চলারপথে রিপোর্ট :
নজরুল ও চন্দন দুই বন্ধু, জন্মের পর থেকেই দুই জনের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। দু’জনেই লেখাপড়া শেষে একসঙ্গে একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন যাবত লিভারজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন শিক্ষক নজরুল ইসলাম (৪৫)।
গতকাল বুধবার দুপুরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম।
মুসলিম বন্ধুর লাশের খাটিয়া কাঁধে করে গোরস্তানে নিয়েছেন হিন্দু বন্ধু চন্দন দেব। বন্ধু নজরুলের শেষ বিদায়ে প্রতিটি কাজে অংশ নিয়েছেন চন্দন দেব।
নজরুল ইসলামের জানাযার সময় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্য নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক চন্দন দেব বলেন, আমাদের জন্ম দুটি গর্ভে কিন্তু আমরা চলেছি ভাইয়ের মতো। নজরুলের মৃত্যুতে আমি ভেঙে পড়েছি। ধর্ম আমাদের আলাদা করতে পারেনি; কিন্তু মৃত্যু আলাদা করে দিল!
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এখানে শতবছর ধরে সকল ধর্মের মানুষ পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছে। নজরুল ইসলামের লাশের খাটিয়া কাঁধে তুলে নিয়ে সেই কথা আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন চন্দন দেব।
বিজয়লক্ষ্মী কলেজের প্রভাষক বরুণ কান্তি সরকার বলেন, এটাই আমাদের প্রকৃত নাসিরনগর। শুধু চন্দন দেব নয়, এর আগেও হিন্দু পরশমনি নামের একজনের শেষকৃত্যে মুসলমান যুবকরাও ভূমিকা রেখেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
শেখ হাসিনার বারতা নারী পুরুষ সমতা” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে মা সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১২ মে রবিবার দুপুরে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার ভূমি মো: মোনাব্বর হোসেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাত সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো: মনির হোসেন ভূঁইয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান পুতুল রানী দাস।
সভায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক আকতার হোসেন ভূঁইয়া ও তথ্য সেবা সহকারী শুকরানা আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা জন্মদাত্রী মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে সন্তান হিসেবে ছেলে মেয়ে উভয়েই মার প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকা, জীবদ্দশায় মা এর সাথে কোন সন্তান যেন সামাজিক, পারিবারিক, মানসিক যেকোন অবস্থায় অশান্তি ও কষ্ঠকর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে বিরত থাকার আহবান জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে দুইশত বছরের পুরনো খাল ভরাট করায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় তিনশত পরিবার। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে গত ১৯ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারাবর লিখিত অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কালন চৌধুরী। অভিযোগের পরও জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান না হওয়ায় বিপাকে গ্রামবাসী।
লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মান্নান মিয়া, রুহুল আমীন, সোলমান মিয়াসহ কয়েকজন প্রভাবশালী লোক মিলে কয়েক বছর পূর্বে খালটি ভরাট করেন। ভরাটের সময় গ্রামের অন্যান্যরা বাধা দিলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা (ড্রেন নির্মাণ) করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে খালটি ভরাট করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সেখানে কোন ড্রেন নির্মাণ না করে সরু পাইপের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করে। এতে করে সামান্য বৃষ্টি হলেই গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার সরেজমিন ফুলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে ডুবে আছে বাড়ির উঠান, গবাদি পশুর খড় আর রান্নার চুলা। পানিবন্দি থাকায় স্কুলে যেতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। বাড়ির সামনে থাকা আবাদি জমিগুলো ডুবে আছে। সাপ, জোঁক সহ অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর ভয়ে শিশুদের নিয়ে আতংকিত অভিভাবকরা।
ফুলপুর গ্রামের কৃষক ছুরুক মিয়া বলেন, খাল ভরাট করায় জমে থাকা পানিতে আমার গরুর খড়, রান্নার চুলা পানিতে ডুবে গেছে। আমি কিছুই করতে পারছি না। আমি কৃষক মানুষ, কৃষি না করলে খাব কি। এভাবে পানি জমে থাকলে বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় উঠা লাগবে।
গ্রামের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জামাল উদ্দিন জানান, আমরা জন্মের পর থেকেই দেখছি এখানে খাল ছিল। এখন খাল ভরাট করার কারণে গ্রামে পানি জমে আছে। ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। আমরা চাই খাল উদ্ধার করে জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান করা হোক।
