আখাউড়ায় শশুড়-শাশুড়িকে শিক্ষা দিতে শ্যালককে অপহরণ

আখাউড়া, 18 October 2023, 919 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
শশুড়-শাশুড়িকে শিক্ষা দিতে শ্যালককে অপরণ করে মুক্তিপনের টাকা নেওয়ার সময় ধরা খেলেন ভগ্নিপতি।

banner

১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আখাউড়া পৌরশহরের রাধানগরের একটি বিকাশের দোকান থেকে অপহৃত শিশু আবু সাঈদ (৮) ও অভিযুক্ত অপহরণকারী সজিব মিয়াকে আটক করে পুলিশ।

সজিব নরসিংদী জেলার মনোহরদি উপজেলার দয়াগাঁও গ্রামের হারিছ মিয়ার পুত্র। এর আগে গত শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার অছিতপুরা থেকে সোলমান মিয়ার শিশুপুত্র আবু সাঈদকে অপহরণ করে নিয়ে আসে তার ভগ্নিপতি। খবর পেয়ে শিশু আবু সাঈদের বাবা ও চাচা রাত ৮টায় আখাউড়া থানা আসে।

আখাউড়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকালে অপহরণকারী সজিব মিয়া শিশু আবু সাঈদের বাবার কাছে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য টাকা চায়। আবু সাঈদের পরিবার টাকা পাঠানোর জন্য কৌশলে কিছু সময় চায়। পরে বিষয়টি আড়াই হাজার থানা পুলিশকে অবগত করেন। আড়াই হাজার থানা থেকে বিষয়টি আখাউড়া থানাকে জানানো হলে সাদা পোষাকে পুলিশে দোকানে অবস্থান নেয়। পরে অপহরণকারী টাকা উত্তোলন করতে এলে পুলিশ তাকে আটক করে। এসময় তার সাথে থাকা অপহৃত শিশু আবু সাঈদ উদ্ধার করা হয়।

আটক সজিব মিয়া বলেন, চার বছর আগে আমি বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকে আমার স্ত্রী আমার অগোচরে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পরকিয়া করে। আমার শশুড়-শাশুড়িকে জানালেও তারা কোন বিচার করে না। উল্টা আমাকে শাসায়। তারপর আমি চিন্তা করি তাদেরকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। তাদের সন্তানকে অপহরণ করে নিয়া যামু। তারপর বুঝতে পারবে পরের ছেলের সাথে এমন করলে নিজের ছেলে বুকে না থাকলে কেমন লাগে। সজিব মিয়া আরও বলেন, আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি তাদের কাছে এক হাজার টাকা পাঠাতে বলেছিলাম। মুক্তিপণ চাওয়ার কথা সে অস্বীকার করেছে।

শিশু আবু সাঈদের বাবা সোলমান মিয়া বলেন, চার মাস আগে আমার মেয়েকে তার কাছ থেকে সামাজিকভাবে সম্পর্ক শেষ করে নিয়ে আসি। তারপর সে আমার আমাকে ফুসলিয়ে আবার নিয়ে যায়। কিছু দিন আগে আমার মেয়েকে মারধর করে নাতিনকে রেখে তাড়িয়ে দেয়। পরে আমরা পুলিশ নিয়ে নাতিনকে নিয়ে আসি। এ ঘনটায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে আমার ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে এসে ৪ লক্ষ টাকা দাবী করে।

আখাউড়া থানার ওসি মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর জন্য আখাউড়া রাধানগরের একটি বিকাশ নম্বর দেয় আটক সজিব মিয়া। নারায়নগঞ্জের আড়াই হাজার থানা থেকে এমন একটি বিষয় আমাদেরকে জানালে পুলিশ ওই দোকানে অবস্থান নিয়ে অপহরণকারীকে আটক করে। এসময় অপহৃত শিশুটি উদ্ধার হয়।

