স্টাফ রিপোর্টার:
পোল্ট্রি ফার্মে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা বায়োগ্যাস প্লান্টের বয়লার বিস্ফোরণে মোঃ জুবায়ের (২৮) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত জুবায়ের কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার ধলা গ্রামের মোঃ জলিল মিয়ার পুত্র। তিনি গত ৩-৪ বছর ধরে এ ফার্মে কাজ করতো। গত শনিবার রাত সাড়ে ৬টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামের ৯নং ওয়ার্ড এলাকায় বিল্লাল ভুইয়ার পোল্ট্রি ফার্মে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের এ ঘটনাটি ঘটে।
বিল্লাল ভুইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য। বিস্ফোরণ ও শ্রমিক জুবায়ের নিহতের ঘটনাটি আশুগঞ্জ থানা এলাকায় ঘটলেও বিষয়টি আশুগঞ্জ থানা পুলিশকে পাশ কাটিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতের লাশ তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে নিয়ে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে এ বায়োগ্যাস প্লাণ্টটি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকলেও এ থেকে উৎপাদিত গ্যাস আশে-পাশের বাড়িঘর ও দোকানপাটে সংযোগ দেয়া আছে। পোল্ট্রি ফার্মটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বিল্লাল ভুইয়ার পোল্ট্রি খামারে জুবায়ের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। এ খামারে মুরগির বিষ্টা থেকে দুটি বায়োগ্যাস প্লান্ট চলমান। তবে এসব প্লান্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্লান্টের উৎপাদিত গ্যাস ফার্মের নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে প্লাষ্টিকের পাইপের মাধ্যমে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে সরবরাহ করা হতো। জুবায়ের বৈদ্যুতিক ও বায়োগ্যাসের কাজে দক্ষ থাকায় সে বায়োগ্যাসের কাজ করতো। গত শনিবার বায়োগ্যাসে কাজ করার সময় বিকট শব্দে একটি বয়লার বিস্ফোরন হয়। উদগিরিত গ্যাসে জুবায়ের উপরে উঠে গিয়ে পরে বেশ দুরে ছিটকে পড়ে। সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জেলাসদর হাসপাতাল ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সাড়ে রাত ৮টার দিকে সে মারা যায়।
এদিকে বিস্ফোরনের ঘটনা ও শ্রমিক নিহতের ঘটনাটি আশুগঞ্জ থানা এলাকা হলেও নিহতের লাশ তার নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে ফার্মের সামনে কথা হয় মোঃ বিল্লাল মিয়ার ছোট ভাই মোঃ হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনি মুরগির সুরক্ষার দোহাই দিয়ে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি। তবে কিছুক্ষন আগেই ২-৩ জনকে নিয়ে ফার্ম থেকে বের হতে দেখা গেছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলেও তিনি এড়িয়ে যান। এদিকে বায়োগ্যাস প্লান্টটি অনুমোদনের আগেই তা থেকে উৎপাদিত গ্যাস প্লাষ্টিকের পাইপ দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দুর পর্যন্ত বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে বাণিজ্যিক ভাবে (মাসিক ১ হাজার টাকায়) সংযোগ দেয়া হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে ফার্মের মালিক মোঃ বিল্লাল ভুইয়া মোবাইল ফোনে জানায়, নিহত জুবায়ের তার ফার্মে ৩-৪ বছর ধরে কাজ করছে। তিনি লাশ নিয়ে নিহতের বাড়িতে রয়েছেন এবং তার পরিবারের সহায়তায় দাফনের প্রস্তুতি চলছে। জুবায়ের নিহতের পর লাশ আশুগঞ্জ থানায় কেন নেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সবটুকুই নিহতের পরিবারের ইচ্ছা।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান বলেন, লাশ থানায় নিয়ে আসার জন্য বলা হলেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই তারা লাশ নিয়ে নিহতের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে নিয়ে যায়। পরে তিনি বিষয়টি তাড়াইল থানাকে অবগত করে। তাড়াইল থানার ওসির বরাত দিয়ে আরো বলেন, সেখানেও নিহতেদর স্বজনেরা লাশের ময়নাতদন্ত করতে আগ্রহ হয়নি বলে জানায়।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে ফার্মটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবশে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ খালেদ হোসাইন বলেন, বায়োগ্যাস প্লান্টটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করতে নির্দেশনা দিয়েচে। এ সময় এ ঘটনা ঘটল। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
আশুগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতনামা এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার তালশহর (নাওঘাট) এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির (ইনচার্জ) এসআই সুব্রত বিশ্বাস জানান, মঙ্গলবার সকালে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। পরে রেলওয়ে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠায়। তিনি আরো জানান, তার বয়স আনুমানিক ৭০ হবে। অজ্ঞাত বৃদ্ধের লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পিবিআই ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে বলা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের একাধিক ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় দুই প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের ১৪ নভেম্বর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদের ২৪৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) শূন্য আসনে ৫ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনপরবর্তী বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৯৫নং যাত্রাপুর নুরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও ১২৭নং শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের সংবাদ প্রচার হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার এর মাধ্যমে পৃথক তদন্ত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন মতে প্রকাশিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যালোচনা মোতাবেক ৯৫নং যাত্রাপুর নুরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী প্রিসাইডিং অফিসার হোসেন মো. হাবিবুর রহমান, প্রভাষক (সমাজ বিজ্ঞান) আব্বাস উদ্দিন খান সোহাগপুর মডেল কলেজ, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ১২৭নং শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, সিনিয়র অফিসার, ইসলামী ব্যাংক, আশুগঞ্জ শাখা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্ণিত অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
