সৌদি আরব থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন

জাতীয়, 8 November 2023, 890 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান এবং ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

banner

প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি আজ ৮ অক্টোবর বুধবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র সদস্যবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ’ সরকারি কর্মকর্তারা।

গত ৫ নভেম্বর রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং মদিনার মসজিদে নববীতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। শেখ হাসিনা সেখানে আসরের নামাজের পর ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন।

একই দিন রাতে তিনি মদিনা ত্যাগ করে মক্কায় পৌঁছান। পরে প্রধানমন্ত্রী এশার নামাজের পর মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) পবিত্র ওমরাহ পালন করেন।

৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘উইমেন ইন ইসলাম’ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। সম্মেলনের ফাঁকে তিনি ওআইসি ও সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি শেখ হাসিনা উইমেন ইন ইসলাম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অংশও নেন।

৬ থেকে ৮ নভেম্বর সৌদি আরব অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) জেনারেল সেক্রেটারিয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সম্মেলনটির আয়োজন করে।

৫ নভেম্বর রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করেন। তাকে বহনকারী প্লেন বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন

জাতীয়, রাজনীতি, 24 October 2024, 542 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল ২৪ অক্টোবর বুধবার রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

banner

গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরদিনই নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ সিদ্ধান্তে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে গতকাল রাতেই বিবৃতিতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান নিষিদ্ধকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছেন।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শক্তি ছিল ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন। তবে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের অনেকের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব, মারামারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক বাণিজ্য, বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে হামলা, দমনপীড়ন, অস্ত্রবাজির মতো অপরাধের শত শত অভিযোগ ওঠে।

এই সময়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অন্তত অর্ধশত প্রাণহানি ঘটেছে। ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস এবং ২০১৯ সালে আবরার হত্যায় সংগঠনটি ধিকৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘গেস্ট রুম’ নামে নিপীড়নের কুখ্যাতিও রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল দমনকারীর ভূমিকায়। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরুর পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মারমুখী ছিল। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নজিরবিহীন মারধর করে, যা থেকে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিনেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অভ্যুত্থান দমনে অস্ত্র হাতে রাজপথে দেখা যায়। অভ্যুত্থানের সময় এবং শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র পাওয়া যায়। মধ্য জুলাই থেকেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়েছে অভ্যুত্থানকারীরা। ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

প্রজ্ঞাপনেও ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ। এসবের প্রমাণ দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীর অপরাধ আদালতেও প্রমাণ হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও জনগণের ওপর আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী; অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক, উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সরকারের কাছে এসব কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন নামাঙ্কিত রাজনৈতিক শাখা-২-এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।

আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী, নি‌ষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুন‌র্বিবেচনার আবেদনে ৩০ দিন সময় পা‌বে ছাত্রলীগ। আবেদন কর‌লে সরকার তা ৯০ দি‌নের ম‌ধ্যে নিষ্প‌ত্তি কর‌বে। নি‌ষি‌দ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাক‌লে ৩০ দি‌নের ম‌ধ্যে হাইকোর্টে আ‌পিলের সু‌যোগ পা‌বে।

সন্ত্রাসবি‌রোধী আইনের ২০ ধারায় উল্লেখ করা হ‌য়ে‌ছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কার্যালয় বন্ধ করবে সরকার। ব্যাংক হিসাব বা অন্য সম্পদ জব্দ হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করতে পারবে না। সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে বিবৃতি, বিজ্ঞপ্তি, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসমক্ষে বক্তৃতা নিষিদ্ধ হবে।

গত ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একই আইনে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের আবেদনে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিলের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নুসরাত তাবাসসুম বলেন, জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন আজ। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায়। আর কোনো ছাত্র সংগঠন যেন এমন সন্ত্রাসী না হয়।

সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, যারা কথায় কথায় আন্দোলনে জঙ্গিবাদ খুঁজত, তাদেরকেই জঙ্গি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের গর্ত থেকে বের করে ধোলাই দিতে হবে।