খাল ভরাটের বিষয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে মান্নান মিয়া বলেন, আমাদের ব্যক্তি মালিকানা জায়গা আমরা ভরাট করেছি। গ্রামবাসীর কথা চিন্তা করে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপও বসিয়েছি।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুতুল রানী দাস বলেন, খাল ভরাট করার বিষয়টি আমি শুনেছি। আশা করছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত জলাবদ্ধতার নিরসন হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোনাববর হোসেন বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ওই জায়গা পরিদর্শন করেছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ে সমস্যার সমাধান হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ছদ্মবেশে এক জীবন মিয়া (৫০) নামে এক ডাকাতকে ধরে কাঁধে করে তুলে নিয়ে আসেন পুলিশ। পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ডাকাত জীবন পুলিশকে কামরালেও হাল ছাড়েনি পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের একটি জমি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত জীবন মিয়া হরিপুর গ্রামের হুরন আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা আছে। সম্প্রতি সে মাধবপুর-হরিপুর সড়কে ডাকাতি করতে শুরু করে।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। ডাকাত জীবনকে গ্রেপ্তারের দায়িত্বে থাকা নাসিরনগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস.আই) রুপন নাথ আরো একজন কর্মকর্তা ও তিন পুলিশ কনস্টেবলকে নিয়ে হরিপুরে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন জীবন তার সঙ্গীদের দিয়ে একটি জমিতে বসে ইয়াবা সেবন করছিলো। তখন পুলিশ সদস্যরা সেখানে সাদা পোশাকে অবস্থান নেয়।
এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে জীবন ও তার সঙ্গীদের কাছে ইফতার করার জন্য পানি চায়। তখন এক পর্যায়ে জীবনকে আটক করে পড়ানো হয় হাতকড়া।
এ সময় জীবন মিয়া পুলিশ কনস্টেবল রানার হাতে কামড় দিয়ে ও ধস্তাধস্তি করে হাতকড়া নিয়েই দৌঁড়ে পালায়। পুলিশ সদস্যও ছুটে গিয়ে আবার তাকে আটক করে।
এক পর্যায়ে এএসআই মোঃ কামরুল হাতে কাঁধে তুলে নেন। কিছুদূর আনার পর তাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কড়া পুলিশ পাহারায় থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ ব্যাপারে এস.আই রূপন নাথ জানান, পাঁচজন মিলে এ অভিযান চালানো হয়। জীবন খুবই ধুর্ত। সে পালানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে বাধ্য হয়ে কাঁধে তুলে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় রানা নামে পুলিশ কনস্টেবল আহত হওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সোহাগ রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জীবন ডাকাত খুবই ধুর্ত প্রকৃতির। তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছিলো না। গোপন সংবাদে এ অভিযান চালানো হয়। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দু’পক্ষের মারামারির দুই মাস পর আহত হারুন মিয়া (৬০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি তার নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে হারুন মিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে সে মারা যায়। গত অক্টোবর মাসে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুত্বর ভাবে আহত হয়েছিলেন হারুন মিয়া। হারুন মিয়ার মৃত্যুর পর উপজেলার পত্তন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক দুধ মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। হারুন মিয়া উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লক্ষীমুড়া গ্রামে মৃত কিতাব আলীর ছেলে। হাসপাতাল ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত লক্ষীমুড়া গ্রামের মৃত কিতাব আলীর ছেলে হারুন মিয়ার পরিবার ও মৃত সোবহান মিয়ার ছেলে করিম মিয়ার পরিবারের জমিতে গরুর ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে করিম মিয়ার পক্ষের লোকেরা হারুন মিয়াসহ তার পরিবারের ৪-৫ জনকে পিটিয়ে জখম করে। তারপর বিজয়নগর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর করিম মিয়ার লোকজন হারুন মিয়াকে হত্যা করার হুমকি দেন? পরবর্তীতে স্থানীয় চেয়ারম্যান দু’পক্ষের লোকদেরকে ডেকে তা আপস করার চেষ্টা করেন। পরে হারুন মিয়া তার ছেলে-ভাতিজাকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে শেখ হাসিনা সড়কের উত্তর পাশে করিম মিয়ার লোকজন অতর্কিতভাবে তাদের উপর হামলা করেন। তাতে হারুন মিয়ার একটি হাত ও একটি পা ভেঙ্গে যায়। পরে তাদেরকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হারুন মিয়ার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে এক মাস হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়। পরবর্তীতে বাড়িতে তার চিকিৎসা চলে।
এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায়- এই হামলার ইন্দনদাতা পত্তন ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ সাধারণ সম্পাদক দুধ মিয়া।
নিহত হারুন মিয়ার ভাতিজা সোহেল বলেন, দুধ মিয়া সরাসরি করিম মিয়ার পক্ষে নিয়েছে। যার কারণে আমার চাচা হারুন মিয়ার উপর হামলা হয়েছে। আমার চাচার হত্যা সাথে দুধ মিয়া জড়িত। দুধ মিয়াসহ যারা আমার চাচাকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির দাবি জানায়।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, একজন মারা গেছেন বলে শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যু রহস্য উন্মোচন হবে।