ফলে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে অসদাচরণের দায়ে প্রভাষক হোসেন মো. হাবিবুর রহমান ও ইসলামী ব্যাংক এর সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ কে নির্বাচন কমিশন ১৫ নভেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, উল্লিখিত আদেশ মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সাত দিনের মধ্যে গৃহীত ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
চলারপথে রিপোর্ট :
রমজানে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার অস্থিতিশীল করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সিয়ামের মাসের পবিত্রতা রক্ষায় অধিক মুনাফা না নিতে তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।
আজ ১১ মার্চ সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও কমিউনিটি লিডারদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ হুঁশিয়ারি দেন।
স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ বিরোধী জনসচেতনতা, বাল্য বিবাহ বন্ধকরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং স্থানীয় পর্যায়ে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে এ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্যামল চন্দ্র বসাকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. সেলিম পারভেজ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিমা সুলতানা, উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি কাজী তাহমিনা শারমিন, আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নাহিদ আহামেদ, আশুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও আশুগঞ্জ শহর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন ইপটি প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, মসজিদের ইমাম ও খতিবসহ বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক। তাই আমাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে বাঁচাতে হবে। বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন খেলাধুলা ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করা।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক স্থানীয় পর্যায়ে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারনামীয় এক আসামিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। বাদীর অনাপত্তি ও উপজেলা বিএনপিসহ স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে গতকাল ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছেড়ে দেওয়া ওই আসামির নাম রোমান মিয়া। তিনি ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গত ২০ আগস্ট আশুগঞ্জ থানায় হওয়া একটি মামলার ৬ নম্বর আসামি। গত বুধবার দিবাগত রাতে তাঁকে আটক করে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল সেনাবাহিনী।
পুলিশ বলছে, বাদী ভুলক্রমে মামলায় ওই ব্যক্তিকে আসামি করেছে বলে আদালতে হলফনামা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে আসামি ছেড়ে দেওয়ার পর দুপুরে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেনসহ পুলিশের তিন সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া অন্য দুই সদস্য হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার ও প্রদ্যুত ঘোষ চৌধুরী। তাঁদের প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, ওসি ও দুই এসআইকে প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে। প্রত্যাহারের সাথে আসামি ছেড়ে দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশুগঞ্জ বাজারের ভাড়া বাসা থেকে রোমান মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন সেনাসদস্যরা। রাত থেকেই তাঁকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মী ও উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লোকজন থানায় চাপ দিতে থাকেন। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে বৃহস্পতিবার সকালে থানার সামনে অনেকেই অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে থেকে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে আশুগঞ্জ গোলচত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। তখন রোমান মিয়াসহ অনেকেই ককটেল বিস্ফোরণ করে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা পিস্তল দিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়েন। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হন।
এ ঘটনায় ২০ আগস্ট রমজান মিয়া নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিনসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলার ৬ নম্বর আসামি রোমান। রোমানের ছোট ভাই ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মিয়া মামলার ৫ নম্বর আসামি।
মামলার বাদী রমজান মিয়া বলেন, ভুল করে রোমান মিয়াকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। রোমানের বিষয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপি দু’টি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ায় বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, বাদী বিএনপির সমর্থক এবং ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন। উপজেলার একটি স্বার্থান্বেষী মহল, যারা জীবনে কোনো দিন বিএনপি করেনি, তারা এখন নিজেদের বিএনপির নেতা-কর্মী দাবি করে ওই আসামিকে ছাড়িয়ে নেয়। এর সঙ্গে উপজেলা বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কারণ রোমান মিয়া সুবিধাবাদী ও আওয়ামী লীগের লোক। তিনি আওয়ামী লীগের একাধিক সভায় উপস্থিত ছিলেন। এক সভায় সারা জীবন আওয়ামী লীগ করবেন বলে বক্তব্য দেন, যেটি ভাইরালও হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, সেনাসদস্যরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে মামলার বাদী থানায় গিয়ে তাঁকে ভুলক্রমে মামলার আসামি করা হয়েছে বলে জানান। এ বিষয়ে তিনি আদালতে একটি অ্যাফিডেভিট (হলফনামা) দিয়েছেন এবং পুলিশকে সেটি কপি দেন। বাদীর অভিযোগ না থাকায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সূত্র : প্রথম আলো