ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তিতাস সংগঠন ইন গ্রীসের নবনির্বাচিত কার্যকরি পরিষদ ২০২৩ গঠিত হয়েছে। এতে কসবা উপজেলার কৃতি সন্তান মোঃ সামছুল আলমকে সভাপতি এবং বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের কৃতি সন্তান মোঃ সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি সায়েম হোসেন, সহ-সভাপতি মোঃ আবুল হোসেন, সহ-সভাপতি মোঃ হামদু ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোঃ আদেল মিয়া (আলী হোসেন), সহ-সভাপতি মোঃ ডিপটী হাজারী, সহ-সভাপতি মোঃ আলমগীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ ভূঞা, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান টিটু, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান খোকন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শিপন ভূঁইয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুম, সহ সাধারণ সম্পাদক সামির হাজারী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নাজমুল হাসান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মামুন মিয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মারুফ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক নিরব আহমেদ রুমন, কোষাধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুল্লাহ, সহ-কোষাধ্যক্ষ মোঃ মুছা মিয়া, প্রচার সম্পাদক মোঃ স্বপন, প্রচার সম্পাদক মোঃ আঃ জব্বার, দপ্তর সম্পাদক মোঃ শাহীন, সহ-দপ্তর সম্পাদক জামাল সরকার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুর আলম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ নুর আলম বিজয়, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ সবুজ মিয়া, সহ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ আশরাফ আলী, ক্রীড়া সম্পাদক তানবীর আহমেদ সাগর, সহ ক্রীড়া সম্পাদক সাগর, আইন বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উল্লা মুন্সী, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক মোঃ একরাম, মহিলা সম্পাদীকা মোসাঃ রিনা আক্তার, শিক্ষা ও তথ্য সম্পাদক মোঃ নবী, ধর্ম সম্পাদক মোঃ খোকন, আপ্যায়ন সম্পাদক মোঃ বাবুল মিয়া।
চলারপথে রিপোর্ট :
সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস বিন আতিক। বিশ্বের ১২৩টি দেশের প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে তিনি প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ সময় ৯টায় প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে বলে বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস বিন আতিকের বাবা হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান জানিয়েছেন।
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ‘মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার’ ছাত্র হাফেজ আনাস বিন আতিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া গ্রামের হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমানের একমাত্র ছেলে।
হাফেজ আনাসের বাবা হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে একটি প্রাইভেট মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। পারিবারিকভাবে ৪ সন্তানের মধ্যে হাফেজ আনাস তার একমাত্র পুত্রসন্তান।
মেধাবী হাফেজ আনাস ইতোপূর্বে আরটিভিতে অনুষ্ঠিত হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায়ও প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজ আনাস বিন আতিক প্রথমস্থান অর্জন করার খবরে এলাকাবাসীর মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। হাফেজ আনাসের এ অসাধারণ সাফল্য অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাসের বাবা হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবেগাপ্লুত কন্ঠে তিনি বলেন, সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১২৩টি দেশের প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে আমার ছেলে হাফেজ আনাস প্রথম হওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। গতকাল রাতে ফলাফল ঘোষণার পর আমরা খবরটি জানতে পেরেছি। বর্তমানে হাফেজ আনাস তার ওস্থাদদের সঙ্গে সৌদি আরব অবস্থান করছে। আল্লাহর রহমতে শিগগিরই তারা দেশে ফিরবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, আমার ছেলে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বিশ্ব দরবারে দেশের সুনাম অর্জন করায় আমি আনন্দিত। দেশবাসীর কাছে তিনি তার ছেলের জন্য দোয়া কামনা করেছেন।
