চলারপথে রিপোর্ট :
ধামরাইয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাওনা ও বসত বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে ছোট ভাই ফারুক হোসেনকে (৪০) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে বড় ভাই। এ ঘটনার পরই স্থানীয় এলাকাবাসী ঘাতক বড় ভাই ওসমান গনি ও তার স্ত্রী জিয়াসমিনকে আটকের পর পুলিশে সোর্পদ করেছে।
আজ ৪ অক্টোবর বুধবার দুপুরে ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের কাকরান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফারুক হোসেন কাকরান গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কাকরান গ্রামের কালা মিয়ার বড় ছেলে ওসমান গনির সঙ্গে ছোট ভাই ফারুক হোসেনের বাড়ির সীমানা এবং ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাওনা নিয়ে গত এক মাস ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি দুই ভাইয়ের বসতবাড়ির মাঝখান নিয়ে ফারুক হোসেন টিনের বেড়া দেয় এবং পাওনা টাকা দাবি করে। গত রবিবার বড় ভাই ওসমান গনি কোন টাকা দিবে না জানিয়ে টিনের বেড়া ভেঙ্গে ফেলে। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। পরে বুধবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ির উঠানেই বড় ভাই ওসমান গনি অতর্কিতভাবে ধারালো দা দিয়ে ছোট ভাই ফারুক হোসেনের মাথায়, পেটে ৬টি কোপ দেয় এবং তার ডান পা কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এসময় ঘটনাস্থলেই ওসমান গণির স্ত্রী জিয়াসমিন উপস্থিত থেকে তার স্বামীকে সহযোগিতা করেছেন বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন। পরে স্থানীয়রা ফারুক হোসেনকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুপুর ২ টার দিকে অস্ত্রোপাচার করার সময় হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় সোহেল মোল্লা জানান। এসময় স্থানীয় লোকজন ঘাতক ওসমান গনি ও তার স্ত্রী জিয়াসমিনকে আটকের পর পুলিশে সোর্পদ করেন।
স্থানীয় ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য আদর আলী জানান, পাওনা টাকা ও বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য ফারুক হোসেন আমাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওসমান গণি মিমাংসায় রাজি ছিল না।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশীদ বলেন, পাওনা টাকা ও বসত বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জের ধরেই ছোট ভাই ফারুক হোসেনকে মাথায়, পেটে ও ডান পায়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় ওসমান গণি ও তার স্ত্রী জিয়াসমিনকে আটক করা হয়েছে। তারা হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় নিহত ফারুক হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
চলারপথে রিপোর্ট :
তথ্য অধিকার আইন এবং অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে জামালপুরে দুদিনব্যাপী তথ্য মেলা শুরু হয়েছে। আজ ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই তথ্য মেলা উদ্বোধর করা হয়।
জামালপুর জিলা স্কুল সংলগ্ন মাঠে দুদিনব্যাপী তথ্য মেলার উদ্বোধন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো: শফিউর রহমান। পরে আলোচনা সভায় সনাক জামালপুরের সভাপতি অজয় কুমার পালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো: শফিউর রহমান। এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: মোক্তার হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার সোহরাব হোসেন, পৌর মেয়র মো: ছানোয়ার হোসেন ছানু, দুদকের উপ পরিচালক মলয় কুমার সাহা, সিনিয়র তথ্য অফিসার মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন, তথ্য মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কায়েদ উদ জামান, সনাকের সহ-সভাপতি শামীমা খান প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে সহজেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে দুর্নীতির শিকার হলে সাধারণ মানুষকে তার ন্যায্য সেবা সম্পর্কে অবহিত হতে অবশ্যই তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করতে হবে। এবারের তথ্য মেলায় জামালপুরের সরকারি-বেসরকারি ৩৮ প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আব্দুর রশিদ নামে এক দিনমজুরের চিকিৎসা করানোর জন্য নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করেন তার স্ত্রী রোকেয়া। পরে বিষয়টি জানার পর প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিক্রি করে দেওয়া সেই কন্যাশিশুকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বাবা-মায়ের কাছে। এসময় তৈরি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় কন্যাশিশুকে তার বাবা আব্দুর রশিদ ও মা রোকেয়া বেগমের হাতে তুলে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দিনাজপুর সদর উপজেলার রাজবাড়ী কাটাপাড়া এলাকায় থাকেন তারা।
রাতেই শিশুটিকে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিলে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষ। তৈরি হয় আবেগঘন মুহূর্ত। শিশুটিকে কোলে নিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না মমতাময়ী মা রোকেয়া বেগম। তার চোখ ছিল আনন্দ অশ্রূতে ছলছল। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আব্দুর রশিদ। জন্মের পর নিজ কন্যার মুখও দেখা হয়নি তার। সেই কন্যা শিশুকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত সেও।
