চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে লায়নস ক্লাব অব ঢাকা নর্দানের লায়নস ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল জেলা-৩১৫ বাংলাদেশ’র উদ্যোগে ২৬০ জন অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
আজ ১৪ অক্টোবর শনিবার দুপুরে উপজেলার গোর্কণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে খাদ্য সমাগ্রী বিতরণ করেন লায়নস ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল জেলা-৩১৫-এ-৩ এর জেলা গর্ভনর লায়ন ফারহানা বক্স।
লায়নস ক্লাব অব ঢাকা নর্দানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ শরীফের সভাপতিত্বে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক কাউন্সিল চেয়ারপার্সন, মাল্টিপল ডিস্ট্রিক ৩১৫ বাংলাদেশ এবং সাবেক জেলা গভর্নর, জেলা ৩১৫-এ-৩ বাংলাদেশ লায়ন এস.কে কামরুল, গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন, জয়েন্ট কেবিনেট সেক্রেটারী লায়ন এ.এইচ.এম ফয়সাল, লিও ক্লাবস চেয়ারপারসন লায়ন মোঃ জাকির হোসেন, রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেডকোয়ার্টার লায়ন মোঃ ইমরান আজমির, প্রেসিডেন্ট লিও মাল্টিপল ডিস্ট্রিক ৩১৫ বাংলাদেশ লিও কাজী লামিয়া করিম, প্রেসিডেন্ট লিও ডিস্ট্রিক ৩১৫-এ-৩ বাংলাদেশ লিও সাইফ ইকবাল, লিও মাল্টিপল ডিস্ট্রিক ট্রেজারার লিও তুবা।
অনুষ্ঠানে গোকর্ণ ইউনিয়নের ২৬০ জন সুবিধা মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিলো চাল, ডাল, আটা, চিড়া, আলু, লবণ ও দিয়াশলাই।
লায়নস ক্লাব অব ঢাকা নর্দানের জেলা ৩১৫-এ-৩ কনভেনশন চেয়ারম্যান, ও সভাপতি সৈয়দ মোঃ শরীফ জানান, লায়নস ক্লাব অব ঢাকা নর্দান জনসেবামূলক কাজ করে থাকে। অসহায় ও গরীব মানষের বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সহযোগিতা ছাড়াও ত্রাণ বিতরণসহ জনসেবামূলক কাজ করছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে নাসিরনগরের কৃতি সন্তান, উপজেলার গোকর্ণ স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, মরহুম সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ’র ১০১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৪ মে বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের উদ্যোগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ যুবায়ের হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সনজিৎ কুমার দেব, সমাজ সেবক হুমায়ুন রেজা চৌধুরী, গোকর্ণ স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সংগঠনের (প্রাছাস) এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নোমান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মাহবুবুর রহমান, প্রভাষক মোহন মিয়া, সিনিয়র শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র দাস।
পরে এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান মাওলানা মোঃ জসিম উদ্দিন।
এর আগে গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন ও গোকর্ণ স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ যুবায়ের হাসানের নেতৃত্বে শিক্ষকরা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ’র কবর জিয়ারত করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর আধুনিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের নতুন সংযোজন অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান “আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশন লিমিটেড” এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী বিশেষায়িত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। আজ ৫ অক্টোবর শনিবার সকালে আধুনিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ ইসরার কামালের সভাপতিত্বে “আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশন লিমিটেড”এর উদ্বোধন করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূঁইয়া।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আধুনিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নাক,কান গলা বিশেষঞ্জ সার্জন সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোকন উদ্দিন ভুইয়া, ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন ভূইয়া,পরিচালক ডা: মুকবুল হোসেন,পরিচালক ডাঃ পান্না বনিক,হাজ্বী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মো: শাহেদুল ইসলাম,মো: ফরহাজদুক ভুইয়া, স্বপন দেবনাথ, মো: মনিরুজ্জামান,আশরাফুল ইসলাম বাবুল,বীরেন্দ্র বিশ্বাসসহ পরিচালকবৃন্দ, সাংবাদিক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজ উপস্থিত ছিলেন। পরে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে“আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশন লিমিটেড” এর উদ্বোধন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে।
