চলারপথে রিপোর্ট :
মুরাদনগরে ঘাস কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার উপজেলার বাঙ্গরাবাজার থানার আকুবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তির নাম মো. আলম মিয়া (৫৬)। তিনি আকুবপুর গ্রামের এয়াকুব আলীর ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. সালাউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, কৃষিকাজের পাশাপাশি গরু পালন ও আকুবপুর বাজারে পোল্ট্রির দোকান ছিল আলম মিয়ার। বেলা ১২ টার দিকে মাঠে গরুর জন্য ঘাস কাটছিলেন তিনি। এসময় বজ্রপাতে মারা যান আলম। আলম ছয় মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বাদ মগরিব তাকে দাফন করা হবে।
বাঙ্গরাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী জানান, বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি।
অনলাইন ডেস্ক :
ইন্টেরিয়র আর্কিটেক্টের কাজ করেন নাহিদ হাজারিকা ইতি। পাশাপাশি নিয়মিত দেশে-বিদেশে ভ্রমণে আগ্রহ তার। ট্রিপকার্ট (Tripkart) নামের ফেসবুক ট্রাভেল এজেন্সির পেজে একটি অফার দেখতে পান তিনি। এজেন্সিটি মাত্র এক লাখ টাকায় দুবাই বা কাতারে ভ্রমণের সুযোগ উল্লেখ করে ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দেয়। ট্রিপকার্টের এমন বিজ্ঞাপন দেখে নাহিদ হাজারিকা ইতি নামের এক নারী দুই জনের জন্য বুকিং মানির অগ্রিম এক লাখ টাকা জমা দেন। এরপর থেকে এজেন্সিটি তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে বনানী থানায় মামলা করেন ইতি। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। তদন্তে নেমে পর্যটকদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণায় জড়িত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি।
গ্রেফতাররা হলেন চক্রের মূলহোতা সাইফুল আলম ওরফে অপু, আহাদ আলম ওরফে তালহা ও মো. আমিনুল ইসলাম।
ডিবি বলছে, চক্রটি সীমিত খরচে ট্যুর প্যাকেজ বিক্রির নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। গত এক বছরে চক্রের হাতে দুইশর বেশি মানুষ প্রতারিত হয়েছে। অপু ও তার চক্রের সদস্যরা গ্রেফতারের খবরে বহু ভুক্তভোগী গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ভিড় করেন।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, ১৪টি পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ১৫টি সিমকার্ড, দুটি ল্যান্ডফোন, একটি ওয়াকিটকি সেট, একটি সিপিইউ ডেক্সটপ, পাঁচটি এটিএম কার্ড ও ছয়টি ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়।
আজ ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘ট্রিপকার্ড’র নামের কথিত এই ট্যুর অপারেটর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেজে বিজ্ঞাপন দিত। তারা বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় দিন ও রাত থাকা, হোটেলে বুকিং, এয়ারপোর্ট পিকআপ, ড্রপআপ, গাইডের মাধ্যমে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের ট্যুর প্যাকেজ ঘোষণা করতো। একসঙ্গে ৪০ জনের ভিসা ও বিমানের টিকিট কাটাসহ সব দায়িত্ব নিজেরাই পালন করার আশ্বাস দিতো। এছাড়া প্যাকেজে আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ঘোষণাও থাকতো। এত কম টাকায় এমন অফার পেয়ে সাধারণ মানুষ তাদের ফাঁদে পা দিতো।
সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডিসহ অভিজাত এলাকায় অফিস নিয়ে প্রতারণা করতো চক্রটি। এক এলাকায় অফিস খুলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিত তারা। এরপর দুই মাস আত্মগোপনে থেকে ভিন্ন নামে অন্য এলাকায় একই কাজ করতো। গ্রেফতার সাইফুল আলম ওরফে অপুর নেতৃত্বে চক্রটি গত ছয় মাসে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ‘ট্রিপকার্ড’র নামের ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডের তথ্যে গত ছয় মাসে শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণার তথ্য পেয়েছে।
রাজধানীর গুলশান এলাকার বাসিন্দা জুই আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজে পড়াশোনা করেন। সম্প্রতি ভ্রমণের উদ্দেশে মালদ্বীপের যাওয়ার জন্য ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘ট্রিপকার্ড’র ফেসুবকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম খরচে আকর্ষণীয় প্যাকেজ দেখে আকৃষ্ট হন জুই। এরপর ভিসা ও অন্যান্য খরচের জন্য অগ্রিম ৫৫ হাজার দেন। কিন্তু টাকা দেওয়ার কিছুদিন পর দেখতে পান ‘ট্রিপকার্ড’র অফিস বন্ধ। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তারা অফিস ছেড়ে চলে গেছেন। নানাভাবে চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন জুই। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে চক্রটির প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
যেভাবে প্রতারণার শুরু
ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সাইফুল আলম ওরফে অপুর কথিত এই ‘ট্রিপকার্ড’ নামের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। ট্যুরে যাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটের নির্ধারিত টাকার পরিমাণের ৪০ শতাংশ অগ্রিম জমা দিয়ে বুকিং নিতে হতো। বুকিং মানি প্রতারকরা নির্ধারিত ব্যাংক অ্যকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতো। পরে বিভিন্ন দেশের ট্যুর প্রসেসিংয়ের জন্য অফিসে ডেকে ট্যুর প্যাকেজের সম্পূর্ণ টাকা নিতো।
এভাবে কয়েকশো মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে অফিস পরিবর্তন করে ফেলত তারা। পরে দুই মাস নিজেরা আত্মগোপন থাকত। এরপর আবার অন্য নামে ফেসবুকে পেজ ও ওয়েবসাইট তৈরি করে আবারও প্রতারণা করত। বুকিং মানির সম্পূর্ণ টাকাই প্রতারক চক্র আত্মসাৎ করতো।