আশরিফা খাতুন বলেন, আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ রাজাকার দমন হয়েছে বলে উল্লাস করেছিল। যখনই কোনো ন্যায্য দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়েছি, ছাত্রলীগ মেরেছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে, সেখানেও মারত। কোনোভাবেই ছাত্রলীগ যেন ফিরতে না পারে।

অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে না বললেও উচ্ছ্বাস দেখায়নি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ছাত্রলীগ খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি, গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে; ছাত্রলীগ এককভাবে বেশি করেছে। ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে এবং শহীদ হয়েছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে ছাত্র রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। সুস্থ রাজনীতিচর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধই সমাধান নয়। সংগঠনটির যারা সন্ত্রাস করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ডা. সাদেক আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে ছাত্রলীগ। সন্ত্রাস, নিপীড়ন, নির্যাতনের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে চায় না। ছাত্রলীগের অপরাধীদের বিচার চায়।

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড বলেন, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকে সাধুবাদ জানাই। নিষিদ্ধ হলেই অপতৎপরতা বন্ধ হবে না। অপরাপর সংগঠনের সঙ্গে আলাপে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ছাত্রলীগের তৎপরতা বন্ধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বোস বলেন, নির্বাহী আদেশে কয়েক দিন আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনে তা বদলেও গেছে। একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা কতখানি ফলপ্রসূ হবে, জানি না। নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে কতটুকু নিঃশেষ করা যাবে, জানি না। ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করতে হবে আদর্শের জায়গায় এবং মাঠের রাজনীতিতে। রাজনৈতিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত

জাতীয়, 20 August 2023, 1000 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
গাজীপুরের কালীগঞ্জে বেলাই বিলের মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। আজ ২০ আগস্ট রবিবার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের নলি ব্রীজ সংলগ্ন বেলাই বিলে ১৬৩ কেজি মাছের পোনা অবমুক্ত করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপি।

banner

জানা গেছে, ২০২৩-২০১৪ অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের আওতায় উন্মুক্ত/প্রাতিষ্ঠানিক জলাজয়ে এ পোনা মাছ অবমুক্তর করা হয়। এর মধ্যে বেলাই বিলে ১৬২ কেজি, তুমলিয়া ইউনিয়নের একটি এতিমখানার পুকুরে ৩০ কেজি ও একই ইউনিয়নের বোয়ালী গ্রামের একটি প্রবীন আশ্রমের পুকুরে ৪০ কেজি পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পোনামাছ অবমুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য দপ্তর।

এ সময় অনুষ্ঠানে বিশেষ উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাকসুদ-উল-আলম খান মাসুদ, গাজীপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: লতিফুর রহমান, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. ইউসুুফ হাবীব, মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবু শাসা, কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম, বক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আতিকুর রহমান আকন্দ ফারুকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মামলাজট কমাতে দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধনের কাজ চলছে: আইনমন্ত্রী

জাতীয়, 4 June 2024, 578 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
বিচার প্রক্রিয়া সহজতর করে মামলাজট কমিয়ে আনতে দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়া সহজতর করে মামলাজট কমিয়ে আনতে ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি যুগোপযোগী করে সংশোধনের কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়।

banner

আজ ৪ জুন মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় গৃহীত প্রকল্প ‘ডেভেলপমেন্ট অব মেডিয়েশন এন্ড সিভিল লিটিগেশন প্র্যারকটিসেস ফর এনহেন্সমেন্ট অব এক্সেস টু জাস্টিস’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জনগণের ন্যায়বিচারে সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, সকল নাগরিকের ন্যায়বিচারের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সারাদেশে লিগ্যাল এইড অফিস প্রতিষ্ঠা, সরকারি খরচে আইনি সহায়তা কার্যক্রম চালু, বিচার প্রক্রিয়ায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি প্রবর্তনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, লিগ্যাল এইড অফিসাররা কেবল বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৮০ কোটি ৪৫ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ টাকা আদায় করে দিয়েছে, যার সুবিধা পেয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৩৫৯ জন মানুষ।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং জাইকা বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানী রাষ্ট্রদূত ইয়োমা কিমিনোরি প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) উম্মে কুলসুম, প্রকল্পের চিফ এডভাইজার (এক্সপার্ট) ফুজিওকা টাকুরো।

