চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় স্কুলছাত্রীদের ইভটিজিং করার দায়ে মাসুম (২৪) নামে এক যুবককে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাসুম বীরগাঁও গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
আজ ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে ইভটিজিংয়ের সময় অভিভাবকরা তাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করে। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান বলেন, মাসুম প্রায় সময় বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের উত্যক্ত করতেন। এছাড়াও তিনি অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে মোবাইলে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতেন। মঙ্গলবার বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং করার সময় অভিভাবকরা তাকে আটক করে খবর দেয়। সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মেলে। তার মোবাইলেও একাধিক মেয়ের সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় মাসুমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জেল থেকে বের হওয়ার পর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন।
মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর :
নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম নারী চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে যোগদান করলেন ডা: শামীমা সুলতানা। আজ ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে ৩২ তম বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকুরি শুরু করেন। তিনি রাজশাহীর মেয়ে হলেও তার শ্বশুর বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়।
নবাগত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শামীমা সুলতানা হিসাবে যোগদানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। নবাগত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শামীমা সুলতানা বলেন, কর্তৃপক্ষের আদেশে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছি। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাসিরনগরবাসীর সহযোগিতায় স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ করেছে নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তর। আজ ২৫ জুন বুধবার সকালে উপজেলা সদরের একটি মৎস্য আড়তে পরিচালিত অভিযানে প্রায় ৪০ কেজি পিরানহা মাছ জব্দ করা হয় এবং এক আড়তদারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আসামি কংশ দাস নামের এক আড়তদারকে “মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০” এর অধীনে জরিমানা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী রবিউস সারোয়ার এবং সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহিমুল আরেফীন।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পিরানহা ও বিষাক্ত রাসায়নিকমিশ্রিত চাষের মাগুর মাছ বিক্রি করে আসছিল।
নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী রবিউস সারোয়ার বলেন, পিরানহা মাছ দেখতে রূপচাঁদার মতো হলেও এটি ক্ষতিকর। জব্দকৃত মাছ স্থানীয় একটি এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সঠিক তদারকির অভাবে এবং অযত্ন ও অবহেলায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল কালের সাক্ষী হয়ে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর জমিদার বাড়ি। ৭৫ বছর ধরে বেদখলে ছিল বিশালাকার বাড়িটি।
সম্প্রতি হরিপুর বড় বাড়ি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর এবার শীঘ্রই সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
১৮শ শতাব্দীতে জেলার নাসিরনগর উপজেলায় তিতাস নদীর পাড়ে প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমিতে জমিদার কৃষ্ণপ্রদাস রায় চৌধুরী ও গৌরীপ্রসাদ রায় চৌধুরী দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটি নির্মাণ করেন।
জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদার পরিবারের লোকজন বাড়িটিতে কয়েকজন পুরোহিতদের রেখে কলকাতায় চলে যান। এরপর পুরোহিতদের বংশধরদের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু মুসলিম পরিবার দখল নিয়ে বসবাস শুরু করেন সেখানে। সেই থেকে প্রায় ৭৫ বছর ধরে বাড়িটি ছিল বেদখলে। এতে বাড়িটি দিনের পর দিন বিলুপ্তির পথে যেতে থাকে। তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়িটির দখলে থাকা পরিবারগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসিত করা হয়। এরপরই নেওয়া হয় বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। কারুকাজ খচিত ৬০টি কক্ষ বিশিষ্ট বাড়িটিতে রং মহল, দরবার হল, নাচ ঘর, পুকুর, খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে। তবে এর অনেক অংশ ভেঙে ফাটলও ধরেছে। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দু’পাশে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর দুটি সমাধি সুউচ্চ মঠ রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে এসে ঘুরে ঘুরে পুরো রাজবাড়ির সৌন্দর্য দেখছেন। অনেকে আবার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. গোলাপ মিয়া বলেন, হরিপুর রাজবাড়ি এটি আমার জন্মের আগে নির্মিত। এই বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল। বাড়িটিতে বহিরাগত লোকেরা থাকতেন। তবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দখলে থাকা বহিরাগতদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। আমাদের দাবি, এই বাড়ি যেন পুনঃসংস্কার করে দেয়। তাহলে আমাদের তিতাসের পূর্ব পাড়ে অতীতের একটি স্মৃতি থাকবে।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বাড়িটি পরিত্যক্ত। এই বাড়িটি চুনকাঠ ও বীমের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় একটি বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি চাই, সরকার যেন দ্রুত এই বাড়িটি সংস্কার করে দেয়। বাড়িটি সংস্কার করে দিলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে। আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে।
ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক বলেন, আমরা হরিপুর জমিদার বাড়ি দেখতে এসেছি। দেখলাম এখানে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। রাজমহল, রঙমহল, দরমহলসহ প্রতিটি দেওয়ালে বিভিন্ন প্রকার কারুকাজ করানো রয়েছে। বাড়িটি অনেক পুরোনো হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তবে বাড়িটির ফটকের সামনে যদি এর ইতিহাস লিখে রাখা হয় তাহলে পর্যটকরা এসে এর সঠিক তথ্য জানতে পারবে। বাড়িটি যদি দ্রুত সংস্কার করা যায় তাহলে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখতে পারবে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, হরিপুর জমিদার একটি দর্শনীয় স্থান। এটা প্রত্নতত্ত্বের একটা গুরুত্ব আছে। জমিদার বাড়িতে যেসব বহিরাগত পরিবার ছিল তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা দিয়ে ওখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল তারা নিজেরাই চলে গেছেন।
বাড়িটি সংস্কারের বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে বলেন, আমাদের যে সরকারি রাজস্ব ফান্ড আছে তা থেকে এই বছরই আমরা বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু করব। আমরা প্রকল্প তৈরির চেষ্টা করছি। খুব দ্রুত প্রকল্পটা আমাদের মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠিয়ে দেব। আসা করছি প্রকল্পটা অনুমোদন হলে একটা বড় আকারের কাজ করতে পারব। বাড়িটি যেভাবে আছে আমরা ঠিক সেই ভাবে রেখেই সংস্কার কাজ করব।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষার একটি আইন বা ব্যবস্থা আছে যা সারা বিশ্বে একই নিয়ম। সেভাবেই আমরা এটি সংস্কার করব।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের খাগালিয়া গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় বাড়িছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। প্রতিপক্ষরা তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গরু, হাঁস, পাকা ধান, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। অবশ্য লুট হওয়া ২২টি গরু উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের কাছে ফেরত দিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তারা বিপাকে পড়েছে ধানি জমি নিয়ে।
বছরের এ সময়টায় পাকা ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করেন পরিবারের সবাই। পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্ক আর প্রতিপক্ষের ভয়ে বাড়িছাড়া হওয়ায় সময় মতো কাটতে না পারায় ৬০টি পরিবারের ৪০০ বিঘা জমির পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে জমিতেই। সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন। আজ ২৯ এপ্রিল শনিবার গ্রামবাসীকে নিয়ে ধান কাটার জন্য গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের সম্প্রীতি কমিটি।
এর আগে পাকা ফসল জমিতে নষ্ট হওয়ায় প্রতিকার চেয়ে উপজেলা সমন্বয় সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভলাকুট ইউনিয়নের বীর মুক্তিযুদ্ধা কার্তিক চন্দ্র দাস। পরে সংসদ সদস্য, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিবাদ এড়িয়ে দ্রুত আসামি পক্ষের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেন।
সরেজমিন খাগালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল এলাকাজুড়ে পাকা ধান পড়ে আছে। আর কয়েকদিন গেলেই সেগুলো আর কাটা যাবে না। ফলে পাকা ধান ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জরিফা বেগম জানান, কৃষিই আমাদের আয়ের একমাত্র ভরসা। সারা বছরের মধ্যে শুধু ধান চাষ করেই আমাদের পেট চলে। কিন্তু এবার যদি ধান না কাটতে পারি আমরা আগামী এক বছর কিভাবে চলবো।ইউএনও স্যার এসে কমিটি গঠন করে দিয়ে গেছে। আশা করছি, দ্রুতই পাকা ধান কাটতে পারবো।
সম্প্রীতি কমিটির প্রধান ও ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুবেল মিয়া বলেন, আমি এ পর্যন্ত ২২টি লুট হওয়া গরু উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। পাকা ধান কাটার জন্য একটি সম্প্রীতি গঠন করা হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয় কৃষক ধান কাটতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বিষয়টি সমাধানে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ফখরুল ইসলাম বলেন, মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় কৃষকের পাকা ধান কাটার অনিশ্চিয়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে ধান কাটার বিষয়ে একটি সম্প্রীতি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আশা করছি, পাকা ধান কাটতে সমস্যা হবে না।