এ ধরনের চক্রের হাত থেকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, যে কোনো ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আকর্ষণীয় ও কম মূল্যের বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ না হয়ে, বৈধ লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সেবা নিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মাধ্যমে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে থানায় মামলা বা অভিযোগ দিতে হবে। এছাড়া নিজের পাসপোর্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকা পৌঁছেছে জাতিসংঘের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গত জুলাই ও আগস্টের শুরুতে দেশজুড়ে সংঘটিত হয় নৃশংসতা। সেই সময়ের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্যই ২১ আগস্ট বুধবার মধ্যরাতে ঢাকায় এসে পোঁছায় দলটি। প্রাথমিক ভাবে এই দলটি বাংলাদেশে প্রায় এক সপ্তাহের সফরে এসেছে বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের আজ ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালেই যাওয়ার কথা রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহর সাথে বৈঠক করার কথা। তিনি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সহকারী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাজ করছেন। প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল।
এ সময় ঢাকায় এসে অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে কাজের ধারা, প্রক্রিয়া, শর্তসহ সব বিষয় চূড়ান্ত করবে।
ফলে ঢাকায় যে দলটি এসেছে, সেটিই যে জাতিসংঘের মূল তথ্যানুসন্ধানী দল, এটা এখনো বলার সময় আসেনি। এনিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, জাতিসংঘের দলটি উপদেষ্টাদের সাথেও দেখা করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করবে।
অন্যদিকে প্রথমে জাতিসংঘের কারিগরি, নাকি তদন্ত দল আসবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বিষয়টি এখনো জাতিসংঘ থেকে আমাদের জানানো হয়নি। আশা করছি, প্রাথমিক দল হিসেবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দলটি আলোচনা করবে। মূলত বাংলাদেশের কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা লাগবে এবং একই সঙ্গে জাতিসংঘের দলটি বাংলাদেশে এলে তাদের কী ধরনের সহযোগিতা লাগবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।’
অনলাইন ডেস্ক :
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, আইটি বাংলাদেশের একটি উদীয়মান খাত। এই খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরল গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাককো) আইটির সার্ভিস সেন্টার হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। দেশের বিপিও খাতের অবস্থান তুলে ধরতে পঞ্চম বিপিও সামিট আয়োজন প্রশংসনীয়। প্রায় সত্তর হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে বিপিও খাতের মাধ্যমে, যা দ্রুত প্রসারমান।
আজ ২২ জুলাই শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রূপসী বাংলা গ্রান্ড বলরুমে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং (বাককো)-র উদ্যোগে ‘সোর্সিং বিয়ন্ড বর্ডার্স’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত পঞ্চম বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সামিট-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি সামিটের শুভ উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার বলেন, দেশের তরুণ মেধাবীদের সম্পৃক্ত করতে হলে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কার্যক্রম বিস্তৃত করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে বিপিও’র সহজবোধ্য উপস্থাপন জরুরি। বিপিও থেকে দেশ ও জাতি কীভাবে লাভবান হতে পারে তা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে নারীদের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। সোর্সিং বিয়ন্ড বর্ডার্স অর্থাৎ দেশের দক্ষ জনশক্তি সারা বিশ্বে সেবা প্রদানের মাধ্যমে উপার্জন করতে পারছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার দক্ষতা অর্জন অব্যাহত রাখতে হবে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় আইটি সেক্টরের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আইটি সেক্টরে তৈরি হওয়া মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সিনিয়র সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, আইসিটি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন ও আইসিটি বিভাগের মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামাল বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া, বাককো’র প্রেসিডেন্ট ওয়াহেদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪৩০। আজ সকালে সোনালি সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। নববর্ষ বিদায়ী বছরের গস্নানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায়
মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্রজাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ-কুটির হতে বিলাসবহুল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের মেগাসিটি-সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফলগুধারা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে উদযাপন করে উৎসবের আমেজে। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্র করার আর কুসংস্কার ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধা-বিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। নতুন পোশাক পরে সবাই মিলিত হন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের যে প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু করেছিল তা আজ বিশ্ব জুড়ে বর্ষবরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরে বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগরজীবনে এই দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান।
