চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রানার্স কমিউনিটির বর্ষপূর্তিতে ফান রান দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে জেলা শহরের পৌর এলাকার লোকনাথ দীঘির ট্যাংকের পাড় থেকে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে বিভিন্ন বয়সী দৌড়বিদেরা অংশগ্রহণ করেন।
ভোরে সূর্যের আলো উঠার আগেই শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন বয়সের দৌড়বিদরা লোকনাথ দীঘির ট্যাংকের পাড়ে জমায়েত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিভূতি ভূষণ দেবনাথ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দিলারা আক্তার খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রানার্স কমিউনিটির প্রধান উদ্যোক্তা সংগঠনের এডমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রাজন মিয়া।
শহরের লোকনাথ দীঘির ট্যাংকের পাড়ের প্রধান ফটক থেকে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে শহরের তিতাস নদীর বুক চিরে বের হওয়া নতুন সড়ক সীমনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের (শেখ হাসিনা সড়ক) তৃতীয় সেতু পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও বিজয়নগর উপজেলার মনিপুর থেকে শহরের শিমরাইলকান্দি সেতু পর্যন্ত আসা-যাওয়া ১০ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতা চলে। ফান রানে দুই কিলোমিটার দৌড়ে শিশুরা, ৪৫ বছর বয়স থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা ৫ ও ১০ কিলোমিটার এবং নারীরা ৫ কিলোমিটার দৌড়ে অংশ নেন। ৫ ও ১০ কিলোমিটার সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। ছয় ক্যাটাগরিতে মোট ৮৫ জন অংশ নেন।
দৌড় শেষে সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের শিমরাইলকান্দি সেতুতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক দিলারা আক্তার খান। অংশগ্রহণকারীদের একটি করে শুভেচ্ছা স্মারক, সনদ, টি-শার্ট দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের চ্যাম্পিয়ান ও রানার্সআপ ট্রফি দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রানার্স কমিউনিটির সমন্বয়ক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. রাজন মিয়া বলেন, সুস্থ্য দেহ ও সবল মনের জন্য ২০২১ সালে এই সংগঠন করেছিলাম। নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় সংগঠনের ৫০ সদস্য প্রতিদিন দৌড়ান। সংগঠনটির সক্রিয় রানার সংখ্যা এখন শতাধিক। এই সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন অন্তত আড়াই হাজার সদস্য। আগামী বছরের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক মানের বড় পরিসরে হাফ ম্যারাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের প্রফেসর দিলারা আক্তার জানান, প্রথমবারের মতো শিশুরা অংশগ্রহণ করেছেন এই প্রতিযোগিতায়। সকলকে এই সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
সাধারণ মানুষ ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সম্মানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বিএনপির আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১৪ মার্চ শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২.৩.৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে এই দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বিএনপির সভাপতি নাজির উদ্দিন আহাম্মেদের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। সঞ্চালনায় ছিলেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মিজানুর রহমান।
প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, মানুষকে নিয়ে আগামীদিনে আমাদের ভোটের রাজনীতি করতে হবে। মানুষদের সাথে এমন কোন আচরণ করা যাবেনা বিএনপির ইমেজ নষ্ট হয়।
তিনি বলেন, আজকের ইফতার মাহফিলে সব নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়েছি বলছি আমরা যেন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নদীতে ভেসে উঠেছে পচাগলা মরদেহ৷ পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ময়নাতদন্তের পর মরদেহটি দাফনের জন্য খবর দেওয়া হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ সংগঠনকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিচয়বিহীন মরদেহ উদ্ধার হলেই দাফন কাফনের জন্য ডাক পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের। সংগঠনটি গত দুই বছরে ১০১টি পরিচয়বিহীন মরদেহ দাফন করেছে। ১১ মে শহরের মেড্ডায় তিতাস নদীর পাড়ে কবরস্থানে ১০১তম পরিচয়বিহীন মরদেহটি সংগঠনের সদস্যরা দাফন করেন।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আজহার উদ্দিন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনটি মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ব্লাড ডোনেশনের জন্য৷ এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০০ ব্যাগ রক্ত দান করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু মহামারি করোনার সময় প্রথম দিকে কেউ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মরদেহের কাছে আসতে অনেকেই ভয় পেতেন। সে সময় নিজ সন্তানও মা-বাবার মরদেহের কাছে আসেননি। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা মরদেহ দাফনে অপারগতা জানালে আমরা করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফনের কাজ শুরু করি। ওই সময় ৮টি করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফন করেছি।