অন্যদিকে আধুনিক হাসপাতাল কনফারেন্স কক্ষে উন্নত চিকিৎসা’ প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয় শীর্ষক সাংবাদিক, চিকিৎসক, সুশীল সমাজ ও আধুনিক হাসপাতালের পরিচালকগণের অংশগ্রহণ এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়কালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অত্যাধুনিক “আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশনে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যা রোগী একই স্থানে সকল পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পাবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিল শাপলা জলমহাল ইজারা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন নাসিরনগর ও সরাইল উপজেলার জেলেরা। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। নাসিরনগরের জেলেরা বলছেন, বংশ পরম্পরায় ওই বিলে মাছ ধরে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। কয়েক দশক ধরে সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নেন। সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতার তদবিরে সরাইলের জেলেরা বিলটি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা নাসিরনগরের জেলেদের মাছ ধরতে বাধা ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অপরদিকে সরাইলের জেলেদের ভাষ্য, তাঁরা মিলেমিশে বিলে মাছ ধরতে চান।
৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের বিল শাপলা জলমহালটির অবস্থান নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের পূর্ব পাশে। কাছেই তিতাস নদী। জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতিতে নিবন্ধিত জেলে ৫৩৮ জন। এ ছাড়াও অনিবন্ধিত আরও প্রায় ৭০০ জেলে এখানে মাছ ধরেন। সব মিলিয়ে ১২০০ জেলে পরিবারের সদস্য প্রায় ১০ হাজার। তাঁরা সবাই বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলের দক্ষিণে সরাইল উপজেলার শাহাজাদাপুর গ্রাম। শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নিবন্ধিত সদস্য ৪৯।
জেঠাগ্রামের প্রবীণ জেলে মিলন দাস মঙ্গলবার বলেন, ‘আমার বাপের জন্ম এই বিলের পাড়ে। আমার জন্মও। ছেলেমেয়েও জন্ম নিছে এ বিলের পাড়েই। আমরার আগের পুরুষ বিলের পাড় থাইক্যা মাছ ধরত।’ নিজেদের কোনো জমিজমা না থাকায় বিলের মাছ আর পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই জীবন পার করছেন মিলন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বিল না পাই, মাছ ধরতাম না পারি, তইলে বাল-বাচ্চা (ছেলেমেয়ে) লইয়া না খাইয়া মরণ লাগব।’
তাঁর মতো এমন হাজারো জেলের আশঙ্কা–এবার না বিলের ইজারা সরাইলের শাহজাদাপুরের জেলেরা নিয়ে যান! এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি জলমহালটি ছয় বছরের (১৪৩০-১৪৩৫ বঙ্গাব্দ) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ জন্য আবেদন করে শাহাজাদাপুর গ্রামের তিতাস মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে–এমন আশঙ্কায় জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো সুপারিশ করেনি। তাই তিতাস সমিতির আবেদন বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরের সই করা চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। পরে জলমহালটি তিন বছর মেয়াদে নতুন করে ইজারা দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এতে আগ্রহী হয়ে তদবির শুরু করে শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।
নাসিরনগরের জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা জানান, ১৯৭৭ সালে সমিতি গঠনের পর থেকে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে তাঁরাই বিলটি ইজারা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি শাহাজাদাপুরের জেলেরা তা ইজারা নিতে চাইছেন। নাসিরনগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ৪(চ) অনুযায়ী স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সংগঠন, নিকটবর্তী বা তীরবর্তী মৎস্যজীবীদের জলমহাল বন্দোবস্ত প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির এ অধিকার বেশি।
জেঠাগ্রামের জেলে হিরামন দাস বলেন, ‘বিলে মাছ ধরনের লাইগ্যা নতুন জাল, নৌকা কিনা হয়ছে এনজিও থেইক্যা (ঋণ নিয়ে)। এই গেরামের কয়েক হাজার মানুষ কোটি টাকা ঋণ নিছে।’ এভাবে ঋণ নিয়ে মাছ ধরে তা শোধ করেন জানিয়ে হিরামন বলেন, ‘আমরার এলাকার বিল যদি সরাইলের মানুষরে দিয়া দেয় তাইলে ঋণ শোধ করতে বসতঘরটাও বেইচ্যা দিয়ন লাগব।’