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজু উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে জাতি তার স্বকীয়তা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তি সঞ্চয় করে, সচেষ্ট হয় আত্মপরিচয় ও শিকড়ের সন্ধানে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যে আবদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করে স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৪২৯-এর আনন্দ বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। ১৪৩০ সনকে বরণ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে ঘরোয়া পরিবেশে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হলো বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানমালা আমাদের সেই ঐতিহাসিক চেতনাকে প্রোজ্জ্বল করে। স্বদেশ মানস রচনায় বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সর্বোপরি ইতিহাসের আলোকে রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনাকে পরিহার করে আধুনিক ও প্রাগ্রসর অভিধায় জাতিসত্তাকে যথাযথ প্রতিবাদ করার সম্মিলিত প্রতিশ্রম্নতি বাংলা নববর্ষকে দান করেছে অনবদ্য মাঙ্গলিক যাত্রাপথ।
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো বাংলা বর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। আর বাঙালিদের কাছে বাংলা নববর্ষ বরণ হলো একটি প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মঙ্গলশোভাযাত্রা। ইউনেস্কো বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরও সুদৃঢ় করুক, নববর্ষের উদার আলোয় ও মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই হোক নতুন বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ এর প্রত্যাশা।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার ও সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া। বাঙালির বর্ষবরণ ইলিশ ছাড়া হয় না। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওযার ব্যবস্থা থাকে। ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখের জনপ্রিয় খাদ্য। এই দিনের একটি পুরানো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকে নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ও কুস্তি। হাল আমলে ক্রিকেট ও ফুটবল যুক্ত হচ্ছে।
দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয় সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গস্নানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেন। এদিনে তারা হালখাতা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ ভোর থেকে শুরু হয়। ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।
হালখাতা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরানো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন লাল রংঙের হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে। ১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীযের্র সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।
আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরও একটি শোভাযাত্রা। তখন প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অশুভ মানুষের কথা ভেবে মুখোশ করা হয় শোভাযাত্রায়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার পহেলা বৈশাখকে জাতীয় পার্বণ হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছায়ানটের গানে গানে যে প্রতিবাদের ধারা সৃষ্টি করেছিল তা মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার পথে বড় শক্তি যুগিয়েছে। ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পরে যেমন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছায়ানট যেন মানবতার পক্ষে লড়াইয়ে তাদের প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করছে বারবার। আজ সেই আলোড়ন পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে।
অনলাইন ডেস্ক :
১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্রসংগঠনে পরিণত হয়েছে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ছাত্রদল।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : সকাল ১১টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত। এরপর দুপুর ১২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটরিয়ামের সামনে রক্তদান কর্মসূচি, দুপুর ২টায় অডিটরিয়ামে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এই আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সংগঠনটি গণমানুষের মুক্তি তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে আসছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিগত আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগে বলীয়ান হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়া হবে। এ জন্য ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা হবে। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের ছাত্রদলে স্থান হবে না। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বত্র নিয়মিত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে-এটা আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গীকার।