অনলাইন ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলকে গণহত্যা বন্ধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত।
আজ ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার এই রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাহিনী গাজায় আর গণহত্যা চালাবে না ও ‘কথিত’ গণহত্যার প্রমাণ সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে।
শুক্রবার গাজা উপত্যকায় গণহত্যা নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার রুল জারি করেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। এতে গাজায় গণহত্যা বন্ধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্তবর্তীকালীন রায়ে আদালতের প্রেসিডেন্ট মার্কিন বিচারক জে দোঙ্গু বলেন, ‘আদালত ইসরায়েলকে নির্দেশ দিচ্ছে, গাজায় গণহত্যা সংঘটিত যেন না হয় সেজন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয়তা ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রায়ে আদালত ইসরায়েলকে আরো নির্দেশ দেন, ‘সেনারা যেন কোনো ধরনের গণহত্যা সংঘটিত না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং গণহত্যার নির্দিষ্ট (অভিযুক্ত) প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে।’
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘গাজা উপত্যকায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছতে দিতে হবে এবং গাজার সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে।’ এছাড়া ত্রাণ পৌঁছানো এবং গণহত্যা প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে এক মাসের মধ্যে আদালতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দখলদার ইসরায়েলকে।
তবে যেটি ধারণা করা হয়েছিল, গাজায় ইসরায়েলকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ আদালত দেবেন; সে ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
গাজায় আগ্রাসন ও গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে গত বছরের শেষের দিকে আইসিজেতে মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সূত্র : আল-জাজিরা।
অনলাইন ডেস্ক :
আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ দক্ষিণ সুদানে ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। এতে দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এরই নিদর্শন হিসেবে দুই দেশের জাতির পিতার সম্মানে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন নির্মাণ করেছে ‘সাউথ সুদান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মনুমেন্ট’।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মনুমেন্ট উদ্বোধন উপলক্ষে গত ১৩ জুন দক্ষিণ সুদানের ওয়াও শহরে ব্যানব্যাট-৬ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম মনুমেন্টটি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সুদানের স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী ইব্রাহিম সুরুর ইব্রাহিম ও ৫–এলিফ্যান্ট ডিভিশনের চিফ অব অপারেশন মেজর জেনারেল মাকুয়েই কির আকুক। এ ছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সুদানে কর্মরত বাংলাদেশের কান্ট্রি সিনিয়র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং পদাতিক পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে স্থানীয়দের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, গবাদিপশুর চিকিৎসা, বিদ্যালয়ে বই-খাতা ও স্টেশনারি প্রদান, কৃষকদের কৃষি উপকরণসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির বীজ সরবরাহ, ছিন্নমূল মানুষদের জামা কাপড় সরবরাহ, যুবক ও শিশুদের খেলাধুলা সামগ্রী দেওয়া হয়। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।