এর আগে, গত ১৬ নভেম্বর আইন ও বিচার বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও জাইকার প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি (রেকর্ড অব ডিসকাশনস) স্বাক্ষরিত হয়।

ঢালাও আসামির নেপথ্যে বাণিজ্য, বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব

জাতীয়, 27 April 2025, 148 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
কিশোরগঞ্জের দুলাল রবিদাসের মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) কারণে। গত বছরের ২৭ জুলাই তাঁর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে সনদ দিয়েছে স্থানীয় একটি হাসপাতাল। অথচ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হয়েছেন—এমন অভিযোগ এনে ২৯ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনসহ ৭৬৮ জনকে।

banner

এ মামলা নিয়ে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে চাঁদাবাজি ও পূর্বশত্রুতার জেরে হয়রানির অভিযোগসহ নানা অনিয়ম সামনে এসেছে। যে অভিযোগে মামলাটি হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন দুলাল রবিদাসের স্বজনেরাই। ঘটনার সময়, হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা, আসামির তালিকা—সবই ভুয়া।

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আহত হওয়ার ঘটনায়ও অনেক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রকৃত আসামি, সন্দিগ্ধ ব্যক্তির পাশাপাশি হয়রানিমূলকভাবেও অনেককে আসামি করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, অন্যত্র থাকা মানুষ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিও রয়েছেন। দুলাল রবিদাসের মতো সাজানো ঘটনার পাশাপাশি কোথাও সত্য ঘটনার মামলায় এ রকম অনেককে আসামি করে ‘মামলা–বাণিজ্য’ হচ্ছে। মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আশ্বাস, ভুলবশত আসামি করা হয়েছে মর্মে হলফনামা দিয়ে ও পুলিশ প্রতিবেদনে নির্দোষ দেখানোর প্রতিশ্রুতিসহ নানাভাবে এই বাণিজ্য করার অভিযোগ যেমন আছে, আবার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েও কাউকে কাউকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি। অন্যান্য ৯০০টি। এসব মামলায় ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা মামলার মধ্যে অনেকগুলোর তদন্তে অগ্রগতি আছে বলেও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

তবে দুলাল রবিদাসের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ৪০টি মামলা পর্যালোচনা করে ঢালাওভাবে আসামি করাসহ নানা অসংগতি দেখা গেছে। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের চেয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর করে জানা গেছে, হয়রানিমূলক আসামি করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ স্থানে ভূমিকা রেখেছেন বিএনপির কোনো না কোনো নেতা–কর্মী। কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় অসাধু আইনজীবী, পুলিশ সদস্য ও দালাল চক্র জড়িত। কোথাও প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য, কোথাও চাঁদাবাজির জন্য, কোথাও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন অথবা বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত—এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তিগত বিরোধ ও বিদ্বেষ থেকে মামলায় বিভিন্নজনের নাম দেওয়া হচ্ছে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।

মামলা কারা করছেন
যে ৪০টি মামলার খোঁজখবর নিয়েছে প্রথম আলো, সেগুলোর মধ্যে ২৩টি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ও ৯টি চট্টগ্রামে করা মামলা। বাকি ৮টি মামলার মধ্যে ৬টি নারায়ণগঞ্জের, কিশোরগঞ্জ ও ফেনীর ২টি মামলা। এসব মামলার বাদীদের মধ্যে ১৪ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দুজন শহীদের বাবা। একটি মামলার বাদী নিজেকে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। একটি মামলার বাদী যুবলীগ কর্মী, যিনি অন্য মামলার আসামি। বাকি ২২টি মামলার বাদীদের মধ্যে ৯ জন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় জানাতে চাননি। ১৩ মামলার বাদীর রাজনৈতিক বা পেশাগত পরিচয় জানা যায়নি।