গত ২২ এপ্রিল ঈদের দিন বিকালে খাগালিয়া ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রব মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদের পক্ষের লোকজন খাগালিয়া নতুন বাজার এলাকায় সরকারি খাস জায়গায় ধান মাড়াইয়ের ‘খলা’ স্থাপনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ালে জামাল মিয়া নামে এক কৃষক নিহত হন। এরপরই শুরু হয় প্রতিপক্ষের বাড়িতে লুটপাট।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিল শাপলা জলমহাল ইজারা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার জেলেরা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। নাসিরনগরের জেলেরা বলছেন, বংশ পরম্পরায় ওই বিলে মাছ ধরে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কয়েক দশক ধরে সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নেন। সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতার তদবিরে সরাইলের জেলেরা বিলটি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা নাসিরনগরের জেলেদের মাছ ধরতে বাধা ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অপরদিকে সরাইলের জেলেদের ভাষ্য, তাঁরা মিলেমিশে বিলে মাছ ধরতে চান।
৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের বিল শাপলা জলমহালটির অবস্থান নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের পূর্ব পাশে। কাছেই তিতাস নদী। জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতিতে নিবন্ধিত জেলে ৫৩৮ জন। এ ছাড়াও অনিবন্ধিত আরও প্রায় ৭০০ জেলে এখানে মাছ ধরেন। সব মিলিয়ে ১২০০ জেলে পরিবারের সদস্য প্রায় ১০ হাজার। তাঁরা সবাই বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলের দক্ষিণে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রাম। শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিবন্ধিত সদস্য ৪৯।
জেঠাগ্রামের প্রবীণ জেলে মিলন দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘আমার বাপের জন্ম এই বিলের পাড়ে। আমার জন্মও। ছেলেমেয়েও জন্ম নিছে এ বিলের পাড়েই। আমরার আগের পুরুষ বিলের পাড় থাইক্যা মাছ ধরত।’ নিজেদের কোনো জমিজমা না থাকায় বিলের মাছ আর পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই জীবন পার করছেন মিলন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বিল না পাই, মাছ ধরতাম না পারি, তইলে বাল-বাচ্চা (ছেলেমেয়ে) লইয়া না খাইয়া মরণ লাগব।’
তাঁর মতো এমন হাজারো জেলের আশঙ্কা–এবার না বিলের ইজারা সরাইলের শাহজাদাপুরের জেলেরা নিয়ে যান! এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি জলমহালটি ছয় বছরের (১৪৩০-১৪৩৫ বঙ্গাব্দ) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ জন্য আবেদন করে শাহাজাদাপুর গ্রামের তিতাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে–এমন আশঙ্কায় জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি। তাই তিতাস সমিতির আবেদন বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরের সই করা চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। পরে জলমহালটি তিন বছর মেয়াদে নতুন করে ইজারা দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এতে আগ্রহী হয়ে তদবির শুরু করে শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।
নাসিরনগরের জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা জানান, ১৯৭৭ সালে সমিতি গঠনের পর থেকে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে তাঁরাই বিলটি ইজারা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি শাহাজাদাপুরের জেলেরা তা ইজারা নিতে চাইছেন। নাসিরনগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ৪(চ) অনুযায়ী স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সংগঠন, নিকটবর্তী বা তীরবর্তী মৎস্যজীবীদের জলমহাল বন্দোবস্ত প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির এ অধিকার বেশি।
জেঠাগ্রামের জেলে হিরামন দাস বলেন, ‘বিলে মাছ ধরনের লাইগ্যা নতুন জাল, নৌকা কিনা হয়ছে এনজিও থেইক্যা (ঋণ নিয়ে)। এই গেরামের কয়েক হাজার মানুষ কোটি টাকা ঋণ নিছে।’ এভাবে ঋণ নিয়ে মাছ ধরে তা শোধ করেন জানিয়ে হিরামন বলেন, ‘আমরার এলাকার বিল যদি সরাইলের মানুষরে দিয়া দেয় তাইলে ঋণ শোধ করতে বসতঘরটাও বেইচ্যা দিয়ন লাগব।’
জেলে নয়ন দাসের ভাষ্য, ‘আমরার লোকজন বিলে গেলেই সরাইলের লোকজন মাইরধর করে। এহন হুনতাছি সরাইলের লোকেরা নাকি বিল লইয়া যাইব। এই বিলের লগে আমরার রক্ত মিশ্যা আছে। জান থাকতে বিল কেউরে নিতে দিমু না।’
জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ইজারা বিষয়ে শুনানির জন্য গত ৭ মে জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়েছে। সরাইলের জেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে মাছ ধরারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের অভিযোগ, জলমহালের ইজারা সরাইলের জেলেদের পাইয়ে দিতে তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।
সরাইলের শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, ‘কাগজেপত্রে বিলের মৌজা নাসিরনগরের। মিলেমিশেই বিলের মাছ ধরতে চাই। আমরাও জেলে পরিবার। কিন্তু ওই এলাকার জেলেরা তাতে রাজি হচ্ছেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে কথা বলিনি। বিলটি নাসিরনগরের, এটা সবাই জানে। সরাইল ও নাসিরনগরের প্রকৃত জেলেরা যেন মিলেমিশে মাছ ধরতে পারে–সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’ বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র ঘেঁটে বিলটি দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগরের জেলেরাই ইজারা নিয়ে মাছ ধরছেন বলে জানান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার। ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নিকটবর্তী ও তীরবর্তী হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামই আসে।
বিল ইজারা দিতে রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী যাঁরাই উপযুক্ত, তাঁরাই এ বিল (ইজারা) পাবেন।