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

আখাউড়া চেকপোস্টে ভারতগামীদের উপচে পড়া ভিড়

আখাউড়া, 14 June 2024, 581 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ঈদুল আযহার আর মাত্র দুদিন বাকি। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদের ছুটি। টানা ৭ দিনের ছুটি পেয়ে অনেকেই ছুটছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সেই জেরে আজ শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ছিল ভারতগামী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

banner

আখাউড়া চেকপোস্টে ইমিগ্রেশনে আজ ১৪ জুন দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অপেক্ষা করছেন কয়েকশ মানুষ। তাদের সেই লাইন ডেস্ক থেকে বারান্দা পেরিয়ে পৌঁছেছে ইমিগ্রেশন ভবনের বাইরের প্রধান সড়কে। তীব্র গরম আর রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। অন্যদিকে যাত্রীদের চাপে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের।ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ঈদে টানা ৭ দিনের সরকারি ছুটি পাওয়ায় ভারতে ভ্রমণকারী এবং চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। যশোরের বেনাপোল বন্দরের ভিড় এড়াতে অনেক যাত্রী আখাউড়া চেকপোস্ট ব্যবহার করছেন। তবে এখানে এসেও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঈদের ছুটি শুরুর দিন শুধু শুক্রবারই প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গিয়েছেন।

ভারতগামী কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন পর ভিসা পেয়েছেন। তাই ঈদের ছুটিতে ভারতের দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাচ্ছেন। তবে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবনটি ছোট এবং জরাজীর্ণ হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানান তারা।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ইনচার্জ খায়রুল আলম জানান, ঈদের ছুটির কারণে চাপ অনেকটা বেশি। সাধ্যমতো যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আখাউড়ায় নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে অটোরিকশার ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু

আখাউড়া, 8 March 2024, 724 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে শাহার মোল্লা (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।

banner

আজ ৮ মার্চ শুক্রবার ভোরে পৌর এলাকার শান্তিনগরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শাহার মোল্লার বাড়ি শান্তিনগরে।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম জানান, ফজরের নামাজ আদায় করে সকাল সোয়া ৬টার দিকে বড় বাজার-ধরখার সড়ক হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন শাহার।

এসময় আখাউড়াগামী একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন তিনি। এ অবস্থায় শাহার মোল্লাকে উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর অটোরিকশাচালক পালিয়ে গেছেন। এলাকাবাসী ধাওয়া করেও গাড়িটি কিংবা এর চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

আখাউড়ায় এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ২৪

আখাউড়া, 15 February 2024, 725 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় সারা দেশের ন্যায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার ৫ টি কেন্দ্রে এসএসসি, ১ টি কেন্দ্রে দাখিল ও ১ টি কেন্দ্রে ভোকেশনাল কারিগরি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনের পরীক্ষায় ২৪ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।

banner

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, প্রথম দিনের এসএসসির বাংলা পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ২৫২ জন, অনুপস্থিত ছিল ১০ জন, দাখিলে কোরআন মজিদ বিষয়ের পরীক্ষার্থী ছিল ৩২০ জন, অনুপস্থিত ১৩ জন এবং ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৬৬ জনের মধ্যে ১ জন অনুপস্থিত ছিল।

আখাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মেঃ আবুল হোসেন বলেন নকলমুক্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এসএসসি সমমান প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিস্ফোরক ও ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার ৪

আখাউড়া, 9 November 2024, 342 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও ডাকাতি মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ ৯ নভেম্বর শনিবার দুপুরে গ্রেফতাকৃতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩ জন ও ডাকাতি মামলায় একজনসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

banner

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কুড়িপাইকা গ্রামের মৃত আবুল ফয়েজ মিয়ার ছেলে হামিদুল ইসলাম প্রকাশ ফোরকান, একই গ্রামের মৃত নূরুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছেলে এরশাদুল ইসলাম ভূঁইয়া, ধরখার ইউনিয়নের ঘোলখার এলাকার বাবুল ভূঁইয়া ছেলে মো. তামিম ভূঁইয়া ও ছতুরা শরীফ এলাকার মৃত ইসমাইল খন্দকারের ছেলে শাহাব উদ্দিন খন্দকার।

আখাউড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল হাসিম জানান, গ্রেফতারকৃতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 7756 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।