মামলাগুলোর তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বাদী, আসামি ও তাঁদের স্বজন, সংশ্লিষ্ট থানা–পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ২১টি মামলা হওয়ার আগে-পরে কোনো কোনো আসামির কাছ থেকে অর্থ দাবি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি ১৯ মামলায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, পেশাগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে অনেককে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা। অনেক আসামিকে বাদী চেনেনও না।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে পুলিশ সদস্যদের মনোবল দুর্বল ছিল। তখন যাচাই-বাছাই করে মামলা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থানাগুলোর ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশেও মামলা হয়েছে।

ঢালাও আসামি করার বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেল যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত জারি করতে হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাঁদাবাজি, ব্ল‍্যাকমেল করাসহ নানা রকম হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের মামলা করার মাধ্যমে যাঁরা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া হয়রানিমূলকভাবে যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে সরকারের উচ্চপর্যায় ও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে।

তবে গ্রেপ্তার থেমে থাকেনি। ব্যবসায়িক বা সম্পত্তিগত বিরোধের জেরে আসামি হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রতিপক্ষ যেমন সক্রিয় থাকে, পাশাপাশি ‘বাণিজ্যের’ উদ্দেশ্যে করা আসামিদের ধরতে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ বা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর হুমকি দিয়েও অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে। শুরুতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা না করে খসড়া এজাহারে দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগও আছে।

এদিকে আন্দোলনের সময় ছাত্র–জনতার ওপর সরাসরি হামলায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বড় অংশ এখনো ধরা পড়েনি। শহীদদের স্বজনেরা প্রিয়জন হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি মামলায় এত বেশিসংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতেই তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে ১০টি মেন্টরিং অ্যান্ড মনিটরিং দলের মাধ্যমে মামলাগুলো তদারক করা হচ্ছে। এর মধ্যে আট বিভাগে ৮টি, রাজধানীতে ১টি ও গাজীপুরের জন্য ১টি দল করা হয়েছে। প্রতিটি দল নিয়ে আমি বসছি এবং মামলাগুলো বিশ্লেষণ করছি। এতে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করার ঘটনা কমে এসেছে।’

আইজিপি বলেন, ‘আসামি যতই হোক, অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
এক মামলায় যত অসংগতি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর বাসিন্দা বাবুল মিয়া (২৮) ও সাইফুল ইসলাম (৪০)। বাবুল কৃষিকাজ ও পশুপালন করেন। তাঁর বোনের স্বামী সাইফুল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এ দুজনকে দুলাল হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে তাঁরা বাড়িছাড়া।

বাবুল মিয়ার বাবা বকুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁর ছেলে ও জামাতাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাঁরা কোনো দিন রাজনীতি করেননি। প্রথম মামলার পর তাঁদের বলা হয়েছে, ৫০-৬০ হাজার টাকা দিলে আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে। টাকা দিতে না পারায় আরও তিনটি মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে।

দুলাল হত্যা মামলাটি করেছেন রাফিউল আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা পরিচয় দিলেও কী পদে ছিলেন, তা বলতে পারেননি। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ১৮ জুলাই দুপুরে কিশোরগঞ্জের গৌরাঙ্গবাজার মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন দুলাল। পরে ২২-২৩ জন তাঁকে রড দিয়ে বেদম পিটুনি দেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ রকম একটা মামলার কথা জানার পর প্রয়াত দুলালের ছেলে বিকাশ দাশ কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানান যে তাঁর বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করে যাঁরা নিরপরাধ মানুষদের হয়রানি করছেন, তাঁদের শাস্তির দাবি করেন বিকাশ।