পরে অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল বিদেশের মাটিতে দেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করতে শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। দক্ষিণ সুদানে শত প্রতিকূলতার মাঝেও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ায় সবাইকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
অনলাইন ডেস্ক :
জিতলেই ইতিহাস। প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা ছোঁয়ার অনুভূতি। কারণ প্রথমবার ফিফা নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রাখে ইংল্যান্ড ও স্পেন। যে লড়াইয়ে ১-০ গোলে জিতে ইতিহাস গড়েছে স্পেন। স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় স্বপ্নের সোনালি শিরোপা উৎসব করেছে লা রোজিরা।
ম্যাচের ২৯ মিনিটে স্পেনের ওলগা কারমনা গোল করেন। তার ওই গোলেই স্বপ্নের শিরোপা হাতে উঠেছে লা রোজিদের হাতে। বিশ্বকাপের সপ্তম ফুটবলার হিসেবে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়েছেন তিনি। এছাড়া পঞ্চম দেশ হিসেবে স্পেনের নারীরা ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সর্বাধিক চারবার নারীদের ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছে। জার্মানি দু’বার ঘরে তুলেছে বিশ্বকাপের শিরোপা। বিশ্বকাপের সোনালি শিরোপা হাতে উঠেছে নরওয়ে এবং জাপানের হাতেও।
শেষ বাঁশি বাজতেই ভূপাতিত হয়ে পড়েন ইংল্যান্ড ফুটবলাররা। উল্লাসে মাতেন স্পেনের মেয়েরা।
অন্যদিকে দু’বার দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলে শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হলো কিংবদন্তি সারিনা উইগম্যানের। ফুটবল কোচিংকে সহজ বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। দলকে টানা চার আসরের ফাইনালে তুলেছেন। নেদারল্যান্ডসকে ইউরো জেতালেও বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেও শিরোপা জেতাতে পারেননি তিনি।
ইংল্যান্ডের সঙ্গেও হলো তা-ই। লায়নেসদের দায়িত্ব নিয়ে ইউরো জিতিয়েছেন সাবেক এই ফিজিক্যাল ইডুকেশন টিচার। কিন্তু বিশ্বকাপের শিরোপা জেতাতে পারলেন না। অন্যদিকে স্পেনও দেখিয়ে দিয়েছে ফুটবল কৌশলে পিছিয়ে নেই তারাও। তাদের পজিশন প্লেয়িংয়ের কাছে খেই হারালে ম্যাচে ফেরা কঠিন।
স্পেন নারী দলের কোচ জর্জ ভিলদার দল বলের দখলেই শুধু এগিয়ে ছিল না আক্রমণেও তার দল ছিল ঢের এগিয়ে। গোল মুখে ইংল্যান্ডের আট শটের তুলনায় ১৩টি শট নিয়েছে লা রোজিরা। এর মধ্যে লায়নেসদের মাত্র তিনটি শট ছিল গোল হওয়ার মতো। স্পেন ভয় ধরানো শট নিয়েছে আটটি।
অনলাইন ডেস্ক :
গত ১৪ মে তুরস্কের আলোচিত নির্বাচনে কোন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ৫০% এর বেশি ভোট পাননি। তাই আগামীকাল রবিবার আবারও অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। তুরস্কের ইতিহাসে তো বটে বিশ্বের চোখ থাকবে কালকের নির্বাচনের দিকে। তবে প্রথম দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে কালকের নির্বাচনে ৫০% পেতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই। যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন।
এদিকে তুরস্ককে দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এরপরও দেশটির বেশিরভাগ মানুষ তাকে ভালোবাসেন। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে তারা তাকে ভোট দেন। কিন্তু, তারা কেন এমনটা করেন। কারণ, দু’দশক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পর এবং এক ডজনেরও বেশি নির্বাচনের পর এরদোয়ান জানেন কীভাবে সবকিছু সামাল দিতে হয়। ইস্তাম্বুলে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের এক সম্মেলনে তাকে কাছে পেয়েও মানুষের যেন আশ মিটছিল না।