এসময় দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একরামুল হক আবির ও অন্তু খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গুলিবিদ্ধ দিনমজুরের চিকিৎসাসহ পরিবারটিকে পুনর্বাসনের সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানায় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, মায়ের কাছে সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে পেরে ভালো লাগছে। এর চেয়ে মধুর স্মৃতি আর নেই। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করার। বিশেষ করে তাদের থাকার বিষয়টি নীতিমালার আওতায় এনে তাদের পুনর্বাসন করবো। তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত সামাজিক সুরক্ষার বেষ্টনীর আওতায় পরিবারটিকে নিয়ে আসা হবে।
দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জিন্নাহ আল মামুন বলেন, সংবাদটি জানার পর আমরা সবাই সংযুক্ত হয়ে মায়ের কাছে যেন সন্তান ফিরে আসে সেই পদক্ষেপ নেয়। সেখানে হৃদয়বিদারক ঘটনা থেকে আনন্দদায়ক ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। এতে সবাই খুশি, এটা সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বাবা-মায়ের ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে এই শিশুটিকে তাদের আত্মীয়ের কাছে তুলে দিয়েছিলেন মর্মে জানতে পারি। ছাত্রসমাজ, পুলিশ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের চেষ্টায় আবারও শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। ওই দম্পতিও অনেক আনন্দিত। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্বটুকুই পালন করেছি। শিশুটিকে বিক্রির টাকা ফেরতের ব্যাপারে তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য যে অংশটুকু দিয়েছিল সেটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।
আব্দুর রশিদ বলেন, আগে ভালো ছিলাম না, এখন অনেক ভালো লাগছে। জন্ম হওয়ার পর আজকে প্রথম শিশুটিকে দেখতে পাচ্ছি। যারা শিশুটিকে ফিরিয়ে এনে দিল তাদের ধন্যবাদ। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগছে, ওর মা, বাবা হয়ে ওর জন্য কিছু করতে পারিনি। কারণ আমি নিজেই এক বিপদের মধ্যে। শিশুটি আমাদের কোলে এসেছে, যতই কষ্ট হোক তাকে মানুষ করবো।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট দুপুরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আব্দুর রশিদ যান দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। স্ত্রীকে রেখে নিচে নামলে চলমান সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার শরীরে গুলি লাগে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় চলে যান। পরে পেটের গুলিবিদ্ধ স্থানে পচন ধরলে পেশায় দিনমজুর রশিদ ৮ আগস্ট দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতেই হয় অস্ত্রোপচার, এরপর আইসিইউতে। পরদিন বাড়িতে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
এদিকে হাসপাতালে রশিদের চিকিৎসার সামগ্রিক খরচ আসে ৩৬ হাজার টাকা। এই অর্থ তার পরিবারের জন্য যে বোঝা! মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। থাকেন অন্যের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। উপায় না পেয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুর রশিদের স্ত্রী বাধ্য হয়ে কুড়িগ্রামে তাদের এক আত্মীয়ের কাছে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনদিন বয়সী কন্যা সন্তানকে তুলে দেন।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি ‘কলাবতী শাড়ি’ ও হস্তশিল্পজাত পণ্য উপহার দিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরীজি।
আজ ১৭ জুলাই সোমবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে তার কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি কলাবতী শাড়ি ও হস্তশিল্পজাত পণ্য গ্রহণ করেন।
এ সময় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু থেকে প্রস্তুত ৩টি শাড়ি এবং দুটি জুয়েলারি বক্স প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কলাগাছের তন্তু থেকে মনিপুরী ডিজাইনের এই শাড়ি প্রস্তুত করেছেন মৌলভীবাজারের তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী। প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া শাড়ি ৩টি তৈরি করেছেন অঞ্জলী দেবী ও দত্ত সিংহ।
এ ছাড়া পার্বত্য এলাকায় বাসোপযোগী আশ্রয়ণের একটি বিশেষ মাচাং ঘরের মডেল, জেলা ব্র্যান্ডের ক্যালেন্ডার এবং ব্র্যান্ড বুকও প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক।
অনলাইন ডেস্ক :
সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। চিন্ময়কে গ্রেফতার করার কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, পুলিশের একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ডিবি গ্রেফতার করেছে। যারা আবেদন করেছে, তাদের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হবে।