আজহার উদ্দিন জানান, একদিন কবরস্থানে দেখলাম অজ্ঞাত পরিচয়বিহীন মরদেহ কোনো প্রকার কাফন এবং জানাজা ছাড়া মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়া হচ্ছে। একটা মরদেহ সম্মানের সঙ্গে দাফন না করায় খারাপ লেগেছিল। এরপর বন্ধু-বান্ধব সহকর্মীদের নিয়ে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলো অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ গোসল, কাফন ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের। কাফন ও দাফনের আনুষঙ্গিক ব্যয় আমাদের সদস্যদের ব্যক্তিগত চাঁদায় হয়ে থাকে।
এছাড়া মাঝে মাঝে বাইরে থেকেও স্বেচ্ছায় কেউ দিয়ে থাকেন। এখন জেলার কোনো জায়গায় অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার হলেই হাসপাতাল মর্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের ডাক পড়ে। ধীরে ধীরে সেই অজ্ঞাত মরদেহের দাফনের সংখ্যা শতাধিকে দাঁড়িয়েছে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ যে কাজটি করছি তা খুবই মানবিক। তাদের কাজের অবশ্যই প্রশংসা করতে হয়। অজ্ঞাত মরদেহগুলো দাফনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অভিনন্দন জানাই। সমাজের সবার উচিত তাদের এসব কাজে পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অজ্ঞাত মরদেহ দাফনের একমাত্র সামাজিক সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’। পুলিশ যখনই অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে, তাদের খবর দেওয়া হয় দাফন কাফন করতে। তাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি যেকোনো সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা ১৪ মে রবিবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপত্বি করেন জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হেলেনা পারভীনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ একরামউল্লাহ, পিপি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত প্রমুখ।
সভায় শহরের মসজিদ রোড ও পুরাতন কোর্ট রোডকে স্থায়ীভাবে ওয়ানওয়ে করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। নম্বরবিহীন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোতে যেন পেট্টোল পাম্পগুলো থেকে জ্বালানী সরবরাহ করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য পেট্টোল পাম্পের মালিকদেরকে খেয়াল রাখার আহবান জানানো হয়। সভায় টিকেট কালোবাজারী রোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে সিসিটিভির আওতায় আনার ও রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফরমে থাকা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভায় নৌ-পথে ফিটনেসবিহীন নৌযান যাতে চলাচল করতে না পারে ও নৌযানগুলোতে লাইফ জ্যাকেটসহ যাত্রীদের সুরক্ষা সামগ্রী যাতে রাখা হয় তা নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সভায় দাঙ্গা-ফ্যাসাদ রোধে জেলার নাসিরনগর ও সরাইলে জেলা পুলিশের উদ্যোগে দেশীয় অস্ত্র অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে জেলার সকল উপজেলায় দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সভায় “নো হেলমেট, নো-ফুয়েল” সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য পেট্টোল পাম্প মালিকেদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয় এবং অবৈধ মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযান আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এই পরিস্থিতিকে ধরে রাখতে হবে।
তিনি মাদক বিরোধী অভিযান আরো জোরদার করার জন্য সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, কেউ যাতে গুজব রটিয়ে কোন ধরনের বিশৃংখলার সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
সভায় সরকারি, বে-সরকারি পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ, সকল উপজেলার নির্বাহী অফিসারগণ, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আবাসন ব্যবসা। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে মানুষ এখন ফ্ল্যাটমুখী। গত ৫ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আবাসন ব্যবসা।
তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে ফ্ল্যাটের দাম। প্রতিবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে তিনশত ফ্ল্যাট। যার বাজার মূল্য প্রায় একশত পঁচিশ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে জায়গার দাম বেড়েছে কয়েক গুন। নিম্ন আয়ের লোকেরা তাদের চাহিদামতো শহরে জায়গা কিনে বাড়ি করতে পারছেন না, তাই তারা ফ্ল্যাটের দিকেই ঝুঁকছেন। আবার অনেক প্রবাসীরাও তাদের সন্তানের লেখাপড়ার সুবিধার্থে শহরে ফ্ল্যাট কিনছেন।