এরদোয়ান মূলত তার প্রজাবৎসল নীতি, নৈতিকতা, কঠোর ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় মতবাদের মাধ্যমে তুরস্কের জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তার ইশারা মতো ট্যাক্সি ড্রাইভাররা উল্লাস করছিলেন, হাততালি দিচ্ছিলেন – এবং তার নির্দেশ মতোই তারা বিরোধীদের প্রতি দুয়ো দিচ্ছিলেন। তবে বিরোধীরাও কম যান না। তারাও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন। কাল কি হবে সেটা শুধুমাত্র ভোটাররাই বলতে পারেন।
সম্মেলনের স্থানটি ছিল বসফরাসের উপকূলে ইস্তাম্বুলের একটি কনভেনশন সেন্টার, যেটি নির্মিত হয়েছিল এরদোয়ান ওই শহরের মেয়র থাকাকালীন সময়ে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট যখন তার ভাষণ শেষ করেন, সমাবেশের উত্তেজনা তখন তুঙ্গে: “এক জাতি, এক পতাকা, এক মাতৃভূমি, এক দেশ।” ততক্ষণে অনেক বয়স্ক ড্রাইভার উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলছিলেন ওপরের দিকে, কিংবা হাত তুলে প্রেসিডেন্টকে স্যালুট করছিলেন।
মাথায় স্কার্ফ আর রক্ষণশীল পোশাক পরে আয়েশে ওজদোয়ান ওই সমাবেশে গিয়েছিলেন তার ট্যাক্সি ড্রাইভার স্বামীর সঙ্গে।
এরদোয়ানের সমর্থকরা বলছেন, তার কারণে তাদের জীবন উন্নত হয়েছে
তার নেতার ভাষণের প্রতিটি শব্দ যাতে তিনি শুনতে পান সে জন্য বেশ আগেই মিটিংয়ে হাজির হয়েছিলেন। সিটের পাশে ছিল একটি ক্র্যাচ। তার হাঁটতে কষ্ট হয়, কিন্তু তারপরও তিনি ওই সমাবেশে না গিয়ে থাকতে পারেননি।
“এরদোয়ান আমার কাছে সবকিছু,” বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলছিলেন তিনি। “আমরা আগে হাসপাতালে যেতে পারতাম না, কিন্তু এখন আমরা সহজেই সেবা পাই। আমাদের এখন পরিবহন ব্যবস্থা আছে। তিনি রাস্তাঘাট উন্নত করেছেন। মসজিদ নির্মাণ করেছেন। দ্রুত গতির ট্রেন আর পাতাল রেল দিয়ে তিনি দেশকে উন্নত করেছেন।”
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাষণে জাতীয়তাবাদী বক্তব্য ছিল ওই সমাবেশের অনেকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়। এদেরই একজন হলেন ৫৮-বছর বয়সী কাদির কাভলিওলু, যিনি গত ৪০ বছর ধরে মিনিবাস চালাচ্ছেন। “যেহেতু আমরা আমাদের মাতৃভূমি ও জাতিকে ভালবাসি, তাই আমরা দৃঢ়ভাবেই প্রেসিডেন্টের পেছনে রয়েছি।”
“আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়ুক কিংবা কমুক,” তিনি বলছেন, “প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা তার সঙ্গে আছি। আমার প্রিয় প্রেসিডেন্টই আমাদের আশা-ভরসা।”
তুর্কি প্রেসিডেন্টের ওপর তার সমর্থকদরে অনেক আশা-ভরসা
এ মাসের শুরুতে তুর্কি ভোটাররা যখন নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়েছিলেন, সে সময় তারা তাদের মানিব্যাগের অবস্থার কথা বিবেচনা করে ভোট দেননি। তুরস্কে খাবারের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। ৪৩% মুদ্রাস্ফীতির কারণে অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে অসহনীয়। তবে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকেও অনেকে দায়ী করছেন ওই মুদ্রাস্ফীতির জন্য।
এই অবস্থার পরও প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ৪৯.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
এই ঘটনায় বিশ্লেষকরা বেকুব বনে গেছেন, এবং গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা লাভ করেছেন : ‘জনমত জরিপের ফলাফল থেকে সাবধান।’
বিভক্ত এক দেশ
এরদোয়ানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীদলীয় নেতা কামাল কুলুচদারোলু নির্বাচনে পেয়েছেন মোট ৪৪.৯ শতাংশ ভোট।
সুতরাং, বিভক্ত এই দেশে ভোটাররাও ছিলেন বিভক্ত – বিরোধী দু’পক্ষের মধ্যে ব্যবধান ছিল মাত্র ৪ শতাংশ ভোটের।
একজন উগ্র-জাতীয়তাবাদী প্রার্থী সিনান ওগান ওই নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে ৫.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, যে কারণে নির্বাচনটি এই রোববার (২৮শে মে) দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে যেতে বাধ্য হয়। ওগান এরপর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি তার সমর্থন জানান।
তাহলে প্রশ্ন হলো, তুরস্কের অর্থনীতিতে এক বড় সঙ্কট থাকার পরও কেন বেশিরভাগ ভোটার এরদোয়ানকেই বেছে নিলেন?
এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কুলুচদারুলু (মাঝে) এবং তার জোট সঙ্গীরা
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে বিপর্যয়কর জোড়া ভূমিকম্প, যাতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এরপরও ভোটাররা কেন তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন না?
“আমি মনে করি তিনি একজন চূড়ান্ত ‘টেফলন রাজনীতিবিদ’ [কোন অভিযোগ যার গায়ে বসতে পারে না],” বলছেন অধ্যাপক সোলি ওজেল, যিনি ইস্তাম্বুলের কাদির হ্যাস ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক।
“তার যে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে, এটা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। তার শরীর থেকে ক্ষমতার আভা বের হয়। এটা এমন এক জিনিস যা কুলুচদারোলুর নেই।”
কিন্তু প্রথম রাউন্ডের হতাশাজনক ফলাফল দেখে তিনি নিজে এখন ডান দিকে মোচড় দিয়েছেন। তিনি এখন অনেক বেশি কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদী। এটা দেখে একজন তুর্কি সাংবাদিক মন্তব্য করেছে, “এটা হচ্ছে পতনের রাস্তায় দৌড়।”
ক্ষমতাসীন একে পার্টির একটি জনসভা
তুরস্কের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন না কেন, এই নির্বাচনে আসলে বিজয়ী হয়েছে জাতীয়তাবাদ।
ভোটাররা এযাবতকালের সবচেয়ে জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীল এক সংসদকে নির্বাচিত করেছে, যেখানে এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন একে (জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) পার্টি জোটের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।
তুরস্কের কিছু তরুণ ভোটার মনে করছেন, ফলাফল নির্ধারিত হয়ে গেছে। রঙধনু রঙের এক পতাকার নীচে একটি লাল সোফায় বসে ২১-বছর বয়সী জেইনেপ এবং ২৩-বছর বয়সী মের্ট গরম গরম তুর্কি চা পরিবেশন করছিলেন এবং নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করছিলেন।
তারা দু’জনেই বোগাজিচি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন। এটি একটি সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার রয়েছে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস। জেইনেপ এবং মের্ট-এর পরিচয় হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এলজিবিটিকিউ ক্লাবে – যেটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৫ থেকে ওই ক্যাম্পাসে সমকামীদের শোভাযাত্রা করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের সমকামী সম্প্রদায়কে টার্গেট করে বক্তব্য দিয়েছেন। ইজমির শহরে এক বিশাল সমাবেশে তিনি বলেছেন, “এই জাতি থেকে কোনো এলজিবিটি মানুষ বের হবে না।”
“আমাদের পারিবারিক কাঠামোকে আমরা কলঙ্কিত করি না। এখানে সন্তানরা মানুষের মতো সোজা হয়ে দাঁড়ায় – আমাদের পরিবারগুলো এমনই।”
কাঁধ পর্যন্ত কালো চুল এবং কানে দুল পরা মের্টের মনে হচ্ছে, তুরস্কের এলজিবিটি সম্প্রদায় এখন ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
“এরদোয়ান নিজে, প্রতিটি বক্তৃতায়, প্রতিটি অনুষ্ঠানে, আমাদের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে তুলে ধরছেন,” বলছিলেন তিনি, “দিনের পর দিন রাষ্ট্র আমাদের শত্রু বানাচ্ছে।“
নতুন এক তুর্কি শতাব্দী
রোববার তুর্কি ভোটাররা তাদের দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট দিতে যাবেন, যেটি হবে তুরস্কের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পার হয়েছে প্রায় ১০০ বছর।
রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আবার নির্বাচিত হলে একটি নতুন “তুর্কি শতকের” প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার সমর্থকরা বলছেন, তিনি আরও উন্নয়ন, আরও শক্তিশালী এক তুরস্ক উপহার দেবেন। সূত্র : বিবিসি