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, সোমবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে যায় ডিবি। তাঁর ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এই মঞ্চেরও মুখপাত্র। ওই সমাবেশের পরপরই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত)।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কয়েক দিন এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করেছে।
অন্যদিকে, সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করেছে ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) বাংলাদেশ।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঢাকায় গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় আদালতে হাজির করা হবে। এ মামলায় তিনিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।
গত ৩১ অক্টোবর ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় করা এ মামলায় চিম্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছিল। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে৷ ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। ওই দিন চন্দন কুমারসহ ৯ জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি মামলাটি সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন। ওই বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, আমাদের আন্দোলন ৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে, এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।’
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রেলপথে চলাচলরত আন্তঃনগর ‘কালনী এক্সপ্রেস’ ট্রেন শিগগিরই যাত্রাবিরতি করবে। ১৫ জানুয়ারি বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম এ তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ‘কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন থামানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তা কার্যকর হবে।’
ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু, চট্টগ্রাম-জামালপুর-চট্টগ্রাম রুটের ‘বিজয় এক্সপ্রেস’ ও ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের ‘কালনী এক্সপ্রেস’-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে যাত্রাবিরতি এবং বিদ্যমান ট্রেনসমূহের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানানো হচ্ছিল। এ বিষয়ে জেলা নাগরিক ফোরাম গত কয়েক বছর ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
আরও পড়ুন
কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার দায়ে দুইজনকে জেল-জরিমানা
বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম এ ব্যাপারে গেল বছরের ২ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি দেন, যাতে জেলার ট্রেন যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরা হয়। জেলা প্রশাসকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট রেল যোগাযোগের সংযোগস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীদের ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। ট্রেনের আসন সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেল ভ্রমণ করছেন। ভীড়ের কারণে টিকেটধারী যাত্রীরা নির্ধারিত বিরতির সময়ে ট্রেনে উঠতে পারছেন না এবং ট্রেনে ওঠার জন্য নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কাজ চলমান থাকায় যানজটে চরম দুর্দশার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী ট্রেনকেই তাদের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে।
ওই চিঠি দেওয়ার পরও জেলা প্রশাসক তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি রেল সচিবের সাথে টেলিফোনে কথা বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেলযাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর দ্রুতই রেল সচিব এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন।
আরও পড়ুন
আখাউড়ায় জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত
এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলা প্রশাসনের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির বিষয়টি উঠে আসে। ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রেল সচিবকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার এক বছর পার হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে জেলা নাগরিক ফোরাম তাদের রেল যাত্রাবিরতির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। ২০২৩ সালের ১৫ জুন এবং ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রেলওয়ে সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরাম।
আরও পড়ুন
জমিতে সেচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ১
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, আমরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি, তবে তেমন কোনো সুফল পাইনি। শুনতে পেলাম রেল মন্ত্রণালয় আমাদের দাবির আংশিক পূরণ করেছে। কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি হবে, এটি আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ। তবে আমাদের মূল দাবি হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন চালু করতে হবে।