চলারপথে রিপোর্ট :
তথ্য অধিকার আইন এবং অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে জামালপুরে দুদিনব্যাপী তথ্য মেলা শুরু হয়েছে। আজ ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই তথ্য মেলা উদ্বোধর করা হয়।
জামালপুর জিলা স্কুল সংলগ্ন মাঠে দুদিনব্যাপী তথ্য মেলার উদ্বোধন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো: শফিউর রহমান। পরে আলোচনা সভায় সনাক জামালপুরের সভাপতি অজয় কুমার পালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো: শফিউর রহমান। এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: মোক্তার হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার সোহরাব হোসেন, পৌর মেয়র মো: ছানোয়ার হোসেন ছানু, দুদকের উপ পরিচালক মলয় কুমার সাহা, সিনিয়র তথ্য অফিসার মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন, তথ্য মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কায়েদ উদ জামান, সনাকের সহ-সভাপতি শামীমা খান প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে সহজেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে দুর্নীতির শিকার হলে সাধারণ মানুষকে তার ন্যায্য সেবা সম্পর্কে অবহিত হতে অবশ্যই তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করতে হবে। এবারের তথ্য মেলায় জামালপুরের সরকারি-বেসরকারি ৩৮ প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদী ও বিসিক শিল্পনগরীর খাল এবং পুকুর পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
আজ ৫ এপ্রিল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুর বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন কারখানা, পুকুর ও খাল এবং দুপুরে দুপুরে তিনি তিতাস নদীর মেড্ডা শ্মশান ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি ছোট নৌযানে করে তিতাস নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন, জেলা মৎস্য অফিসার তাজমহল বেগম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মনজুর রহমান, বিআইডব্লিউটি’র উপ-পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল কুদদুস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান প্রমুখ।
সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, তিতাস নদী ঐতিহাসিক নদী। এ নদীকে কেন্দ্র করে গল্প-উপন্যাস চলচ্চিত্র রচিত হয়েছে। কিন্তু দখল দুষনের কারণে নদীটির অস্তিত্ব বিলীনের পথে। মানুষ এখানে বর্জ্য ফেলে। প্রশাসন বার বার বলার পরও মানুষ শুনছেনা। এটি খুবই হতাশাজনক।
শুধু প্রশাসন কাজ করলে হবেনা। প্রশাসনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ নদী আমাদের প্রাণ। এটিকে রক্ষা করার জন্যই আমরা কাজ করছি। নদী দখল করে মাছ চাষের ব্যাপারে তিনি অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দখল ও দুষনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেন।
তিনি বিসিক শিল্পনগরীর বর্জ্য শোধানাগার (ইটিপি) যথাযথ বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখানে সংগতি করার মতো কিছুই নেই। শিল্প বর্জ্য উৎপাদন হয় এখানে, কিন্তু বর্জ্য শোধানাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা কমিশন এসে এখানে হতবাক হয়েছি। এখানে শুধু মাত্র কেমিক্যাল নয়, এখানে পয়ঃ বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর এখানে কাজ করছে না। এখানে নাকি মাঝে মাঝে জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানা করে এখানে কোনো কিছুই করা যাবেনা। আমরা আশা করি জনগণের স্বার্থে শিল্প মালিকদের শুভ বৃদ্ধির উদয় হবে।
সভায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া নালায় পড়ে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আজ ৭ আগস্ট সোমবার সকালে হাটহাজারী উপজেলার ইসলামিয়া হাট বাদামতল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ছাত্রীর নাম নিপা পালিত (২৪)। তিনি একই এলাকার উত্তম পালিতের মেয়ে। হাটহাজারী সরকারি কলেজের বিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সোমবার তার দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষায় অংশ নিতে গ্রামের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি।
