের মেয়াদোত্তীর্ণ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগসহ সহযোগি সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এতে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আখাউড়ায় আওয়ামীলীগ অনেক বেশি শক্তিশালী। আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে আখাউড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
সমাজের দর্পন হিসেবে সরকারের এসব উন্নয়ন গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজল দাবী করেন, আখাউড়ায় আওয়ামীলীগে কোন গ্রুপিং বা বিভেদ নাই। দলের নবীন-প্রবীণ সকল নেতাকর্মীকে মূল্যায়ন করেই জাতীয় নির্বানকে সামনে রেখে দলীয় কর্মকান্ড চলছে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সেলিম ভূঁইয়া, মোঃ মনির হোসেন বাবুল, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আব্দুল মমিন বাবুল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন সফিক আলেয়া, পৌর যুবলীগের সভাপতি মনির খান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বেগ শাপলু, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন নয়ন প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর পর নিজ জন্মভূমিতে ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া ফজিলা খাতুন নেছা (৫৫)। শুক্রবার দুপুরে ভারতের ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশন আগরতলা থেকে আখাউড়া চেকপোষ্ট দিয়ে তাকে দেশে পাঠায়।
এর আগে তিনি ২০০০ সালে ঝিনাইদহ জেলার নিজ বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। ফজিলা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালি গ্রামের খয়বার আলীর মেয়ে। এদিকে হারিয়ে যাওয়া ফজিলা খাতুনকে গ্রহণ করতে সীমান্তের শূণ্য রেখায় উপস্থিত ছিলেন তার মেয়েসহ স্বজনরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মাকে ফিরে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গেন পরেন মেয়ে পিঞ্জিরা আক্তার। মেয়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন অসুস্থ ফজিলা খাতুন। সীমান্তের শূণ্য রেখায় এসময় হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দিন পর স্বজনকে ফিরে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়েন স্বজনরা। তবে অসুস্থতার কারণে ফজিলা কথা বলতে পারেননি। তিনি কিভাবে ভারতে গিয়েছিলেন তাও জানা যায়নি।
সীমান্তের শূন্য রেখায় ফজিল খাতুনের ভাইপো মোঃ শাহজালাল বলেন, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জানতে পারি আমার ফুফু ভারতের আগরতায় মানসিক হাসপাতালে আছে। তারপর সরকারের সাথে যোগাযোগ করে ত্রিপুরার হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদের সহযোগিতায় আজকে ফুফুকে দেশে আনতে পেরেছি।
মাকে ফিরে পেয়ে পিঞ্জিরা আক্তার বলেন, মা যখন হারিয়ে যায় তখন আমার বয়স ১২। শুনেছি মা হারিয়ে গেছে। মাকে অনেক খোঁজাখুজি করেও পাইনি। মা এতদিন আমাদের কাছে মৃত ছিল। আজ জীবিত ফিরে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে।
ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘ ২৩ বছর পরে হারিয়ে যাওয়া এক মাকে তার সন্তানের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি নিজ বাড়ি থেকে হারিয়ে যান। তার পরিবারের লোকজন তাকে অনেক খোজাখুজি করেও পায়নি। পরবর্তীতে কোন এক সময় তাকে ত্রিপুরায় পাওয়া যায়। পরে ত্রিপুরার মর্ডাণ সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ত্রিপুরা পুলিশ আমাকে তার কথা বলে। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার তথ্য প্রেরণ করে তার নাগরিকত্ব যাচাই করে ভারত সরকারকে অবহিত করি। ভারত সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে আজকে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তিনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, একদিকে যেমন আনন্দের। একই সাথে আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনের প্রথম সচিব মোঃ রেজাউল হক চৌধুরী, মোঃ আল আমিন, ৪২ বিএসএফ আগরতলা আইসিপির কোম্পানী কোমান্ডার ধিবেকান দিমান, আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ হাসান আহমেদ ভূইয়া, বিজিবি আখাউড়া আইসিপির ইনচার্জ মোঃ শাহআলম, ইমিগ্রেশন পুলিশের এএসআই দেওয়ান মুর্শেদুল হক প্রমুখ।