জেলে নয়ন দাসের ভাষ্য, ‘আমরার লোকজন বিলে গেলেই সরাইলের লোকজন মাইরধর করে। এহন হুনতাছি সরাইলের লোকেরা নাকি বিল লইয়া যাইব। এই বিলের লগে আমরার রক্ত মিশ্যা আছে। জান থাকতে বিল কেউরে নিতে দিমু না।’
জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ইজারা বিষয়ে শুনানির জন্য গত ৭ মে জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়েছে। সরাইলের জেলেদের সঙ্গে মিলেমিশে মাছ ধরারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের অভিযোগ, জলমহালের ইজারা সরাইলের জেলেদের পাইয়ে দিতে তদবির করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।
সরাইলের শাহাজাদাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, ‘কাগজেপত্রে বিলের মৌজা নাসিরনগরের। মিলেমিশেই বিলের মাছ ধরতে চাই। আমরাও জেলে পরিবার। কিন্তু ওই এলাকার জেলেরা তাতে রাজি হচ্ছেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে কথা বলিনি। বিলটি নাসিরনগরের, এটা সবাই জানে। সরাইল ও নাসিরনগরের প্রকৃত জেলেরা যেন মিলেমিশে মাছ ধরতে পারে–সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’ বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র ঘেঁটে বিলটি দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগরের জেলেরাই ইজারা নিয়ে মাছ ধরছেন বলে জানান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার। ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নিকটবর্তী ও তীরবর্তী হিসেবে নাসিরনগর উপজেলার জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামই আসে।
বিল ইজারা দিতে রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী যাঁরাই উপযুক্ত, তাঁরাই এ বিল (ইজারা) পাবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে একটি সমবায় সমিতিকে বিল পাইয়ে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছে ক্ষুব্ধ জেলেরা।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও চাপে আছেন বলে স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউএনও।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের শাপলা বিলের অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায়। তবে বিলের অধিকাংশ জমির মালিকানা সরাইল উপজেলার শাহজাদপুর ও মলাইশ গ্রামের লোকজনের। বিলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা তিতাস ও শাপলা বিল, এই এলাকার সাত শতাধিক জেলের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম।
সম্প্রতি ১৪৩০-১৪৩২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনবছরের জন্য বিলটি ইজারা দিতে বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে তদন্তক্রমে ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ছক মোতাবেক প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। তদন্তে জলমহাল নীতিমালা-২০০৯ উপেক্ষা করে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে বিল বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।
যেখানে জলমহাল নীতিমালা-২০০৯ এর (৫) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত নিকটবর্তী বা তীরবর্তী প্রকৃত মৎস্যজীবীদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা। জলমহাল নীতিমালা-২০০৯ এর (৫) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট নিকটবর্তী বা তীরবর্তী প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সমিতি যা সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত, সেই সমিতি বা সমিতিসমূহ নির্দিষ্ট বা তীরবর্তী জলমহাল ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শাহজাদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির আবেদন উপজেলার বাইরের হওয়ায় বিবেচনাযোগ্য নয় বলেও ইউএনও ছক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। তবে বিল বরাদ্দের শর্ত কিংবা জলমহাল নীতিমালার কোথাও সমবায় সমিতিকে একই উপজেলার হতে হবে এমন কথা উল্লেখ নেই। এ অবস্থায় ইউএনওর বিরুদ্ধে বিতকির্ত ও পক্ষপাতমূলক তদন্তের অভিযোগ এনে তা বাতিল করতে এবং পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন স্থানীয় জেলেরা। এ বিল বন্দোবস্ত তাদের অনুকূলে না দিলে জীবন জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে ওঠবে বলে জানান জেলেরা।
একাধিক জেলে অভিযোগ করে বলেন, এ বিলে আমরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। এ বিল থেকে আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। আমাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলার লোকজন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিল নিতে চাচ্ছে। বিল নিয়ে গেলে আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে খাব কি?
শাহজাদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অধীর চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের ৭০০ এর অধিক জেলের একমাত্র ভরসা এই বিল। আমাদের পেটে লাথি দিয়ে এ বিল এখন প্রভাবশালীরা নিয়ে যাচ্ছে। আমি সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিলটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।
শাহজাদপুর ২ নম্বর ইউপি মেম্বার মো. জুয়েল মিয়া বলেন, শাপলা বিল নাসিরনগর মৌজায় পড়লেও এ বিলের ৯৫ ভাগ জমিই শাহাজাদপুর ইউনিয়নের। প্রকৃত জেলেদের মূল্যায়ন করা হলে বিল দিয়ে দাঙ্গা ফ্যাসাদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউএনও কার্যালয়ে গেলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম। তবে জলমহাল বরাদ্দের তদন্তের বিষয়ে তিনি চাপে আছে বলে জানান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা ও আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি প্রতীক) সৈয়দ একে একরামুজ্জামান বলেছেন, নাসিরনগরে এখন নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে।
আজ ২৭ ডিসেম্বর বুধবার বেলা ১১টায় নাসিরনগরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের একটা চাপ ছিলো তাই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠে জনগণের বিরাট সাড়া পাচ্ছি। জনগণ পরিবর্তন চায়। জনগণ এক ব্যক্তির কারাগার থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। আশাকরি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহানুল করিম (গরিবউল্লাহ সেলিম) আমাকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়িয়েছেন। বর্তমান পরিবেশ যদি ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বজায় থাকে তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি।
তিনি বলেন, আগে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। তাই আমার সাথে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আছে। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত তিন প্রার্থী মাঠে আমার জন্য কাজ করছেন। সাধারন মানুষের কাছ থেকেও বিপুল সাড়া পাচ্ছি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একে একরামুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে নিরাপদ নাসিরনগর বির্নিমান করবো। নাসিরনগর সরকারি কলেজে অনার্স, মাস্টার্স কোর্স চালু করে শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নয়ন করবো।
তিনি বলেন, নাসিরনগরের জেলেরা উপেক্ষিত। তাদের যে দাবি-দাওয়া গুলো আছে, প্রয়োজনে আমি নিজে জেলে হয়ে জেলেদের দাবি-দাওয়া আদায় করবো। তিনি বলেন, জাল যার জলা তার নীতির ভিত্তিতে জেলেদেরকে সুযোগ-সুবিধা করে দিবো।
তিনি বলেন, সব জায়গায় বিশেষ শিল্প কারখানা গড়ে তোলা যায়না। তিনি বলেন, ঢাকায় নাসিরনগরের প্রায় ২ হাজার কুটির শিল্পের উদ্যোক্তা আছে। আমি নির্বাচিত হলে ওই শিল্পটা নাসিরনগরে এনে শিল্পটা প্রসারিত করবো।
নির্বাচনী মাঠ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে প্রতিপক্ষের অনবরত হুমকি পাচ্ছি। এর মধ্যে যে গুলো জরুরি মনে করছি সে গুলোর বিষয়ে অভিযোগ করছি। কিছু কিছু বিষয় আমলে নিচ্ছি না। কারণ কিছু বিষয় থাকে সব বিষয় আমলে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের ভোটারদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তারা বলছে তোমরা যেখানেই ভোট দাও রেজাল্ট আমার পক্ষেই আসবে। এটা ভোটারদের জন্য বড় হুমকি। যার কারণে ভোটাররা মনে করছে ভোট দিয়ে তাহলে কি হবে। ভোট যদি ওরা পাল্টে ফেলে। তখন তাদেরকে আমি বলি আপনারা এ গুলোতে কান দেবেন না। তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়তা দিয়েছেন,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, নাসিরনগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা সন্তোষজনক। তবে শেষের কথা এই মূহুর্তে বলতে পারছিনা।
মতবিনিময় সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের কার্যকরি কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র সাংবাদিকগণসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।