নিপা পালিতের দুর্ঘটনাস্থল প্রশাসনিকভাবে হাটহাজারী উপজেলায় হলেও এটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের অধীন। গত দুইবছরে খোলা খাল-নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ মারা গেছেন পাঁচজন। গত সাত বছরে মারা গেছেন নয়জন। এরমধ্যে একজনের খোঁজ মেলেনি। আহত হয়েছেন অনেকে। তবুও খোলা নালা-নর্দমা সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, টানা বৃষ্টিতে হাটহাজারী উপজেলার বাদামতল এলাকাটি পানিবন্দি হয়ে পড়ে। আশপাশের এলাকাসহ সড়কও পানিতে তলিয়ে যায়। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নিপা পরীক্ষায় অংশ নিতে নাজিরহাট কলেজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। এ সময় পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে সড়কের পাশে নালায় তলিয়ে যান তিনি। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক আবু তালেব জানান, নিপার দ্বিতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা চলছিল নাজিরহাট কলেজ কেন্দ্রে। ব্যবস্থাপনা চতুর্থ পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে ওই কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি।
নিপা পালিতের দাদা বাদল পালিত জানান, প্রবল বৃষ্টির মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ছাতা মাথায় দিয়ে বাসা থেকে বের হন নিপা। গাড়ি ধরতে মূল সড়কের একপাশ দিয়ে হাঁটছিলেন তিনি। হঠাৎ পানির তোড়ে নালায় পড়ে যান নিপা। সেখান থেকে আর উঠতে পারেননি। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোফরান উদ্দিন জানান, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে এসআই জানান, নিপা মৃগী রোগী ছিলেন। তাদের বাড়ির আশপাশ ও সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি মাড়িয়ে হাঁটতে গিয়ে তিনি তলিয়ে যান। মৃগী রোগী হওয়ায় তিনি আর উঠতে পারেননি বলে পরিবার ও স্থানীয়দের ধারণা।
সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম বলেন, ‘এটি গ্রামীণ এলাকা। এখানে নালা নেই। বাড়ি থেকে ৩০-৪০ গজের মধ্যে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে ওই ছাত্রী। মৃগী রোগী হওয়ায় পানি থেকে আর উঠতে পারেননি।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুরে জলাবদ্ধতায় সড়ক-খাল একাকার হয়ে গেলে তাতে পড়ে নিখোঁজ হন সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ। এ ঘটনার জন্য সিডিএকে দায়ী করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটি। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় চসিককেও দায়ী করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে লাল পতাকা ও ব্যানার টাঙানো এবং নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরিসহ দুর্ঘটনা রোধে ৯টি সুপারিশ করেছিল ফায়ার সার্ভিস। কোনো সুপারিশই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি সিডিএ। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি সরকার।
একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদে খোলা নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। ৬ ডিসেম্বর নগরীর ষোলশহর এলাকায় চশমা খালে পড়ে নিখোঁজ হয় ১২ বছর বয়সী শিশু কামাল উদ্দিন। তিন দিন পর মির্জাখাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। এছাড়া ২০২১ সালের ৩০ জুন এই নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় চশমা খালে পড়ে যায় একটি সিএনজি অটোরিকশা। প্রচণ্ড স্রোতে ভেসে যান চালক সুলতান ও যাত্রী খাদিজা বেগম। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
চলারপথে ডেস্ক :
চলতি বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ফিতরার সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৬৪০ টাকা। আজ ২ এপ্রিল রবিবার সকাল ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ইসলামী শরিয়াহ মতে, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ইত্যাদি পণ্যের যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা দেওয়া যায়। গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১৫ (এক শ পনেরো) টাকা দিতে হবে। যব দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৩৯৬ (তিন শ ছিয়ানব্বই) টাকা, কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১,৬৫০ (এক হাজার ছয় শত পঞ্চাশ) টাকা, খেজুর দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১,৯৮০ (এক হাজার নয় শত আশি) টাকা ও পনির দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২,৬৪০ (দুই হাজার ছয় শত চল্লিশ) টাকা ফিতরা দিতে হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন। তাদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ ৮ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার কুশিয়ারতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জাহাঙ্গীর মিয়া (৩৫) ওই গ্রামের ধলাই মিয়ার ছেলে। বুকে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আজমান মিয়া ও কাছম আলীর সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ২৭ মার্চ সালিশ ডাকা হয়। সেখানে সমস্যার সমাধানও হয়। শনিবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ দিকে, চিকিৎসা নিতে এসেও উভয় পক্ষের লোকজন আরেক দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
হবিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান জানান, আহতরা হাসপাতালে এসেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে তাদের শান্ত করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠনগুলোর বিচার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, কিন্তু সংগঠনের বিচার এখনো হয়নি। আমার মনে হয় সেটাও সম্ভব যদি আমরা চিন্তা করি। কিন্তু মুশকিলটা হলো, এখনো বিভ্রান্ত করার সুযোগ রয়ে গেছে, অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব হলো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।’
আজ ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে এই স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনাসভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
অধ্যাপক কবীর চৌধুরী সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি প্রথমত তাঁকে চিনেছি আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজে অসামান্য অবদানের জন্য। দ্বিতীয়ত, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক ও সক্রিয় কর্মী হিসেবে অসামান্য অবদানের কারণে।’
ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে স্বাধীন বাংলাদেশের যুদ্ধপদ্ধতির বিচার হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক ও দুইয়ে আজ পর্যন্ত ৫৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এই বিচারকাজে বাকি চ্যালেঞ্জগুলোও জয় করা (ওভারকাম) সম্ভব। সে জন্য ক্রমাগত চাপ ও দাবি অব্যাহত রাখতে হবে।’
যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারে ট্রাইব্যুনালের জনবলসংকটকে ‘প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ’ উল্লেখ করে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর প্রায় ১৩ বছর পার হয়ে গেছে। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার কেউ কেউ মারা গেছেন, অনেকের বয়স হয়েছে। এখন প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থায় নতুন করে সদস্য নিয়োগ দেওয়া না হয়, তাহলে এই বিচারকাজ চালু রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এখনো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ও আমাদের বিরুদ্ধে অনলাইনে নানা রকম বিষোদগার করছে। বিটিসিএলের উচিত এসব ভিডিও সরিয়ে দেওয়া।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আমরা সবাই ন্যায়বিচার পাইনি। যেটুকু পেয়েছি তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমার স্বামীকে (শহীদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী) নির্মমভাবে হত্যা করেছে আলবদররা। কিন্তু আলবদরের মতো সংগঠনগুলোর বিচার তো হয়নি। তাহলে আমি কি ন্যায়বিচার পেয়েছি? এই দুঃখ আমাদের আছে।’
অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেন, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি ট্রাইব্যুনালে ৩০টি মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং একটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। এই মামলাগুলোতে আনুমানিক ২০০ জন অভিযুক্ত আসামি রয়েছেন। এই মামলাগুলোতে সাক্ষ্য প্রদান করবেন ২০০ থেকে ২৫০ সাক্ষী। তদন্ত সংস্থার কাছে আরো ৫০০ থেকে ৬০০ মামলা তদন্তের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আসামি এবং সাক্ষী সবারই বয়স ৭০-এর বেশি। প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়তো আর তিন-চার বছর পর এদের কাউকেই আমরা বিচারের জন্য পাব না। তাই দুটি বা প্রয়োজনে তিনটি ট্রাইব্যুনাল করে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চলমান মামলাগুলো নিষ্পন্ন করা প্রয়োজন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামীর মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে ৩২ বছর আগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিল, এর প্রধান নেতাদের অন্যতম অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী বলেন, ‘স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে হিজড়াদের গল্প একটি নিয়ে বিতর্ক থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে মন্দির ভাঙচুরের মাধ্যমে আমাদের এই দেশে মৌলবাদের যে একটি ক্রমবর্ধমান উত্থান ঘটছে তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু আমরা এই দেশ গড়েছিলাম মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মূলনীতির ভিত্তিতে। আমাদের মধ্যে যারা এখনো এই নীতিগুলোকে ধারণ করেন তারা কবীর চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্বকে খুঁজে ফেরেন অনুপ্রেরণার আশায়।’