হত্যাকাণ্ডের যে স্থানের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ঘটনার দিন (১৮ জুলাই) দুলাল ছিলেন না বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই কাঞ্চন রবিদাস। মৃত্যুনিবন্ধন সনদে দুলালের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘স্ট্রোক’ এবং মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ জুলাই।

আসামিদের অভিযোগ যাচাই করতে এক ব্যক্তিকে বাবুল ও সাইফুলের স্বজন পরিচয় দিয়ে বাদী রাফিউলের সঙ্গে কথা বলিয়েছে প্রথম আলো। ওই ব্যক্তির কাছে রাফিউল মামলা থেকে নাম বাদ দিতে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এ টাকার ভাগ স্থানীয় এক আইনজীবী ও পুলিশকে দেবেন বলেও দাবি করেন তিনি। এ মামলার আরও চার আসামি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নাম বাদ দিতে তাঁদের কাছ থেকেও ৫০-৬০ হাজার টাকা করে দাবি করা হয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রাফিউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রবিদাসকে হত্যা করতে দেখেছি। অনেকে মিলে মামলাটি করেছি। এ জন্য ভুলে অনেকের নাম ঢুকে গেছে।’

এ মামলার ভুক্তভোগীরা গত ৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে মানববন্ধন করেন। সেখানে তাঁরা অভিযাগ করেন, স্থানীয় ‘আওয়ামী আইনজীবী’ শওকত কবীর খোকন এ মামলা-বাণিজ্যে জড়িত। এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও মামলায় ফাঁসিয়েছেন তিনি।

শওকত কবীর প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি ‘বিএনপির সৈনিক’। সুনাম নষ্ট করতে প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আসামি চেনেন না বাদী
যে ৪০টি মামলা নিয়ে প্রথম আলো অনুসন্ধান করেছে, সেগুলোর এজাহারে উল্লেখ করা ১১ বাদীর মুঠোফোন নম্বরে কল করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন অথবা ভুয়া ঠিকানা দিয়েছেন। ফলে আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা বাদীকে খুঁজে পাচ্ছে না। ১৪ জন বাদী জানিয়েছেন, অন্য কেউ তাঁদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন জানিয়েছেন, মামলার কাগজে তাঁদের কাছ থেকে কেবল সই নেওয়া হয়েছে। আসামির নাম দিয়েছেন অন্যরা।
লক্ষ্য অর্থ আদায়

অভ্যুত্থান ঘিরে হওয়া প্রথম দিকের মামলাগুলোর আসামিদের বেশির ভাগই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁদের পাশাপাশি অনেক মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আরও অনেককে আসামি করা হয়।

গত বছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে রাজধানীর একটি থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। সেখানে ১০ জনের বেশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। তাঁদের প্রায় সবাই ঘটনার সময় মামলায় উল্লেখিত স্থানে ছিলেন না বলে পুলিশের নথিতেই উল্লেখ রয়েছে।

 

এ বিষয়ে মামলার আসামি পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাদী ১০ জনের নাম এজাহার থেকে বাদ দিতে ১ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তাঁদেরও আসামি করা হয়।

পরে ওই বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের তিনি চেনেন না, তা সঠিক। তবে কোনো টাকা চাননি বলে দাবি করেন তিনি।

অবৈধ সুবিধা আদায়ে ব্যবসায়ীদের আসামি করার দুটি হত্যা মামলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায়। এসব মামলার সঙ্গে যুবদল ও বিএনপির নেতাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মামলা দুটির এজাহারের বর্ণনা প্রায় একই রকম। সেখানে বৃহৎ রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের তিন মালিককে আসামি করা হয়েছে।

এজাহার থেকে নাম বাদ দেওয়ার আশ্বাস কিংবা আসামির তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদনের জন্য টাকা নেওয়ার পাঁচটি ঘটনার কথা জানা গেছে। রাজধানীর এক ব্যবসায়ীর নাম বাদ দিতে বাদী আবেদন করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, আমি তার ধারেকাছেও ছিলাম না। পরে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এক লাখ টাকা দিলে তিনি এজাহার থেকে নাম বাদ দিতে আবেদন করিয়েছেন।’