এছাড়াও জায়গা কিনে বাড়ি নির্মান করা বিরাট ঝামেলার কাজ ও বাড়ি নির্মানে পৌরসভার অনুমোদন পাওয়া আগের চেয়ে কঠিন হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষ এখন ফ্ল্যাটমুখী হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ১০ বছর আগেই আবাসন ব্যবসা শুরু হয়। তবে মানুষ বর্তমানে ফ্ল্যাটমুখী হওয়ায় গত ৫ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবাসন ব্যবসা চাঙ্গা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ফ্ল্যাটের মালিক বলেন, শহরে জায়গার দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে জায়গা কিনে বাড়ি করতে পারবোনা বুঝে ফ্ল্যাট কিনেছি। তাছাড়া ফ্ল্যাটে রয়েছে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
কয়েক ফ্ল্যাট মালিক বলেন, বর্তমানে শহরে বাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গা-জমি কেনা, নির্মাণ সামগ্রী রাখার জায়গার অভাব এবং ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন নেওয়াসহ নানা জটিলতার কারনে আমরা ফ্ল্যাট কিনেছি।
আবার অনেক বাড়ির মালিক নিজেরা একটু আরাম-আয়েশে ও বিলাসী জীবনযাপনের জন্য তাদের বাড়ি আবাসন ব্যবসায়ীদেরকে (ডেভলাপার) দিয়ে দিচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকা ও জায়গার অবস্থান ভেদে আবাসন ব্যবসায়ীদের (ডেভলাপারদের) ৬০ ভাগ, জায়গার মালিকের ৪০ ভাগ, ডেভলাপারদের ৫৫ ভাগ, জায়গার মালিকের ৪৫ ভাগ, ডেভলাপারদের ৫০ ভাগ, জায়গার মালিকের ৫০ ভাগ হারে জায়গার মালিকরা তাদের জায়গা আবাসন ব্যবসায়ীদেরকে দিয়ে দিচ্ছেন।
আবাসন ব্যবসায়ীরা ওই জায়গা নিয়ে দুই ইউনিট, তিন ইউনিট ও চার ইউনিটের ৬তলা, ৮তলা, ১০তলা, ১২তলা ভবন নির্মান করছেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে পৌরসভা থেকে ৬ তলার উঁচু ভবনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছেনা।
জেলা শহরের মৌলভীপাড়া, হালদারপাড়া, বাগানবাড়ি, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া, কাউতলী ও মুন্সেফপাড়া এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।বর্তমানে এলাকা ও জায়গার অবস্থান ভেদে ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ার ফুটের মূল্য ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। যা আগে ছিল ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
শহরের হালদারপাড়ার বাসিন্দা বকুল মিয়া বলেন, শহরে জায়গার দাম খুবই বেশী। তাই তিনি সাড়ে চার হাজার টাকা স্কয়ারফুট দামে ১হাজার ২শত স্কয়ারফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। দুই ইউনিটের ৮তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে লিফট, জেনারেটর, পানিসহ সকল সুবিধা রয়েছে। তবে গ্যাস নেই। তিনি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন।
শহরের পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ আল-আমিন বলেন, শহরে জায়গার দাম বেশী। তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। শহরে জায়গা কিনে তার পক্ষে বাড়ি করা সম্ভব নয় বিধায় তিনি গ্রামে কিছু জায়গা-জমি বিক্রি করে ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি জানান, তার বাসায়ও গ্যাস নেই। তিনিও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষক জানান, তিনি আশুগঞ্জের একটি সরকারি স্কুলে চাকুরি করেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে গত ১০/১২ বছর ধরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে শহরের মুন্সেফপাড়ায় ১হাজার ২শত স্কয়ারফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
সেলিম মিয়া নামে একজন প্রবাসী জানান, তার বাড়ি নবীনগর উপজেলায়। ছেলেমেয়েদর লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে তিনি শহরের বাগানবাড়ি এলাকায় সাড়ে চার হাজার টাকা স্কয়ারফুট দামে ১০৫০ স্কয়ারফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
শহরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীর জানান, শহরের প্রতিটি মহল্লাতেই এখন চড়া দামে জায়গা বিক্রি হচ্ছে। ফলে জায়গা কিনে বাড়ি নির্মাণ করা মধ্যবিত্তদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই মানুষ এখন ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কলেজ শিক্ষক জানান, শহরে জায়গার দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা তিন বন্ধু মিলে বছর পাচেক আগে হালদারপাড়া এলাকায় এক বাড়ির মালিকের কাছ থেকে অর্ধেক অর্ধেক হারে ৪ শতক জায়গা নিয়ে তাতে দুই ইউনিটের ৬তলা ভবন নির্মান করেছেন। তারা তিন বন্ধু পেয়েছেন ৬টি ফ্ল্যাট ও মালিক পেয়েছেন ৬টি ফ্ল্যাট। এতে তারা লাভবান হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরে কমপক্ষে ১৫ থেকে প্রতিষ্ঠান আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ঠিকাদারও আছেন। আবার ৭/৮জন যুবক মিলেও আবাসন ব্যবসা করছেন। এলাকা ভেদে ও জায়গার অবস্থান বুঝে জায়গার মালিকদের সাথে চুক্তি করেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। আবাসন ব্যবসায়ীদের (ডেভলাপারদের) ৬০ ভাগ, জায়গার মালিকের ৪০ ভাগ, ডেভলাপারদের ৫৫ ভাগ, জায়গার মালিকের ৪৫ ভাগ, ডেভলাপারদের ৫০ ভাগ, জায়গার মালিকের ৫০ ভাগ হারে জায়গার মালিকরা তাদের জায়গা আবাসন ব্যবসায়ীদেরকে দিয়ে দিচ্ছেন। ভবন নির্মানের সকল খরচ বহন করেন আবাসান ব্যবসায়ীরা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আবাসন রেডি হওয়া পর্যন্ত জায়গার মালিক অন্য যে বাসায় ভাড়া থাকেন সেই ভাড়াও পরিশোধ করেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।
কয়েকজন আবাসন ব্যবসায়ী জানান, ভবন নির্মাণের জন্য পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন নিতে হয়। যে স্থানে ভবন নির্মাণ করা হবে- তার পাশে ১৪ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত রাস্তা থাকলেই ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনের অনুমোদন দেয়া হয়। তারা জানান, পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকাতেই এই আকারের রাস্তা নেই। এজন্য ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধি শিথিল করার দাবি জানান তারা।
আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রফিক কনস্ট্রাকশনের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ মানুষ বাড়ি নির্মাণের ঝামেলা এড়াতে ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকছেন। সবাই চান ঝামেলামুক্ত আবাসন। আমরা মানুষকে সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ফ্ল্যাট দিচ্ছি। এছাড়া মধ্যবিত্তরা কিস্তির মাধ্যমেও ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন।
আবাসন ব্যবসায়ী মোঃ কাদেরউজ্জামান বলেন, “ রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারনে রড, সিমেন্টসহ নির্র্মান সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ফ্ল্যাট তৈরিতে খরচ পড়ছে বেশি। প্রতি স্কয়ারফুটে এখন খরচ পড়ছে আড়াই হাজার টাকার মতো। তাছাড়া ছয়তলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন দিচ্ছেনা পৌরসভা। এসব কারণে ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা বেশি’।
আবাসন ব্যবসায়ী এম.কে. বিল্ডার্সের মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বছরে আড়াইশ থেকে তিনশ ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই চাহিদা। কিন্তু জায়গা স্বল্পতা এবং ছয়তলার বেশি উচ্চতার ভবন তৈরির অনুমোদন না থাকায় আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্ল্যাট দিতে পারছি না। তিনি বলেন, শহরের অধিকাংশ এলাকায় ১৬ ফুটের রাস্তা নেই।
তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যমান বিধি যদি কিছুটা শিথিল করে ছয়তলার অধিক উচ্চতার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়, তাহলে ফ্ল্যাট বিক্রি বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে। পাশাপাশি ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, সর্বনিম্ন ১৪ ফুটের রাস্তা থাকলেই ছয়তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে এটি পৌরসভার কোনো বিধি নয়। সরকার থেকেই এটি নির্ধানর করা হয়েছে। মূলত মানুষের হাঁটাচলা এবং যানবাহন যেন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে- সেজন্যই এই বিধান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পৌরসভার কিছু করার নেই।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতারী পরোয়ানার আসামীসহ একাধিক মামলার ২জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। ১৬ অক্টোবর বুধবার রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ভাদুঘর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে মোঃ অলিউল্লাহ (৬৬) এবং রূপসদী গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মোঃ কামাল মিয়া- (৫৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি রাম দা, ৩টি টেটা, ২টি ছুরি, ৩ টি বল্লম, ৪৫০ ইউরো, ১২২ ইউএস ডলার ও নগদ ৭ লাখ ৩০ হাজার ৮শত টাকা উদ্ধার করা হয়।
আজ ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। যৌথ বাহিনীর দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী বুধবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের জমি সংক্রান্ত মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত আসামী মোঃ অলিউল্লাহকে গ্রেফতার করে।
একই সময়ে যৌথ বাহিনীর অপর একটি টিম বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামে অভিযান চালিয়ে একাধিক মামলার আসামী ও সন্ত্রাসী মোঃ কামাল মিয়াকে গ্রেফতার করে।
এ সময় তার কাছ থেকে ৫টি রাম দা, ৩টি টেটা, ২টি ছুরি, ৩ টি বল্লম, ৪৫০ ইউরো, ১২২ ইউএস ডলার ও নগদ ৭ লাখ ৩০ হাজার ৮শত টাকা উদ্ধার করা হয়।