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর একটি অঞ্চলে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকার বাইরে কর্মরত ওই কর্মকর্তার মুঠোফোনে বার্তা পাঠান রাজধানীর ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির একজন নেতা। তাতে বলা হয়, মামলা থেকে ‘বাঁচতে হলে’ পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা ১ জানুয়ারি এই প্রতিবেদককে ওই বার্তা দেখান। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি বিএনপির একজন নেতা। দুই লাখ টাকা দেওয়ার পর তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম বাদ দিতে সম্মত হন।

‘সচেতন নাগরিক’ পরিচয়ে মামলা
অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের পরিবর্তে ‘সচেতন নাগরিক’ পরিচয়ে অন্য ব্যক্তিরা মামলার বাদী হয়েছেন। এ রকম একটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে এবং আরও একটির আবেদন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলামকে মিরপুর থানার তিনটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফখরুলকে এজাহারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় তাঁর দুই ভাইকেও আসামি করা হয়। দুটি মামলায় ঘটনা শুক্রবার দেখানো হয়েছে।

এ মামলার দুই আসামি অভিযোগ করেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে (শুক্রবার) মামলার সময় হিসেবে দেখানোর পেছনের মূল উদ্দেশ্য তাঁদের মতো চাকরিজীবী ব্যক্তিদের হরয়ানি করা।

মামলা তিনটি (মো. সেলিম আলী সেক (৩৬), পারভেজ হোসেন (২১) ও মো. মনিরুল ইসলাম (৪১) হত্যা) স্বজনদের কেউ করেননি। ‘সচেতন নাগরিক’ পরিচয়ে মামলাগুলো করেছেন তিন ব্যক্তি। তিন মামলার এজাহারের বর্ণনা অনেকটা একই রকম।

এজাহারে থাকা বাদীদের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে পারভেজ হত্যার বাদী নুরু ইসলামকে (৪০) ফোনে পাওয়া যায়। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

৫ আগস্ট ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া কিশোর মাহমুদুল হাসানের বাবা রিকশাচালক মিজানুর রহমান মামলা করতে পারেননি। ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে মামলা করতে গিয়েছিলেন তিনি। পরে জানতে পারেন, এ ঘটনায় আগেই যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় মাহমুদুলের নিহত হওয়ার পৃথক স্থান উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দুই বাদীকে চেনেন না মিজানুর রহমান। তিনি আক্ষেপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেকে আন্দোলনে গুলি করে হত্যা করা হয়, কিন্তু আমি মামলা করতে পারলাম না!’
প্রতিষ্ঠানের দখল নিতে আসামি

রাজধানীর মিরপুরে রেস্তোরাঁ ব্যবসা রয়েছে আমিনা বেগমের। তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার ভাষানটেক থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয় দেওয়া রবিউল ইসলাম (সুমন)। রেস্তোরাঁ পরিচালনা নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। একটি মুঠোফোনে কথোপকথনে রবিউলকে বলতে শোনা যায়, ‘মহিলার (আমিনা) নামে দিয়ে দিছি মামলা। ও এখন বুঝুক। বেশি তালবেতাল করলে ওর স্বামীর নামেও দিমু, ওর চাকরিও খামু।’

আমিনাসহ ৩৪৬ জনের নামে ভাষানটেক থানায় মামলাটি করেছেন মো. মোস্তাকিম নামের এক ব্যক্তি। মামলার নথিতে মোস্তাকিম নিজেকে আন্দোলনে আহত এবং গুলিতে ডান পা হারানো ব্যক্তি উল্লেখ করেছেন। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

 

মামলায় ৩১ নম্বর আমিনার পরিচয় দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তবে কমিটির তালিকায় তাঁর নাম নেই। আমিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গত ১৯ জুলাই কাফরুলে দেশি অস্ত্র বা লোহার রড অথবা লাঠিসোঁটা দিয়ে বাদীর মাথায় আঘাত করেছেন।

স্বামীর সরকারি চাকরির সুবাধে আমিনা থাকেন কুমিল্লায়। সিসিটিভির একটি ফুটেজে দেখা গেছে, মামলায় যে দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে, আমিনা সে সময় কুমিল্লায় ছিলেন। ভুক্তভোগী এই নারী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রেস্তোরাঁ দখলে নিয়েছেন ওই যুবদল নেতা। তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।

এ ঘটনায় আমিনার স্বামী মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন আমিনা।

যুবদল নেতা রবিউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি নয়, আমিনার নামে তিনটি মামলা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করেন, রাজনৈতিক মামলা খাবেন, এটাই স্বাভাবিক। নির্দোষ হলে আদালতে প্রমাণ করুক।’

মামলার বাদী মোস্তাকিম যুবদল করেন বলে জানান রবিউল। তিনি মুঠোফোনে কথোপকথনের বিষয়ে বলেন, ‘তিনি (আমিনা) যখন ক্ষমতা দেখিয়েছেন, তখন বলেছি আমার দল ক্ষমতায় আসলে আপনার চাকরি থাকবে না।’
নেপথ্যে পারিবারিক বিরোধ

ঢাকায় ব্যবসা করেন নাটোরের সিংড়ার এনায়েত করিম। ছাত্রজীবনে জিয়া ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় রাজধানীর সূত্রাপুর ও বনানী থানার দুটি হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। পরিচয়ে লেখা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা। গ্রামের বাড়িতে গেলে গত ২৮ ডিসেম্বর সিংড়া থানা–লিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৩০ ডিসেম্বর নাটোরে সংবাদ সম্মেলন করেন এনায়েতের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। সেখানে দাবি করা হয়, এনায়েতের ভাতিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মেদ এ মামলা করিয়েছেন।

পরে এনায়েতের স্ত্রী উম্মে সালমা প্রথম আলোকে বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে ফয়সাল মামলায় এনায়েতের নাম দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের কাছে তা তিনি স্বীকারও করেছেন।

অবশ্য ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্ব আছে সেটা ঠিক, তবে আমি মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার চাচা এত দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলেছেন। সেখান থেকে অন্য কেউ হয়তো মামলা করে থাকতে পারেন।’
পেশাজীবী শ্রেণি ধরে মামলা

মামলার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, একেক মামলায় একেক শ্রেণির ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। কোথাও সাংস্কৃতিক কর্মী, কোথাও ব্যবসায়ী, কোথাও সাংবাদিক, কোথাও আবার পুলিশ, কোথাও আমলা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট শ্রেণি–পেশার মানুষের নাম কেউ দিচ্ছে, সেগুলো ধরে মামলা হচ্ছে।

যেমন শাহবাগ থানার একটি মামলায় পুলিশের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ঘটনার যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা চাকরির সুবাদে খুলনায় ছিলেন। তাঁকেও আসামি করা হয়েছে।

গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে করা একটি মামলায় ৫৩ জন সচিবকে আসামি করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোহাম্মদ জামান হোসেন খানের করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। মামলার আসামি একজন সাবেক সচিব প্রথম আলোকে বলেন, মামলা নিয়ে বিভিন্নভাবে তাঁর কাছ থেকে অর্থ দাবি করা হয়েছিল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় যতজনকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের নাম উল্লেখ করে পরে আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি মামলার নেপথ্যে আছেন বিএনপির এক নেতা।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী। মাহাদী হাসান হত্যার ঘটনায় করা এই মামলার বাদী নিজেকে নিহত ব্যক্তির চাচা দাবি করেছেন। অপর দিকে একই ঘটনায় মাহাদীর বাবা বাদী হয়ে কদমতলী থানায়ও একটি মামলা করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁর ছেলে যাত্রাবাড়ী নয়, কদমতলী থানা এলাকায় শহীদ হয়েছেন।

শহীদ পরিবারের নামেও মামলা

অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইকরামুল হক সাজিদ। এ ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারের তিন সদস্যকে। তাঁরা যুবদল-ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান পদধারী নেতা। তাঁদের বাড়ি কক্সবাজারে।

৭ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় মামলাটি করেন ইকরামুলের বাবা মো. জিয়াউল হক। পরে ৯ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী ওই তিনজন ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, আওয়ামী লীগের আমলে দলটির নেতা-কর্মীদের হামলায় কক্সবাজারের মহেশখালীর এই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হন বেশ কয়েকজন। মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে অনেকে বাড়িছাড়া ছিলেন। আন্দোলনের পুরো সময় তাঁরা কক্সবাজারে থেকেও ঢাকার মামলায় আসামি হয়েছেন।

মহেশখালী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এবং তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই (৫৪ নম্বর আসামি) মিজানুর রহমান মাতাব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার বাদী কখনো আমাদের দেখেনওনি, চেনেনও না, নামও শোনেননি। আমাদের নামগুলো লিখে তাঁর থেকে শুধু স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। মামলার যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, তখন আমরা মহেশখালী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম।’ মিজানুরের অভিযোগ, রাজনৈতিক বিরোধ থেকে তাঁদের ঢাকার এই মামলায় আসামি করিয়েছেন মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।

মামলার বাদী জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো আর ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষক এবং যাঁরা এই ঘটনা দেখেছেন, তাঁরা যে নামগুলো দিয়েছেন, সেগুলোই মামলায় আসামি হিসেবে এসেছে।’
নিরপরাধ ব্যক্তিদের কী হবে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে। হয়রানিমূলকভাবে আসামি হওয়া অনেক ব্যক্তিও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অথচ ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলি করা ব্যক্তি এবং গুলির নির্দেশদাতাদের বড় অংশ ধরা পড়েননি। এ অবস্থায় প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ বিশেষজ্ঞরা। যথাযথভাবে যাচাই–বাছাই না করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না, সরকারের এমন কথার বাস্তবায়ন দেখতে চান তাঁরা।

সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা সত্য, কিন্তু আসামি ভুলভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেওয়া হয়েছে—এমন মামলা হয়েছে। এ জন্য মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুলিশকে সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। তবে আদালতের নির্দেশেও থানাকে অনেক মামলা নিতে হয়েছে।

নুরুল হুদা বলেন, যাচাই–বাছাই করে আসামি গ্রেপ্তার করতে হবে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করা যাবে না। পাশাপাশি ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
সূত্র : প্রথম আলো, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে পতেঙ্গা সৈকতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম

জাতীয়, 29 May 2023, 1347 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ‘জি ২০ মেগা বিচ ক্লিন আপ’ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

banner

২০২৩ সালে ভারতের জি ২০ প্রেসিডেন্সির আচরণবিধির অধীনে রোববার আয়োজিত এই ঘণ্টাব্যাপী কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থী ও তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারতের জি ২০ প্রেসিডেন্সি চলাকালে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এটি উভয় দেশের বিস্তৃত ও সুগভীর অংশীদারত্বের প্রতিফলন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক হচ্ছে বহুমুখী এবং সেটা যৌথ প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষাসহ সুবিস্তৃত নানা ক্ষেত্রে সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
তিনি বলেন, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক আবাসস্থলের সংরক্ষণ ও সুরক্ষার এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের দুই দেশের যৌথ মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকারসমূহের একটি স্বতঃস্ফূর্ত সম্প্রসারণ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সবসময় জলবায়ু ইস্যুতে সম্মুখসারিতে রয়েছে। ভূমিমন্ত্রী উপকূলীয় ও সামুদ্রিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণের সহায়ক হিসেবে ভারত সরকারের এই উদ্যোগ এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন।

পরিবেশের ওপর সামুদ্রিক বর্জ্যের প্রভাব সম্পর্কে সংবেদনশীল করা ও সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ‘জি ২০ মেগা বিচ ক্লিন আপ’ কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। এতে পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও জনসমাজের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।